You are currently viewing অপর পুরুষ >  নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

অপর পুরুষ > নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

অপর পুরুষ

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

অপর পুরুষের প্রতি ঈর্ষা ও হিংসাজনিত ঘটনা যখন আমার ভিতরে ঘটতে থাকে, তখন মনে হয় আমি কেবল প্রেমের জন্যেই বেঁচে আছি। আর কিছু নাই আমার চারপাশে। ফ্যাসিস্ট নাই, তালেবান নাই, বুদ্ধিজীবী নাই, দার্শনিক নাই, কুত্তাবিলাই নাই, রামছাগল বা রহিমছাগল কিচ্ছু নাই। আছে কেবল প্রিয়তম নারীদের মুখ, তাদের প্রতি দুর্নিবার টান। এইসব কারণে অপর পুরুষের প্রতি আমার প্রবল ঈর্ষা তৈরি হয়। অপর পুরুষ মানে আমার প্রিয়তম নারীরা যাদের প্রশংসা করে ফেলে আমার কাছে, কখনো ইচ্ছে করে, কখনো ভুল করে। তখন আমার মন করে সেইসব পুরুষ হয়ে জন্মাতে। একবার আমার একজন প্রিয়তম নারী আমার কাছে এসে একজন মাওবাদী কলামিস্টের প্রশংসা করলো। আমার মন চাইলো তখনই কলাম লেখা শুরু করি। আর বন্দুকের নলে গেঁথে ফেলি তীব্র লাল প্রেম। একবার আমার একজন প্রিয়তম নারী আমার কাছে এসে একজন ফটোগ্রাফারের নাম করলো। আমি বললাম ওই রকম ক্যামেরাম্যান চাইলে আমিও হতে পারি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঈর্ষায় জ্বলে খাক হয়ে গেলাম। আর মনে হলো আফ্রিকার জঙ্গলে গিয়ে ক্যামেরায় তুলে নিয়ে আসি পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী একটি জিরাফের টলটলে চোখের ফটো। আর আমার নারীটির কাছে দিয়ে বলি এই নাও সুন্দর লিচুফল, ছিলে দিয়েছি। টুক করে গিলে ফেলো এইবার। একবার আমার একজন প্রিয়তম নারী আমার কাছে রুদ্র গোস্বামী নামের জনৈক কবির কবিতার লাইন বললো। আমার মনে হলো গত তিরিশ বছর কী সব বালের কবিতা লিখে কর্ণফুলি পেপার-মিলের কাগজ সব কালি করে ফেললাম। এই কাগজের পিছে কতো বাঁশবন যে উজাড় হয়ে গেছে কেবল রংপুরের জাকিরভাই জানে। আমার ইচ্ছে করলো তখনই মরে গিয়ে রুদ্র গোস্বামী হয়ে জন্মাই। তারপর আমার নারীটির রক্তের ভিতর কবিতার লাইন হয়ে ঢুকে যাই, শিরার ভিতর সাঁতার কেটে কেটে হয়ে যাই রতিপুষ্প আর হয়ে যাই ঝাঁপতালে দীর্ঘ ময়ূর। একবার আমার একজন প্রিয়তম নারী আমার কাছে একজনের গানের প্রশংসা করলো। আমি ঈর্ষায় ছাই হতে হতে ঠিক করলাম এইবার গান শিখে ফেলবো। দুবেলা স্নান করতে করতে ছয়মাস রেওয়াজ করলাম। কিন্তু আমার বিতকিচ্ছিরি খাটাসের মতো কণ্ঠস্বর একাই বেজে গেলো চিরদিন স্নানঘরে। আমার নারীটিকে আর শোনানো হলো না ডিএল রায়ের সেই গান, সন্ধ্যার মেঘে করিবো দুকূল, ইন্দ্রধনুরে চন্দ্রহার, তারায় করিবো কর্ণের দুল, জড়াবো গায়েতে অন্ধকার… একবার আমার একজন প্রিয় নারী আমার কাছে কোনো এক প্রিন্সের চোখের প্রশংসা করলো। অভাজন আমি গুগল করে সেই প্রিন্সের ছবিটবি খুঁজে বের করে দেখলাম সাপের মতো শীতল চোখ তার। আমার মন করলো আমাদের গ্রামের হাটের ম্যাজিশিয়ান সুফিয়ান কাকার পায়ে পড়ে বসে থাকি যতক্ষণ না তিনি আমাকে একটা কালসাপ বানিয়ে দিচ্ছেন। একবার কালসাপ যদি হতে পারি শীতল চোখে আমার সেই নারীর ঘরের দুধকলা খেয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো। এইভাবে আমার প্রেমের ভিতর বারবার আমি প্রেমের কারণেই নিজের মতো আর হতে পারি না, জীবন চলে যায়, অজস্র জীবন ছাই হয়ে যায় ঈর্ষায় আর আমি কেবল বারে বারে অপর পুরুষের মতো হতে চাই। আর ভাবি আমার কোনো প্রিয়তম নারী যদি আমার কাছে এসে কোনো ভয়ংকর খুনির প্রশংসা করে ফেলে…