অনন্ত সুজন-এর কবিতা
ভ্রমণ
অপ্রত্যাশিত অথচ অবিরাম বৃষ্টির
আদরে আদরে
আমরা পৃথিবীর বাইরে
চলে গিয়েছিলাম!
বিসর্পিল ছায়াপথ ধরে, ব্রহ্মাণ্ডের
অসম্ভব-অনধীত
জংশনে, বন্দরে, রঙধনু বিছানো
পথের ওপর…
নামিয়ে দিয়েছি ব্যথার প্রপাত,
নিভৃতের অশ্রুপাত কোনও!
যন্ত্রযানে উড়ছি অলৌকিক,
অধরা নির্জনে
পেছনে শোভান্বিত তুমি, ধরে
আছো কল্প-পারিজাত।
স্কন্ধের মধ্যভাগে আছড়ে পড়ছে
প্রশ্বাসের উষ্ণ হিল্লোল
স্ফূরিত ছোবল রক্তিম উদ্ভাসে
বিমন্দ্রিত!
ঈর্ষাকবলিত গ্রহে গ্রহে শিহরণ,
গুচ্ছ গুচ্ছ ঝলক-ঝড়
বিরচিত চুমুর চাঁদমারি আসক্তির
আয়াতে অফুরান বাজে!
মোহমগ্ন
বিউগল যেন!
আমরা ততক্ষণে নেপচুনের
হিমেল বনভূমিতে
বিলীন হচ্ছি একে অন্যের ভেতর!
ছাপচিত্র
মাটির পালঙ্কে খড়ের বিছানায়
শুয়ে আছি
দক্ষিণের বনেদি হাওয়ায় বইছে খুব
মহুয়ার ঘ্রাণ!
ঝিঁঝি-গানে নাচে ভালো
রাত্রির জোনাক!
শ্রবণের পাশে সোনা-ধানের
গোপন ফিসফাস…
থোকা থোকা অনুক্ত বিরহ!
যতদূর দৃষ্টি যায়… মহাকাশ,
অগণিত তারকা
তোমার তিলের পতনপ্রিয়
তাড়না-তুফান!
সে সময়ে নিশ্চিত নাইটক্লাবে তুমি!
মুহূর্তমদ
কামিনী গাছের নিচে
দাঁড়িয়ে ছিলাম…
ঘ্রাণ অধ্যুষিত, মোহান্ধ-মাতাল!
ভেবেছি অনুপুঙ্খ, গন্ধমে অন্তরিত
আদমের কথা!
অজস্র-সহস্র জলপরি
নেমে আসছে
মহাশূন্যে সমুদ্র থাকে বুঝি!
কেয়ামত
তুমি নেই… অ্যাসট্রেতে পৃথিবীর ছাই!
সে
সন্ধ্যাকে নিজের ওড়নায়
গুঁজে রাখে
যেখানে অস্ত যায়
বিকেলের বেলাভূমি
নিঝুম রাতে তারাপুষ্পের সাথে
নিখোঁজ হওয়া
তারকাঝিনুক… অধিকৃত করো,
নিমজ্জনে যাব।
উন্মাতাল বয়ে এনেছে
প্রগাঢ় ব্যাধিঘোর!
বাতাবি ঘ্রাণ উপেক্ষা করে কেন যে
বাষ্প হতে
চাইছো, অদূরের ওই
শৈলচূড়া মেঘে?
ভুলেও কোনোদিন ভ্রূক্ষেপ
করিনি… অথচ
জানালার ওপারে, ভোরের শিশিরে
কত না
কৌতূহল রেখে যেত
পদোন্নতিপ্রাপ্ত বালিকারা!
তীব্র সংরাগে পেতেছি
বুকের অগ্রভাগ
প্ররোচনা তখনো আহত,
কুয়াশাচূর্ণ
গলার নিচে বিঁধে আছে
হাড়ের যাতনা!
অনন্ত সুজন
জন্মঃ ২৭ নভেম্বর ১৯৭৮
কবিতাবইঃ
পিপাসাপুস্তক
জেল সিরিজ
লাল টেলিগ্রাম
সন্ধ্যার অসমাপ্ত আগুন
হাড়ের জ্যোৎস্না
অস্তিত্বঝড় কিংবা তারকাঝিনুক
গল্পগ্রন্থঃ
লীলা রিরংসা
সম্পাদিত গ্রন্থঃ
শূণ্যের সাম্পান (প্রথম দশকের নির্বাচিত কবি ও কবিতা) অনতিদীর্ঘিকা (প্রথম দশকের দীর্ঘ কবিতা)
সম্পাদকঃ সুবিল