You are currently viewing কবিতাঞ্জলি

কবিতাঞ্জলি

 

May be an image of 1 person

জুলি রহমান

আমার বাবা

বাবাকে আমার পড়েনা মনে।
গত হয়েছেন একাত্তর সনে।
দিনটি ছিলো চৈত্রের ঝাঁঝালো দিন
সেই স্নৃতির মণিদ্বীপ জ্বালিয়ে ঘুচাই ঋণ–

কতো কথার মালায় বাবা করেছেন গান।
মায়ের বুকে লুকিয়ে মুখ শুনেছি অফুরান!
বাবার পুঁথি পাঠের আসর জমপেশ
বর্ষার জলে হুরিজুরি বিলে তা অনিশ্বেষ–

জয়গুন বিবির নামে তজিম মারতো যখন টান
আবেদ আলীর বুক ভেঙে হয়ে যেতো খান খান।
মারেফাতে মাউলাজী আর নিজাম বয়াতি
নিরক্ষর রাঙা দাদু কাব্যে রাখতেন আরতি–

আমার বাবা মাকে করতেন সন্মান।
পটারী অংকনে রাখেন অবদান।
নদীর তলদেশের মাটি খুঁড়ে দিতেন মাকে
অংকনে যেনো পড়তে হয় না বিপাকে–

পুঁইয়ের গোটায় করে রং বলতেন নাও ফাতেমা।
রাঙিয়ে তুলো তোমার অংকিত প্রতিমা।
বর্ষায় বাবার ছিপি নৌকা রঙধনু রঙে
সাজিয়ে বাবা বসাতেন মাকে নায়রীর ঢঙে–

ভাসিয়ে নাও বর্ষার জলে গাইতেন মন খোলে
মরার কোকিল তুই ডাকিস না কদমের ডালে
হায় বিধাতা বৈরী সুখ সইলো না কপালে
বিধি হলো বাম স্বামীহারা ফাতেমা ভাসে চোখে জলে–

কলমাই নদীতে চলে যখন বাইচের নাও।
আমার বাবার ছিপি নাও দোড়ানি বাও।
ভিজে চোখ হাজার স্নৃতির উঠে ঢেউ।
নদীর জলে চোখের জলে দ্যাখেনি তা কেউ।

বাবার স্বপন পূরণে মা তৎপর হলেন
সাতটি সন্তানেরে সাতটি নক্ষত্রে গড়েন।
ফাতেমা তজিম ধামরাই ব্যাপী একনামে
তজিমের বড়বাড়ি থাকে  চাপিল গেরামে।

ডক্টরাল দলিল ইলিয়াস সাভার কলেজ।
মেধাবী ফাতেমা রাখতেন বেশ নলেজ।
পলি জুলি লুৎফা কেউ কম নয়!
দিয়ে গ্যাছেন বাবা মা সন্তানের পরিচয়–

ইয়াকুব ইউনূছ বংশ মর্যাদায় বড়বাড়ি
করে যাচ্ছে দিনরাত খেদমত তারি
বাবা দিবস এলে সবাই লিখে বাবা কথা
আমার ভেতরে বাড়ে দ্বিগুন ব্যথা–

অনেক প্রিয় বাবা আমার পড়ে না মনে আদল
জলের ঢেউয়ে যেমন নড়ে জলের আঁচল।
যতবার ভাবি তাঁরে ভেঙে টুকরো মুখ
বুকের গহীন তলে বাড়ে কঠিন দুখ-

নিউইয়র্ক-২০২১ইং ১৯শে জুন।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য 

ভোর তিনটে র ভাবনা 
ভোর তিনটেতে
স্বপ্নের বাতিগুলো
সুখ আনন্দ
ফেরী করে রূপকথা ,
মিশে মিশে
দৃঢ় সমুদ্র ফেণিল
ছবিকর আঁকে
রঙ্গীন বাস্তবতা।
এত আলো …
আকাশ এ  ধানের শীষে
স্বপ্ন আশায় বয়ে নিয়ে যায়
ভোর তিনটেতে ,
তিনটে – কে কি ভোর বলা যায়
বাইরে যে ঘণ
মিশকালো শূন্যতা
ভিতরে স্বপ্নশিখা লেলিহান
চোখ বুজলেই আলো।
দুচোখে গভীর
আকুতি বাঁচার
পল পল বেঁচে থাকা ….
রূপ রস রং এ
রূঢ় বাস্তব
তিলে তিলে
ছবি আঁকা।
ভোর তিনটেতে
আশা নিয়ে
বাসা বাঁধা
তিন প্রহরের
নিদ্রা শুষেছে গ্লানি …..
স্বপ্ন শকটে
নেশায় বিভোর মন
মুদ্রায় তারই
উত্তেজনার ধ্বনি।
মন সঙ্গীত এ
ঝরনা বেঁধেছে সুর
মৃদঙ্গ বাজি তানপুরা বাজি
নীরবতা খানখান ,
সুখতারা পটে
আকাশের তটে
জিনপরী দেয় সারি
অনাবিল মাঝরাতে।
অনাবাদি যত
মনের পতিত জমি
কর্ষণ করি
অনাগত বর্ষণে ,
মাঝ রাত্তির এ
ত্বরিত তড়িৎ ঝলক
ঊষা আগমণী
হর্ষ আলোর বাণী।
পুলক বড়ুয়া
যাযাবর
আজ আমার প্রার্থনার মুন্ডুপাত হল
দাবানল, মুহুর্মুহু গনগনে মহড়া, ভাঙচুর
মকশো করা তান্ডব, নীল নকশা
লেলিহান কালো পাথুরে মেঘদল
কৃষ্ণশিলাবজ্রবৃষ্টিপাতগুলি
গোছানো সব, সয়ে গেলাম
তেঁতুলিয়া হতে টেকনাফ
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল
পা হতে মাথা অব্দি
অমীমাংসিত জলহাওয়া
মন-মানচিত্র প্রলয়
কালরাত্রির মতোন কালো হাতের ছোবল, জঙ্গি-ফণা
শারদীয় দেশ-কাল-পাত্রের গাত্রে
রক্তের আল্পনা, রক্তাক্ত আল্পনা
কালো মুখোশ—ধুন্ধুমার যুযুধান প্রসাধন
উদ্ভট-আজগুবি-নর্তন-কুর্দন—কালিমা প্রলেপন
শঙ্খে ষষ্ঠী
আপদে অষ্টমী
বিপদে নবমী
মুসিবতে দশমী
অসুর ইশারা, অশনি সংকেত—-রক্তাঞ্জলি :
প্রিয় উৎসব শব
হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী, পীরগঞ্জ …
কোথাও হাতখানা পড়শির না
ওই হাতে কালো-কালোয়াতি
ওই হাত দোজখ-দ্বন্দ্ব-দগ্ধ-অঙ্গার-অভিশপ্ত-অভিযুক্ত
ওই হাত অদ্ভুতুড়ে নগ্ন-কারসাজি
ওই হাত বানোয়াট-তোপধ্বনি
ওই হাত বদ-কালোহাত
ওই হাত বধ-কালো হাত
ওই হাত বিপরীত-বিসর্জন
কুকালো দুবাহু রাহু
ওই হাত প্রাচীনতম
ওই হাত আততায়ী
ওই হাত মধ্যযুগ
ওই হাত ফেরারী
ওই হাত আদিম আয়ুধ
ওই হাত পাথর
ওই হাত অন্ধ-কালাপাহাড়
তার বন্ধ-করতল বদ্ধ মুঠোয় ঘোর পাপ-আন্ধার
ওই হাত কাফির, অমাবস্যা, কালো আলো
ওই হাত উল্টে যাওয়া
ওই হাত পাল্টে যাওয়া
ওই হাত বদলে যাওয়া
কেন নিজের নাক কেটে সুন্দরের আবাহন আরতি-অপমান
এই শাক দিয়ে মাছ ঢাকা…
কেবলি অলস মস্তিষ্ক ইবলিশের ফ্যাক্টরি …
সে এক ভবঘুরে …
এ কোন দেশের রূপকথা
এ কোন নব্য কালের উপকথা
এক দেশে ছিল এক … যাযাবর
শিপ্রা পাল
বদল
ফিরে আসা মানে বদলে যায় চোখ, ভাবনা বদলে যায় আর বদলে যেতে থাকে মনের সুক্ষ্ম অনুভূতি, সব আনকোরা — ছোট্ট একটা কীটও তখন ভীষণ অন্যরকম।  সাদা প্রজাপতি, পাখায় তার কোনো রঙ নেই কিন্তু তবুও সে রঙ ছড়ায়, কিংবা ছিপছিপে রোদ খুচরো কথা ঝুলে-পড়া জ্যোৎস্না রাত ছদ্মবেশের ভেতর তখন কাঁসর-ঘণ্টা । জানালার ওপাশে পোড়োবাড়িতে গজিয়ে ওঠা লতাপাতায় স্পন্দন অনুভব করা যায়, আসলে তখন শ্বাসে জড়িয়ে থাকে ফিকশন।
উল্টোদিকে রোগা ময়লা স্বপ্নহীন এবং দিনশেষে সমস্ত সঞ্চয়ের কোণে হাতুড়ির আঘাত, ফিরে আসা কাকে বলে ওরা জানে না। নগ্ন হৃদয় প্লেটোনিক বোঝে না শুধু বোঝে গরমে লোহা কেমন রূপ বদলে যায়, যতোই কিছু হোক শেষ তো সেই কাগজের নিবন্ধনে।
নির্মাল্য ঘোষ 
চুম্বন 
শুধু একটি চুম্বন যে আলোর রাত্রে
এত অন্ধকার আনতে পারে
জানা ছিল না…
আয়োজন ছিল ষোল আনা…
কিন্তু সেই একটি চুম্বন…
লাগামছাড়া…
সব শুষে নিল নিমেষে…
আমাকে সন্ন্যাসী বানিয়ে পথে বসাল..
যদিও ঈশ্বর অনেক কাছাকাছি…
তবুও সেই একটি চুম্বন…
আমাকে হিজড়ে বানিয়ে দিল…
এক নিমেষে…
আমি নিমেষে উবে গেলাম শরীর থেকে
ব্রহ্মত্বে…
তবুও সেই একটি চুম্বন
আমাকে পিছু ছাড়েনি এখনো…