You are currently viewing কথোপকথনের শিল্পকলা এবং ভাষার বিশ্বায়ন || মনজুরুল ইসলাম

কথোপকথনের শিল্পকলা এবং ভাষার বিশ্বায়ন || মনজুরুল ইসলাম

মনজুরুল ইসলাম

কথোপকথনের শিল্পকলা এবং ভাষার বিশ্বায়ন

{প্রবন্ধটি স্নাতক ও  স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রমিত ভাষায় উৎকর্ষ অর্জনে আগ্রহীদের জন্য রচিত। এবং প্রমিত পদ্ধতিতে কথোপকথনের সংস্কৃতিবিশেষত প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে গড়ে ওঠে সেটিও এই রচনার অন্যতম উদ্দেশ্য। একইসাথে অনুবাদ সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি অর্জনের প্রয়োজনে মাতৃভাষাসহ বিদেশী ভাষায় দক্ষতা অর্জনের সাথে দেশীয় ভূখণ্ডে চল্লিশটি ভাষার সংরক্ষণ এবং তত্ত্বাবধায়নে স্বতন্ত্র ভাষানীতি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত হয়েছে বাংলা ধ্রুপদী সাহিত্যের বিশ্বায়নে কিছু মতামত যা সাহিত্যানুরাগী পাঠকদের চিন্তায় ইতিবাচক অনুভূতিক উদ্রেক ঘটাতে পারে। প্রবন্ধটিতে অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের  ক্ষেত্রে গুণগত এবং সংখ্যাগত উভয় পদ্ধতি  ব্যবহার করা হয়েছে।}

আবেগ ও আবহের ডানাগুলিকে অতি বাস্তবতার সুদৃশ্য মোড়কে উন্মোচনের মূল মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। ভাষার উৎকৃষ্ট ও নান্দনিক পরিবেশনায় ভালোবাসার রং হয় নিবিড়। সময় যতই গড়িয়েছে, ভাষার প্রয়োজনীয়তা ততই বেড়েছে। যোগাযোগের সেতু হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে ভাষার উপযোগিতা। সঙ্গত কারণে আজও ভাষার সৃষ্টি, সংখ্যা এবং বয়স সম্পর্কিত প্রশ্নগুলি মনন থেকে মননে নাড়া দেয়। ভাষা সৃষ্টির প্রকৃত সময় সম্পর্কে প্রত্যক্ষ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ, “মানুষের বাগযন্ত্রগুলি নরম পেশিকলা দিয়ে তৈরি বলে সেগুলির কোনো অস্তিত্ব নেই। সে কারণেই, নৃবিজ্ঞানীদের ভাষার বয়স প্রমাণের জন্যে খুলির হাড়ের ওপর ভিত্তি করেই প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়েছে এবং হচ্ছে।” তবে আমরা যে ভাষায় কথা বলি তা সাধারণভাবে ছ’হাজার বছরের পুরনো (টলারম্যান এবং গিবসন, ২০১২)। এবং পৃথিবীতে প্রচলিত ভাষার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার (হ্যামারস্ট্রম, ২০১৬)। উৎপত্তি কিম্বা ভাষার সংখ্যা যাই হোক না কেন, ভাষা সৃষ্টিতে আদিম সমাজে নিরক্ষর মানব সম্প্রদায় যে প্রয়োজনের তাগিদে কণ্ঠে অসংযত শব্দের মাধ্যমে ভাষার ব্যবহার শুরু করেছিল তা নিঃসন্দেহ। ভাষাবিদ সুকুমার সেনের মতে, ‘‘ভাষার মধ্য দিয়া আদিম মানুষের সামাজিক প্রবৃত্তির প্রথম অঙ্কুর প্রকাশ পাইয়াছিল। ভাষার মধ্য দিয়াই সেই সামাজিক প্রবৃত্তি নানাদিকে নানাভাবে প্রসারিত হইয়া আদিম নরকে পশুত্বের অন্ধজড়তা হইতে উদ্ধার করিয়া তাহাকে মননশীল করিয়াছে।’’

বিশ্বায়নের প্রভাবে মেধা বিকাশের অফুরন্ত সুযোগ আজ অবারিত। তাই মাতৃভাষা এবং আন্তর্জাতিক ভাষাসহ প্রয়োজনানুসারে অন্যান্য   ভাষার নিগূঢ় তাৎপর্য অনুধাবনে প্রয়াসী সবাই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মাতৃভূমির বীরোচিত উপস্থাপন এবং দেশীয় সীমানায় নিজ যোগ্যতার উৎকর্ষ সাধনে বাংলা এবং ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষার ভূমিকা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত প্রশ্নের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে হৃদয় থেকে হৃদয়ান্তরে। কীভাবে ভাষার অসীম সায়রে অবগাহন করা যাবে? অবলীলায় মনের ভাব প্রকাশের পাশাপাশি লেখ্যরূপে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কল্যাণে নিজেকে নিবেদন করা যাবে? উপলব্ধির সিঁড়ি বেয়ে প্রচ্ছন্নভাবে মানব মনীষা প্রত্যক্ষ করছে বিভিন্ন ভাষার হার্দিক সম্পর্ক। ভাষাবিজ্ঞানীগণ উপলব্ধি করতে পারছেন, কতটা শৃঙ্খলিত ও সুবিন্যস্তভাবে গড়ে উঠেছে এক ভাষার সাথে অন্য ভাষার গভীর মমত্ব। সন্দেহাতীতভাবে একটি বিষয় সকলের অন্তর্দৃষ্টিতে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে, ভাষার দৃষ্টিনন্দন ও হৃদয়গ্রাহী শৈলী আয়ত্তে আনবার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা কতটা প্রয়োজনীয়।

মূল প্রসঙ্গে আসি। ভাষার অবগুণ্ঠন খুলে অতলান্তে প্রবেশ করি। দেখি, কতটা বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ ভাষার সুপ্ত সৌন্দর্য। কতটা সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত ভাষার লেখ্য এবং কথ্য রূপ, এক ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার বন্ধুত্ব সৃষ্টির রহস্য। প্রয়োজনীয়তার ক্রমিক অনুসারে ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং সুনিপুণভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ। ভাষার বর্ণগুলো কখনো শব্দ, কখনো বাক্য হয়ে বক্তার কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হয়। কিন্তু, ভাষা বলতে প্রকৃতপক্ষে আমরা কী বুঝি? প্রচলিত অর্থে, ভাব বিনিময়ের নিমিত্তে বক্তার বাগযন্ত্র থেকে উৎপন্ন ধ্বনি (Sound) বা ধ্বনি সমষ্টি হলো ভাষা। স্পষ্ট করে বললে, বাগযন্ত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত ধ্বনির মাধ্যমে আমরা শ্রোতাকে যা বলতে চাই, কিংবা শ্রোতা তার ধীশক্তি দ্বারা বক্তব্য অনুধাবনের পর নিজে শব্দের মালা গ্রন্থিত করে যেভাবে ভাব প্রকাশ করেন তাই ভাষা। আর এই ধ্বনি উৎপাদনের উৎপত্তিস্থল হলো ফুসফুস। “ ফুসফুসে প্রবহমান বাতাস বাগযন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ধ্বনির সৃষ্টি করে। বায়ু প্রবাহের এই প্রক্রিয়াকে বলে ফুসফুসীয় বহির্গামী বায়ুপ্রবাহ কৌশল (Pulmonic Aggressive Airstream Mechanism) (জীনাত ইমতিয়াজ আলী, ২০০১)।” বিপুলা এ পৃথিবীর সব মানুষের কাছে ভাষা গঠনে এই ধ্বনি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য ও স্বীকৃত।

প্রাসংগিকভাবেই ভাষা চর্চায় আমাদের প্রচেষ্টার বিষয়টি উঠে আসে। এবং সেটি হলো- প্রমিত ভাষায় কথোপকথনে আমরা কতটুকু  ব্যাকরণের নিয়মাবলী অনুসরণ করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভাষার সঠিক প্রয়োগে আমরা প্রায়শই ব্যাকরণ চর্চায় উদাসীনতার পরিচয় দিই এবং ব্যাকরণের সাহায্য ছাড়াই কথোপকথনের চেষ্টা করি। ফলে লেখ্য রূপেও এর প্রভাব পড়ে এবং ব্যাকরণ প্রমাদ স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়। আমরা ভুলে যাই, যে-কোনো ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনে ন্যূনতম ব্যাকরণিক ধারণা অর্জন অবশ্যম্ভাবী। বাক্য (Sentence), কাল (Tense) এবং পদ (Parts of Speech)-এর ওপর দক্ষতা অর্জন ব্যতীত ভাষার সুপ্ত সৌন্দর্যটি কি আয়ত্তে আনা সম্ভব? আদৌ কেউ কি আয়ত্তে আনতে পেরেছেন? জীবনের প্রতিটি পর্বে বিষয়গুলো অহর্নিশ চলমান। এই মুহূর্তে আপনি প্রবন্ধটি পড়ছেন। পাঠ শেষে মন্তব্য করবেন। মন্তব্য ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক হতে পারে। যাই হোক না কেন, প্রকাশভঙ্গি কেমন হবে? প্রবন্ধ থেকে প্রাপ্ত বার্তা কীভাবে অনুসরণ করবেন? অথবা, অনুশীলন থেকে কীভাবে পিছিয়ে পড়বেন? সহপাঠী এবং অনুজদের কী কী বার্তা প্রদান করবেন? সেই বার্তা প্রদানের ধরনই বা কেমন হবে? কোনো অস্পষ্টতা গোচরীভূত হলে তা প্রশমনে কী কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন? ভবিষ্যতে কোন কোন নির্দেশনা অনুশীলন করবেন? ভালো করে প্রশ্নগুলো লক্ষ করুন এবং মাতৃভাষায় উত্তর লিখে তা ইংরেজিতে অনুবাদের চেষ্টা করুন। উপর্যুক্ত প্রতিশ্রুত প্রশ্নগুলির উত্তর পেয়ে যাবেন। ধরুন, কেউ তার কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় গেলেন অথবা বাসা থেকে কর্মক্ষেত্রে আসলেন। পথিমধ্যে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো যদি তিনি প্রথমে বাংলায় সাজিয়ে নেন। অতঃপর বাক্য, কাল এবং পদের প্রয়োগ ঘটিয়ে ছোটো ছোটো বাক্য তৈরি করেন, বাক্যের অর্থে যদি বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য ও চাতুর্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন, বাক্য ব্যবহার করে শ্রোতাকে যা বোঝাতে চাচ্ছেন তা বোঝাতে যদি সক্ষম হন, তবে বুঝতে হবে, উপর্যুক্ত বিষয়গুলো অনুধাবনে তিনি সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

পক্ষান্তরে, বাক্যে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তা ব্যর্থ প্রয়াস বলে বিবেচিত হবে। বক্তা যদি দীর্ঘ এবং জটিল বাক্য ব্যবহারের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত ও সাবলীল বাক্য ব্যবহার করেন তবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসবে। সেজন্য প্রচেষ্টার প্রথম প্রহর থেকেই জীবন সংশ্লিষ্ট বিষয় ও ভাবনাগুলো বাংলা এবং ইংরেজি বাক্যে রূপায়ণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। শিক্ষার্থীরা যখন একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠনে প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণে অনুসন্ধিৎসু হয়ে উঠবে তখন ব্যাকরণের অন্তর্দরজার অর্গল খুলে যাবে। প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি পর্ব ভাবনার কুটিরে অর্গলবদ্ধ করে ব্যাকরণের ফ্রেমে বাঁধলে ব্যাকরণের নিগূঢ় রহস্য অনুধাবন সহজ হবে। অভিজ্ঞতা ও অবিরত অধ্যয়নের মেলবন্ধনে একটা সময় আসবে, যখন বাংলা এবং ইংরেজিতে মনের ভাব প্রকাশে বাক্য সাজানোর প্রয়োজন পড়বে না, ভাবনাগুলো অবিকৃতভাবে চলে আসবে। ভবিষ্যতে বাংলা এবং ইংরেজিতে ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো বিষয়ে নিবন্ধ লেখা যেমন সহজ হবে তেমনি কথোপকথনে আসবে সমুজ্জ্বল স্বতঃস্ফূর্ততা। কিন্তু, আমরা যদি উপর্যুক্ত মৌলিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হই তবে প্রমিত বাংলা এবং ইংরেজিতে যুগপৎ মনের ভাব প্রকাশে ব্যর্থ হবো। শুদ্ধভাবে লেখা হবে তো আকাশ কুসুম কল্পনা। একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন – বক্তা মনের ভাব প্রকাশের পূর্বেই অবচেতন মনে তার মস্তিষ্ক বাক্য তৈরি করে নেয়। এক্ষেত্রে পরিপূর্ণ বাক্য গঠনের পর কেবল তা আওড়াতে থাকেন। মস্তিষ্কের সেই কারখানায় বাক্য স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই ব্যাকরণের মৌলিক বিষয়ের ওপর দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবেন চরমভাবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ভাষা শিখনে হামাগুড়ির পর্ব সম্পন্ন করে কল্পিত ভাবনা এবং বাক্যে ব্যবহৃত অর্থকে মনোহর, রসহীন প্রপঞ্চকে রসমণ্ডিত ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে লেখক এবং বক্তা উভয়েরই উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। তাহলে বক্তব্য ও লেখনী অধিকতর প্রাঞ্জল, প্রাণিত ও সুষমামণ্ডিত রূপায়ণে লেখক এবং বক্তা উভয়েই সক্ষম হয়ে উঠবেন। যদি ব্যর্থ হন সেক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত হোঁচট খাবার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। কারণ, তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন প্রশ্নমালা (Questionnaire), বাগধারা (Idioms), ক্রিয়ার রূপের গঠন (Forms of Verbs) এবং শব্দ ( Vocabulary) ব্যবহারে তার সীমাবদ্ধতা।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ স্তরের পাশাপাশি যে কোনো পর্যায়ের উৎসাহী শিক্ষার্থীরা – যে কোনো স্তরে শুদ্ধ বাচনে উদ্যোগী হলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নমালা তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করবেন। অনুশীলনকালীন যে প্রশ্নগুলো তিনি তৈরি করবেন, তার উত্তর প্রদানে মৌখিক অনুশীলন প্রথম শর্তেই অনিবার্য। প্রশ্নগুলো এমনভাবে তৈরি করবেন যার উত্তর বক্তার অর্জিত জ্ঞানের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। সম্ভব হলে বক্তা সঙ্গীকে তার প্রণীত প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করবেন এবং তিনি যে প্রশ্নগুলো প্রণয়ন করেছেন, তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন যদি তিনি জিজ্ঞাসিত হন। ফলে, বক্তার বক্তৃতা প্রদানের ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি যার সঙ্গে কথা বলবেন তাকে বিভিন্ন কোণ থেকে প্রশ্ন করতে পারবেন অবলীলায়। প্রশ্নের যাত্রা শুরু হতে পারে ঘর থেকেই। যেমন – পরিবার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য, বক্তার বাসা, বিদ্যালয় ইত্যাদি। সহজ ভাবনায় ছন্দোবদ্ধ অনুশীলনের দ্বারা কণ্ঠনালীর ( Vocal Cords) জড়তা কেটে যাবে। সেই প্রেক্ষিত বিবেচনায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে মৌলিক বিষয় নির্ধারণ করলেও অনুশীলনে বেগ পেতে হবে না। এবং উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক প্রসূত বিবেচনায় গুরুত্ব প্রদানে ব্রতী হলে ভাবনায় পরিপক্বতা আসবে। গ্রন্থের সাহায্য নিয়েও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যেতে পারে যদি সেই ধরনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।

বাক্য ব্যবহারে সৌকর্যের মাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এবং সময়ে সময়ে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে বাগধারার প্রয়োগ বিশেষভাবে অগ্রগণ্য। কিছু কিছু শব্দ রয়েছে যা নির্দিষ্ট শ্রেণি অথবা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর কাছে অদ্ভুত হিসেবে পরিগণিত হয়। আবার সেই একই শব্দগুলো ভিন্ন কোনো শ্রেণি অথবা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে স্বাভাবিক প্রতিপন্ন হয়। এই বিব্রতকর দিকটি বিবেচনায় রেখে বাগধারার ব্যবহার সমন্বিতভাবে উভয় জনপদের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাছাড়া কোনো নির্দিষ্ট জনপদের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক নিগূঢ় তথ্যাদি সহজভাবে পরিবেশন কিংবা আয়ত্তের ক্ষেত্রে সাধারণ জীবন থেকে সঞ্জাত বাগধারার সময়োচিত প্রয়োগ বক্তা এবং শ্রোতা উভয়কেই তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক হবে। এবং শুদ্ধভাবে লিখবার অথবা বলবার ক্ষেত্রে ক্রিয়ার শুদ্ধ ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি বক্তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করবে। যেহেতু ক্রিয়ার যথার্থ ব্যবহারই বক্তার প্রদত্ত বক্তৃতাটির প্রকৃত অবস্থাকে চিহ্নিত করে।

কথোপকথনের ক্ষেত্রে, বিশেষত নতুন শিক্ষার্থীরা প্রায়শই বিশাল শব্দ ভাণ্ডারের ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় শব্দ আহরণ করতে সক্ষম না হওয়ায় বিপাকে পড়েন। প্রতিদিন একটি  সক্রিয় (Active) শব্দের অর্থ রপ্ত করে সেই শীর্ণ আত্মবিশ্বাসে শৌর্য জাগাতে প্রয়াসী হলে প্রতুল প্রশান্তি হৃদয়ে দোলা দেবে। ৩৬৫ কিংবা ৭৩০ দিনের সমপরিমাণ শব্দের অর্থের ওপর দক্ষতা অর্জিত হলে আত্মবিশ্বাসের পাল্লা ভারী হবে। শৈশব হতেই আমরা বাংলা এবং ইংরেজি শব্দের তরীতে ভেসে চলেছি। কিন্তু, সমস্যাটি হলো স্পষ্ট দিবালোকের মত সত্য এই স্মৃতি ধারণে আমরা নিস্পৃহ রয়ে যাই। একটু সতর্ক হয়ে সেই তরীতে সঞ্চিত শব্দগুলো উত্তোলন করে পুনরায় স্মৃতির পিঞ্জরে পুঞ্জীভূত করলে প্রকারান্তরে আমরাই যে লাভবান হবো তা বুঝতে চাই না। বাংলা এবং ইংরেজি, যে ভাষাতেই লিখতে চাই অথবা কথা বলবার চেষ্টা করি না কেন, শব্দের অলংকার স্থাপন করতে না পারলে তা কখনোই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বিষয়টি বিপরীত হলে লিখতে গিয়ে কলমের কালি যেমন ফুরিয়ে আসবে, তেমনি বলতে গিয়েও অনবরত শব্দের শিল্পিত পালক ঝরে পড়বে। তবে লেখকবৃন্দের ক্ষেত্রে যিনি গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা কিম্বা উপন্যাস লিখবেন অবশ্যম্ভাবীভাবে তাকে তার শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে বিরতিহীন চর্চা চালিয়ে যাবার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবার প্রশ্ন আসবে। শব্দের সীমাবদ্ধতা থাকলে তার লেখা স্বাভাবিকভাবেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে না। একই শব্দ যখন বারবার একটি গল্প, প্রবন্ধ কিংবা কবিতায় ব্যবহৃত হবে তখন তার সীমাবদ্ধতা যেমন গোচরীভূত হবে তেমনি পাঠকের মননে সৃষ্টি হবে বিরক্তির ভাব।

যাই হোক, অতঃপর বক্তা প্রস্তুতি ব্যতীত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে কীভাবে বক্তৃতা প্রস্তুত করবেন, কী কী বিষয়ে, কীভাবে বক্তৃতা শুরু ও শেষ করবেন তার কৌশল আয়ত্ত করবেন। মনে রাখতে হবে, কোনো সেমিনার কিংবা আয়োজিত অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে বক্তৃতা শুরু করা বিব্রতকর এবং বক্তা যদি আনাড়ি হয়, তবে তো কথাই নেই। যথাসম্ভব আনুষ্ঠানিকতা বজায় রেখে বক্তব্য শুরু এবং শেষ করবার দিকে মনোযোগী হতে হয়। সুতরাং, আড়ম্বর কিংবা অনাড়ম্বরপূর্ণ যে কোনো অনুষ্ঠানে মানসম্পন্ন বক্তৃতা প্রদানে বক্তাকে কিছু প্রপঞ্চের (Phenomenon) ওপর গুরুত্ব প্রদানে যত্নশীল হতে হবে – যার কোনো বিকল্প নেই। শব্দ অনুশীলন (Word Study) হতে পারে সেই প্রপঞ্চের প্রথম সোপান। বক্তা তার চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা অজস্র শব্দ দিয়ে কথার মালা গ্রন্থিত করলে ধীর গতিতে হলেও তিনি পরিপূর্ণতার দিকে এগুতে থাকবেন। প্রথমেই একটি পছন্দসই শব্দ নির্বাচন করা যেতে পারে। শব্দটি হতে পারে “মা” (Mother) কিংবা “ফুল”(Flower)। অতঃপর উক্ত শব্দ নিয়ে বক্তা তার চিন্তার স্রোতকে চতুর্দিকে প্রবাহিত করবেন। “ফুল’’ এবং “মা” শব্দ দুটো কোন কোন বাক্যের ক্ষেত্রে সম্পর্কিত করলে শব্দ দুটির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে তা বক্তৃতা প্রদানকারী বিবেচনা করে বাক্য গঠন করবেন। এবং তা বক্তৃতা আকারে প্রকাশের চেষ্টা করতে থাকবেন নিয়মিতভাবে।

যে কোনো ভাষায় অনর্গল ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কথোপকথনে (Conversation) ব্যক্তিক, রাষ্ট্রিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শৈক্ষিক এবং মানবিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য। প্রারম্ভিক পর্যায়ে ভীতির মৌচাকে ঢিল ছুঁড়ে সক্ষমতা অর্জনে কথোপকথন পাঠ দেখে দেখে অনুশীলন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে বিষয় নির্ধারণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে যে-কোনো বিষয়ের ওপর দু’জন শিক্ষার্থী কথোপকথন অনুশীলন করবেন। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ বাংলা এবং ইংরেজিতে কথোপকথনের ক্ষেত্রে অকারণ লজ্জা অনুভব করেন। শিক্ষার্থী যত বেশি শুদ্ধ ভাষায় কথোপকথন করবেন, ততই তার ভেতরে আজন্ম আশ্রিত জড়তা কেটে যাবে। এবং শিক্ষার্থীর অন্তঃকরণে যে ধারণাটি ধীরে ধীরে মূর্ত হয়ে উঠবে সেটি হলো – নিজেকে যোগ্য বক্তা হিসেবে প্রস্তুতে নিরন্তর কথোপকথনের বিরতিহীন চর্চা। যেহেতু যে কোনো ভাষায় শুদ্ধভাবে মনোভাব প্রকাশ একটি স্বাভাবিক এবং চলমান প্রক্রিয়া সেহেতু শুদ্ধ বাচনের অভ্যাস যিনি যত দীর্ঘ সময় ধরে করতে পারবেন তিনি তত বেশি পারঙ্গমতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু, কথোপকথন প্রক্রিয়ায় নিয়মিত বিরতি প্রকৃতই কোনো সুফল বয়ে আনবে না। তাই, একজন সঙ্গী নির্বাচন করে সর্বাবস্থায় কথোপকথনের অবিরাম প্রয়াস- প্রস্তুতিতে নিয়ে আসবে ভিন্ন মাত্রা। বক্তা এবং শ্রোতা, উভয়ই কোন কোন বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন – সেটি হতে হবে স্পষ্ট। পারস্পরিক এই সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব শিখন-প্রক্রিয়ায় অনুরঞ্জনের সৃষ্টি করবে। দুজন দুজনকে বুঝবার উপলব্ধি শিখনের ক্ষেত্রে উভয়কেই সমৃদ্ধির পথে ধাবিত করবে।

কথোপকথনে অপেক্ষাকৃত দুর্বোধ্য ভাষার (Flowery Language) ব্যবহার পরিত্যাগে মনোনিবেশ বাঞ্ছনীয়। সবসময়ই সহজ শব্দ ব্যবহার করে বক্তা তার সঙ্গীকে যা বোঝাতে চান তা বোঝাতে পারাই হবে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। যে কোনো বিষয়ে বক্তৃতা প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা পরিত্যাগকরণ বক্তৃতার গতি সচল রাখে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, পরিস্থিতি দীর্ঘ বাক্য ব্যবহারে আবহ সৃষ্টি করলে পৌনঃপুনিক সূত্র (Recurcive Rule) ব্যবহার করে বাক্যের অন্তর্দ্বার উন্মোচনের অসীমতা সৃষ্টি করা যাবে, অবলীলায় দীর্ঘায়িত যৌগিক বাক্য ব্যবহার কবে বক্তৃতায় ব্যঞ্জনার পুঞ্জ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনে ব্যাকরণের দিকে মনোযোগ না দেয়াই শ্রেয়। বরং অনর্গল কথা বলার দিকে (Fluency) মনোনিবেশই প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত। পরবর্তীকালে যখন বাকপটুতা (Fluency) আসবে তখন নির্ভুলতার (Accuracy) পথে তরী বেয়ে যাওয়াকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেও কথোপকথনে গতি সঞ্চার করা যেতে পারে। যেহেতু উক্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কথোপকথনের অবারিত দ্বারটি উন্মোচিত হয়ে থাকে শিক্ষার্থীদের কাছে। পাশাপাশি শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীর যোগাযোগের  পথটি মসৃণ হয়ে ওঠে এবং শিক্ষার্থীদের সাথে গড়ে ওঠে গভীর বন্ধুত্ব। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয় তাদের চিন্তার স্রোতটিকে বিভিন্ন দিকে প্রক্ষিপ্ত করতে। যেহেতু সূক্ষ্ম চিন্তাশক্তি ও যথার্থ যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিপরীত দলের সাথে সাফল্যের অভিপ্রায়ে মুখোমুখি হবার বিষয়টি সামনে এসে উত্থিত হয়। সৃজনশীলতার বীজটিও উদগমিত হয় তার বোধের গর্ভে – তারই অন্তরালে। এবং স্বাভাবিক জীবন প্রবাহের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুদ্ধভাবে মনোভাব প্রকাশের বিষয়টি প্রতীত হয়ে ওঠে অত্যন্ত সহজ এবং সাবলীল হিসেবে।

এ লক্ষ্যে প্রতিদিনই এক পৃষ্ঠা পাঠানুশীলনকরণ ( Reading) নির্ভুলতায় দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষত বাকপটুতায় (Fluency) দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে। শিশু চিত্তে সরব পাঠের অভ্যাস গঠনের প্রয়োজনীয়তা বিপুল। পরিণত বয়সে পাঠক সরব ও নীরব উভয় পাঠের অভ্যাস গঠন করতে পারেন। সরব পাঠের ক্ষেত্রে যদি পাঠকের চিত্ত ও মস্তিষ্কের মিলন না ঘটে তবে নীরব পাঠই শ্রেয়। প্রারম্ভিক পর্যায়ে ধীরগতিতে পাঠ শুরু করে পরবর্তীকালে দ্রুততার সাথে পাঠাভ্যাস একজন প্রকৃত পাঠকের বিশিষ্টতা। এই ধরনের পাঠক সহজেই অনুধাবন করতে পারেন-পাঠের বিষয় প্রাথমিক পর্যায়ে হবে অতীব সহজ এবং পরবর্তী সময়ে হবে তুলনামূলক জ্ঞানগর্ভ। তিনি প্রবলভাবে অপেক্ষা করেন সেই মুহূর্তটির জন্য, যখন সময় নির্ণায়ক ঘড়িতে নিরীক্ষার দৃষ্টি স্থাপন করে দেখবার প্রয়াস পান, কত অল্প সময়ে অধিক শব্দ পাঠ করতে পারছেন। এবং অবশ্যম্ভাবীরূপে পাঠককে পাঠের ভাব আত্মস্থ করবার পরই কেবল অধিক শব্দ পাঠের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। মূল ভাব আত্মস্থ না করে অধিক শব্দ পাঠ করলে কালক্ষেপণ ব্যতীত আর কিছুই হবে না।

পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়েও সাম্প্রতিক বিষয়ে ব্যবহৃত নিত্য নতুন শব্দগুলি আয়ত্তে আনয়নও হবে সুবিবেচনাপ্রসূত। প্রতিদিন বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকা পাঠের অভ্যাস বয়ে নিয়ে আসবে প্রত্যাশার অধিক প্রাপ্তি। সম্ভব না হলে সপ্তাহে একদিন যে কোনো একটি বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকা কিনে পুরো সপ্তাহব্যাপী অধ্যয়ন করা যেতে পারে। কিন্তু যেভাবেই হোক পাঠের ধারাবাহিক কাজটি অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। যে বিষয়গুলো অনুধাবনে অপেক্ষাকৃত কষ্ট উপলব্ধ হবে, তা সমাধানে একবার নয় বরং একাধিকবার অভিধানের কাছে ছুটে যেতে হবে। পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত নতুন নতুন এবং অজানা বাংলা ও ইংরেজি শব্দগুলো নোট খাতায় লিপিবদ্ধ করা হবে আবশ্যকীয়। পাশাপাশি সেই শব্দগুলো প্রয়োগের চর্চা করতে হবে নিয়মিতই।

সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর কথোপকথনে বক্তাকে অবশ্যই সাম্প্রতিক সমস্যার ওপর নতুন নতুন শব্দের অর্থ আনয়ন করতে অতি সাবধানী হওয়া সবিশেষ জরুরী। নিয়মিত পত্রিকা পাঠ নিত্য নতুন ও প্রয়োজনীয় শব্দগুলো আয়ত্তে আনতে অবশ্যই পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হবে। পাঠে কষ্ট দৃষ্ট হলে যে পাতায় স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রা ঘনীভূত হবে, সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখাই হবে বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়াস। এটি প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা যে, যে কোনো ভাষায় বক্তৃতা প্রদানের ক্ষেত্রে শব্দের সক্রিয় এবং সুদূরপ্রসারী ভূমিকা সীমাহীন। অনেক সময় একটি সঠিক শব্দের প্রয়োগ শ্রোতার কাছে বক্তার বক্তৃতাকে অমূল্য করে তোলে, একইভাবে কোনো শব্দের অযথার্থ প্রয়োগ বক্তৃতার সৌন্দর্য বিপুলভাবে হ্রাস করে। সুতরাং যার ভান্ডারে শব্দ সংখ্যার মাত্রা যত বেশি উন্নীত হবে এবং শব্দ ব্যবহারে যিনি যতটা পারঙ্গমতা অর্জন করতে পারবেন, তিনি নিশ্চিতভাবে বক্তৃতা কিংবা লেখনী সর্বাধিক উপাদেয় হিসেবে পরিবেশন করতে সক্ষম হবেন।

স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট দল গঠন পূর্বক শুদ্ধ ভাষায় কথোপকথনের নিরন্তর চর্চায় সাফল্য প্রাপ্তি একটি প্রমাণিত উৎপ্রেক্ষা। এই সময়ে তারুণ্যের ঢেউ হৃদয় সরোবরকে যেভাবে তোলপাড় করবে সেই সময়টিই হবে সকল সময়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাই, ভাষা শিখনে উপযোগিতার উপলব্ধি ও অর্জনের আনন্দের বীজ বপন করতে পারলে, শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বৃহৎ ফলদায়ক বৃক্ষে পরিণত হবে। যেহেতু সকলের মেধা সমান নয়, কেউ ব্যাকরণে ভালো, কেউ হয়ত লেখায় পারদর্শী আবার কেউবা বাচনে দুর্বল। সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন জ্যেষ্ঠ ও বন্ধুদের সহায়তায় দল গঠন উপর্যুক্ত দুর্বলতা প্রশমনের দ্বার উন্মুক্ত করবে। এতে বক্তব্য উপস্থাপনে বক্তা যেমন সাবলীল হয়ে উঠবেন তেমনি আত্মবিশ্বাসের পাতা ঘন সবুজ হয়ে উঠবে। তবে শ্রদ্ধার সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি দলবদ্ধ অনুশীলন শিখনে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এবং হৃদ্যতাপূর্ণ আবহের সৃষ্টি করে, যা শিখনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। শ্রোতাও উৎকণ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সবল এবং দুর্বল সকলের বক্তব্যই গুরুত্ব ও শ্রদ্ধার সাথে শোনার প্রয়াস পায়।

প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রশ্নমালা পদ্ধতির ন্যায় সহজ বিষয় নির্ধারণের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে গভীর ও জ্ঞানগর্ভ বিষয় নির্ধারণ, বক্তার জন্য অনুকূল আবহ সৃষ্টি করবে। একদিন হয়ত বক্তা যা বলতে চাইবেন, তাই সাবলীলভাবে বলতে পারবেন। আবার এমনও দিন আসবে, ব্যাপক প্রস্তুতি সত্ত্বেও বক্তা কিছুই বলতে পারবেন না। এমনটি ঘটা খুবই স্বাভাবিক। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে ঘাবড়ানো কিংবা আত্মবিশ্বাস হারানো মোটেও সমীচীন নয়। বরং, বিষয়টিকে প্রশ্রয় না দিয়ে নির্বিঘ্ন অনুশীলনই হবে সাহসী পদক্ষেপ। প্রতিদিন একই শিক্ষার্থী উপস্থাপন করবার পরিবর্তে এক একজন করে উপস্থাপনা করলে সকলেরই উপস্থাপনার ওপর দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এবং নিশ্চিতভাবে নতুন নতুন শব্দ আয়ত্তে আসবে। কারণটি খুবই স্পষ্ট। সংখ্যার আধিক্যে একেকজন একেক ধরনের শব্দ ব্যবহার করবে। শুধুই কি শব্দ? বলার ধরন, উচ্চারণ ভঙ্গি, তথ্য উপস্থাপনাসহ অনেক বিষয়ে ধারণা লাভ করা যাবে অল্প সময়ের মধ্যেই। বক্তার একটি ভালো শব্দ অথবা উচ্চারণে শ্রোতা যদি আকৃষ্ট হন, তবে বিনা দ্বিধায় উক্ত শব্দের অর্থ এবং উচ্চারণ কৌশল তার কাছ থেকে জেনে নেওয়ার মানসিকতা গঠন – শুধু ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, জীবনের সকল ক্ষেত্রে অতীব প্রয়োজনীয়। হীনমন্যতায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থতা সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই। পুনরায় বলতে চাই, প্রমিত ভাষা চর্চায় শুদ্ধতা আনয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই, লজ্জা কিংবা মানসিক দীনতার কারণে শিক্ষার্থী যতই বিলম্বে চর্চা শুরু করবেন ততই পিছিয়ে পড়বেন।

নিয়মিতভাবে BBC, CNN, VOA, DW Documentary তে প্রচারিত English Talk Show, Documentary শুনবার আগ্রহকে অব্যাহত রাখা ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে যৌক্তিক। নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর নিয়মিত তথ্যচিত্র, অভিযান এবং ইতিহাস ভিত্তিক অনুষ্ঠান মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করলে বক্তার বক্তৃতায় দক্ষতা অর্জিত হবে। বক্তা যখন বক্তৃতা প্রদান করবেন এবং সংবাদ পাঠক যখন পাঠ করবেন, তখন তাদের গতিবিধি লক্ষ পূর্বক পাঠের প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি স্থাপন একজন আদর্শ শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য হতে পারে। শিক্ষার্থী যদি তাদের কণ্ঠনিঃসৃত বক্তৃতা অথবা পঠিত সংবাদ অনুকরণ করে জোরে জোরে উচ্চারণে নিবিষ্ট হন, সন্দেহাতীতভাবে স্বরভঙ্গি সাবলীল ও বক্তৃতার গতি স্বচ্ছ হবে। শ্রবণ দক্ষতা (Listening Power) পরিপুষ্ট হবে এবং উচ্চারণ (Pronunciation) এর ওপরও পরোক্ষভাবে তিনি দক্ষতা অর্জন করবেন। পরবর্তীকালে সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর লিখিত রচনায় সৌকর্য বৃদ্ধি পাবে এবং স্বাস্থ্যবান রূপ উদ্ভাসিত হবে। কথোপকথনেও আসবে নৈর্ব্যক্তিক সৌন্দর্য।

আমাদের দেশে অল্পশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উপভাষায় (Vernacular) প্রতিনিয়ত ভাব বিনিময় করে। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়ারে, কলেজের আঙ্গিনায় এবং অফিস-আদালত পাড়ায় যখন ভাব বিনিময় শুরু করেন, তখন অনভিপ্রেত ও অসীম অন্তরায়ের সম্মুখীন হন। বক্তার বাচনে যদি আঞ্চলিকতা পরিলক্ষিত হয়, তবে তা বাংলা এবং ইংরেজিতে নিশ্চিতভাবে প্রভাব ফেলে। যেমন, Teaher (টিচার), Judicial (জুডিশিয়াল), Criminal (ক্রিমিনাল) প্রভৃতি শব্দের চলিত উচ্চারণে শেষের স্বরধ্বনিটি “আ’’ রূপে উচ্চারিত হয়, “অ্যা” নয়। কিন্তু, আঞ্চলিক উচ্চারণের প্রভাবে আমরা টিচ্যার, জুডিশিয়্যাল, ক্রিমিন্যাল বলে থাকি। অর্থাৎ স্বরধ্বনি “আ” এর প্রকৃত উচ্চারণ পরিবর্তিত হয়ে “অ্যা”(ae) রূপে বিস্তৃত আকার লাভ করে। বাংলা শব্দের ক্ষেত্রেও ধ্বনি বিকারের প্রভাবে আজ, কাল, চার এবং লিপি শব্দগুলোর পরিবর্তে ভুলরূপে আইজ, কাইল, চাইর এবং লিফি উচ্চারিত হয়, যা খুবই অপ্রত্যাশিত। এমন অজস্র শব্দ রয়েছে যেখানে আঞ্চলিকতার প্রভাব অত্যন্ত প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃত উচ্চারণ অপ্রকৃত উচ্চারণে পরিণত হয়। সঠিক উচ্চারণে কষ্টের উদ্রেক ঘটে। কথাসাহিত্যিক মোজাম্মেল হক নিয়োগীর বক্তব্যে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা যেতে পারে, “বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের উচ্চারণ হাস্যকর পর্যায়ের এবং সে অঞ্চলগুলোতে ভাষার মৌলিকত্ব হারিয়ে বীভৎস রূপ ধারণ করেছে। এসব অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরাও চা কে বলেন ছা, স্যারকে চার, ছাদকে চাদ, চোরকে চুরসহ এমন অজস্র শব্দ।” একইসাথে কোনো শব্দ যখন আমরা ভুলভাবে উচ্চারণ করি, তখন লিখতে গিয়েও উক্ত ভুল উচ্চারণের প্রভাব দৃশ্যমান হয়। শিক্ষার্থীরা হর হামেশাই প্রচ্ছন্ন ও প্রকটভাবে বন্ধু, সহকর্মী এবং পরিবেশ দ্বারা সুপ্ত বঞ্চনার স্বীকার হন।

নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অন্তর উপভাষার পরিবর্তন লক্ষণীয় এবং নির্দিষ্ট গতিতে ধাবমান। যেহেতু একটি জাতির সকল প্রান্তের জনগোষ্ঠীর ভাব সমন্বিত করতেই প্রমিত ভাষার জন্ম এবং বাংলা ও ইংরেজি ভাষা একটি  নির্দিষ্ট কাঠামোর বলয়ে আমাদের সামনে উপবিষ্ট। সুধী সমাজে খাপ খাওয়াতে পারিপাশ্বিক চাপ উপেক্ষা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি দ্বারা সেই সকল শিক্ষার্থী সমস্যা থেকে উতরে যান। তারা প্রমাণ করেন, নিয়মিত কথোপকথন প্রচেষ্টা দ্বারা শুদ্ধ কাঠামোর ওপর দক্ষতা অর্জন সম্ভব। তবুও, অতীত শৈশবের অমোঘ সঙ্গতাবোধের কারণে শিক্ষার্থীরা উপভাষা ব্যবহারে প্রসক্তি অনুভব করেন, পাশাপাশি কথোপকথনে বোধ করেন প্রশস্তি। অবশ্যই আঞ্চলিক ভাষায় কথোপকথন দোষের কিছু  নয়। যেহেতু আমরা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করি, উপভাষাতেই প্রকৃত ভাবের স্ফুরণ ঘটে, প্রত্যক্ষভাবে প্রকট আন্তরিকতার ছাপ চিত্রিত হয়। সংক্ষেপে, উপভাষার আঙ্গিনায় বিচরণ করা যাক – প্রচলিত ধ্বনি উৎপাদন এবং রূপমূলের পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে উপভাষার আবির্ভাব। চলিত ভাষায় স্বরাঘাত, উচ্চারণ, রূপমূলের গঠনের বৈশিষ্ট্য উপভাষা থেকে পৃথক। ভাষাবিজ্ঞানী ম্যাক্সমূলার উপভাষাতেই ভাষার প্রকৃত এবং স্বাভাবিক জীবন প্রত্যক্ষ করেছেন। এক্ষেত্রে ধ্রুপদী ভাষাবিজ্ঞানী আব্দুল হাইয়ের মতামত প্রণিধানযোগ্য-“কোনো ভাষার ধ্বনি বিচারে প্রয়াসী হলে সেই ভাষার উপভাষাগুলোর প্রকৃতি জানা অপরিহার্য।” বাংলার উপভাষাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সংগঠিত কাঠামোয় রূপদানে স্যার জর্জ গ্রিয়ারসন এবং ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় নিরন্তর গবেষণা করেছেন। বরেণ্য বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পাশ্চাত্য-প্রাচ্য এই দুবিভাগে বাংলার উপভাষাগুলিকে বিভক্ত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের ভাবনায়, ‘‘ উপভাষা আপন জন্মস্থান হইতে একবারে লুপ্ত হয় না। তাহা পূর্বপুরুষের রসনা হইতে উত্তর পুরুষের রসনায় সংক্রামিত হইয়া চলে। কিন্তু লিখন ভাষা যত বৃহৎ পরিধির মধ্যে ব্যাপ্ত হয় ততই দেশের জন্য মঙ্গল। ’’ সমসময়ের প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিন এর মতামত এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, “ প্রমিত ভাষা নিয়ে প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র যতই খবরদারি করুক না কেন, তাদের এটা জানা উচিত যে, প্রমিত নিজে কখনো এই দাবি করে না যে সে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাকে প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক ও বিদেশি ভাষার অভিব্যক্তি আত্তীকৃত করে এগিয়ে যেতে হয় বা নিজের বেঁচে থাকার পুষ্টি জোগাতে হয়। প্রমিত বলতে যেমন এটা বোঝায় না যে, আঞ্চলিক ভাষা উচ্ছেদ করতে হবে, তেমনি আঞ্চলিক ভাষা প্রবহমান থাকলে প্রমিত কিছু থাকা যাবে না-এটাও একটা বিপজ্জনক প্রত্যয়।” তৎকালীন কামরূপ, বরেন্দ্র, রাজবংশী এবং নদীয়া অঞ্চলের ভাষাগুলো ছিল পাশ্চাত্য বিভাগের আওতাভুক্ত। যশোর, খুলনা, ঢাকা, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষা ছিল প্রাচ্য বিভাগের অধীন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপভাষার ব্যবহার আজ  ব্যাপকভাবে শুধু প্রচলিত নয়, স্বীকৃত।

বাংলা ভাষায় স্বরতরঙ্গের ব্যবহার ব্যাপক বিস্তৃত। কথোপকথনে স্বরতরঙ্গের ছন্দোবদ্ধ ব্যবহার বক্তৃতায় যেমন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, তেমনি শ্রোতাকে আকৃষ্ট করে খুব সহজেই। স্বরতরঙ্গ প্রত্যয়ে স্পষ্ট ধারণার নিমিত্তে ব্যাখ্যা প্রদান প্রাসঙ্গিকতা দাবি করে। Intonation-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল স্বরতরঙ্গ। ছন্দের স্পন্দনের ওপর ভিত্তি করে বক্তার কণ্ঠস্বরের ঊর্ধ্বগামিতা এবং নিম্নগামিতাই হচ্ছে স্বরতরঙ্গ। সমুদ্রের স্রোত কিংবা নদীর প্রবাহ যখন স্থিতিশীল রূপ পরিগ্রহ করে তখন অগণিত প্রকৃতি পিয়াসী নির্মল প্রকৃতির কাছে আশ্রয় নেয়। নিবিড় আলিঙ্গনে গড়ে তোলে আত্মীয়তার সম্পর্ক। কিন্তু, প্রকৃতি যখন স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে বৈরি আচরণ করতে শুরু করে, তখন সবাই ক্রমে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসেন। একইভাবে একজন প্রজ্ঞাবান বক্তা কথোপকথনে মাধুর্যের দ্যোতনা সৃষ্টিতে সবসময় বিরাজিত থাকেন। বাক্যের আবেদন অনুযায়ী কখনও থামেন, উচ্চারণে চাপ প্রয়োগ করেন অথবা আস্তে আস্তে কথা বলেন। ব্যবহৃত বাক্যের আবেগ, বেগ, আবেদন, আদেশ এবং জিজ্ঞাসার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ধ্বনি তরঙ্গের প্রয়োগ ঘটান। যেমন-“সে দেখেছে” বাক্যটি সাধারণ বিবৃতিমূলক, বিধায় এখানে অবরোহী/পতনশীল ( High Falling) মীড়ের প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ, বাক্যটি ক্রমাগত উঁচু থেকে নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রথম শব্দটি “সে” তুলনামূলক জোরে উচ্চারিত হচ্ছে, কিন্তু “দেখেছে” শব্দটিতে কম জোর প্রযুক্ত হয়েছে। অপরদিকে “সে দেখেছে?” প্রশ্নবোধক বাক্যটিতে আরোহী মীড়ের (High Rising) প্রভাব স্পষ্ট। “দেখেছে” শব্দটিতে “সে” এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি জোর প্রযুক্ত হয়েছে এবং “সে” শব্দটিতে অপেক্ষাকৃত কম জোর প্রযুক্ত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বাক্যটি উচ্চারণ করলে বিষয়টি সহজেই অনুভব করা যাবে। দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার করতে হয়, বক্তৃতায় যদি ছন্দ না থাকে, কথোপকথনে শ্রোতাকে আকৃষ্ট করবার আবেদন অনুপস্থিত থাকে, নিশ্চিতভাবে শ্রোতা বক্তার কাছ থেকে দূরে সরে আসবেন অথবা  কল্পনার অন্য কোনো জগতে হারিয়ে যাবেন।

স্বরভঙ্গির পাশাপাশি শ্বাসাঘাত প্রয়োগের উপযোগিতা অনিবার্যভাবে আলোচ্য। কোনো বিশেষ ধ্বনি (Sound) অথবা শব্দের (Word) ওপর গুরুত্ব প্রদানের নিমিত্তে সেই নির্দিষ্ট  ধ্বনি ও শব্দে চাপ কিংবা জোর প্রয়োগে উচ্চারণ করা হয়। এই চাপ দু’ভাবে প্রয়োগযোগ্য। ফুসফুস থেকে উৎপন্ন শ্বাসবায়ু কণ্ঠনালীর ভেতর দিয়ে অধিক জোরে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া হল শ্বাসাঘাত (Stress Accent)। শ্বাসাঘাত শব্দের অন্তর্গত ধ্বনি এবং বাক্যের অন্তর্গত শব্দে প্রযুক্ত হয়। শব্দের অন্তর্গত কোনো বিশেষ ধ্বনি বা অক্ষরের উপর জোর প্রয়োগ করলে তা হবে শব্দ শ্বাসাঘাত (Word Stress) এবং বাক্যের অন্তর্গত বিশেষ শব্দের উপর জোর প্রয়োগ করা হলে তা হবে বাক্য শ্বাসাঘাত (Sentencce Stress) (ডঃ রামেশ্বর শ, ১৪০৩)।’’ শ্বাসাঘাত শব্দের ১ম, ২য় কিংবা ৩য় অক্ষরে প্রযুক্ত হতে পারে। আবার বাক্যের যে-কোনো স্থানেই থাকুক না কেন শ্বাসাঘাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োগ হবে। “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান” উদাহরণটির প্রত্যেক শব্দের প্রথম অক্ষরটি (Syllable) উচ্চারণ করলে খুব সহজেই প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষরগুলোতে শ্বাসাঘাত আরোপের বিষয়টি অনুভূত হবে। বাক্যের শেষে শ্বাসাঘাত পড়লে তাকে অক্সিটোন, শেষের পূর্ববর্তী অক্ষরে পড়লে প্যারাক্সিটোন এবং শেষের তৃতীয় অক্ষরে পড়লে তাকে বলে প্রোপ্যারাক্সিটোন।

স্বরতন্ত্রী (Vocal Cords) কম্পনের গতি বৃদ্ধি করে সুর বা স্বরের ওপর প্রচণ্ড জোর প্রযুক্ত হলে, তাকে বলা হয় স্বরাঘাত (Pitch Accent) (ডঃ রামেশ্বর শ, ১৪০৩)। স্বরতন্ত্রের অনুরণনের ফলে এর সৃষ্টি হয়। উচ্চ মীড়ের ক্ষেত্রে স্বরতন্ত্রের অনুরণন অধিক হয় এবং নিম্ন মীড়ে কম অনুরণিত হয়। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো – শ্বাসাঘাতে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে শব্দের তীব্রতা বাড়ানো হয় এবং স্বরাঘাতে স্বরের মাত্রা বাড়িয়ে সুরের তীব্রতা বাড়ানো হয়। ইংরেজি, জার্মান এবং মান্দারিন ভাষা মূলত শ্বাসাঘাত ভিত্তিক। সুতরাং, কোনো শব্দের শ্বাসাঘাতে অক্ষরের কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ঘটলে অর্থের পরিবর্তন ঘটে। বাংলা ভাষায় সেটির প্রভাব দৃশ্যমান না হলেও পুরো বাক্যের বাক প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে অর্থের পরিবর্তন অহরহ ঘটে। চীনা শব্দে স্বরতন্ত্রের মাত্রা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ভাষা থেকে বেশী।

সুতরাং, সুরের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে একই শব্দের যে বিভিন্ন অর্থ হতে পারে তা দেখানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। 诗/ 詩 (Si 1) শব্দটি অবরোহী (উচ্চ হতে নিম্ন গ্রামে/ High Falling) এ উচ্চারণ করলে অর্থ হয় কবিতা (“Poem”)। একইভাবে 史 ( Si 2) শব্দটি আরোহী (নিম্ন হতে উচ্চ গ্রামে/ High Rising), 弒 (Si 3) শব্দটি (সমান্তরালে/Mid Level) , 时/時 (Si 4)শব্দটি  (নিচু হতে অধিক নিম্নগামী/ Low Falling),  市(Si 5) শব্দটি (নিচু হয়ে আবার ঊর্ধ্বগামী/ Low Rising), 是(Si 6) শব্দ (Low Level/নিম্ন) উচ্চারণ করলে যথাক্রমে অর্থ দাঁড়াবে History (ইতিহাস), Assasinate (গুপ্তহত্যা), Time (সময়), Market (বাজার) এবং Yes (হ্যাঁবোধক)। ছকের মাধ্যমে বিষয়টি অধিক স্পষ্টাকারে অনুধাবনের চেষ্টা করা যেতে পারে।

                                                                ক্যান্টনিজ স্বরের আদর্শ উদাহরণ

                                              (Example of Standard Cantonese Tones)

Hanzi      Jyutping (স্বণ সংখ্যা)            Pitch Contour (শব্দোচ্চতার রেখভঙ্গি) Meaning (অর্থের সীমা)

诗/ 詩

Si 1          High Falling, (অবরোহী),(去声)(ˋ),                                                     “Poem” (কবিতা)

Si 2          High Rising, (আরোহী), (阴平)( ˉ ),                                                    “History”(ইতিহাস)

Si 3          Mid Level, (সমান্তরাল), (阳平)(ˊ),                                                                  “Assasinate”(গুপ্ত হত্যা)

时/時

Si 4          Low Falling, (নিচু হতে অধিক নিম্নগামী)                                                             “Time” (সময়)

Si 5          Low Rising,(নিচু হয়ে আবার  ঊর্ধ্বগামী)                                                            “Market “(বাজার)

Si 6          Low Level, (নিম্ন) (上声)( ˇ ),                                                                 “Yes”(হ্যাঁ বোধক)

অনুরূপ থাই শব্দ “Naa” এবং চীনা শব্দ “Ma” এর স্বন সংখ্যা (Jyupting), শব্দোচ্চতার রেখভঙ্গি (Pitch Contour) অনুসারে অর্থের সীমা বিভিন্ন রূপে বিস্তৃত আকার ধারণ করে। “Naa শব্দটি পাঁচ ধরনের শব্দোচ্চতার রেখভঙ্গি অনুসারে পাঁচটি অর্থ ধারণ করে। যেমন-ডাকনাম, ধান, ছোটো মামা অথবা খালা, মুখমণ্ডল এবং গাঢ়/মোটা। (দানিউল হক, ২০০২।” “Ma” শব্দটি চার ধরনের শব্দোচ্চতার রেখভঙ্গি অনুসারে চারটি অর্থ ধারণ করে। যেমন – মাতা, পাট, ঘোড়া এবং বকা/তিরস্কার করা ইত্যাদি।

বক্তার পক্ষে বিরতিহীন শ্বাস নেওয়া সম্ভব নয়। অনবরত কথার মাঝে বিশ্রাম নেবার কাজটি সারতে হয়। সুতরাং, থামবার প্রয়োজনেই যতি চিহ্ন ব্যবহারের যথার্থতা চলে আসে। যতি চিহ্ন স্বরভঙ্গি এবং শ্বাসাঘাতের সঙ্গে আত্মীয়তার সৃষ্টি করে ( হায়াত মামুদ, ২০১৫)। লেখ্য রূপ এবং কথ্য রূপে লেখকের কলম, বক্তার বক্তৃতায় লাগাম টেনে ধরে ভাষার পরিবেশন গ্রহণযোগ্য করে। বাংলা ভাষায় মোট ১৮টি যতি চিহ্নের ব্যবহার বাক্য-বক্তৃতার ভঙ্গিমাকে নিশ্চিতভাবে পরিচ্ছন্ন রূপ প্রদান করে। যতি চিহ্নিত স্থানগুলোতে স্বল্প ও দীর্ঘ বিরতি প্রদানের গুরুত্ব বক্তাকে স্মরণ করে দেয় বারবার। ফলে শ্রোতার কাছে বক্তব্য, লেখনী গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে, যতি চিহ্নের সুষ্ঠু প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে বাক্যের শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বক্তব্য শ্রবণে শ্রোতা তখন ন্যূনতম আগ্রহ বোধ করে না। তবে, এটি পুরোপুরি নিঃসন্দেহ – শ্বাসাঘাত, স্বরভঙ্গি এবং যতি চিহ্নের নিটোল বন্ধনে বাচনভঙ্গি অনুপম উৎকর্ষের  সিঁড়ি বেয়ে সৌন্দর্যের বাতিঘরে অবস্থান করবে। অতি সংক্ষেপে এখানে বিষয়গুলোর সঙ্গে মিতালি স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। যৎকিঞ্চিৎ বাক্যে ধ্বনিতরঙ্গ, শ্বাসাঘাত, বাকপ্রবাহ এবং যতিচিহ্নের ওপর ধারণা প্রদান দুঃসাহসিক। অবশ্য একে গরিবের ঘোড়া রোগ বলেও আখ্যা দেয়া যেতে পারে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উপর্যুক্ত বিষয়ে জ্ঞানার্জনে ভাষাবিজ্ঞানীগণ সব সময়ের জন্য জানালা খোলা রেখেছেন।

শব্দ প্রয়োগে সুভাষণ (Euphemism) রীতির ব্যবহার বক্তার উন্নত রুচিবোধের পরিচয় বহন করে। নেতিবাচক উপস্থাপনেও ইতিবাচকতা প্রতিফলিত হয়। যেমন, কোনো ব্যক্তির নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে অপারগ হলে, আমরা স্বাভাবিকভাবে “দুঃখিত, আজ আপনার আতিথেয়তা গ্রহণ করতে পারলাম না” বলে থাকি। অথচ, বাক্যটি যদি এভাবে বলি, “ধন্যবাদ, ভবিষ্যতে আপনার আতিথেয়তা গ্রহণের অপেক্ষায় রইলাম।” অবশ্যই বক্তার ভদ্রতা এবং বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। অস্ট্রিয়ান ভাষাদার্শনিক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুডভিগ ভিটগেনস্টানের ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি ভাবনা সঙ্গত কারণেই উল্লেখ করছি। তাঁর মতে, “সাধারণ ভাষার প্রয়োগের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো সাধারণ মানুষকে বিব্রত বা বিপথগামী না করলেও ভাবুক মানুষকে বিপদগামী করতে পারে এবং করেও।” অর্থ্যাৎ একজন ভাবুক মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের ক্ষেত্রে প্রতিটি শব্দ ব্যবহারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। নইলে সেই সাধারণ মানুষ এবং ভাবুক মানুষের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে।

অতিশয়োক্তির ব্যবহারও (Hyperbole) বাক্যে ভাব প্রকাশের ঘনত্বকে গভীরভাবে ঘনীভূত করে। যেমনঃ “Good” শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তে যদি “Excellent” শব্দটি ব্যবহার করি। অথবা, আমি তোমাকে খুব অনুভব করি (I feel you very much) না বলে, হৃদয়ের গহীন কোণ থেকে আমি তোমাকে অনুভব করি ( I feel you from the very core of my heart) বলি। তবে, শ্রোতা যেমন প্রাণিত হবেন, তেমনি বক্তার ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রেও গভীরতা অনেকখানি বৃদ্ধি পাবে।

কথোপকথনে বক্তার মুখাবয়ব (Facial Expression) কতটুকু প্রাণিত থাকবে এবং মুখের ছাদের সুষমা, ওষ্ঠ রজনী এবং গ্রীবাভঙ্গি কিভাবে ব্যবহৃত হবে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, জীবনে গুরুত্ব বয়ে আনা পরীক্ষা এবং জীবনের বাঁক নেয়ার মুহূর্তে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্বের সঙ্গ লাভে প্রাথমিক পর্যায়ে নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক মানসিকতা গঠনে মুখাবয়ব অগ্রগামী স্রোত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির দিকে ধাবিত হয়। বক্তব্যের সাথে মুখাবয়বের অবশ্যই একটি সামঞ্জস্য রাখতে হবে।

উদাহরণটি লক্ষ করি:

১.স্যার, আমি কি আসতে পারি? (সাধারণ মুখাবয়ব)।

২.স্যার, আমি কি আসতে পারি? (নীরস মুখাবয়ব)।

৩.স্যার, আমি কি আসতে পারি? (হাসিযুক্ত মুখাবয়ব)।

প্রত্যয়টি যদি তিনভাবে প্রকাশ করি, তবে সকল প্রকাশভঙ্গি শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণে গুরুত্ব পাবে কি না তা হবে প্রশ্নবিদ্ধ। অনুরূপ দুঃখ, কষ্ট, আবেগ, উচ্ছ্বাসসহ পরিস্থিতির প্রবাহ অনুযায়ী শব্দ উচ্চারণের বেলায় মুখাবয়বের যৌক্তিক ও সাযুজ্যপূর্ণ প্রকাশ না ঘটলে বক্তা কখনোই শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে না। সুতরাং, বক্তার মুখাবয়বের প্রতিচ্ছবিও যে ভাষার উপস্থাপনে স্বপ্নিল পরশের সঞ্চার করে এবং শ্রোতার অন্তঃকরণে ইতিবাচক ধারণার জন্ম দেয় তাও ভাবনার কুটিরে আশ্রয় না দিয়ে রক্ষা নেই। মোটা দাগে বলতে গেলে, একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে বক্তার বাচনে সচেতনতা, বিনয়, শুদ্ধতা, স্পষ্টতা ও সম্পূর্ণতার রেখা কতটুকু সফল হলো তা অনুধাবনে সচেতন প্রয়াস এবং মূল্যবোধের জ্ঞান জরুরি। যে বোধের আলোকে বক্তা তার কাঙ্ক্ষিত রেখার দিকে নিরন্তর গতিতে এগুতে থাকবেন। আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব ধরণের অফিসে (বিশেষত সরকারি অফিস) যদি কোনো সমস্যা নিয়ে যাওয়া হয় তবে অধিকাংশ কর্মকর্তা কিম্বা কর্মচারীর কাছ থেকে ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন নাগরিক হিসেবে অফিসের প্রধান কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানো হয়ে উঠে আকাশকুসুম কল্পনা। অফিসের অধিকাংশ মানুষের মুখগুলোতেই মনে হয় যেন হাজার বছরের যন্ত্রণা ফুটে উঠে। অবশ্য ভিন্ন পথে এগুলে তাদের মুখের এই হতশ্রী অবস্থা আর থাকে না।

যাই হোক, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।এবার অতীতে ফিরে যাওয়া যাক। দেখা যাক, সোনালি সময়ে ভাষা শিখনের প্রচেষ্টা কেমন ছিল? বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে ছাত্রাবস্থায় গুটি কয়েক বন্ধু মিলে শুদ্ধ বাংলা এবং ইংরেজিতে কথোপকথনের চেষ্টায় নিয়ত প্রবৃত্ত থাকতাম। অহরহ ভুল বাক্য বলতাম এবং বলতে গিয়ে অনেক সময় গলা শুকিয়ে আসত। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে শব্দ ভাণ্ডারের অভাব বোধ করতাম প্রতি মুহূর্তে। লজ্জা ত্যাগ করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে শরণাপন্ন  হতাম অভিধানের। যখন পকেট অভিধানেও উক্ত শব্দের অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হতাম তখন বাধ্য হয়েই ইংরেজির সঙ্গে বাংলা বলতাম। এবং বাংলার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষাই ব্যবহার করতাম। আর বিরতিহীনভাবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতাম। তবুও হাল ছাড়তাম না কখনোই। আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি, সেদিনের সেই ভুল প্রচেষ্টা শিখনের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্ব বহন করেছিল। হোক না ভুলে ভরা শুরু! তবু, চর্চা অব্যাহত রাখবার ইস্পাতদৃঢ় মানসিকতা গঠন জরুরি। নিজের ভুল নিজেই বুঝতে অপেক্ষার প্রহর প্রলম্বিত করার ধৈর্য অবলম্বন সমীচীন। যখন কোনো বক্তা নিজেই নিজের ভুল অনুধাবন করতে পারবেন, তখন সেই ভুল কীভাবে শুধরাতে হয় তাও তিনি বুঝতে সক্ষম হবেন। ভুল শিখন প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অনুষঙ্গ। ভুল ভবিষ্যত সমৃদ্ধির সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে। এক একটি ভুল ভবিষ্যতে এক একটি ফুলে পরিণত হয়। তাই, ভুল নিয়ে অহেতুক ভাবনা, ভীতি কিংবা লজ্জার কোনো স্থান অভিধানে নেই।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, বতর্মান সময়ে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে বাংলার সাথে কিছু অবশ্যম্ভাবী ইংরেজি শব্দ যেমন, ওয়াং, রিয়ালি, সিট, বাট প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এটি এক ধরণের ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ আবার বাংলাকে এমনভাবে উচ্চারণ করেন মনে হয় ইংরেজিতে কথা বলছেন। বিষয়টি আতঙ্কের হয়ে উঠে যখন মিডিয়ার কর্মীদের মাঝে এই প্রবণতা দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক শামসুল হুদার যথার্থ উচ্চারণ, ‘‘ বাংলাদেশে সম্প্রতি প্রাইভেট রেডিওতে অদ্ভুত ধরনের একটা বাংলা-ইংরেজি মিশেল ভাষা বলার চেষ্টা হচ্ছে। কেন তারা এ ধরনের আজগুবি ভাষা প্রচারে মেতে উঠেছে তা ভেবে দেখা দরকার। এর পেছনে কারা আছে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। টিভি চ্যানেলগুলোতেও বিকৃত বাংলার সমারোহ। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।”

একটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন সময়ের দাবি, বিশেষত, তরুণ শিক্ষার্থীদের, শুদ্ধ বাংলা এবং ইংরেজিতে কথোপকথন কোনো অহংকারের পর্যায়ভুক্ত নয়। আড়ালে-আবডালে অপরের অপরিপক্ব উচ্চারণে আহ্লাদে আটখানা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটিকে সার্বজনীন সমস্যা হিসেবে বিবেকের চোখে স্থান দিতে হবে। অহংকারের আবরণ যতই বৃদ্ধি পাবে, জানার আবরণ ততই কমে আসবে। প্রয়োজনের তাগিদে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছি বা লিখছি এমন ভাবনাই হবে বুদ্ধিবৃত্তিক। অবশ্য বক্তা যদি সেই ভাষা সঠিকভাবে আয়ত্তে আনতে সক্ষম হন। কিন্তু, কাঠিন্যের দোহাই দিয়ে যদি অনুশীলন হতে নিবৃত্ত হন তবে সমস্যা অবশ্যম্ভাবী। অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার সর্বত্রই ভুলের ছড়াছড়ি দৃশ্যমান হবে।

নিবিড় চর্চা অব্যাহত রাখতে নোট কিম্বা গাইড বইয়ের পরিবর্তে ভাষাবিষয়ক ধ্রুপদী গ্রন্থ পাঠের দিকে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। গ্রন্থে প্রণীত ছন্দোবদ্ধ পাঠপদ্ধতি যথাযথ অনুশীলন ও অনুসরণের মাধ্যমে প্রস্তুতিতে শান দেয়া যায়। আবার এটিও মনে রাখতে হবে, একটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ কিংবা একজন মানুষ গড়ার কারিগর শুধু পথের নিশানা তুলে ধরতে পারেন, কিন্তু পথ পাড়ি দেওয়ার দায়িত্ব কেবল পথিকের। যে শিক্ষকের নিকট পাঠ গ্রহণে শিক্ষার্থী ব্রতী হবেন, তাঁর উপর অবিচল আস্থা রাখা প্রয়োজনীয়। একেক শিক্ষকের পাঠদান কৌশল একেক রকম হতে পারে। প্রারম্ভিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী যদি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন তবে ঘুণাক্ষরেও বিরক্ত হওয়া উচিত নয়। পাঠগ্রহণের প্রথম প্রহরেই বাংলা অথবা ইংরেজিতে শুদ্ধভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবো কিংবা পারলাম না কেন এমন মানসিকতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করে। এমন বাতিক চিরতরে বিদায় চির কালের চিরন্তন দাবি। শেষ ক্লাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ধৈর্য ও পরিশ্রমের মিলন প্রয়োজনীয়তা দাবি করে।

অব্যয় (Preposition), বাগধারা (Idioms) এবং উচ্চারণ (Pronunciation) এর জটিল সমীকরণ ব্রিটিশ-আমেরিকান শব্দ ব্যবহারের দ্বন্দ্বের তুলনায় বাংলা অবশ্যই সহজ, সরল এবং প্রমেয় বিষয় হিসেবে প্রমাণিত। তবু, শিক্ষক যখন শিক্ষার্র্থীদের অ, আ শেখান, পিতামাতা যখন শিশুর মুখে বোল ফোটান, উভয়কেই যুগপৎ সমস্যার জটিল আবর্তনে আবর্তিত হতে হয়। সুতরাং, দেশি ভাষার প্রমিত রূপ আয়ত্তে যেখানে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সেখানে বিদেশি ভাষা তা যাই হোক-না-কেন, কষ্টের বসতি না গড়ে দক্ষতা অর্জনের অবাস্তব কল্পনা মূঢ়তার শামিল। শিক্ষকের অনুসৃত নির্দেশাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে অবচেতন মনেই শিক্ষার্থীর ভালো লাগা শুরু হবে, যা সম্ভবপর হয়ে উঠবে উক্ত শিক্ষকের নির্দেশানুযায়ী শুদ্ধ ভাষায় অনর্গল মনের ভাব প্রকাশ এবং নিরবচ্ছিন্ন ও নিবিড় অনুশীলনের মাধ্যমে।

সুতরাং, বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় যুগপৎ দক্ষতা অর্জনে দুটো বিষয়ের ওপর লক্ষ রাখবার বিষয়টি হয়ত বিবেচনার আয়নায় স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে। প্রথমত স্বদেশি এবং বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জন অবশ্যম্ভাবীভাবে কঠিন তা যেমন সঠিক তেমনি পরিশ্রমের মাধ্যমে সহজে আয়ত্ত করা সম্ভব তাও স্বীকার্য। কেউ যদি শুদ্ধ ভাষায় কথোপকথনের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস হৃদয়ে ধারণ ও তদনুযায়ী একাগ্র অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারেন তবে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো নিশ্চিত হয়ে উঠবে। কোনোভাবেই নিজের প্রগাঢ় অনুভূতিতে সঞ্চিত আত্মবিশ্বাস অপাত্রে ঢালা যাবে না। চলার পথে সহপাঠী কিংবা সহকর্মীদের অনেকেই নিরুৎসাহিত করবে। সমালোচনার তীর ছুড়ে পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তুলবে প্রতিনিয়ত। উদ্যমী ও কষ্টসহিষ্ণু শিক্ষার্থীরা এমন সমালোচনায় মনোযোগের পরিবর্তে পথের গতি বৃদ্ধির দিকেই মনোযোগী হয়। বাস্তব প্রয়োজনীয়তার কাছে অতি অপ্রয়োজনীয় তিরস্কার ও ঠুনকো সমালোচনা পরাজিত হয় অবলীলায়।

মনে রাখা প্রাসঙ্গিক, পৃথিবীতে সকল পথের কাঁটাই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। বরং কিছু কাঁটা সাময়িক সময়ের জন্য আঘাত হানলেও মোটের ওপর স্বস্তির সঞ্চার করে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির স্ফুরণ ঘটিয়ে সফলতার সীমানাকে স্পর্শ করা খুবই সম্ভব। সর্বোপরি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সেটি হলো- নিজস্ব ভাষার প্রতি অকৃত্রিম দায়বদ্ধতা এবং সেই ভাষার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করবার অন্তরীক্ষ অন্বেষা। প্রত্যেকই যদি তাদের হৃদয়ে অন্তরিত কল্পনা প্রতিভা এবং অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রচেষ্টার সর্বোচ্চ বিকিরণ ঘটাতে পারে কেবল তবেই সেই সুপ্তোত্থিত সৌন্দর্যের অনবগুণ্ঠিত রূপটি উজ্জ্বল দিবালোকের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। পাশাপাশি নিজ ভাষাকে বিশ্বচরাচরে শ্রেষ্ঠ ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার তাড়নাটি দৃঢ়ভাবে গেঁথে যাবে তাদের মননে। এবং প্রয়োজন বিবেচনায় বিদেশি ভাষায় নিজের আয়ত্ত প্রতিষ্ঠা করবার নিমিত্তে প্রবৃত্ত হবার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।

প্রবন্ধের আদ্যোপান্ত শুদ্ধ ভাষায় মনের ভাব প্রকাশে বিভিন্ন বিষয়ের সরস আলোচনায় হয়ত ভাষার অদৃশ্য আন্তর-সাযুজ্য প্রতিভাত হয়েছে। যদিও প্রত্যেক ভাষার রয়েছে প্রাতিস্বিক স্বাতন্ত্র্য। তবুও বিভিন্ন ভাষা, বিশেষত বাচনের ক্ষেত্রে সীমানার ভিতরে সীমাহীন বন্ধুত্ব আমাদের নিয়ে গেছে ভাবনার অসীম প্রান্তরে। আলোড়িত করেছে আমাদের অপরিপক্ব ভাষাবোধকে। বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই – দ্ব্যর্থহীনভাবে এই উচ্চারণ আমরা করতেই পারি। বিশ্বদরবারে মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠায় ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্য-এশিয়ার শিল্পোন্নত দেশসমূহ বিদেশি ভাষার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাই বলে, আন্তর্জাতিক ভাষা শিখনে হাল ছাড়ছে না। প্রয়োজনের নিমিত্তে ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা যথাযথভাবে ব্যবহার করছে। ভাষাবিজ্ঞানীরাও ভাষাবিদ্যাকে একটি পরীক্ষামূলক, বস্তুনিষ্ঠ (Empirical) বিদ্যা ও নৈর্ব্যক্তিকতার ছাঁচে খোদিত করার প্রয়াসে নিযুক্ত রয়েছেন।

আমরা যদি আমাদের বাংলা ভাষায় রচিত সৃষ্টিসমূহকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই তাহলে অবশ্যম্ভারীরূপে বিদেশী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। একজন বাংলাভাষী যখন ভিন্ন কোনো ভাষা আয়ত্ত করে সেই ভাষায় তার নিজ ভাষায় রচিত সাহিত্যকে অনুবাদ করবেন তখন সেটি সন্দেহাতীতভাবেই উৎকৃষ্ট হবে। আমরা এ কাজটি যত বেশি পরিমাণে করতে সক্ষম হবো ততই ভিন্ন দেশে আমাদের ভাবগুলোকে প্রবেশ করাতে সক্ষম হবো। এবং এই সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমেই আমরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদ্ণ্ডকেও শক্ত করতে পারবো। ইংরেজ শাসকরা বলবান হবার কারণেই ব্রিটিশ অঞ্চলের অন্যান্য দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির সাথে ইংরেজির সাদৃশ্য না থাকার পরও ইংরেজিই সেই সময় সাধু হিসেবে গণ্য হয়েছিল। আজ শুধুমাত্র একটি পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমেই বিট্রিশরা যেমন প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন তেমনি ভাষার মাধ্যমে সারাবিশ্বের ওপর আধিপত্য বিস্তার করছে। জনবল কিংবা প্রতাপপূর্ণ ক্ষমতা যে একটি ভাষার বিস্তৃতায়নে প্রভাব বিস্তারী ভূমিকা পালন করতে পারে সেটি রবীন্দ্রনাথ সে সময়েই উপলব্ধি করেছিলেন। তার অনুভবে এটি তীব্র ছিল যে, “উড়িষ্যা এবং আসামে বাংলাশিক্ষা যেরূপ সবেগে ব্যাপ্ত হইতেছিল, বাধা না পাইলে বাংলায় এই দুই উপবিভাগ ভাষার সামান্য অন্তরালটুকু ভাঙিয়া দিয়া একদিন একগৃহবর্তী হইতে পারিত। বীরভূমের কথিত ভাষার সহিত ঢাকার কথিত ভাষার যে প্রভেদ, বাংলার সহিত আসামির প্রভেদ তাহা অপেক্ষা খুব বেশি নহে। সেই জন্য বলিতেছিলাম আসাম ও উড়িষ্যায় বাংলা যদি লিখনপঠনের ভাষা হয় তবে তাহা যেমন বাংলা সাহিত্যের পক্ষে শুভজনক হইবে তেমনই সেই দেশের পক্ষেও।”

বাংলা কথাসাহিত্য বিশেষত ছোটগল্পের দিকে তাকালে সহজেই উপলব্ধ হবে যে, সেই গল্পগুলির ধ্রুপদী মর্যাদা লাভের যোগ্যতা কতখানি মজবুত। কিন্তু ভাষাগত অযোগ্যতার কারণেই আমরা পিছিয়ে আছি এখনো। তবে আশার কথা হলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে হলেও অনেকই স্প্যানিশ, রুশ কিম্বা অন্য ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে সেই ভাষা থেকে সরাসরি তাদের সাহিত্য অনুবাদ করছে এবং ভবিষ্যতে যে আমাদের সাহিত্যকে তাদের ভাষায় অনুবাদ করে তাদের দেশের পাঠকের মননে অন্তরিত করতে পারবে সেটি আশা করা মোটেও অযৌক্তিক নয়। এবং ইতোমধ্যে এই প্রচেষ্টাটি লক্ষ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি কিছু কিছু নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ইংরেজী বাদেও ভিনদেশী ভাষা চর্চাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে ভিন্ন দেশী ভাষার অভ্যন্তরে প্রবেশের কোনো বিকল্প নেই। ‘‘এক সময় অনুবাদককে অন্ত্যজ শ্রেণীর সাহিত্যকর্ম বলে বিবেচনা করা হতো। যেমন সাহিত্য সমালোচনাকেও মনে করা হতো। ঠাট্টা করে বলা হত যিনি গল্প-উপন্যাস লিখতে পারেন না তিনিই সমালোচক হন। অনুবাদককেও একদা সেই দৃষ্টিতে দেখা হতো। বর্তমানে ঠিক সেই অবস্থা নেই। সাহিত্যের অঙ্গনে অনুবাদ এখন নিজের জন্য একটি স্বতন্ত্র মর্যাদার আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছে।” বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখক এবং অনুবাদক কবীর চৌধুরীর এই ভাবনা আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্র যদি প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক পর্যায়ে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ইংরেজির পাশাপাশি একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষার বিষয়কে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে এর সুফল পাওয়া যাবে। কোনো বিদেশী যদি বাংলা সাহিত্যের গ্রন্থ অনুবাদ করে সেই অনূদিত গ্রন্থটিকে যদি বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলেন, এমনকি নোবেল পুরস্কারের জন্য যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করেন সেটি কি আমাদের জন্য গর্বের হতে পারে? মোটেই না। অনুবাদ গবেষক তিয়াস চাকমা মনে করেন, “একজন রবার্ট বা উইলিয়ামের অনুবাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পুরস্কার আমাদের ঝুলিতে আসলে, সেটি মোটেই রাষ্ট্রের জন্য গর্বের হতে পারে না। তাই সাহিত্যিক অনুবাদ অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রস্তুত এবং সেই ক্ষেত্রে যোগ্য নাগরিক তৈরি করে তাদের উদ্যম আর দক্ষতাকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে হবে।বিশ্বের সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের এই সাহিত্যিক সম্পর্কই একুশ শতকে হয়ে উঠুক দেশ ও রাষ্ট্রকে স্বতন্ত্র মহিমায় উদ্ভাসিত করার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। ”

যথাযথ উদ্যোগের অভাবেই বিদেশি ভাষার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আজ আমরা ক্রমাগতই ব্যর্থ হচ্ছি? স্বল্প পরিসরে মুঠোফোন (যদিও এখানে ইংরেজির অনুপ্রবেশ) চলভাষ, বৈবার্তা, দূরবার্তা এবং মুঠোবার্তা শব্দগুলো ব্যবহৃত হলেও মোবাইল (Mobile), ম্যাসেজ (Message) এবং ই-মেইল (E-Mail) শব্দের বহুল ব্যবহার আমরা রোধ করতে পারি নি। Facebook, Twitter, Google সহ অসংখ্য ইংরেজি শব্দ অবলীলায় ব্যবহার করছি। অদূর ভবিষ্যত এই শব্দগুলোও হয়ত পারিভাষিক হিসেবে আমাদের ভাষার শরীরে মিশে যাবে। আমরা উপলব্ধি করতে পারছি, মাতৃভাষার ওপর মাতৃপ্রতিম ও অকৃত্রিম ভালোবাসার রং অধিক গাঢ় করবার দিকে মনোনিবেশের ঘণ্টা দরজায় কড়া নাড়ছে। ভবিষ্যতে নতুন কোনো প্রযুক্তি দেশে আসবার অব্যবহিত পূর্বেই যাতে বাংলা নামটি সুধী সমাজ থেকে শুরু করে ধীবর সমাজ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টাটিকে স্বাস্থ্যবান করে তোলা অত্যন্ত জরুরি। এবং বাংলা ভাষার অনিন্দ্যসুন্দর রূপটি যাতে বিকীর্ণিত হতে পারে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তর থেকে প্রান্তরে- এটিই যেন হয়ে ওঠে সকলের নিকট অত্যন্ত নিবিড়ভাবে আকাঙ্ক্ষিত। এবং এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে নিরন্তর প্রচেষ্টাটি চালিয়ে যাওয়াও অতি প্রত্যাশিত। আর অবশ্যই আমরা প্রয়োজনের প্রেক্ষিত বিবেচনায় ইংরেজিভাষাসহ অন্যান্য ভাষার শ্বাসটুকু গ্রহণ করবো কিন্তু মাতৃভাষার শ্বাস ও আঁশ দুটোই আমাদের  গ্রহণ করতে হবে।

দুঃখ হয় যখন একজন শিক্ষক হিসেবে দেখি  স্নাতকোত্তর পাস করেও একজন শিক্ষার্থী অবলীলায় আনুষ্ঠানিক আবহে আঞ্চলিক ভাষায় ভাব বিনিময় করছে। বিভাগ কিংবা চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় প্রমিত বাংলায় কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। স্নাতক পর্যায়ে পাঠদানকারী দেশের পাঁচটি কলেজের পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থীর মতামতকে বিশ্লেষণ করে  দেখা যায় যে, প্রায় নব্বই শতাংশ শিক্ষার্থীই কলেজে এবং কলেজের বাইরে আঞ্চলিক ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে। যে সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রমিত ভাষায় কথা বলে তাদের প্রায় সবাই নামকরা স্কুল অথবা শিক্ষিত পরিবার থেকে উঠে আসা। এবং এ কারণে যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে অনেক সময় লাগে সে বিষয়টিও উঠে আসে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও  স্নাতকোত্তর সনদ প্রদানের পূর্বে যে কোনো পর্যায়ের শিক্ষার্থীর ভাষা জ্ঞান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আজও আমরা বিশেষ কোনো পরীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারলাম না। পৃথিবীর প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ভাষা জ্ঞান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আইএলটিএস পরীক্ষায় প্রাপ্ত পয়েন্টকে গুরুত্ব দেয়। এর কারণ মূলত ঐ শিক্ষার্থীর শুদ্ধভাবে কথা বলবার দক্ষতা, শব্দ প্রয়োগের গভীরতা, যুক্তি দিয়ে প্রশ্নকে খণ্ডনের যোগ্যতা এবং ব্যাকরণগত দক্ষতা। শিক্ষার্থীদের কথা না হয় বাদই দিলাম, ন্যূনপক্ষে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যদি আমরা অতিরিক্ত একটি পরীক্ষার কথা ভাবতে পারতাম তাহলে হয়ত শিক্ষকদের পাঠদানের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার কিংবা ইংরেজি শিক্ষকের বাংলায় পাঠদানের মতো অনভিপ্রেত বিষয়টিকে দেখতে হতো না। আজ অবধি কোনো ভাষা নীতিই গড়ে ওঠে নি আমাদের দেশে। “ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠে রাষ্ট্রের শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র করে, সে বিবেচনায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও ভাষা-সংশ্লিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠে রাষ্ট্র প্রণীতি ভাষানীতিকে কেন্দ্র করে, কিন্তু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের কোনো ভাষানীতি নেই’ – ড. এ বি এম রেজাউল করিম ফকিরের এই ভাবনাকে যদি গুরুত্ব প্রদান করে রাষ্ট্র একটি ভাষা নীতি প্রণয়ন করে তাহলে হয়ত একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। ভাষা নীতি সম্পর্কে তাঁর ধারণাটি এমন-“ ভাষানীতি হলো- রাষ্ট্রভাষা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা, ধ্রুপদী ভাষা ও বিদেশি ভাষা ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণীর ভাষার গুরুত্ব অনুযায়ী গঠন, মর্যাদা ও প্রায়োগিকতা আরোপণ সম্পর্কিত নীতিমালা।’’

অত্যন্ত ইতিবাচক সেই সাথে আশ্চর্যেরও যে, আমাদের এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে মাতৃভাষার পাশাপাশি আরো চল্লিশটি ভাষা রয়েছে (সাঁওতালি, মাহলে, কোল, কোরা বা কোদা, মুন্দারি, খারিয়া, সাউরা, খাসি, মাল্টো, তেলেগু, গারো/ মান্দি, হাজং, কোচ, লালেং/ পাত্রা, মারমা, কোকবরক, খুমি, খিয়াং, লুসাই, তংচঙ্গা, ম্রো, রাখাইন, পাংখুয়া, বাউম, রেংমিট্চা, চক, মণিপুরী মেইথেই, লিঙ্গম, সাদরি, মাদ্রাজি, থর, উর্দু, ওড়িয়া , অহমিয়া, মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া, কানপুরী, চাকমা, নেপালি  এবং কন্দো) যা অবশ্যই আমাদের এক অমূল্য সম্পদ। লিপিহীন (দু’একটি বাদে) এই ভাষাগুলিকে আধুনিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলে অবশ্যই তা বর্হিবিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হবে এবং এই সব ভাষার অধিবাসীরা মাতৃভাষায় আরাধ্য জ্ঞান চর্চার স্বাদ পাবে। ভাষা তা যত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীরই হোক না কেন সেটির মাধ্যমে সেই মাতৃভাষীর পড়াশুনা করবার অধিকারের বোধটিকে জাগ্রত করার দায়টিকে আধুনিক সমাজ কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। “স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা একমাত্র মাতৃভাষাতেই করা সম্ভব। চিন্তাশক্তির অধিকারী হয়েছে বলেই তো মানুষ জাতি সকল প্রাণীর উপরে শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, জলেস্থলে অন্তরীক্ষে তার রাজ্যপাট বিস্তার করেছে (যতীন সরকার, ২০১৫)। সুতরাং মাতৃভাষায় চিন্তা করবার স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করা একটি আদর্শ রাষ্ট্রের অবশ্য দায়। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে রেংমিটচা নামে একটি ভাষা আবিস্কৃত হয়েছে যে ভাষায় কথা বলেন মাত্র ২৫ জন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ভাষাবিদ ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী এ সম্বন্ধে বলেন, ‘‘রেংমিটচা (RENGMITCHA) ভাষাটির বড় সমস্যা হল এটির দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবার সমূহ আশঙ্কা। কারণ যে ২৫ জন মাত্র মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন, কোনো কারণে তাদের সবাই মরে গেলে এই ভাষাটিরও মৃত্যু হবে। কারণ ঐ ভাষায় এরা ছাড়া আর কেউ কথা বলেন, এমনটি এখনও জানা যায়নি। ’ প্রকৃত পক্ষে ২৫ জনের এই মায়ের ভাষাটিকে সংরক্ষণের দায় রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রের সচেতন জনগোষ্ঠীর।

ধ্বংসের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েও যে একটি ভাষা প্রাণ ফিরে পেতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ ‘আইনু’। জাপানিজ এই ভাষাটি অবহেলিত হতে হতে এমন এক পর্যায়ে এসেছিল যে মাত্র আট জন কথা বলতে পারতো এই ভাষায়। এবং যাদের সবাই ছিল বৃদ্ধ। অনেকই খণ্ডিতকারে বলতে পারলেও লজ্জাবশত বলতো না। শুধুমাত্র সরকারি স্বচ্ছ উদ্যোগের কারণেই ভাষাটি আজ জীবিত। সুতরাং পঁচিশ জনের কথ্য ভাষাটিকে জীবিত রাখা সরকারের পক্ষে অসম্ভব কি? তাছাড়া রেমচিংটা ভাষার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষাগুলির লিখিত তথ্য সংরক্ষণ আবশ্যক। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ‘কাউরনা’ ভাষাটির অস্তিত্ব বিলীন হবার এক শতাব্দী কাল পরেও এই ভাষাটিতে আজ কথা বলছে সাধারণ মানুষ। লিখিত তথ্য থাকবার পাশাপাশি জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়েছিল ভাষাটির পূর্নব্যবহারে।

সার্বিক প্রেক্ষিত বিবেচনায়, একটি সুনির্দিষ্ট ভাষানীতি প্রণয়ন করলে প্রমিত ভাষায় কথোপকথনের ক্ষেত্রে যে সর্বজনীন সীমাবদ্ধতা তা দুর হবে, অনুবাদ সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি অর্জনের মাধ্যমে দেশীয় সাহিত্যকে বর্হিবিশ্বে পরিচিত করে তোলা যাবে এবং বাংলা ভূখণ্ডে অন্যান্য যে ভাষাগুলি আছে সেগুলিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র: 

১. জীনাত ইমতিয়াজ আলী, নভেম্বর, ২০১২, ধ্বনিবিজ্ঞানের ভূমিকা, মাওলা ব্রাদার্স।। ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ৩২।

২. ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জানুয়ারি, ২০১০, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত, মাওলা ব্রাদার্স।। ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ৬২।

৩. হায়াৎ মামুদ, পৌষ, ১৪২১, (জানুয়ারি, ২০১৫) বাংলা লেখার নিয়মকানুন, প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা।। ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ১২১।

৪. মহাম্মদ দানিউল হক, ডিসেম্বর, ২০০২, ভাষাবিজ্ঞানের কথা,  মাওলা ব্রাদার্স।। ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ১০১।

৫. ডঃ রামেশ্বর শ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪০৩, সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা, আনন্দ প্রেস এন্ড পাবলিকেশনস প্রাইভেট লিমিটেড।। কলকাতা। পৃষ্ঠা নং ৩৪৪।

৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, মে, ২০১০, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত¡, মল্লিক ব্রাদার্স।। ঢাকা। পৃষ্ঠা নং ১৪।

৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভাষাবিচ্ছেদ, শব্দতত্ত্ব, পৃষ্ঠা ১৪৬, ১৪৮ ২০১৫ অয়ন প্রকাশন, ঢাকা।

৮. সুকুমার সেন, ভাষার ইতিবৃত্ত, প্রথম প্রকাশ ১৩৩৯, প্রথম আনন্দ সংস্করণ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩। পৃষ্ঠা নং ১৫।

৯. Chinese Language-Wikipedia The Free Encyclopedia.

১০. Cantonese Pinyin-Wikipedia The Free Encyclopedia.

১১. Cantonese Language, Pronunciation and Special Character Wikipedia.

১২. Linguistic diversity and language evolution by Harald Hammarstrom, Journal of Language Evolution, Volume 1, Issue 1, January 2016.

১৩. দার্শনিক ভিটগেনস্টাইন, আবদুল মতীন, ট্রাকটেটাস ও ভিটগেনস্টাইনের ভাষাচিন্তা, আফজালুল বাসার সম্পাদিত, দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০০৩।

১৪.  রাজু আলাউদ্দিন, প্রমিত ভাষার প্রয়োজন ও আঞ্চলিক ভাষার ভূমিকা, আর্টস বিডিনিউজ ২৪,  ৬ এপ্রিল, ২০১৯।

১৫. ড. এ বি এম রেজাউল করিম ফকির, শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের চালচিত্র, ঢাকা ট্রিবিউন, জুন, ৩০ ২০২১।

১৬. তিয়াশা চাকমা, সাহিত্যিক অনুবাদ অধ্যয়ন এবং একটি সম্ভাবনা জুন, ০৭, ২০২১, সহজিয়া।

১৭.  শামসুল হুদা, বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ ও আমাদের করণীয়, ফেব্রুয়ারি, ২০২০।

১৮. কবীর চৌধুরী, প্রসঙ্গ অনুবাদ, দুশো বছরের নির্বাচিত প্রবন্ধ, সম্পাদনা, মোহাম্মদ শামসুল কবির, পৃষ্ঠা, ২৬৬, সূচীপত্র, ঢাকা।

১৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভাষাবিচ্ছেদ, শব্দতত্ত্ব, পৃষ্ঠা ১৪৫, ২০১৫ অয়ন প্রকাশন, ঢাকা।

২০. মোজাম্মেল হক নিয়োগী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ উচ্চারণ ও ধ্বনি চর্চা, দৈনিক সংবাদ সারাবেলা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।

২১. যতীন সরকার, মাতৃভাষা ও মানুষের মৌলিক পরিচয়, ভাষা বিষয়ক নিবার্চিত প্রবন্ধ, চচার্ গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৫, পৃষ্ঠা ৮০।

২২. রেংমিটচা: বাংলাদেশে যে ভাষায় কথা বলে মাত্র ২৫ জন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, জানুয়ারি ৯, ২০১৭।

লেখক পরিচিতি:

জন্ম ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৮১ কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়াশুনা করছেন নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়াতে। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরিচালনা করে আসছেন ‘প্রতীতি’ নামে একটি অবৈতনিক বিদ্যানিকেতন। ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ’ লেখকের প্রথম প্রবন্ধ গ্রন্থ এবং ‘কাঠের শহর’ দ্বিতীয় এবং প্রথম গল্প গ্রন্থ।

***************************************