You are currently viewing অরুণ বর্মন-এর দুইটি কবিতা

অরুণ বর্মন-এর দুইটি কবিতা

অরুণ বর্মন-এর দুইটি কবিতা

আমার অনুপস্থিতি

একদিন আমার সরব উপস্থিতি থাকবে না
তোমাদের হুলস্থুল যজ্ঞভূমিতে,
একদিন আমার স্বশব্দ পদচারণা থাকবে না
তোমাদের স্বপ্নিল মনোজগতে।
একদিন আমিহীন পৃথিবী তোমরা
সাজাবে তোমাদের মতো করে,
চলবে তার আপন ছন্দবদ্ধতায়।

সেদিন যদি তোমাদের কোনো কর্ম চঞ্চলতার ফাঁকে,
কোনো আনন্দঘন জলকেলিতে
ক্ষণিকের তরে মনে পড়ে যায়
এই দীনহীন গুল্মলতাকে
খুঁজে দেখো প্রকৃতির মায়ায়।

হয়তো আমি জড়িয়ে থাকব তোমাদের পৃথিবীকে
জার্মানি লতার মতো
হয়তোবা উড়ে বেড়াব ঝিঁ ঝিঁ পোকা বেশে
আকাশে কার্ণিশ ঘেঁষে।
নৈঃশব্দ্যের অলিন্দে হেঁটে যাব জোঁকের রূপ ধরে।
কর্দমাক্ত ক্যানভাসে ফুটে থাকব হয়তোবা
টোপা পানা হয়ে।

হয়তোবা বাড়ির পোঁষা কুকুর সেজে শুঁকে বেড়াব
তোমাদের গায়ের সুগন্ধি ঘ্রাণ
পোষা কালো বিড়াল সেজে হয়তোবা বসে থাকব
তোমাদের ভাতের থালার দিকে চেয়ে।

শত তারার মাঝে শুকতারা হয়ে ফুটে থাকব
তোমাদের মুখপানে চেয়ে।
শাদা মেঘে ভেসে ভেসে দেখব তোমাদের
রং মাখা পৃথিবীটাকে।
দখিনা বাতাসের প্রান্তরে অনুভবে পাবে
আমার ঘামের তামাটে গন্ধ।

তোমাদের জাগতিক চক্ষু দিয়ে সেদিন
আমাকে তোমরা চিনতে পারবে না
এড়িয়ে যাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভেবে।
পুরস্কারস্বরূপ করবে তিরষ্কার।

তবু আমি জড়িয়ে থাকব তোমাদের আতিথেয়তাকে।
আমি ভুলে যাব না এই মায়ার বাঁধন।
ভুলে যাব না এই ভালোবাসার আলিঙ্গন।
হারিয়ে যাব না তোমাদের প্রেমের আঙিনা থেকে।

 

একটা পাশ বালিশ

তার আর আমার অন্তরঙ্গতার মাঝে
অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো একটা পাশ বালিশ।
যেন বার্লিনের দেওয়াল তুলে দিলো দুজনার মধ্যে।
বলিশটা একবার আমার উরু তলে
একবার তার উরু তলে
একবার তার উরু তলে
একবার আমার উরু তলে মুখ গুঁজলো।
ফোমের মতো শুঁষে নিতে চাইলো দুজনের সব প্রেম।
কোনোমতেই উরুগুলোকে একাট্টা হতে দিচ্ছিলো না।

একদিন উভয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে
নিজেদের সব আত্মম্ভরিতা,
জ্ঞানের দোর্দান্ড প্রতাপ, নপুংশকতা
আরও সব সব বালিশটার মধ্যে ভরে দিলাম।
বালিশটা প্রচন্ড ভারযুক্ত হলো,
আমরা এক্কেবারে ভারমুক্ত হলাম।

তারপর অনুরাগের ট্রলী এসে বালিশটাকে ঠেলে পায়ের নীচে ফেলে দিলো।
ভেঙে গুড়িয়ে গেল বার্লিনের দেওয়াল।
বকের পালকের মতো চার চারটা উরু
পরস্পর পরস্পরের সাথে একাট্টা হয়ে মিশে গেল।
অতঃপর—

===================