You are currently viewing একজন সুস্মিতা গুহ-রায় ও একটি আনন্দ লালনকেন্দ্র  > আলী সিদ্দিকী

একজন সুস্মিতা গুহ-রায় ও একটি আনন্দ লালনকেন্দ্র > আলী সিদ্দিকী

একজন সুস্মিতা গুহ-রায়

একটি আনন্দ লালনকেন্দ্র 

আলী সিদ্দিকী

সকলের দিদি আর সমবয়েসীদের বাবলি। আমাদের আনন্দ লালনকেন্দ্রের পুরোহিত। ট্রাইস্টেট (পেনসেলভেনিয়া, ডেলাওয়ার ও নিউজার্সি রাজ্য) এলাকায় বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মন ও মননের বিনোদনকেন্দ্র হলো সুস্মিতা গুহ-রায়ের বাসভবন। ফিলাডেলফিয়া শহর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা স্প্রিংফিল্ড এলাকার বাড়িতে অনেক বছর ধরেই বাংলাভাষী মানুষদের পদচারণা ঘটে চলেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে দিদির প্রয়াত স্বামী সুযশ গুহ-রায়ের প্রশ্রয়ে। আমাদের দিদি সুস্মিতা গুহ-রায় সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন।

সুস্মিতা গুহ-রায় ইতিহাসের পাতায় এঁকেছেন বর্ণিল পদচিহ্ন। স্বাধীনতাপূর্ব পূর্ববাংলায় যখন গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন গড়ে ওঠেনি তখন তিনি কবির আনোয়ারদের “পারাপার” নাট্যদলের সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী সুস্মিতা গুহ-রায় স্বাধীনতাত্তোরকালে বিটিভির নাটকে অভিনয় করেন। তিনি আতিকুল হক চৌধুরীর “আবহাওয়ার পূর্বাভাস” নাটকে অভিনয় করেন হুমায়ুন ফরিদীর বিপরীতে। তাছাড়া সংগীতেও তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। কর্মব্যস্ত জীবনের নানান অলিন্দে আনন্দের সমারোহ সাজিয়ে চলেছেন সুস্মিতা গুহ-রায়। তাঁর আনন্দধামে কতো কতো প্রাজ্ঞজনদের পদার্পণ ঘটেছে তার বিবরণ শেষ করা যাবে না। আবেদ খান, কাদেরি কিবরিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কতো কতো জ্ঞানী গুণীজন এই আনন্দভুবনে শরিক হয়েছেন।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই আনন্দকেন্দ্রের সকল কার্যক্রম সর্বধর্মীয় মতাদর্শের উর্ধ্বে মানবিকতার চর্চাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আমরাও এখানে এসে প্রাণ খুলে কথা বলি, গান গাই, উচ্ছ্বাসে মেতে উঠি যা ট্রাইস্টেটের কোথাও মিলবে না। একটা বিষয় অতিশয় প্রণিধান যোগ্য যে, প্রতিটি আয়োজন হয় উদ্দেশ্যমূলক। আনন্দ সমাবেশগুলো তাঁর স্পর্শে ও পরিকল্পনায় অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতির বিশেষায়িত দিনগুলোকে অর্থবহ করে তোলার জন্য নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। গান, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা, স্মৃতিচারণসহ বহু বর্ণিল অনুষ্ঠানমালায় সাজানো হয় সকল আয়োজন, যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বাইশে শ্রাবণ, নজরুল দিবস, বসন্ত উৎসব, নারী দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি। বাঙালি জাতির সকল ঐতিহাসিক দিনগুলোকে স্মরণের মধ্য দিয়ে আনন্দ উদযাপনের এক অভিনব পরিমন্ডল গড়ে তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি ফিলাডেলফিয়া এলাকায় নাট্যচর্চাকে তিনি উৎসাহ দিয়ে থাকেন, যেমন নাট্যকার বদরুজ্জামান আলমগীরের নাটক “যোজনগন্ধা মায়া” নাটকের দীর্ঘদিন রিহার্সেল তাঁর বাসভবনেই হয়েছে। এছাড়া তিনি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। তাঁর আগ্রহে আলী সিদ্দিকীর সম্পাদনায় এবং সুস্মিতা গুহ-রায় ও বদরুজ্জামান আলমগীর সার্বিক সহযোগিতায় প্রকাশিত হয় “আদম সুরত” লিটলম্যাগ। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছিলেন পার্থ দেবনাথ।

এই আনন্দকেন্দ্র ঘিরে একদল সজীব প্রাণের সম্মিলনে গড়ে উঠেছে প্রাণের নিগূঢ় মেলবন্ধন। আর এই আনন্দ লালনকেন্দ্রের প্রাণপ্রতিমা সুস্মিতা গুহ-রায়ের আজ জন্মদিন। মনমানচিত্র-এর পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা। তাঁর আয়ুরেখায় রচিত হোক বিশ্ববাঙালির জয়গান।

 

অক্টোবর ৩, ২০২২

ফিলাডেলফিয়া, পেনসেলভেনিয়া।