গদাধরের ছেঁড়া চটি ও ফুলেশ্বরীর পাখি বৃত্তান্ত
স্বপন বিশ্বাস
নুড়ো গাছটা বুড়ো হয়েছে। এখন আর সে গাছের যৌবন নেই। যৌবনকালের সেই ঝাঁকড়া পাতার বাহারও নেই। ডালে ডালে নুড়ো ঝুলে থাকে। তার মাঝে মাঝে রঙিন ফিতে, সুতো, কাপড়ের আঁচল। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাছে ফুল ফুটে আছে। ফুলের সাথে পাখি। কান পাতলেই যেনো কিচির মিচির শব্দ শোনা যাবে। এক সময় এই গাছে সবাই খড়ের নুড়ো বাঁধতো। এখন কালে কালে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। সবাই আর এখন খড়ের নুড়ো বাঁধে না। হাতের কাছে যা পায় তাই সই। নুড়োবাবা গত হয়েছেন বহুদিন আগে। তাই তার নামে বহুরকমের গল্পও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোন এক রাতে নাকি তার আবির্ভাব হয়েছিল এই শেওড়া গাছের নিচে। রাতটা অমাবস্যার নাকি পূর্নিমার রাত ছিল তা নিয়ে ভিন্ন মত আছে। তখন গাছের নিচে একটা খড়ের গাদা ছিল। তিনি ওই খড়ের গাদায় বসে থাকতেন। কেউ কাছে এলে হাতে খড়ের নুড়ো ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করতন ডালে বাঁধার জন্য। নিজেও বাঁধতেন। এ বিষয়েও ভিন্ন মত আছে। গাছের নিচে নাকি কোন খড়ের গাদাই ছিল না। তিনি যখন রাস্তায় হাঁটতেন তখন খড় কুড়িয়ে আনতেন। তিনি বেশ লম্বা ছিলেন নাকি বেঁটে ছিলেন। গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা ছিল নাকি কুচকুচে কালো ছিল এসব বিষয়েও দ্বিমত আছে। তবে একটা বিষয়ে সবাই খুব একমত যে তিনি খুব একটা কথা বলতেন না। বেশির ভাগই ছিল ইশারা। যা কিছু কথা বলতেন সে ভাষা মানুষ বুঝতো না। তবে কথা না বুঝলেও মানুষ নুড়ো বাঁধার মাহাত্ম্য বুঝে ফেলেছিল। নুড়ো বাঁধলেই নাকি মনের আশা পুরোন হয়। কোর্ট কাচারির মামলা জেতা যায়। খুনের আসামী ছাড়া পায়। বাঁজা বউয়ের পেটে বাচ্চা হয়। বোবা ছেলের মুখে বোল ফোটে। নুলো পায়ে বল ফিরে পায়। অন্ধ মানুষ দৃষ্টি পায়। অভাবের সংসারে আয় উন্নতি হয়। সেসব কথা বাতাসের আগায় ভর করে ছড়িয়ে পড়ে এক গাঁ থেকে আরেক গাঁয়ে। দলে দলে মানুষ আসে। নুড়ো গাছে নুড়ো বাঁধে। এসব কথা এখনও বিশ্বাসী মানুষরা বিশ্বাস করে। অবিশ্বাসীরা অবিশ্বাস করে। তারা বলে নুড়ো বাবা ভিনদেশের মানুষ। এদেশে যুদ্ধ করতে এসেছিল। যুদ্ধ শেষে আর দেশে ফিরে যেতে পারেনি। ছাড়া পড়ে গেছে। সেই থেকে মাথা খারাপ। কেউ বলে যুদ্ধের সময়ই মানুষ মারতে মারতে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই আর ফিরে যেতে পারেনি। কেউ কেউ বলে সে ছিল বিদেশি চর। পাগলের বেশ ধরে থাকতো। গদাধর এইসব বিশ্বাস অবিশ্বাস কোন দলেই নেই। খালে বিলে মাছ মারে। জালে মাছ উঠলে মন ভালো হয়। বাজারে মাছ বেচে চাল-ডাল আনাজপাতি কেনে। জালে মাছ না উঠলে মন খারাপ হয়। মন খারাপ হয় ছোট মেয়েটার কথা ভেবে। ঘরে খাবার না থাকলে মেয়েটা ভয় পায়। ভয় পায় তার মাকে নিয়ে। সংসারে অভাব দেখা দিলে গদাধরের বউটা পাখি হয়ে উড়ে যায়। এই ঘটনাও সবাই বিশ্বাস করে না। তবে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী দুপক্ষের মাঝেই নানান রকম গল্প চালু আছে। বিশ্বাসীরা গদধরের বউকে বেশ গুনিন বলে মান্য করে। তারা বলে গদাই’র বউটার ওপর দেব দেবতার ভর হয়। তা না হলে কি একটা জ্যান্ত মানুষ এভাবে পাখি হয়ে যেতে পারে? বিশ্বাসী মানুষরা বিপদে পড়লে যেমন নুড়ো গাছে নুড়ো বাঁধে তেমন গদাধরের বউয়ের কাছ থেকে ঝাড়-ফুঁক জলপড়া নিয়ে যায়।
গদাধরের শ্বশুর জগাই হলদারের বাড়ীর অবস্থা বেশ সচ্ছল। জমি জায়গা আছে। তাতে ফসল ফলে। বাজারে মাছের বড় আড়ৎ। একমাত্র মেয়ে ফুলেশ্বরী। ফুলের মতই সুন্দরী। মেয়েকে আট-নয় ক্লাস লেখা পড়াও শিখিয়েছিল। শুধু মেয়ের এমন উড়নচন্ডি স্বভাবের জন্য বড় ঘরে বিয়ে দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত গদাধরকে পাত্র পেলো। গদাধর মাঝেমধ্যে আড়তে মাছ দিতো। মাঝে মধ্যে ফাইফরমাস খাটতো। একদিন হঠাৎ করেই জগাই হলদার বাড়ীতে ডেকে আদর করে খাওয়ালো। নতুন জামা কাপড় দিলো। তারপর বুঝিয়ে-সুজিয়ে মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। ফুলেশ্বরীর এমন উড়নচন্ডি স্বভাবের কথা গদাধর আগে থেকেই জানতো। তবু বিয়েতে আপত্তি করেনি। গদাধরের নিজের বলে তো কেউ নেই। যে বিয়ে নিয়ে মতামত দেবে। বিয়ের খবর শুনে গাঁয়ের অনেকেরই হিংসা হলো। বলল, গদাই শালা এবার বড় গাছে নাও বেঁধেছে। জগাই হলদারের রাজত্ব রাজকন্য সব কিছুরই মালিক এখন গদাই। কেউ বলল জগাই হলদার কাজটা ভালো করে নাই। গদাই ছেলেটাকে বোকা পেয়ে তার উড়নচন্ডি মেয়েটাকে গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। তবে এই মেয়ে গদাইয়ের সাথে থাকবে না। গদাইয়ের মুখে নুড়ো জ্বেলে দিয়ে আবার কারো সাথে পাখী হয়ে উড়ে যাবে! গদাধর নির্বিবাদ মানুষ। এইসব কোন কিছু নিয়েই ভাবে না। ভাবতেও চায় না।
বিয়ের পর বউয়ের ইচ্ছায় আর শ্বশুরের সাহায্যে গদাধরের সংসারে কিছুটা জেল্লাই ফেরে। মা মারা যাওয়ার পর গদাধর নিজে রান্না করে খেতো। এখন বউ রাঁধে। বাসন মাজে। সকালে উঠোন ঝাড়ু দেয়। বিকেলে চুল বাঁধে। সন্ধ্যায় পিদিম জ্বালে। সেই পিদিমের আলোয় গদাধর বউয়ের মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। ফুলেশ্বরী তার চোখের চাহনি আর অঙ্গভঙ্গিতে কত কিছুই বুঝাতে চায়। তারপর একরাশ রাগ ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে মুখ ঝামটি দিয়ে পিদিম নিভিয়ে দেয়।
গদাধরের মেয়ে কুনি মায়ের গলা ধরে শোয়। ফুলেশ্বরী মেয়েকে তখন ঘুম পাড়ানি গান শোনায়। আয় রে পাখি লেজ ঝোলা, খেয়ে যা পাখি দুধ কলা…..। কুনি মাথা তুলে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি যখন পাখি হও তখন কি দুধ কলা খাও?
সেটা নির্ভর করে কোন জাতের পাখি তার ওপর। কোন সময় মাঠে ঝড়ে পড়া শস্য খাই। ফুলে বসে মধু খাই। কোন সময় পোকা মাকড় ধরে খাই।
তাহলে তুমি আর পাখি হবে না। ছি ছি পোকা মাকড় কেউ খায়? ঘেন্না ঘেন্না। আচ্ছা মানুষ মরে গেলেও কি পাখি হয়।
হয় তো! কাক হয়। কিছুদিন বাড়ীর আশেপাশে ঘোরে তারপর উড়ে স্বগ্গে চলে যায়।
কাকেরা তো নোংড়া আবর্জনা খায়। তা হলে তুমি মরবে না। বল, মরবে না! মরলেই তোমাকে আবর্জনা খেতে হবে।
কেন? তুই কাকবলি দিবি। আমি তো তখন কাকবলি খাব।
কাকবলি কি? কাকবলি কি কোন খাবার?
মানুষ মারা যাওয়ার পর কাক হয়ে যখন বাড়ীর আশেপাশে ঘুরে বেরায় তখন কাককে খাবার দিতে হয়। উঠনের মাঝখানে বাঁশ পুঁতে বাঁশের মাথায় মাটির সরাতে চালের সাথে দুধ কলা মেখে কাকবলি দিতে হয়। দেখিসনি, কালাচাঁদের মা মারা গেলে উঠনে চারটা বাঁশ পুঁতে কাকবলি দিয়েছিল।
গদাধর মা-মেয়ের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যায়। ভোরে সূর্য ওঠারে আগেই জাল নিয়ে ছোটে মাছ ধরতে। রাতে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। নুড়োতলার খালে জাল ফেলতেই পা পুঁতে গেল কাদায়। টান দিয়ে পা তুলতে গিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া চটি জোড়া গেল ছিঁড়ে। বেশ কিছুদিন চটি পায়ে দিয়ে একটা বাবুগিরি ভাব এসেছিল। চটিটার ওপর মায়া জন্মেছে। জালের রশি ছেড়ে কাদামাখা ছেড়া চটিটা পরখ করে দেখল। দেখে নিজের ওপর বড্ড রাগ হল। কী দরকার ছিল চটি পায়ে কাদায় নামা? শেষে মনের দুঃখে চটি জোড়া ছুঁড়ে মারল রাস্তায়। ভোরের ফাঁকা রাস্তা জনমানুষ্যি নেই। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা খালি ভ্যানগাড়ী শহরের দিকে যাচ্ছে। দোকান খুললে মাল কিনে ফিরবে। আলাই মেম্বর সেই সময় নুড়ো তলা দিয়ে হাঁটতে ছিল। নতুন ডায়বেটিসের রোগী। চটি জোড়া হঠাৎ সামনে এসে পড়ায় চমকে উঠেছিল। কিছুটা ভয়ও পেয়েছিল। খালের ধারে গদাধরকে দেখে রাগে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। শালা জাইলির বাচ্চা গদাই তোর এত বড় সাহস। চটি ছুঁড়ে মারিস। কিছুদিন আগে হলে আলাই মেম্বর গদাইকে চটি পেটা করত। সেদিন নিজেকে সামলে নিল। হঠাৎ উত্তেজিত হতে ডাক্তারের বারন আছে। ডায়বেটিসের সাথে ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খেতে হচ্ছে। রক্ত নালিতে দুটো ব্লক ধরা পড়েছে। তাই যা করতে হবে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। ভালো মানুষের ঠান্ডা মাথা থেকে যেমন ভালো বুদ্ধি বের হয় তেমন খারাপ মানুষের ঠান্ডা মাথা থেকে আরও বেশি কুবুদ্ধি বের হয়। আলাই মেম্বর চটিটা তুলে নিয়ে নুড়ো গাছের ওপর ছুঁড়ে মারল। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে ছবি তুলল। তারপর ডাকল, “ওই শালা গদাই, উপরে উঠে আয়। তোর এত্তো বড় সাহস তুই আমার সামনে নুড়ো গাছে চটি ছুঁড়ে মারিস!
মাছে লেবেন কত্তা? দাঁড়ান, আর দুটো খ্যাপলা মাইরে লেই।
তোর মাছ মারার সাধ আজ জম্মের মত মিটায়ে দেবো। তুই ওপরে উঠে আয়।
গদাধর জাল রেখে কাঁচুমাচু মুখ করে আলাই মেম্বরের সামনে এসে দাঁড়াল।
মেম্বর তার হাতের মোবাইলটা ঘুরিয়ে গদাধরের দিকে তাক করল। গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, নুড়োগাছে ওই চটি কার রে?
গদাধর মোবাইলে ছবি তোলা দেখে মাথার চুল ঠিক করতে করতে বলল, ওই চটিতো আমার চটি। রাস্তায় কুড়োয়ে পাইচিলাম।
তো, তুই নুড়োগাছে চটি ছুঁড়ে মারলি ক্যা? তোর এত্তো বড় সাহস! তুই জাইলির বাচ্চা হয়ে নুড়ো গাছে চটি ছুঁড়ে মারিস। এই বুদ্ধি নিশ্চয় তোর শ্বশুরের দেয়া। বাঁচতি চালি দোষ স্বীকার কর। বল, তোর শ্বশুরের বুদ্ধিতে তুই এই কাজ করিচিস।
গদাধর ভয পেয়ে কাঁদকাঁদ মুখ করে বলল, চটি তো আমি রাস্তায় ছুঁড়ে মারলাম। চটির কি পাখা গজাল? চটি গাছে উঠল কীভাবে?
চটির পাখা গজায়নি, হারামজাদা। তোর পাখা গজিয়েছে। তোর পাখা কীভাবে ভাঙতে হয় দেখাচ্ছি দাঁড়া। একটা মিথ্যা কথা বলবি না। আমি স্বাক্ষী। আমার চোখের সামনে তুই নুড়োগাছে চটি ছুঁড়ে মেরেছি। এই ভিডিও আমি ভাইরাল করে দেবো। দেখি তোর শ্বশুর কীভাবে তোকে বাঁচায়।
গদাধরের শ্বশুর জগাই হলদারের ওপর আলাই মেম্বরের পুরাতন রাগ। এক সময় ফুলেশ্বরীকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিরক্ত করত বলে জগাই হলদার সালিশ ডেকে আলাইকে অপমান করেছিল। পারিবারিক ভাবে ফুলেশ্বরীকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আলাই। জগাই হলদার তড়িঘড়ি করে গদাধরের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে তবু বখাটে দুশ্চরিত্র আলাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়নি। এই অপমান আলাই ভুলতে পারে না। ফুলেশ্বরী শুধু দেখতে সুন্দর তাই না, জগাই হলদারের একমাত্র মেয়ে। ফুলেশ্বরীকে ঘরে তুলতে পারলে জগাই হলদারের সব সম্পত্তির মালিক হতে পারত আলাই। সেই লোভ এখনও তাকে তাড়া করে ফেরে। মনের সেই কষ্ট যেন তুষের আগুনের মত এখনও তাকে পোড়ায়। ফুলেশ্বরীকে বিয়ে করে গদাধর কোন অন্যায় করেনি। তবু গদাধরকে দেখলেই যেন তার বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা সেই তুষের আগুন উসকে ওঠে। মেম্বর হওয়ার পর থেকে তাই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল আলাই। আজ এই সুযোগ তার হাতের মুঠোয়।
ভোরের আলোয় পথ চলতি লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারা মেম্বরের পাশে এসে দাঁড়ায়। গাছের মাথায় চটি ঝুলতে দেখে। মোবাইলে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে। উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সংবাদ পেয়ে এলাকার চেয়ারমেন আসে। লোকজন ধীরে ধীরে মারমুখি হয়ে উঠতে থাকে। যে সব মানুষ, যেসব যুবক ছেলেরা নুড়োগাছে বিশ্বাস করে না তারাও আজ খুব সোচ্চার। গদাধরের মতো এমন একটা ছোট জাতের লোক নুড়ো গাছের মতো এমন একটা পবিত্র গাছে চটি ছুঁড়ে মারবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বিপদ আঁচ করে চেয়ারমেন থানায় খবর পাঠায়। থানা থেকে পুলিশ এসে মারমুখি জনতার হাত থেকে হারাধনকে রক্ষা করে। আলামত হিসাবে গাছ থেকে ছেঁড়া চটি সংগ্রহ করে। তারপর গদাধরকে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গাড়ীতে তুলে থানায় নিয়ে যায়।
দিনের ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে যায়। তবে রাতের অন্ধকার ঘন হয়ে এলে তার ভেতর থেকে কিছু অচেনা মানুষ বেরিয়ে আসে। তারা জগাই হলদারের বাড়ীতে, মাছের আড়তে আগুন জ্বেলে দেয়। তারপর সেই অচেনা মানুষের দল ছুটতে থাকে গদাধরের বাড়ীর দিকে।
কুনি বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে একদল অন্ধকার চেহারার মানুষ তাদের ছোট্ট ঘরটার ওপর লাফিয়ে পড়ছে। মায়ের চিৎকার শুনতে পায়। কুনির মা ফুলেশ্বরী পালাতে চায়নি। বলেছে সে পাখী হয়ে উড়ে যাবে। তবে কি মা পাখী হতে পারেনি? মায়ের চিৎকার থেমে গেল ছোট্ট ঘরটাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলেতে থাকে। মায়ের জন্য কুনির বুকটা হুহু করে ওঠে। শব্দ করে কাঁদতে পারে না। ভয়ে গুটিসুটি মেরে বাঁশঝাড়ের ঘন অন্ধকারে নিজেকে লুকিয়ে রাখে।
শেষেরাতে অন্ধকার কিছুটা ফিকে হয়ে এলে কুনি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে বাড়ী দিকে। তখনও বাড়ীর ভিটায় নিভে যাওয়া আগুনের ধুঁয়া উঠছে আর কালো কালো ছাই জমে আছে। কুনি পোড়া ছাইয়ের ভেতরে মাকে খুঁজতে থাকে। ভোরের মৃদু বাতাসে ওড়া ছাই আর ধুঁয়ার ভেতর থেকে একটা কাক কুনির চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গেল। কুনি ডাকল, মা- মা-। দূর থেকে ভেসে এল তার প্রতিধ্বনি, কা- কা-।
***************************