You are currently viewing একগুচ্ছ কবিতা: শিবালোক দাস

একগুচ্ছ কবিতা: শিবালোক দাস

একগুচ্ছ কবিতা

     শিবালোক দাস 

 

কবিতার কাছে স্বীকারোক্তি

 
ছায়ার ভেতর কোনো অতিমানব
লুকিয়ে রয়েছে, সে একটু ভীতু,
যেমন জলের নীচে স্তব্ধতা, কান
বন্ধ হয়ে যায় অজান্তে, শব্দবিহীন।
আমি হঠাৎ গড়িয়ে গেলাম শ্যাওলায়
পা পড়া মাত্রই, তবে আমার চিন্তা নেই,
কবিতা এসে হাত ধরবে, সে অকৃতজ্ঞ নয়।
 
আমি হাত রাখলে রাস্তা হারিয়ে যাবে এমন
তো হওয়ার কথা ছিল না মোটেও !
তার তো ভূমিপুত্রের জন্ম দেবার কথা ছিল।
শুকতারা তার মাথা বাঁচিয়ে রাখে সর্বদা।
আমি হেঁটে গেলে সেই মাতৃত্বের স্বাদ দেবে
ফিরিয়ে বাতাসের প্রতি বেগে আমার কবিতা।
সে অকৃতজ্ঞ নয়, সে অসম্মান করে না।
 
বাগানে একলা, ঘরে তক্তপোশে একলা,
কেউ আমার কান্না হাতে নিয়ে দেখেনি !
নাশের ভেতর চূর্ণ-বিচূর্ণ কথা, কেউ যেন
পিছু ডাকছে, বলো, পাপ হবে ? বসতে হবে ?
কবিতা আমাকে তুমি একবার বলে দাও,
আমি তো তোমাকেই বিশ্বাস করে এসেছি !
 
তুমি তো অকৃতজ্ঞ নও, তাহলে পেতে দাও
চেয়ার, আমি অনেক দূরত্ব অতিক্রম করেছি।
 
 

সন্তর্পণে 

 
পা ফেলতেই ফাটা মাটিটা জুড়ে গেল !
পলেস্তারার জোর এতটা বেড়ে গেছে ?
না, তোমার মনের ভুল; চক্রে নতুন সংযোগ,
কিছু পড়ে আছে হয়তো বাড়ির ভেতর,
 
গলা জ্বলে যায়, কোষ মরে যায়,
কেউ ঢেলে দাও জল, সন্তর্পণে,
যাতে মানুষ চিনতে পারে ধোঁয়াকেও।
 
আমি নিজের কোনো নাম দিইনি এখনও,
ঘরে জমে থাকা ভুসোকালির গভীরতায়
মাপি স্তম্ভ, আর কিছু বাকি নেই, নেই অপূর্ণ,
দ্বারে ভিক্ষুক, তার হাতে রাখি পদ্ম অন্নের বদলে,
এক পলকে পেতে চায় ব্রহ্মমুহূর্ত সে একবার বলেছিল।
 
উত্তরের হাওয়ায় সন্ধ্যে নেমে যায়,
রাত্রি নামিয়ে আনো সন্তর্পণে,
যাতে কেউ দুঃখ রাখুক নীল খামে।
 
জোয়ারকে কি তুমি আজও ভুলে যাও, মিনতি !
 
 
 

ডিসেম্বর 

 
না, চিঠিটা কাল থেকে অসম্পূর্ণই আছে,
তাই হয়তো কেটে গেছে আমার দুটো পা
ধূসরের মধ্যে কালোর সংখ্যা খুঁজতে গিয়ে,
দেখো, আকাশে তখনও বেঁকে যায়নি চাঁদ।
 
তাড়নার ধার মাপতে গিয়ে পুনরায় ভুল হয়,
কি দুর্ভেদ্য রাত্রির মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে আঙুল !
তার তো ফিরে যাওয়ার কথা ছিল না, সমকোণ,
তবুও সে কেন নদী থেকে ছেঁকে আনল জ্যোৎস্না ?
 
ছক কাটতে কাটতে কখন যেন ভোর এসে যায়,
আমি ইচ্ছে করে দিইনি হাত লক্ষণরেখাতে,
বিশ্বাস করো, ভালো করে লক্ষ্য করো পোড়া কাঠ
তখনও কি আবার তোমায় বাঁচিয়ে তুলতে পারতো ?
তার দৃষ্টি জন্ম থেকেই ক্ষীণ ছিল, অভিশপ্ত সন্তান,
 
আমি দেখো আজও ঠিক রয়ে গেছি ডিসেম্বরের
শেষ কয়েকটি রাতে, যখন পার্ক স্ট্রিট বসিয়েছিল
যীশুর জন্য রাতপ্রহরী, রেখেছি দুচার লাইন লুকিয়ে !
 
 
স্বেচ্ছা
 
স্বেচ্ছা একটি অন্তরীণ কাব্য,
চাঁদ দেখা যায় গভীর অরণ্যেও,
তার তো কোনো অভিযোগ নেই,
নেই কোনো চড় সপাটে কষানোর।
 
নোটিশ পড়ে ক্রিসমাসের শীতে,
বালিশের তলে একগুচ্ছ সনেট,
জলের উপর কোনো ওম নেই,
ছুঁয়ে দেখো, একটি বিন্দুর প্রয়োজন।
সনেট সমুহ বহুদিনের তৃষ্ণার্ত, দেখো।
 
স্বেচ্ছা একটি অন্তরীণ কাব্য,
একটি পাখি তার বাসা খোঁজে,
মরতে মরতে, পুড়তে পুড়তে,
তীর লাগতে লাগতে বেঁচে গেছে।
 
বালুকণায় ফুঁ দাও, অক্ষর পাবে।
 
কাঁপছে তর্জনী, তবু এক বাম- ডান,
তারা আঘাতের স্বাদ পাইনি, কোথায়
কতটা অংশ খোয়া গেছে, জানে না,
তারা সত্যযুগের যোগ্য উত্তরসূরী।
 
ভুঁইফোড় ছুঁচে পরানো আছে সুতো,
নকশা কাটো মাঠে, দুই কোণের মাপ,
কে জানে কখন কুড়িয়ে পাবো শেষ ছাই !
 
 

শ্বেত 

 
শিবালোক দাস
 
সেও প্রমাদ গোনে…
হাতে হাত ধরে হেঁটে যায়,
কর্কশ, তুমি কিসের ডাক শোনো ?
আলগা করে ফাঁস, শক্ত মুঠিতে
রয়ে যায় গুঁড়ো ধ্বংসাবশেষ।
 
ঠোঁটে বৃষ্টির ফোঁটা,
শ্বেতপাথরে সাজানো উত্তাপ…
 
আমি জানি, সে লিখে রাখেনি কোনো দোষ,
উড়ান উপেক্ষা করে সে বেছে নিয়েছে পাতাল,
জড়ানো পায়ে পাতার শেষ দীর্ঘশ্বাস,
আমিও কি তাকে ফিরিয়ে দেব বলো দুয়ার হতে ?
 
সেও তো চোখ বন্ধ করে…
ধাঁধার ভেতর থেকে সরিয়ে
দেয় স্তরে স্তরে গেঁথে রাখা ইট,
ক্ষীণ পতনের শব্দ, পাগলের প্রলাপ,
শ্বেতপাথরে সাজানো নৈশ উদারতা।
 
ঠোঁটে বৃষ্টির ফোঁটা, জ্বর নেমে যায়…
 
 
 
আমার স্বপ্নে কোনো ল্যাণ্ডমার্ক নেই, দিদিভাই 
 
 
আমার স্বপ্নে কোনো ল্যাণ্ডমার্ক নেই, দিদিভাই ,
তাই হয়তো হাত বারবার ছোট হয়ে আসে,
বহু শতাব্দী পেরোনো পাঁজর জীবাশ্ম হতে চায় না।
কাছে পড়ে রয়েছে বহুদিনের পুরোনো ধানের শিষ।
 
ওটাই তোমার দেওয়া শেষ সুতোর আদর,
যেখানে বয়সকে একটি মানুষ রূপে দেখা যায়,
সেও বাড়ি ফেরে, সিগন্যাল লঙ্ঘন করে, নোটপ্যাডে
দু একটা লাইন সে লিখে রাখে, রক্তে ডুব দেয়।
কখনও কখনও বুক চিতিয়ে দাবী করে,
আমার জীবন আমার থেকে কেড়ে নিলে কেন ?
 
আমার স্বপ্নে কোনো ল্যাণ্ডমার্ক নেই, দিদিভাই,
তাই হয়তো তুমি অশরীরী নও, নিশ্চয়ই ব্যথা পাও,
রাস্তা ফুরিয়ে আসে সন্ধ্যার পর থেকে,
আমার পাঁজর মোচড় দেয়, ঘুম থেকে তোলে।
 
পিষতে পিষতে শেষটুকু পড়ে থাকে রোদ্দুরের,
রাস্তার ভিক্ষুকের ঝুলিতে আমি ওটাকে রাখি না,
নাহলে সে তো অনাহারে মরবে, খিদে পেলে কাঁদবে,
সে তো অনাথ হতে চায় না, হারানো শিশুর মতো,
সে এদিক ওদিক ছায়া পরিমাপ করে, দুঃখকে রাখে
একটি কোণে, সে তো আমার মতোই সুখী।
 
আমার স্বপ্নে কোনো ল্যাণ্ডমার্ক নেই, দিদিভাই।
 
********************************