একগুচ্ছ কবিতা<> জুলি রহমান
শুকলা পক্ষের চাঁদ
ম্যাপেলের ডালে চাঁদ
উঁকিঝুকি নিদারুন খেলা।
গো-ধূলির রং রুপ মেখে
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বাঁকিয়ে চোখ–
জলের আয়নায় দেখে তাঁরে
পাগল প্রেমিক ধরে বায়না!
মর্তের পৃথিবী চায় তাঁরে
ছলহীন প্রেমডোরে —
আকাশ মাটির হয না মিলন
রুপসী চাঁদের বাড়ে ঢং
কতো না আহাজারী প্রেমিকের
আহা পাথর পরাণ চাঁদ–
নেয়না পরে কলংকের ফাঁদ
প্রেমিক তাঁরে যতই দিলো অপবাদ।
বলে চাঁদ, নিন্দার কাঁটা কপালে আমার!
ভুলতে পারিনা তাই ভালোবাসার স্বাদ–
প্রথম প্রেমেই কাটে বেলা
শুকলা তিথিতে
আমি যে তাঁর অনুঢ়া
ভুলেও দিয়ো না নজর–
পরাণের ভেতর পরাণ
ফুলে ভরা বাসর ঘর চার দেয়ালে ফুলহার।
শরতের কাঠফাটা জোছনা আকাশে যুবতী চাঁদ
হলুদ গাঁদা ,গোলাপের ঘ্রাণে মাদকতা ঘরময়
বংশাইর জল টলমল কাকের চোখ আয়না যেনো
প্রথম স্নান হলো সেই জলে তুমি আমি খেলি
নাও দোড়ানি ;তুমিই হলে মন পবনের নাও
কতো উল্লাসে হলো ভোর পাখির কাকলিতে
মুয়াজ্জিনের আযান মোরগের ডাক ওঠোনে
সূর্যের ফলিত আলো আর বাসর ভাঙা চাঁদ
যখন বাাঁশের চিরল পাতার ফাঁকে ফাঁকে
হামাগুরি দিতে দিতে পরলো তোমার নাকের
ডগায় ।দেখি শিশির বিন্দু ঘাসের ডগার-
আমার মায়াবী আঁচল তখন গড়ায়
মুখের পর।এভাবেই কাটে বত্রিশ বছর
সেই তুমি বদলে গেলে কেমন করে?
এখন আমার শরৎ নেই শিশির নেই
গান নেই সুর নেই।ভাঙা থালাবাটি সংসার
মৃত্যু এসে কড়া নাড়ে বারবার বেঁচেও উঠি আবার।
তোমার পরাণের ভেতর পরাণ আমার
জানে পৃথিবী জানে জনগন চারিধার
দিনমান থাকি আমি বই ধ্যানে এই অবসরে
ভুলি না তবুও দায়িত্ব কোন ছাড়িবারে
কেননা তুমিও আমার আরেকটি ধ্যান
সেই ষোড়শ অধ্যায় করেছিলাম যখন অধ্যয়ন
শেকড়ের টান
সমুদ্রের প্রতিবাদে নিরব নদী
কারন সে যে সাগরেই মিশে!
চন্ডিদাশ দান্তে বলে,নৈঃশব্দ!
মধুর এতো? প্রবীণ সারস!
হেমন্তের কানে কানে বাতাস ঢালে
ধ্রুপদ ত্রিপদ ফসলী সুর
উজ্জীবনের স্বপ্ন সদ্য চোক্ষে
সার্কাসের বাঘ গুলো একচোখা
পৃথিবীর হাটে হাটে চড়ে
বেখাপ্পা বেয়াড়া বিশ্রী
জিরাফের গলা?টিরানোসরাস!
হায়ানা শেয়াল পেতেছে দপ্তর-
যারা নবীন জানাশোনা তবুও অনাত্বীয়!
আজন্ম প্রবাসীরা স্বদেশীয় স্নৃতির বিলাপ
দিকবিদক ছড়ায় হা হুতাশ
প্রাণ খুলে ছিটকে পড়ে তখন
একদলা ঘৃণার থুতু-
অবান্তর উন্মাদ বিলাসী খেলা
মূমূর্ষ বিকার বায়ুতে মিশে ধূলায় গড়ায়!
চৌকাঠে ও ঘরের দরোজায় জোঁক!
তাই বলি বিছাটাকেই দিই ঘৃণার আসন?
যতই ঝুলুক নরক দুঃস্বপ্ন যতই থাক
তবুও শেকড় বিলাসী ;অপঘাত সকাল বিকাল।
রৌদ্র রোষ হুংকার কাঁপায় না দিল
অনাঘ্রাত নিমের উৎপাদনে ভূমির কর্ষণ-
ভিয়েনে যারা জ্বালায় আগুন!
দেউড়িতে তাঁরাই বাজায় সানাই!
পাখির সংগীতে যে প্রাণ ভরপুর
শেকড়ের টান তাঁর অনাবিল-
আবেগে আগ্রহে সূতোনলী জট
সহজে হয়না বাঁধনহীন ,অথচ
পায়ের তলায় মাটি নেই সেই কবেই
আমরা শরতের ছুটি কাটাই ধানের গন্ধে-
প্রিয়তমা তাই প্রিয়তমকে বলে –
তুমি ধানের গন্ধ মেখে অনন্তকাল
শিশির করেছো দান
আমি স্নাপনের শেষে
প্লাবিত কলমীর ডোরে
বেঁধেছি তোমাকে।
অথচ এখন
ধানের বিরুদ্ধেই থাকে ধান।
ফসলের নেই সমবন্টন
কাহাতক সহ্য হবে?
অহেতুক সকাল বিকাল?
ঋতুর ফূর্তি
নিউইয়র্কের রৌদ্র আকাশ নরম!
কনকনে কড়া শীত ঝকঝকে রোদ
ক্রিসমাস বড়দিন হুল্লোর উল্লাস
সাজে সান্তাক্লোউজ বাগান বাড়িতে–
দিন ছোটে আলো খাটো নামে অন্ধকার
কী যেনো কী মন চায়;সন্ধা নামে এতোই সকাল?
চিরচেনা দেয়ালে দৃষ্টি গেঁথে তাকাই আঁধারে
আকাশে খই ধান পরমান্ন সুখে কে ছড়ায়?
পিঠে পড়ে হাত ঠান্ডার যেনো বসে লৌহ দন্ড!
শীত শীত তবু গীত ঘেঁষাঘেঁষি উত্তরের দক্ষিনের
দাপাদাপি কলরোল বরফের দিন;ভিজে ক্লোউজ।
ঘরময় জানালা কপাট চেয়ে থাকে কীসের আসায়?
ফুটপাতের চড়ুই পায়রা বকের পাখায় আনে গতি
শাদায় কালোয় ;ক্রিসমাস ম্যারী ক্রিসমাস।
কথা বুনি শব্দ গাঁথি এই দুপুরের নরম আলোতে
আঁকি ছবি প্রেমময়ী নারীর মুখায়ব ক্যানভাসে–
বিএক্স দাঁড়ায় কখন শান্ত পায়ে ঘ্যাত করে বসে!
শীতের দুপুর আলোর নূপূর কী মোহময় শীত!
গ্লাসের আকাশ স্বচ্ছ্ বাতাস পাখির ডানার তলে
নিয়ে যায় উড়িয়ে আমাকে অভ্র শাদার ভেতর-
উড়ে চলি পথ নয় হাওয়ার ভেতর আলোর রথে।
সুরে সুরে ভরে ওঠে শুধু প্রেম ভালোবাসিার।
কবিতার সুর গানের সুর কথার সুর ভাষার সুর
ভিনভাষী কপোল অধর এ্যভেনিউর পর এ্যাভেনিউ।
পাখনা আমার এ্যভেনিউ উড়ার ,রৌদ্র আমার সুর।
নরম স্পর্শ বিদর্ভ নগর;হৃদয় ঝরে পাতার মতো
শীতের হাওয়ায় উড়ার গতিতে বেগের আবেগে।
এমন দেখিনি আগে ঋতুর ফূর্তি জাগে মনে প্রাণে
বিশ্বাসের শালুক
আষাঢ় মাসের ভরা রোদ হাসি বৃষ্টি
প্রেমিক মনে কী যে অনাসৃষ্টি
চোখের দরোজা খোলে তাকালে আকাশ
মহা ভাদরা ভরা ভাদরা
এখানে শালুক ফোটে না হাজার শ্রাবনেও
বিল ঝিল নদী হাওরেও না
তবু বিশ্বাস মনে ,ফুটেছে কোথাও শালুক।
তা নাহলে চাঁদ ভিজে গিয়ে হাসে কেনো?
মায়াভরা জোছনায় রাতের আকাশ
ভালোবাসায় ফালা ফালা কী বেশরম কথা!
রাতেই তো ফোটে শালুক চাঁদের পিড়িতে।
তুমি যদি এমনি ভালোবাসতে আমাকে!
আষাঢ়ের ভরা পূর্নিমায় তুমি যদি চাঁদ হতে
আমি ঝিলে ফোটা শালুক রুপে মাধুরী মিশে
তোমার চোখের মায়া ছিকটে পড়তো ;আমার ঠোঁটে!
জনম আমার সার্থক হতো ;বিশ্বাসে হতো অমর-
কল্পনা তোমার ভালো লাগেনা;ভালো লাগেনা
গল্প বলা।আমার আকাশে চাঁদ তুমি মনিদ্বীপ।
ঝিলের থলকলমি কলমি লতা সখী আমার
তাঁরাও জানায় তোমাকে প্রীতি বন্ধন মায়া ডোর-
হেমন্ত দিনে
তুমি আর আমি
ঝিনুকের বুকে জমি
হীরা পান্না চুনি
নক্ষত্র যাই গুনি
হঠাৎ হলুদ পাতা
কী সব হলো যা-তা
ঝরে ঝরে পড়ে পড়ে
শ্বাশ্বত রাত্রি কেটে ভোরে–
ছেড়ে দিতে স্থান
একি আহবান?
তবে যাবো কোথায় আমরা
ছেড়ে সুখের বসুন্ধরা?
মাটির পৃথিবীর টানে
কেনো পেলাম জীবন প্রাণে?
যদি ছেড়েই দিতে হবে সব
এতো কোলাহল হবেই নিরব?
তবুও আমরা সার্থক
জীবন নয় অনর্থক
আমরা পেলাম দেহ
এমন পেয়েছে কেহ?
দেহে পেলাম প্রাণ
আত্না অফুরান
দৃষ্টি তাতে নন্দন
ফুল পাখি চন্দন-
বাঁকা নীল চাঁদ
হীরা হরিণের ফাঁদ
প্রেমে জমে বরবাদ
জিজীবিষা স্বাদ-
সকল পেলাম পাশে
বাতাস সকল নাশে
বদ হাওয়ার কী নেশা
সকলই বিষে মেশা?
হায়রে জীবন বেলা
ফুরায় না তব খেলা
মাটির বুকে নিব মাটি
করে পরিপাটি–
==================