You are currently viewing একগুচ্ছ টানাগদ্য/ঋতো আহমেদ

একগুচ্ছ টানাগদ্য/ঋতো আহমেদ

ঋতো আহমেদ

অতোটা অন্ধ হতে নেই

(জুন, ২০১৯)

০১.০৬.২০১৯

উৎকণ্ঠার ভেতর আশ্চর্য ভয়  নিয়ে উঠে আসে ভোর! দিনগুলো দীর্ঘ মনে হয়। আর রাত শেষ হয়ে যায় খুব দ্রুতই। অথচ এমন‌টাই কি চেয়েছিলাম আমি? দিনালোক আর ভালো লাগে না আমার। আকাশ কালো করে মেঘ নামলেই যেন স্বস্তি নামে। জমে থাকা অসহ্য পাহাড় ভেঙে পড়লেই যেন শ্রান্ত হ‌ই। মনের দুয়ারে সেই কবেই দাঁড়িয়ে থাকো তুমি। আর তোমার পায়ের নিচের চোখ আর মাটি আর মাটির পরতে বৃষ্টি বিন্দুর মতো একে একে ঝরে পড়তে চায় আমার নাভিশ্বাসগুলো। বিমর্ষ অন্ধকারে বিদীর্ণ হতে থাকে এইসব উদ্বিগ্নের দিন। আমিও নিমজ্জিত হ‌ই অনন্তের অপেক্ষায়—

যেদিন সত্যি অবসান হবে আলোর । আমি একটা নিকষ কালের ভেতর আপাদমস্তক ঢুকে মুহূর্তেই মিলিয়ে যাবো।

৬:৫০; আশুলিয়া

০৩.০৬.২০১৯

এসো, এক অন্ধ আগুনের পাশে দাঁড়াই। তারপর খুলে ফেলি একে একে আমাদের সব গোপন বল্কল। ছুঁড়ে ফেলি মিথ্যে মনের পাড়— দ্বিধা, সংকোচ আর ভয়। এসো, অন্ধ আগুনের কাছে এই—। এমন দৈহিক রাত ফিরে এসছে দ্যাখো। ফিরে ফিরে আসে পৃথিবীর প্রাচীন প্রলয়।

১:২৫

০৫.০৬.২০১৯

গতকাল রাতের সেই উত্তাল ঢেউ আজ সকালে এক শ্রান্ত নদী হয়ে শুয়ে ছিল আমার পাশেই। চোখ খুলে আমি তাকে দেখি। ঘন হ‌ই। কাছে গিয়ে কানে কানে অস্ফুট স্বরে বলি অগ্নি… ও আমার অকুল… আর,, কিছুক্ষণ পর প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসতে থাকে নৈঃশব্দ্যের বিপুল নৈরাজ্য।

আমি তলিয়ে যাই।

৮:৫০; বাইলেন

০৬.০৬.২০১৯

নিজেকে শুকোনোর জন্য প্রলম্বিত করি আমার ছায়া। আর বৃষ্টিবিন্দুগুলি নেমে আসে কাঁধ বরাবর। সেই সাথে গড়িয়ে নামে আমার কান্নারাও। তুমি আজ কোন গ্রহে আছো জানা নেই। জানি না সেখান থেকে কোনো আলো এসে আদৌ পৌঁছায় কি না পৃথিবীতে। অথবা তোমার ছায়া এসে আমার ছায়ায় কোনো গ্রহণ সৃষ্টি করে কি না তা-ও বুঝতে পারি না। শুধু তোমার নামের আদ্যাক্ষর আমার গড়িয়ে নামা জলের সাথে মিশে একটা হাহাকার সুর তুলতে চায় মাঝেমধ্যেই। একটা শূন্যতার শব্দের ঔরসজাত ধ্বনির থেকে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে চায়। জানতে চায় কেমন আছো তুমি। ভালো আছো তো?

সমগ্র সকাল সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে থেকেও আমার শুকোনো হয় না। ভেজা শরীর নিয়ে আর ভেজা চোখ নিয়ে আমি একবার আকাশের দিকে তাকাই আর একবার অন্তরাত্মার দিকে। তারপর রাত্রি নেমে এলে ঘন হয়ে আসে কবেকার সব জমাটবদ্ধ দীর্ঘশ্বাস। আমার ভালো লাগে না।…

২২:০০; বাইলেন

০৭.০৬.২০১৯

কেন যে চোখের সামনে সারাক্ষণ খুলে রাখছি তোমায়! ও আমার দৃষ্টিনাশীয়া। কতো আর দেখবো বলো? এইবার ক্ষান্ত হ‌ও। এইবার মূক হ‌তে হতে নিভে যেতে গিয়ে নিভৃত হ‌য়ে ওঠো আরও।

২৩:০০; বাইলেন

১৩.০৬.২০১৯

উড়ে যাবে এই রাত, চোখের পলকে। আর তোমার চোখ আস্ত একটা আকাশ গলাধঃকরণ করতে যেয়ে কয়েকটি নক্ষত্রের আকস্মিক পতন ঘটাবে। নিশ্চিত করে বলছি। যাদের মুখমণ্ডলে থাকবে উপচে পড়া আলোর গহিন অন্ধকার। যাদেরকে চেনার জন্য কোনো বর্ণমালার প্রয়োজন হবে না। কেবল নিশুতির অদ্ভুত শুভ্রতায় পালক ঝাপটানো শব্দের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারলেই হলো। খুলে যাবে। নিঃসীম সময়ের সাথে নিঃসঙ্গ বিসর্গে আমাদের মৃত্যুর গান। আমাদের গন্তব্য। একটা নতুন ভোর। অত‌এব

এসো,—উড়ে যাবার আগেই

এসো,—পলক পড়ার পূর্বেই

দৃষ্টিকে নিক্ষেপ করি। বিস্তারিত বর্ণমালায় প্রক্ষিপ্ত করি আমাদের পাঠ।

২১:৪০; উত্তরা

২১.০৬.২০১৯

ঘুম ভাঙতেই চোখে পড়লো আজ একটা উজ্জ্বল শুক্রবার ফুটে আছে বাইরে। আমার আধখোলা জানালা গলে ঢুকে পড়ছে ওর প্রাণময় দ্যুতি। বাতাসে দুলছে বৃক্ষরাজির প্রগাঢ় সম্মোহন। আর পাখিদের ডানায় মেখে আছে আজ অন্তরীক্ষের অবারিত নীল। আমাকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়তে হবে এখন। সমগ্র চৈতন্য সহ এই দিন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। প্রশ্বাসে প্রশ্বাসে মানুষ ও পাখিদের হৃদয়রাজ্যে কী এক আশ্চর্য প্রশান্তির সুন্দর যে ব‌ইছে তা আমি অনুভব করতে পারছি ঠিক। সেই সাথে শুনতে পাচ্ছি সেই আহ্বান: এসো, এই শুক্রবার তোমার জন্যই প্রস্ফুটিত গোলাপ হয়ে আছে। শ্বাস নাও। ঘ্রাণে ঘ্রাণে নেশাতুর হয়ে ওঠো জীবনের প্রতি। জীবন সুন্দর। আর সুন্দর শুক্রবার।…

১০:৩০

২৭.০৬.২০১৯

চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে আলো। ফোঁটায় ফোঁটায় চোখ থেকে আলো গড়িয়ে গিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে পাতালের দিকে। তখন অনেক রাত। আঁচলে ভেজানো পাতালকে আমার মনে হচ্ছিল এক বৃষ্টিস্নাত ময়না। উড়ে বসবে গ্রিলে। আর ডানা ঝাপটে পাহাড়কে আহ্বান করবে উত্থিত হতে। এইতো সেদিনের কথা। ঘুমন্ত পাহাড় একটা নিঃশব্দ কালের ভেতর আপাদমস্তক ডুবেই ছিল। জলের মতো স্বচ্ছ সেই কাল। তুমি এগিয়ে এলে। উপুড় হয়ে দেখতে চাইলে তোমার মুখ। কালের  আর্শিতে চাঁদের মতোই উজ্জ্বল দেখায় কিনা। দেখতে চাইলে তোমার উদ্ধত উপত্যকায় পরিণত ঢল নামবে কিনা। দেখতে দেখতে তোমার নিঃসঙ্গ নিঃশ্বাস এসে আছড়ে পড়ে আমার প্রান্তরে। আমিও হঠাৎ করেই ভেজানো পাতালকে সেই গড়িয়ে নামা আলোয় উদ্ভাসিত করি। সেখানে ময়না তখন নৈঃশব্দ্যের বাঁধ ভেঙে আকস্মিকভাবে কথা বলে ওঠে। বলে যে এই জল রিরংসার জল, এসো পান করি, এসো ডুবে মরি।

২৩:১৫

২৮.০৬.২০১৯

কামনা করছি এক্ষুনি বৃষ্টি নামুক ঝাঁপিয়ে। তোমার বেলকনিতে যেই টব রাখা আছে বিগত কয়েক শতাব্দী-কাল, সেই টবের মাটিতেই আজ গজিয়ে উঠুক গাছ,—একটা অতল জলের গাছ। যেন ঘুম থেকে উঠে, আর কিছু হোক বা না হোক, বারান্দায় যাই। যেন পাশেই দাঁড়াই। আর গাছ থেকে ছিটকে আসে প্রেম। গাছ তার জলীয় পত্রপল্লব থেকে ঝাপটায় ধুয়ে দিক আমার যত শক্ত পাথরের মতো মুখ। ছুঁয়ে দিক চিবুক। বুক বেয়ে গড়িয়ে নামুক আমাদের অতিক্রান্ত সুখ। সাতসকালে গাছের নীচেই আজ উত্তাল হয়ে উঠুক এক অথৈ সমুদ্র। কামনা করছি আমি। বিস্তারিত বৃষ্টি নামুক আজ।

পাথর ভেঙে জলকাদা হ‌ই আমরা। জল আর কাদায় পিছলে যাক ঘর। আকাশ আর মাটির মধ্যে বারান্দায় ঝুলতে থাকি আমরা। আমাদের গন্তব্য বলে কিছুই না থাক। আমাদের আদি ও অন্ত বলেও কিছু নেই। আমরা কেবল সাতসকাল। আমরা কেবল গর্জন। আমাদের কেবল ওই চোখের প্রস্ফুটিত হ‌য়ে ওঠার অপেক্ষাই থাক।

৭:০০

২৯.০৬.২০১৯

সাহস ভেঙে যাচ্ছে। অনতিদূরেই দেখতে পাচ্ছি চিরসময়ের খাদ। খাদের তলায় জল। আর জলের উপর ভাসছে এক পরাণ-নাও। এবার বলো, যাবে কোথাও?

কোথাও কি যাবে?

এই পৃথিবীর অনেক.. অনেক দূরে, মানুষের ভাবনাদগ্ধ আরও এক জগতের দিকে

২১:২০