You are currently viewing একাত্তরের কথা || জাকিয়া শিমু

একাত্তরের কথা || জাকিয়া শিমু

একাত্তরের কথা

জাকিয়া শিমু

ইছামতী নদীপাড়ে একটা পচা,আধগলা লাশ উপুর হয়ে পড়ে আছে ! বর্ষাকাল। পাহাড়িঢলের ঘোলাজল, নদীরকূল উপচে বিস্তীর্ণ লোকালয়ে ঢুকে গ্রামগুলোকে প্রকাণ্ড এক নদীর রূপ দিয়েছে- বাড়িঘর, গাছপালা সে-নদীতে কচুরিপানার মতো ভাসছে। এমনতরো সময়ে নদীচরে লাশ পড়ে থাকার কথা নয়। নদীতে তীব্র স্রোত, স্রোতের টানে মড়াপশুপাখি এমনকী ভেসে-আসা আস্ত গাছগাছড়া শাখা-প্রশাখাসমেত মুহূর্তে নদী ছাপিয়ে চলে যাচ্ছে বহুদূরে; সেখানে মড়া এসে স্থাণু হয়ে তীরে পড়ে আছে-অবিশ্বাস্য ঘটনা!

দেখা গেল ঘটনা গুজব নয়,সত্য। মেছেপাড়ার ঘাটে তেঁতুলগাছের ডালপালা স্তুপ করে মাছেরফাঁদ পাতা ,সেই ফাঁদে লাশ বানের তোরে ভেসে এসে আটকে গেছে।

শনি মণ্ডল তার বউটার উপর তিত-বিরক্ত হয়ে আছেন। সময়ে- অসময়ে কদলীগাছের ভেলায় ভেসে টইটই করে ছুটে বেড়ায় গাঁয়ের এমাথা- ওমাথা। দেশে গণ্ডগোল চলছে- সময়কাল বড্ড খারাপ। চারদিকে প্রতিদিন কতো লোক নিখোঁজ হয়, তার কী কোন হদিস আছে ! দিনে-দুপুরে পাক মিলিটারির নৌকা আসে ঘাটে- যাকে খুশি ধরে নিয়ে যায়। কপাল ভালো হলে ফিরে আসে তাও আধমরা হয়ে; নয়তো লাশ হয়ে ভেসে আসে বানের জলে। শনি মণ্ডলের বসতবাড়ি পুবহাটি হিন্দুপাড়ায়। তার মতো আরও জনাপাঁচেক হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবার কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই বলে আতঙ্ক উৎকণ্ঠায় নাক ডুবিয়ে কোনোমতে রয়ে গেছে ভিটেমাটি আঁকড়ে। শনি মণ্ডল নিজেও ভিটে ছেড়ে কোথাও যাননি। সে প্রাণে বেঁচে থাকতে বাপদাদার ভিটে ছেড়ে অন্যদেশে যাবে না। চিতায় যাবার সময় হলে বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষের পা-ছুঁয়া মাটি থেকেই চিতায় উঠবে, অন্যকোনো দেশে উদবাস্তু হয়ে নয়। পশুপাখি পালিয়ে বাঁচে-মানুষ কেনো নিজের জায়গা ছেড়ে পালাবে!

অবশ্য এ-তল্লাটে গণ্ডগোল এখনো দু’পক্ষের সামনা-সামনি বাঁধেনি। দু’চার মাইল দূরে ধলেশ্বরী নদীপাড়ে অবশ্য মিলিটারির সাথে মুক্তিদের কৌশলী এক যুদ্ধ বেঁধেছিল। তাও এ-গাঁয়ের লোক নিজচোখে দেখেনি তবে শুনেছে সেসব দুর্দান্ত-বীরত্বগাঁথা যুদ্ধকাহিনী।

ঢাকা থেকে পাকমিলিটারি ভর্তি লঞ্চ, রওনা করে ধলেশ্বরী নদী ধরে, পশ্চিম দিক বরাবর। ধরেশ্বরী নদী ছাড়িয়ে লঞ্চ যাবে ইছামতী নদী ধরে আরোও পশ্চিমের দিকে দোহার-নবাবগঞ্জ পাক সেনাক্যাম্পে। পাকসেনারা সাঁতার জানে না,পানি এদের বড়ো শত্রু। এমন মোক্ষম-সুযোগ মুক্তিরা হাতছাড়া করে না। তাঁরা ওঁত পেতে থাকেন মাঝ নদীতে,লঞ্চ যেই সেই এলাকায় ঢুকে এরা কৌশলে লঞ্চের তলায় শক্তিশালী তুরপুনে ছিদ্র করে ডাঙ্গায় ফিরে আসে। লঞ্চের তলায় ছিদ্র করায় ভুড়ভুড়িয়ে জল ঢুকে, দেখতে দেখতে অল্পসময়ে লঞ্চ জলেরতলা তলিয়ে যায়। বেশিরভাগ পাকসেনা লঞ্চের ভেতরে ডুবোজলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা পড়ে।

কিন্তু পাশাপাশি এদের দু’দুটি লঞ্চ চলছিল। পাকসেনারা জলপথে পাশাপাশি দুটি জলযান নিয়ে চলাচল করত। একটাতে সমস্যা হলে যা-তে বাকিটা রক্ষাকবজ হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। তারপরও ঘটনার আকর্ষিকতায় অপর লঞ্চের সেনারা হতবিহব্বল হয়ে পড়ে। সঙ্গীদের এমন করুন মৃত্যু-দৃশ্য প্রস্তরমূর্তি চোখে তাকিয়ে দেখা ছাড়া বিকল্প কিছু সেমুহূর্তে এদের মাথায় ঢুকে না। আকর্ষিক তীব্র আঘাতের পরের খানিকক্ষণ মানুষ যেমন স্থির-মগ্নতায় ডুবে থাকে,সেরূপে তারাও কিছুক্ষণের বিরতি নেয়।

এরপর অবশ্য পাকসেনারা প্রচণ্ড ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং প্রতিপক্ষের উপর সহস্রগুন শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ততক্ষণে মুক্তিরা যদিও পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু পাকসেনারা প্রতিশোধ নিতে ইছামতীপাড়ের গ্রামগুলোতে মুক্তিদের খোঁজার নামে ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ-গণ্ডগোলে কত লোক মারা পড়ছে তার হিসেব মেলা মুশকিল। সেনারা যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই বন্দূকের নলায় ঝুলিয়ে মেরেছে। তন্নতন্ন করে খোঁজে ধরে নিয়ে গেছে ত্যাগরা জোয়ান ছেলেপুলেদের এবং,লাইন ধরিয়ে নদীরপারে গুলি করে হত্যা করেছে । যুবতী- কিশোরী মেয়েদের টেনে হিঁচড়ে লঞ্চে ভরে নিয়ে যায় সেনাক্যাম্পে। আচমকা এমন ভয়ঙ্কর হামলায় কেউ কেউ অবশ্য দিকভ্রান্ত হয়ে নিজের গ্রাম থেকে লম্বা জলাপথ ডুবসাঁতারে পাড়ি দিয়ে আশপাশের গাঁয়ে আশ্রয় নিয়েছে। শনি মণ্ডলের পিসি ভাগ্যগুণে পালিয়ে বেঁচে গেলেও তার স্বামী একমাত্র ছেলেটার হদিস এখনো মেলেনি।

শনিমণ্ডলকে এমন দুর্যোগকালে বাড়ির বাইরে তেমন একটা দেখা যায় না। সারাক্ষণ মনেরমধ্যে কেমন অয়োয়াস্ত্রি লাগে। বুকটা ধরফড় করে। পাকসেনাদের তাকে চেনার কথা নয়। হিন্দু, মুসলিম কারো গায়ের গন্ধ শুঁকে বের করা যায় না। কিন্তু এ এলাকায় ধর্মহীন কিছু শয়তান গণ্ডগোলের শুরু থেকে সারি-ধানের ক্ষেতের আগাছার মতো লিকলিকিয়ে বেড়ে উঠেছে। তারা পাকসেনাদের দালাল হয়ে কাজ করছে। তাদের খপ্পরে কখন কে পড়ে,কে জানে !

অবশ্য শনিমণ্ডল গণ্ডগোলের শুরুতে গাঁয়ের মৌল্ভি সাবের কাছ থেকে দুটি কালেমা শিখে নিয়েছে। এরপর চারদিকের পরিস্রিতি বিবেচানায় এবং তাঁতীপাড়ার বন্ধু সেলিম বেপারির পরামর্শে বাড়তি কিছু দোয়া-দুরুদ এবং নবী-রসুলের নামও রপ্ত করা আছে। গত ক’মাস বাড়ির বাইরে বের না হলেও সেলিম বেপারির বাড়ি সে মাঝেমধ্যে যায়। সময়কাল ভয়াবহ খারাপ। কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। কিন্তু তার ছোট্টবেলার বন্ধু সেলিম বেপারি সেদিক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ।

সেলিম বেপারি, বেঁটেখাটো একহারা গড়নে, গায়ের বরণ শ্যামো, সহজে কারো চোখে পড়ার মতো নয় কিন্তু দিল-টা খোলা আসমানের মতো কূল- কিনারাবিহীন। সম্ভ্রান্ত বংশে জন্ম, বাপ-দাদার চৌদ্দপুরুষের নামডাক এঅঞ্চলে বেশ পুরনোকাল থেকে।

বড় দাদারা বিলাতের জাহাজে কাজ করত। তাঁদের ডাকা হতো লস্কর নামে। একসময়ে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ মসলাপাতি,সুগন্ধিসহ প্রয়োজনীয় মাল-সামাল ভরে কলিকাতা বন্দর থেকে ছুটে যেত বিলাতের বিভিন্ন বন্দরে। তো জাহাজের কাজে বিশেষ করে খালাসির কাজে বিলাতিদের পছন্দের তালিকায় ছিলো বাঙ্গালি পুরুষ। দেশভাগের আগে পুরো ভারতবর্ষ এক-পাতে ছিল। মানুষ কাজের খোঁজে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে বেড়াত। এঅঞ্চলের মানুষ কাজের খোঁজে সিলেট, আসাম, কলিকাতা এসব অঞ্চলকে বেশি প্রাধান্য দিত। সেলিম বেপারির বড়দাদা কাজের সন্ধানে গেলেন আসামে। সেখানে বিলাতি এক সাহেবের সুনজরে পড়তে কাজ পেলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজে। কাজের শুরুতে জাহাজে ফুট ফরমাশ, খালাসির কাজ করলেও একসময় নিজগুণে লস্করের দায়িত্ব পেয়ে যান। এ-কাজে টাকাকড়ি যেমন আছে নানাবিধ সুযোগ সুবিধাও কমতি নেই। তিনি এ সুযোগে গাঁয়ের অনেককে তার সাথে কাজে নিয়ে নিলেন। বিধায় তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হল এবং পুরোগ্রামের চেহারা পাল্টে গেল।

একসময় ব্রিটিশরা হটে গেলে ভারতবর্ষ মুক্ত হয়; তবে ভারতবর্ষ ঝনঝনিয়ে কাঁচেরপাত্রের মতো বে-খেয়ালভাবে ভেঙ্গেচূড়ে খণ্ডবিখন্ডে ভাগ হয়ে স্বাধীন হলো বটে কিন্তু প্রত্যেকের জীবনধারা উলটপালট হয়ে পড়ল। অনেকের মতো লস্করাও কাজ হারাল। জমিদারদের মতো লস্কররা কাজ হারিয়ে প্রাচীন অতিকায় হস্তির মতো পুরোদস্তুর লোপ পেয়ে কেবল নামের শেষে পদবি নিয়ে কোনোমতে টিকে রইল।

সেই বংশের সেলিম বেপারী কয়েক প্রজন্ম পেছনে ফেলে এসে আজ বলতে গেলে কপর্দকশূন্য। তাঁর কাছে এখন পূর্বপুরুষের ভাঙ্গাচোরা লাল দালানের ইটকাঠের টুকরো ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই। তবে বাহ্যিক বিষয়সম্পদ না থাকলেও তার মধ্যে পূর্বপুরুষদের বিশেষ একটা গুণ রয়ে গেছে। অন্যের উপকারেই নিজের সুখ’ বড়দাদা থেকে এ বিশেষ গুণ তার রক্তধারায় মিশে আছে। এই যুদ্ধকালে গাঁয়েরলোকের বিশেষকরে হিন্দু ধর্মাবলীদের একমাত্র আশ্রয় সেলিম বেপারী।

সেলিম বেপারিদের এঅঞ্চল, হিন্দু ধর্মাবলীর জনাধিক্য বলা যায় প্রাচীনকাল থেকে। ৪৭’-এ দেশ ভাগের আগেপিছে বেশিরভাগ হিন্দু ওপারবাংলায় পাড়ি দিলেও এখনো এঅঞ্চলে হিন্দুসংখ্যা মন্দ নয়।

যদিও এখন ৭১’- এ গন্ডগোলের সময়ে বাকি হিন্দুদের মধ্যে যারা যেভাবে পেরেছে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঘরবাড়ি জমিজিরত ফেলে কিংবা স্বল্প-দামে বেচে দিয়ে জান নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার অনেক হিন্দু পরিবার গভীর রাতে সোনাদানা, টাকাকড়ি কোনোরকম সাক্ষী সাবতের তোয়াক্কা না করে, সেলিম বেপারির কাছে গচ্ছিত রেখে দেশ ছাড়ছে। সেলিম বেপারি বিশ্বাসীলোক। ধর্ম বর্ণভেদে তাঁকে গাঁয়ের সকলে বিশ্বাস করে। কাজেই অনেকে টিনের ট্রাঙ্কে যক্ষেরধনের মতো এতকাল আগলে রাখা পূর্বপুরুষের চিহ্ন, দলিলপত্র সেলিম বেপারির ঘরে রেখে নির্ভয়ে চলে যায়।

পাকসেনাদের সাথে সেলিম বেপারির জানাশোনা নাই, থাকার কথাও নয়। এরা দেশি নয় বিদেশি। বিদেশিরা এদেশের লোকের ঘটের-খবর জানার কথা নয়। কথায় আছে- ঘরের শত্রু বিভীষণ। দেশি খচ্চরেরা মিলিটারিদের সাথে হাত মিলিয়ে গাঁয়ের সজ্জন মানুষগুলোকে ধরিয়ে দিচ্ছে। যুদ্ধবাঁধার সুযোগে এরা ধর্মীয়লেবাশ ধরে খুন হত্যা, লুটতরাজে মেতে উঠেছে।

এতদিন যাদের কারণে তারা গাঁয়ে দেদারেসে অকাজ করতে পারতো না এখন এই সুযোগে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পাক মিলিটারি দিয়ে তাঁদের শায়েস্তা করছে। সেলিম বেপারি সৎলোক- ধর্মকর্মও করেন। স্বভাবতই গাঁয়ের দুষ্টলোকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকার কথা নয়। তাঁকে হেনস্থা করতে এরমধ্যে বেশ কবার তাঁর মিলিটারি ক্যাম্পে ডাক পড়েছে। তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোন অভিযোগ দেখাতে না পারলেও সন্দেহের তালিকায় তাকে রাখা হয়েছে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সেলিম বেপারি সেনাক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসার সময় খেয়াল করেন তাঁদের গাঁয়ের গাঁজাল,বখিয়ে যাওয়া কিছু ছেলেপুলে আর্মিক্যাম্পে ঘুরঘুর করছে। এরা দুষ্টলোক। দুষ্টলোকের উঠাবসা হবে দুষ্টের সাথে, অবশ্যই সাধুসন্তের সাথে নয় ! এরা গাঁয়ের ভেতর বেলেল্লাপনা করে বেড়ায়। এদের দৌরাত্নে বৌ- ঝিরা ঘরের বাইর হতে ভয়ে তটস্থ থাকে। সেলিম বেপারি গাঁয়ের মুরব্বী। গাঁয়েরলোকের বিভিন্ন অভিযোগে বারকয়েক তাদের বিরুদ্ধে বিচার শালিসও তাঁকে করতে হয়েছে।

সেসব দুষ্ট ছেলেদের প্রথম দেখায় সেলিম বেপারী অবশ্য চিনতে পারেননি। বেশভূষার অহেতুক পরিবর্তনে তিনি যারপরানই বিস্মিত হয়েছেন। মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে গাল-মুখজুড়ে ছাগলের মতো ছোপ ছোপ দাড়িতে ছেয়ে ফেলেছে। পরনেও বেমানান ভিনদেশি-আলখেল্লা, চোখেরকোণে সুরমার ধূসরনীলচে রং। জীবনে কোনদিন ধর্মঘরের ত্রিসীমানায় এদের দেখেছেন বলে মনে পড়ে না। ধর্মকর্মের বালাই নেই অথচ কী অবলীলায় নিজের অবয়ব ছেড়ে ভিনদেশি খোলসে ঢুকে পড়েছে!

গাঁয়ের কয়েকজন বয়স্ক লোককেও তাদের কাতারে দেখা গেল ! তাদের মধ্যে উত্তরপাড়ার বাবুল মিয়াঁ। এলাকায় দাদন ব্যবসা করে। বয়সে সেলিম বেপারির সমবয়স হবে। সেলিম বেপারিকে দেখে পোকেখাওয়া দাঁতে খিলখিলিয়ে হাসে। ঘন ঘন শাহাদাত আঙ্গুলে গুড়াকু নিয়ে পোকখাওয়া দাঁতগুলো ঘষামাজা করে। অশ্লীল সে-দৃশ্য! সেলিম বেপারির গা ঘিনঘিন করে উঠে। তাকে দেখামাত্র সেলিম বেপারীর হুঁশ ফেরে এবং সেনাক্যাম্পে তাঁর তলবের কারন সহজেই আঁচ করতে পারেন। এবং এসব দুষ্টলোকদের সেনাক্যাম্পে দেখে ভবিষ্যৎ দুর্ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন!

উত্তরহাটির নিরঞ্জন সরকার সাতসকালে রঙচটা এক ভারী টিনেরট্রাঙ্ক মাথায় নিয়ে সেলিম বেপারির উঠোনে ধপাস করে নামিয়ে রাখে। শনিমণ্ডল উঠোনের কোণায় বসে সেলিম বেপারির কাছে গতকালের সেনা ক্যাম্পের কিচ্ছা কাহিনী শুনছিল। ঝনঝনানি শব্দে তাঁদের সম্বিৎ ফেরে। নিরঞ্জন সরকারের উপস্থিতি টের পেতে শনি মণ্ডল মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরে। তাদের দু’জনের স্বেচ্ছায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ আছে। যদিও নিরঞ্জন সরকার, তাদের জ্ঞাতিগোষ্ঠীর লোক কিন্তু এর কাজকারবার কোনোকালেও সুবিধার ছিল না। শনিমণ্ডল তাকে পছন্দ করে না এবং দু’জনের মধ্যে একটা নিরবকলহ সর্বদা লেগে থাকে। সেলিম বেপারির সাথেও যে নিরঞ্জন সরকারের তেমন কোনো বিশেষসম্পর্ক আছে তা কিন্তু নয়। সেলিম বেপারী গাঁয়েরলোকের ভালোমন্দের দায় স্বেচ্ছায় নিজকাঁধে তুলে নিয়েছেন সে অধিকারে এমন দুর্দিনে তার ট্রাঙ্ক গচ্ছিত রাখতে সে এসেছে। শনি মণ্ডল সপ্রতিভ-লোক, মন্দলোকের কু-মতলব বুঝতে পারেন। তিনি চোখের ইশারায় সেলিম বেপারিকে সতর্ক করেন। কিন্তু বেপারি অবুঝের মতো তার ইশারা কাটিয়ে নিরঞ্জন সরকারের ট্রাঙ্ক তাঁর শোবারঘরের খাটের তলায় সযতনে রেখে দেন।

শনি মণ্ডলের বউটা অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে গেল ! গাঁও-গেরামে বেড়ে-ওঠা মেয়েলোক সাঁতার জানে না- এমন তাজ্জব কথা আজন্মে কেউ শুনছে বলে মনে হয় না। বাপেরবাড়ি নদীর তীরঘেঁষা। সারাদিন নদীর পানিতে দাপাদাপি করে ডাঙ্গর হয়েছে। বিয়ের পর শনি মণ্ডলের বাড়িরও একই দশা- নদী থেকে কয়েক কাইকের পথ। পল্লিগাঁয়ের লোক, নদী ছাড়া গতি নাই। নদীর সাথে জীবনধারা অষ্টেপৃষ্টে বাঁধা। কিন্তু সে সাঁতার জানে না। এ-কথা এতকাল মানুষ জেনে থাকলেও ঠিকঠাক কেউ বিশ্বাস করেনি। আজকের ঘটনায় অবশ্য সে-কথার প্রমান পাওয়া গেল। বেঁচে ফিরেছে সে, তা-ও এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা বটে!

বউটা প্রতিদিন ভোরসকালে কদুলীগাছের ভেলায় ভেসে বিলেরজলে শাপলা, কলমিলতা, হেলেঞ্চা শাক তুলে আনে। বেলা নাই উঠতে গাঁয়ের ঘরে ঘরে সেসব বেচাবিক্রি করে। যে’কটা পয়সা জুটে তা দিয়ে সংসার টেনেটুনে কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছে এই যুদ্ধকালিন সময়ে। শনি মণ্ডল জাতব্যবসায় কাঠমিস্ত্রি। দেশের এমন অবস্থায় গত ছ’মাসে একদিনও কোথাও কাজের ডাক পড়ে নাই। এমন দুর্যোগকালে মানুষের জানপ্রাণের যেখানে একমুহূর্তের ভরসা নেই সেখানে ঘরদোরের চিন্তা মাথায় আসার কথা নয়! তো বউ ভরদুপুরে বেচাবিক্রি শেষ করে বাজার থেকে সদাইপাতি নিয়ে বাড়ির পথে ভেলা ভাসায়। গাঁয়ের রাস্তায় কোমরজল। ডহরডাঙার এখন আর প্রভেদ করা চলে না। চারদিকে জল থৈথৈ। ভেলা খালের ভেতর ঢুকতে, উল্টোপথে পাকসেনাদের নৌকা গাঁয়ের ভেতর ঢুকতে দেখা যায়। জনাবিশেক সেনা, গায়ে ধূসররঙা ইউনিফর্ম, মাথায় গোলগাল আকৃতির টুপি। চারদিকে বন্দুক তাক করে ধরে আছে। শনি মণ্ডলের বউ ইহজন্মে মিলিটারি দেখে নাই। তবে তাদের ঘৃণ্য-কীর্তিকলাপ লোকমুখে শুনেছে। মিলিটারি মানে সাক্ষাত যমদূত, আজরাইল! এমনটা ভাবতে ভাবতে মাথা ঘুরে টুপকরে খালের জলের ভিতর পড়ে যায়।

খালের অথৈ জলে হাবুডুবু খেয়ে বানেরস্রোতে ভাসতে ভাসতে চলে যায় বহুদূরে ইছামতী নদী যেখানে মোচড় মেরে বাঁক বদল করছে, সেইখানে। বাঁকঘেঁষে একঝাঁক বাঁশেরঝোপ,জলের তলে সেসব গাছের গোঁড়া। বিধস্ত- শরীরটাকে নদীরস্রোত টেনেটুনে একসময় বাঁশঝারের গোঁড়ায় আটকে দেয়। ওপাড়ার একলোক মাছ ধরতে সেপথ ধরে নাও বেঁয়ে যাচ্ছিল। তার চোখে পড়ে শনিমণ্ডলের বউ’র লাল ডোরেকাটা শাড়িটা,ঢেউয়ে পানির উপর দুলছিল। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। বউটা অবশেষে প্রাণে বেঁচে গেল বটে তবে প্রাণটা মরে গেল ।

সেলিম বেপারি দুপুরের খাওয়া শেষে শরীরটাকে একটু বিছানায় গড়িয়ে নেন, এটা তাঁর বহুদিনের অভ্যাস। সারাদিনের ক্লান্তি ঝরাতে ভাতঘুমটা অবশ্য বেজায় কাজ দেয়। তাঁর শোবার ঘরের দখিন বরাবর জানালা দিয়ে অতিরিক্ত গরমেও কোথা থেকে কে জানে, ভুরভুরিয়ে হাওয়া ঢুকে। অবশ্য ওদিকটা যতদূর চোখ যায় ধুধু খোলা প্রান্তর। বাড়ির সীমানা পেরিয়ে বহুদূর অবধি ত্রিফসলী একপ্রস্ত খোলা মাঠ। বছরে তিনবার এখানে তিন রঙের ফুল-ফসলে ভরে যায়। চোখ ধাঁধানো সেসব দৃশ্য। এখন ভরাবর্ষায় অবশ্য চারদিকে জলের সমুদ্র। যতদূরে চোখ যায় নদীর মতো জলেরধারা হাওয়ায় ঢেউ খেলে যায়।

সেলিম বেপারি জানালার ও-ধারে চোখ রেখে জলখেলা দেখছেন। হঠাৎ শোয়া অবস্থা থেকে ধরমর করে উঠে বসেন। বারকয়েক দু’হাতে চোখ কচলে নেন। নাঃ, তিনি ঠিকঠাক দেখছেন। মিলিটারির নৌকা ওপথে তাঁর বাড়ির দিকে মুখ করে ধেয়ে আসছে। নাওয়ের গুলুইয়ে বাবুল মিয়াঁ দাঁড়িয়ে। নিজেকে শান্ত রাখতে ধীরেলয়ে বিছানা থেকে নেমে বেতমোড়া চেয়ারের হাতলে রাখা সাদা পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়ান। সহসা বেপারিকে ওভাবে ওঠতে দেখে বউ প্রশ্নচোখে তাকায় ! সেলিম বেপারি জানালার দিকে চোখের ইশারা করে। বউ তড়িঘড়ি উঠে যেয়ে জানালার কপাট বন্ধ করে। দরজার খিল শক্ত করে এঁটে দিয়ে দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ভয়ে সেও ঠকঠকিয়ে কাঁপতে থাকে। সেসময়ে দরজায় লাথি পড়ে, শব্দ ক্রমশ জোরালো হয়। একের পর এক লাথিতে পুরনোকালের দরজার কবজি ঝুরঝুরিয়ে ভেঙ্গে পড়ে।

উঠোন ভর্তি মিলিটারি। বাড়ির চারিধার ঘিরে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। মেজর সাহেবের (এর সাথে সেলিম বেপারির আগেও কয়েকবার ক্যাম্পে সাক্ষাত হয়েছে) সাত আটজন মিলিটারি সহসা দরোজা ঠেলে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। পেছন পেছন বাবুল মিয়াঁ দোরের পাশে এসে দাঁড়ায়। এবং একগাল পানেরপিক বিকট শব্দে থু করে সেলিম বেপারির দরজার চৌকাঠে ফেলে। সেলিম বেপারি মিলিটারির দৌরাত্নে দরজা ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বিশ্রি-পোকাখাওয়া হলদেটে দাঁত কেলিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে, বাবুল মিয়াঁ সেলিম বেপারির গা-ঘেঁষে এসে দাঁড়ায়। পরনে ভিনদেশি আলখেল্লা, থেকে থেকে গুরাকুর কৌটাটা বের করে আঙ্গুলে ভরে পোকাদাঁতে ঘষতে থাকে। শরীর থেকে আঁশটে ভোমরা একটা গন্ধ নাকে তীব্রভাবে এসে লাগে। চেহারা সুরতেরও বেহাল দশা- নোংরা হিংস্র নেকড়ের মতো দেখায়। ঘৃণায় সেলিম বেপারী সরে দাঁড়ায়।

প্রায় ঘণ্টাখানেক সেলিম বেপারির ঘরদোর তত্ত্বতালাশ করেও তেমন কিছুই পাওয়া যায় না। ঘরে গুটিকয় আসবাবপত্র, তাঁদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রে ঠাঁসা। মেজর সাবের চোখেমুখে চরম বিরক্তি ফুটে উঠে। বাবুল মিয়াঁর দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি চিন্তিতমুখে দাওয়া’য় যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনারা বাবুল মিয়াঁর তথ্য মতো কিছু না পেলেও সে কিন্তু হাঁটুভাঁজে বসে থাকে না। ঘরের অন্দরে ঢুকে পড়ে এবং তার সন্ধানীচোখ কিছু একটা ঘরময় তছনছ করে খোঁজে ফেরে। সেলিম বেপারির বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। শনি মণ্ডল আসলেই পোড়া-লোক। তার আশঙ্কা অমূলক ছিল না। সেলিম বেপারি সহজসরল, মানুষকে অবিশ্বাস করতে শিখেন নাই। শনি মণ্ডল সবসময় একটা কথা বলে, “পৃথিবীতে সবাইকে বিশ্বাস করে বোকারা তবে কিছু কিছু মানুষের প্রতি অবিশ্বাস রাখা মহাপাপ”।

বাবুল মিয়াঁর শকুনিচোখ খাটের নিচ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। নিরঞ্জন সরকারের টিনের ট্রাঙ্ক সে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে। ততক্ষণে মেজর সাহেব ফিরে যেতে পা বাড়িয়েছেন, বাবুল মিয়াঁ তালঠোকা কায়দায় ট্রাঙ্ক দুহাতে ঝাঁপটে ধরে উঠোনের মধ্যিখানে নিয়ে আসে। গুপ্তধন পাওয়ার আমেজে চেঁচিয়ে মেজরকে উদ্দেশ করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা উর্দু শব্দে কিছু একটা বলে।

সেলিম বেপারি সেদিন শনি মণ্ডলের কথায় কান দেয় নাই এখন চরম আফসোস হচ্ছে। মুখ্যত ট্রাঙ্কটি ছিল তার জন্যে পাতা-ফাঁদ। তাঁকে ফাঁসানোর জন্যে নিরঞ্জন সরকার এবং বাবুল মিয়াঁ আঁতাত করে এ নাটক বেঁধেছে। ট্রাঙ্ক খোলা হয়। ভেতরে গণেশ মূর্তি এবং পুজোর বিভিন্ন জিনিসপত্রে ঠাঁসা। বাবুল মিয়াঁ ইতোমধ্যে বেশকিছু উর্দু শব্দ রপ্ত করে নিয়েছে। সেসবকে সম্বল করে হাতপা চোখমুখ নেড়েচেড়ে গণেশ মূর্তির বিষয়আশয় মেজরকে বুঝিয়ে বলে।

মিলিটারি সেলিম বেপারিকে ধরে নিয়ে গেছে’- সেখবর গ্রামসুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সকলে অবাক হয়। তাঁকে কেনো নিয়ে যাবে-কারণ কেউ খোঁজে পায় না। ভালো মানুষ, ধর্মকর্মও করে। সবার চোখে-মুখে একছোপ উদ্বিগ্নতা! তাদের এখন কী হবে! ভেবেচিন্তে কুল কিনারা পায় না।

এ-খবর শোনার পর থেকে শনি মণ্ডলের দিন-রাত সমান হয়ে গেছে। চোখের ঘুম উবে গেছে। এপর্যন্ত যত লোককে মিলিটারি তুলে নিয়ে গেছে,তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে এসেছে তাদের সিকিভাগেরও কম। এর আগে অবশ্য আরও দু’দুবার সেলিম বেপারির ডাক পড়েছিল সেনাক্যাম্পে কিন্তু সেটার কারণও ভিন্ন ছিল। বাড়ি থেকে বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ,অবশ্যই সামান্য নয়। মেজর সাহেব নিজে এসে তাঁর ঘর তল্লাশি করে অবৈধ মাল হাতেনাতে পেয়েছে। জনসম্মুখে তাঁকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে নৌকায় তুলে সেনাক্যাম্পে নিয়ে গেছে। গাঁয়ের বহুলোক সে দৃশ্য দেখেছে এবং চোখের জল ফেলেছে।

গাঁয়েরলোক অবশ্য মিলিটারির এসব গুজব রটনায় বিশ্বাস আনতে পারে না। সেলিম বেপারির কাছে অবৈধমাল পাওয়া গেছে’- এমন গাঁজাখুরি গপ্প শুনলেও পাপ !

শনি মণ্ডল অবশ্য সেদিনই বিপদের ভয়াবহতা আঁচ করেছিল। নিরঞ্জন সরকারের রঙচটা টিনেরট্রাঙ্ক তার প্রাণে কাঁপন ধরায়- সেলিম বেপারিকে অবশ্য বিশ্বাস করানো যায় নাই। তাঁর দোষের মধ্যে ওই এক দোষ- সে কাউকে অবিশ্বাস করতে শিখে নাই। মানুষ- অমানুষের মাঝে তফাৎ করতে জানে না। একগড়া সবাইকে বিশ্বাস করে বসে।

শনি মণ্ডলের বউটা ভয়ে রাতভর জেগে থাকে। নিজের মনে সারাক্ষণ কীসব বিরবির করে বকে যায়। দিনকে-দিন আবস্থা আরও বেগতিক হচ্ছে। অন্ধকার ঘরেরকোণে বিড়ালের মতো চার হাতপা গুঁটিয়ে বসে থাকে। আতঙ্ক শুধু শনিমণ্ডলের বউটার একা নয়। ভয় আতঙ্কে জড়িয়ে গেছে গোটা জাতি। তারপরও শনিমণ্ডল পেট বাঁচাতে ঘরের বার হয়। গত ক’দিন আটা-গুঁড়ের উপর চলছি, তা-ও ফুরিয়ে গেছে। উপোষে শরীর বড়ো কাহিল হয়ে আছে। সে কদুলীভেলা ঠেলে পূবহাটির বিলে হেলেঞ্চা শাকের খুঁজে বের হয়। এবং ভেলায় হেলেঞ্চা শাক ভরে উত্তরপাড়ার দিকে ছুটে। যদি বিক্রিবাট্টা কিছু হয় সে আশায়। খালেরপাড় ধরে ভেলা ছুটতে, পথে মধ্যে বাবুল মিয়াঁর সাথে দেখা হয়ে যায়। সে গয়না নৌকার গলুইয়ে পা ঝুলিয়ে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে। মুখে পিশাচী হাসি। হাতের ইশারায় শনি মণ্ডলকে ভেলা থামাতে বলে। শনি মণ্ডল জানে, বাবুল মিয়াঁর আদেশ কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়- অমাবশ্যা কাল চলছে। সে তাঁর ভেলা,নৌকার কাছে কায়দা করে ভিড়ায়। বাবুল মিয়াঁ তাঁর মুখের নিকটে ঝুঁকে এসে সেলিম বেপারি হদিস জানতে চায়। এবং শনিমণ্ডলের উত্তরের অপেক্ষা না করে, সহসা উচ্চস্বরে পিশাচের মতো নোংরা হলদেটে পোকাখাওয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠে।

এঘটনার পাঁচদিন পর মেছেপাড়ার ঘাটে- ফুলেফেঁপে ঢুল হওয়া,আধপচা বিকৃত লাশটি ঝাঁটায় এসে ঠেকে থাকে। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে পিঁপড়ের সারির মতো লোক সাঁতরে এসে লাশটি যতনে তুলে নেয়- এ যে সেলিম বেপারীর লাশ !

==================