You are currently viewing কবিতাগুচ্ছ/ নিগার সুলতানা

কবিতাগুচ্ছ/ নিগার সুলতানা

কবিতাগুচ্ছ

নিগার সুলতানা

 

আমার  ইচ্ছেগুলো 

আমার ইচ্ছে  করে  হেঁটে যাই, হেঁটে যাই বহুদূর  পথ,  

হেঁটে যাই শহর, গ্রাম, পেরিয়ে  যাই  থানা, পৌরসভা, নিবুনিবু  বাতি

পুবের  আকাশ, হাটবাজার আর  ছোট  কুঁড়েঘর।

 

হেঁটে যাই সমুদ্রকে  পাশে  রেখে , চেয়ে  দেখি  সার্ফাররা মাছের  মতন  জলকেলী  করে

ঢেউয়ের   চূড়ায়  মেঘমুক্ত  আকাশ  আর  নবীন সূর্য  হাঁটু  গেড়ে  বসে

অবাক  চোখে  অপলক  আমায়  দেখে,    

সৈকতে  মুক্তো  দানা  বাঁধে  ধীরে , অক্টোপাস  রোদ পোহায় , আর  আমি   

নীরবে  হেঁটে  যাই,  ধীরে  ধীরে,  ঝাউ  বন  আর  সূর্যাস্তের  দিকে

 

আমার  শুধু  ইচ্ছে  করে  হেঁটে যাই দেশের  পর  দেশ , সঙ্গী  হই এক  গানের  দলের  

বাজাই  কোনো  সুর , গোল  হয়ে  বসে  আগুনের  পাশে,  

শুক্লা  দ্বাদশীর  রাতে, শিশিরের  বাঁশিতে  নেমে  আসুক  ধুধু জোছনা,    

সমস্ত  জৈবিক  শোক  করি  অস্বীকার, শুধু  একটি  গান  গাই   

তোমাকে  পাবো  বলে, পরমাত্মা , শুধু  তোমাকে  পাবার  আশে।

 

আমার  বড় ইচ্ছে  করে  হেঁটে যাই , এক প্রহরী  পাহাড়ের  পাশে

ছুঁয়ে  দেই  গুল্ম , ছুঁয়ে  দেই  সলাজ  লজ্জাবতী

উড়ে  যাই , ভেসে  যাই  আগুন  রঙা  কৃষ্ণচূড়ায়  আর  টলোমলো মাতাল  হাওয়ায়;

আমার   ইচ্ছে  করে  হেঁটে  যাই  মহাদেশ, হই এক  গৃহত্যাগী  বিষন্ন  বাউল   

যার  নেই  কোনো  সংসার নন্দন , সামাজিক  বন্ধন, যে  এক  মুক্ত  স্বাধীন  চড়ুই  পাখি

নৈবদ্যের   আশায়  হেঁটে  যায়, উড়ে  যায়  প্রতিক্ষণ। 

এই  বিরহী  আমি, উপবাসী  আমি  ছেড়েছি  ঘর, জানিনা কিসের  অন্নেষণ, 

শুধু বড় ইচ্ছে  করে  এই  জীবন  কাটিয়ে দেই  শুধু  পায়ে  হেঁটে, শুধু  পায়ে  হেঁটে।

 

বিলম্বিত  বসন্ত  

মানুষগুলি কাঁদছিলো অশরীরী আত্মার মতো, 

মানুষগুলি  বিচ্ছিন্নভাবে  ছুটছিল, আকাশ  থেকে  নামছিলো  বিন্দু  বিন্দু  আগুন  

একটা  স্ফুলিঙ্গ  পার  হতেই  খাঁখাঁ পোড়াগন্ধ ,  

অসহায়  অবুঝ  দৃষ্টি দিশেহারা, বিহ্বল

পৃথিবীর  কি  হলো  কোনো  ভীষণ  অসুখচারিদিক  অতি  উজ্জ্বল

মানুষগুলি  বাস্তবে  ফিরছিলো  তখন, উন্মুক্ত  চক্ষুপত্র,   

বুঝিবা  আজ  বসন্তের  প্রথম  সকাল , এসেছে  অতি  কাঙ্খিত  ফাগুন !

বরফপঁচা গুহায়  দীর্ঘ  যাপিত  জীবন  শেষে, নেমেছে  ঢল   

বিলম্বিত  বসন্ত  দুয়ারে, আনন্দ  কোলাহল। 

 

মানুষগুলি  ভালোবাসছিলোস্নিগ্ধ  আলিঙ্গনে  খুব  কাছে  

হলুদ  পাখির  সকাল , কমলা  রঙের  বনরাজি   

এক  টুকরো  উষ্ণ  আকাশ  আভাস  দেয়, প্রিয়মানুষেরা বেঁচে  আছে  

বেঁচে  আছে  দীর্ঘ  শীতকাল  শেষে  ধবল  তুষারে  জমে  যাওয়া  মাটি,   

শিশুদের  উৎসব  মুখরিত  প্রাঙ্গন, কোমল  মধুর  হাসি  

বেঁচে  আছে  নারী , সপ্তর্ষিমণ্ডল , অধরা  শুকতারা  

মানুষগুলি  হাসছিলোনিষ্পাপ  শিশির  কণার মতো

মানুষগুলি প্রার্থনা করছিলো, এক  বিকেল গোলাপ বুকে নিয়ে

 তাই  আজো  এদেশে  বসন্ত  আসে , পাশে  বসে  আর ভালোবাসে !

 

ভালোবাসা, অথবা কিছুটা প্রণয় ! 

যেই  বিকেলে  প্রথম  তোমার  সাথে  কথা,   অদ্ভুত ভাবেই সংযোগ; 

নির্ঘুম  কাটে  সেই  রাত, প্রতি  ঘন্টায়  চোখ যায়  সময়ের  পর্দায়;  

অস্থির, মৌন  হৃদ  মাঝার, মন  পাখির  পালক

এই  বুঝি  সকাল, এই  এলো  বুঝি  তোমার  বার্তা  I

 

যেদিন  প্রথম  বললে  ভালোবাসো; বলেছিলে মিথ্যে তুমি বলোনা;

হেসে  উড়িয়েছি  সেই  সন্ধ্যা , নিজেকে দেখেছি মুগ্ধ

খোলা  চুল, লাল  টিপ আর  সাদা  শাড়ীতে বারবার  

নিজেকে  বলেছি  ভালোবাসা  নয়,   আমার প্রতি তোমার  প্রণয়  ! 

পরদিন  সকালে  আবারো  যখন  বললে  ভালোবাসো , বুঝেছিলাম  ভালোবাসা  নয় ,

এ যে আমার  প্রতি  তোমার  শুধুই  প্রণয়  ! 

 

যেদিন  প্রথম  দেখা দীর্ঘপ্রতীক্ষিত! 

সেই  সুনীল  ভোর  আর  সূর্যের  মাদকতা 

আমার  কাব্যে  তুমি  এক  রূপকথার  স্বপ্নমানুষ , আর কিছুটা মিথ্যে

তোমার  কণ্ঠস্বর, তোমার  দীর্ঘ  বাহু, নিঃসঙ্গ  কবির  মতো  চোখ

আমাকে  জড়িয়েই  থাকে  পরম মমতায় আর দারুন  আশ্বাসে

আমি  বুঝতে  পারি, ভালোবাসা  নয়

এ যে  আমার  প্রতি  তোমার  গভীর  প্রণয়  !