You are currently viewing কবিতা ও সময়ের বহুমাত্রিক চেতনা/ ঋতো আহমেদ 

কবিতা ও সময়ের বহুমাত্রিক চেতনা/ ঋতো আহমেদ 

কবিতা ও সময়ের বহুমাত্রিক চেতনা

ঋতো আহমেদ   

ক্ষমতা বা সিদ্ধান্তের এক-কেন্দ্রীকতা সমাজের ও রাষ্ট্রের ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী করতে বাধ্য। বিগত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তা আমরা আমূল প্রত্যক্ষ করে আসছি এই দেশে। ফলশ্রুতিতে আজকের এই ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংকটের চরম অবস্থার মধ্যে মানুষ। ব্যক্তিগত ও বহির্জগৎ দুটি সমন্বয়ের বিষয়। একটা গূঢ় যোগসূত্র রয়েছে এদের মধ্যে। একটাকে ছাড়া অন্যটা যেমন অসম্ভব, মিলান কুণ্ডেরা যেভাবে তাঁর উপন্যাসে এ দুটি জগৎকে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে দিয়েছেন, সেইভাবে, মনুষ্য জীবনের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সেই সত্য আজ মুহুর্মুহু অন্বেষণ করে চলেছে বাস্তবের অপ্রত্যাশিত অদ্ভুতকে। যা কিনা একই সাথে বাস্তব ও বাস্তবোত্তর, রাজনৈতিক ও দার্শনিক, ঈশ্বরহীন ও ঐশ্বরিক আর শৃঙ্খলাবদ্ধ ও নৈরাজ্যময়। সেইভাবেই আধুনিক মানুষের ব্যক্তিগতের আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে চলেছে জন-পরিসর ও তার সংকট। তাই, সমাজে বাস করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই বোধগম্য হয় আমাদের চরম ব্যক্তিগত সংকটগুলো একেকটা ধ্বংসের ঢেউ হয়ে সমুদ্রের ফসফরাসের মতো আছড়ে পড়ছে যে বহমান মহাসময়ের তীরে, সেই তীরের দিকে তাকাতে, বিশাল ও ব্যাদিত অন্ধকার চিরে, সমসময়ের যে কবিতার পাঠ আমাদের অন্তর্গত পৃথিবীর আশ্রয়-সন্ধান দেয়, সেই কবিতাই আজকের দিনের চিরকালের কবিতা। সেই কবিতাকেই মনে হয় আমাদের আত্মর কবিতা। হ্যাঁ, আজও কোনও কোনও কবির কিছু কবিতার পাঠে এইরকম একটা বোধে এসে উপনীত হতে পারি আমরা। সময়ের যে একরৈখিক গতির চেতনাকে জেনে এসেছি এতকাল, এইসব কবিতায় সেই ধারণাকেই ভয়ংকরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখি। ভেঙে ভেঙে বিচূর্ণ হতে দেখি। কখনও-বা গড়ে উঠতে দেখি নূতন বহুমাত্রিক চেতনার পথও। আর, পাঠক নিজের অজান্তেই সেইসব পথে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন কোথাও। তার ব্যক্তিগত সংকটগুলোয় ধ্বংসের ঢেউ যেমন তাকে উত্তাল করে তোলে, তেমনি তার অভিব্যক্তিময় আত্মপ্রতিকৃতির সাক্ষাৎ তাকে ভীত সন্ত্রস্তও করে। বিপর্যয় আর বিভ্রান্তির ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে এক বহুচেতনার আশ্রয়-তল। অতএব, আজকের সমস্ত কবিতাই যে সেই তল থেকেই উচ্চকিত হয়ে উঠবে তার নিজস্ব স্বরে, এইরকম একটা প্রত্যাশা নিয়ে কেউ যদি তাকাতে চায় কবিতার দিকে, তারে কি ভুল বলবো আমরা? ভুল বলবো তার ওই চাওয়া? কবিতার যে মুখ-আন্ধারি সময়ের ভেতর ফেঁসে যাওয়ার কথা জানি, প্রচারের উল্লাসে যাকে লক্ষ্যহীন অভিযাত্রা কিংবা নিরর্থক সৃষ্টিপ্রয়াস বলেই মনে হচ্ছিল এতকাল, সেই সময়টা কি এখনও পেরোয়নি আমাদের? কবিতায় আত্মমগ্নতা কি এগিয়ে যাচ্ছে না বিশ্বমগ্নতার পথে? হ্যাঁ, সবসময়ের মতো বৃথা আস্ফালনও রচিত হচ্ছে অনেক—অনস্বীকার্য। কবিতায় অন্তঃসারশূন্যতা, বুদ্ধিসর্বস্বতা কিংবা শুধুমাত্র নৈপুণ্য ও চাতুর্যের উদ্ভাসও হচ্ছে অসংখ্য। কিন্তু আবার এই সমস্তকিছুকে ছাপিয়ে, উঠে আসতে চাইছে এমন কিছু লিখা এমন কিছু অগ্নিদীপ্তি যা আমাদের আশ্বস্তও করে। ভরসাও যোগায়। আমরা আপনআপন অস্তিত্বের অসহায়ত্বের সংকটে পাক খেতে খেতে, সমাজের সাথে রাষ্ট্রের সাথে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সংঘাতকে মাঝেমধ্যেই বাস্তবের রূপে পেয়ে যাই। যেহেতু মানুষ মুক্ত বিহঙ্গের মতোই নিজস্ব ইচ্ছা আর কর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। অস্তিত্ববাদীরা যেমন বিশ্বাস করেন সমাজের বা রাষ্ট্রের একজন ব্যক্তির জীবন বা কর্মকে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। তার আরোপিত এইসব বিধিনিষেধগুলি স্বাধীন ইচ্ছা এবং সেই ব্যক্তির সম্ভাবনার বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে। সংঘাত তৈরি করে। তেমনি যখন ব্যক্তিটি দ্যাখেন তার কথা-বলার তার প্রতিবাদের সামান্যতম কণ্ঠস্বরটিকেও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, রুদ্ধ করা হচ্ছে তখন ধীরে ধীরে ব্যক্তিমানুষের অন্তর্ঘাতের গহিন থেকে সেই সংঘাত বিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যায়। আমাদের অসহায়ত্ব তখন আত্মশক্তির উপর দাঁড়িয়ে জীবনমর্মের সমগ্রতায় হয়ে উঠতে চায় উদ্ভাসিত। অগ্নিদীপ্ত ওইসব কবিতা তখন এইখানে এসে হয়ে উঠতে পারে পরম এক আশ্রয়-ভিত।   

কেউ জানতে চায়, ‘কী করো তুমি।’

আমি বলি, ‘পানি খাই, প্রস্রাব করি। বাতাস থেকে
দম নিয়া বাতাসে ছাড়ি। নয়ন দিয়া দুনিয়া দেখি, কান
দিয়া গান শুনি। পা দিয়া হাঁটি আর হাত দিয়া ধরি।
রাত্রিবেলা ঘুমাই, দিনে জাগি। ঘুমের ভিতর স্বপ্ন দেখি,
জাগার ভিতর পাখি…।’

সে বলে, ‘কী কাজ করো, মানে চাকরি?’

আমি বলি, ‘ও গোলামি? আমি গোলামের বাচ্চা না।
আমার দাদার একটা নৌকা ছিল, তিনি দিগন্তে বেড়াতে
যেতেন…। আমার আব্বা কৃষক ছিলেন, ধান ফলাতেন,
পাকা ধান পাখিরা খেতো। আমার আম্মা স্বপ্ন দেখতেন,
আব্বার ঘরে স্বপ্ন দেখাই ছিল তাঁর একমাত্র কাজ
তাঁর স্বপ্নের ভিতর শুয়ে আমিও দেখতাম তাঁর স্বপ্ন-দেখা।
আমার পূর্বপুরুষ কেউ গোলাম ছিল না। তারা প্রেমিক…।’
                                [আমি গোলামের বাচ্চা না/প্রেগন্যান্ট পাগলি ও অন্যান্য কবিতা/মুহম্মদ ইমদাদ]

গ্রীক দার্শনিক পারমিনিডিসকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি সারাদিন ঘরে বসে কী করেন?’ ‘ভাবি, তিনি হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, সব মানুষের মতো আমাকেও জীবন ও জগৎ নিয়ে কিছু সংকট সম্পর্কে ভাবতে হয়।’ মানুষ ভাবে। সেই আদিকাল থেকেই তার ভাবনা জীবন ও মৃত্যুকে নিয়ে। জগৎ ও মহাজগৎকে নিয়ে। মানুষ তার উৎপত্তির কারণ জানতে চায়। প্রেম-ব্যাকুলতার আনন্দ-বেদনার মধ্য দিয়ে শাশ্বত ও নশ্বরতার তার ওইসব ভাবনা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে আসে আজকের পৃথিবীর দিকে। আমরা উপনীত হতে পারি এমন কিছু বোধে যেখানে একমাত্র মানুষই এমন অসম্ভব প্রাণী যে-কিনা সমগ্র জগতে, সমগ্র কালে বাস করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ মানুষ একই সাথে মহাজগৎ এবং মহাকালকেও ধারণ করতে পারে। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিঃশব্দ এই ধারণ। আজকের কবিতায় তাই যখন এইরকম ধারণের ভাষাকে অনুভব করতে পাই আমরা, মনে হয় যেন সেই দৃষ্টিটাই পেয়ে গেছি। ক্রমাগত নিজের অভ্যন্তরের দিকেই নয়, বরং অভ্যন্তরে থেকেও যা আমাদের চেতনাকে প্রসারিত করে বাইরের দিকে, মহাবিশ্বের দিকে। একটা প্রশান্ত অন্তঃসংযোগ টের পেয়ে যাই আমাদের পূর্বপুরুষের সাথে, গাছপালা পশুপাখি সহ পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ ও বস্তুর সাথে, এমনকি পৃথিবী ছাড়িয়ে ওই মহাকাশের প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্রের সাথেও। অনেকটাই নিজেকে বিকেন্দ্রীকরণের মতো এই চেতনার প্রসার-অনুভব আমাদের। নিজেকে সমর্পণের এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক দৃঢ়তা এসে যায়। চির-চলমানতার বোধে আত্মর এই সমর্পণ যেন নিজেরেই সকল কিছুর উৎসে না-রেখে প্রতিটি প্রান্তের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে মহাবিশ্বের—মহাসময়ের অংশমাত্র হয়ে ওঠা। যেহেতু বাস্তবিকই আমরা এক চির-সময়ের সুতোয় গাঁথা।

আবার, অন্তর্গত বেদনায় আমরা বিষাদগ্রস্ত হই ঠিকই। কিন্তু আমাদের আতঙ্ক? আমাদের ভেতরের ভয় যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, তাও তো একসময় তার তীব্রতায় স্তব্ধ করে ফেলে সমগ্র অন্তর্জগৎ। উৎকণ্ঠায় অভিভূত হয়ে পড়ি আমরা। এবং শেষ পর্যন্ত যা দেখতে পাই, যেই বোধে উপনীত হই, তা ওই চলমানতারই তো বোধ। আমাদের অস্তিত্ব আর অনস্তিত্বের ভেতর দিয়ে একইভাবে বইছে। আমরা যেমন জন্মাই, যেমন বেঁচে থাকি, জীবন অতিক্রম করে মরে যাই, এবং আবার জন্মাই। প্রতিদিন তেমনি সূর্যোদয় হয় সূর্যাস্ত হয়, পশুপাখিবৃক্ষের জন্ম-মৃত্যু হয়, নক্ষত্র আর পৃথিবীর আবর্তন হ্য়—হতেই থাকে। সেইরকম। চিরবহমান। আর এই বহমানতা—বিশ্বের এই আবর্তন যেন একধরনের মুক্তির চেতনায় উদ্ভাসিত করে আমাদের মনুষ্য বোধের অঞ্চল। তাই, যখন সমর্পণের ভাবনা আসে, তখন সময়হীনতার চিন্তাও আসে। এটা ঠিক যে সময় সত্যি। আর তা আবর্তিত হয়। এইজন্য, সমর্পণ কেবল নিজস্বতায় আঁকড়ে থাকা নয়, নিজের জীবনের খুঁটিনাটি নয়, বরং সমর্পণ হচ্ছে আঁকড়ে ধরা মুঠিকে খুলে দেয়া, মানসিক অবধারণাকে উন্মুক্ত করা। আর যখন আমরা তা করতে পারি, তখনই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে কীসের সাথে আমাদের যোগসূত্রীতা। কীসে আমাদের শূন্যতার অনুভব, কীসে আমাদের প্রেম। শুধুমাত্র বিষাদই নয়; আজকের কবি এবং তাঁর কবিতা আমাদেরকে জীবনের এইসব বোধের প্রান্তরেও এনে দাঁড় করায়। আজকের কবিতা carving out space for sorrow, for joy, for praise. কবিতার এও একটা বিস্তৃতি আর গুরুত্বের দিক।
এক আশ্চর্য আপেল থেকে বের হয়ে আসছে ছুরি
আমার বুক বরাবর!
এ এক অনিঃশেষ অতৃপ্তি—
একে একে সব ফুল ঝরে যাবার পর
তবু একটি অন্তিম মাধবীলতার ঘ্রাণে
পৃথিবীতে ঘোর নেমে আসে—
আর আমার হৃদয়
মৃত্যুর আঙুল ধরে উচ্চারণ করে—জীবন সুন্দর!
                        [মোহ/ফিরে যাচ্ছে ফুল/শ্বেতা শতাব্দী এষ্‌]

হ্যাঁ, আমরা বিক্ষত। সৌন্দর্য আমাদের মধ্যে জন্ম দেয় বেদনার বোধ। এমনকি আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছুও। কিন্তু ওইসব বাজে ব্যাপার নয় কিছুতে। বরং ভালোই। কারণ ওগুলো আমাদের ক্ষতগুলোকে বিদ্ধ করে, পূর্ণ করে তোলে। তাই যাদের হৃদয়ে কোমলতা রয়েছে, মহাবিশ্বের প্রতি সংবেদনশীলতা রয়েছে, আজকের এইসব কবিতা হয়ে উঠতে পারে তাদেরই জন্য। আমরা এমন এক পৃথিবী চাই যেখানে সবসময় নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে পারবো। যতোই বিচ্ছিন্নতায় আক্রান্ত হই না কেন, নিজেদেরকে বাঁচানোর অসংখ্য উপায় রয়ে গেছে। তাই এই সময়ে এসে আমাদের বুঝে নিতে হয়, the self underneath the self needs witnessing. পাঠে আর অভিজ্ঞতায়, অভিজ্ঞতায় আর পাঠে একসময় আমাদের মনের জানালাগুলো খুলতে থাকে। আমরা গ্রহণ করতে শিখে যাই, শুনতে শিখে যাই। নিজেকে জাহির করার চেয়ে পৃথিবীকে গ্রহণ করাই হয়ে ওঠে বাঁচার অত্যাশ্চর্য কৌশল। সমর্পণে বিলীন হতে হতে পুরো বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার এই প্রক্রিয়াই তো আজকের কবিতার হয়ে ওঠার মূল সুর। যদিও আমরা জানি চলমান এই সময়ের বিষাদ, নৈঃশব্দ্য আর বিচ্ছিন্নতার বোধ আমাদের সঙ্গ ছাড়বে না, তাই এগুলোকে অস্বীকারে নয়, অন্তরে অক্ষত রেখে, সঙ্গে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বিশ্বাত্মার দিকে। একাত্মতার জগতে। বিচ্ছিন্নতাবোধের ভেতর দিয়েই আমরা ছুঁয়ে থাকতে পারি অবিচ্ছিন্নতার অন্তরাত্মা। কবিতায় যেভাবে আমাদের অতীতকে, ইতিহাস চেতনাকে বর্তমানের মধ্যে জারিত করে উচ্চারণ করতে পারি, তেমনি আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবনাকেও করতে পারি শাণিত। লুকিয়ে রাখতে পারি দূর ভবিষ্যতের গূঢ় সংকেত। কখনওবা অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ একাকার হয়ে গড়ে উঠতে পারে কোনও সময়াতীত মাত্রাও।

নিজের জন্য একটি ভবিষ্যৎ
রচনা করছি আমি
যেটি জ্বলজ্বল করবে সেইসব
শহরের আলোয় যা দেখিনি এখনও
যেখানে প্রদর্শিত হবে আমার
কাঁপাকাঁপা হাতের শিল্পকর্ম
হ্যাঁ, মনে হচ্ছে এগুলোই সব
যা নিয়ে এখনও লিখিনি আমি, কবিতা
                    [ভবিষ্যৎ/গতকাল আমি ছিলাম চাঁদ/নূর উন্‌নাহার]

আবার, অন্য অর্থে ভাবলে, একটু আগেই আজকের দিনের চিরসময়ের কবিতা বলে যা ভাবছিলাম আমরা, তেমন কিছু কি হয় আদৌ? সময় তো পরিবর্তনশীল। এইজন্যই হয়তো মধুসূদন দত্তের আধুনিক ওই কবিতাগুলো আজ আর সেইভাবে পড়তে পারি না আমরা! সময়ের দূরত্ব আর ভাষার পরিবর্তন এসে দাঁড়িয়ে যায় মাঝেখানে। এইখানে তাই নিয়ে আসা যায় আপেক্ষিক স্থায়িত্বের কথাটিকে। সমাজ বদলায়, সমাজের ভেতরের সার্বক্ষণিক দ্বন্দ্বও বদলায়। বদলায় ভাষা। আর তার কালও নিরবধি নয়। বরং খণ্ডকাল বর্ণিল। কালোত্তীর্ণ কবিতা তাহলে কী? সমস্ত গতি এবং পরিবর্তনশীলতার মধ্যেও যেইসব কবিতা আমাদের চেতনার সাথে গভীর এবং অচ্ছেদ্য সম্পর্ক অনুভব করায়, আক্রান্ত করে জর্জরিত বর্তমানকেও, সেই কবিতাকেই আমরা রাখতে পারি আপেক্ষিক চিরন্তনতার কাতারে। এ অবশ্য কবিতার স্থায়িত্বের কথা। একরৈখিক সময়চেতনায় কবিতার কালোত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপার। কিন্তু আমরা কথা বলছিলাম সময়ের বহুরেখ-বোধের ধারণার। কবিতার অন্তর্গত চেতনার। যা আমাদের অনুভব করায় মহাকালকে, স্পর্শ দেয় মহাজগতের—বিস্ময়কর সমগ্রতায়।

৬ই মার্চ, ২০২২।