You are currently viewing ৫টি কবিতা > পিটার মাইনকি // বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

৫টি কবিতা > পিটার মাইনকি // বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

৫টি কবিতা

পিটার মাইনকি

বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

 

ঈশ্বরকে চমকে দেবার চেষ্টা করছে কবি

 

কবি, তার ঈশ্বরকে চমকে দেবার পণ করেছে
কবিতায় এমন কিছু আধার ও আধেয়,  আকার ও বিন্যাস
প্রয়োগ করছে সে
যা সচরাচর চোখে পড়ে না
তার দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গি অভিজ্ঞতার আগুনে পুড়িয়ে তা আকার দিচ্ছে
কিন্তু সর্বজ্ঞ মহাপ্রভু তার ঠোঁটের গোড়ায় একসুতা হাসেন
আর বলেন- আমাকে বিস্ময়াভিভুত করতে পারবে না-
যে শিকড় থেকে গাছ, গাছ থেকে শাখাপ্রশাখায় বিস্তার, বিস্তার থেকে
জায়ফলের সুশক্ত আঁটিতে ঘনীভূত হওয়ার
পুরো প্রক্রিয়াটি দেখেছে- সে অবাক হয় না-
হারুনের লাঠি বুঝি আমি- সব সারাংশ পিয়ে খেয়েছি।

ফলে এই প্রকল্প তোমার কবি-তকমার নিচে গুঁজে রাখো :
তুমি যতভাবেই আমাকে উসকে দিতে চাও
তা হবার নয়- ঈশ্বর মানেই নিরাবেগ- আকস্মিকতার অধিক।
কবি অতঃপর ব্যথাভারে অপুলক অপলক
কবিটি বলে- আমার কবিতার সব ঝলকানিই তবে ম্রিয়মাণ ।

তাই তো?
ঈশ্বর জবাবে বলেন- আমি বুঝতে পারি না, অবুঝ।

Peter Meinke : The poet, trying to surprise God.

 

মোকামহারা

 

মহিলাটি খুঁজেপেতে দেখছিল- কোথাও একটি মাইলফলক আছে কী-না, আর পুরনো মাশট্যাঙের চাকার নিচে ওহাইও সোজাসাপ্টা বেরিয়ে আসার সময় কোন একটি নাম শুনতে চাচ্ছিল- পিকেটন,ওয়েভারলি, অ্যালমা, চিলিকোথ, কিনিকিনিক, আদিবাসী ইন্ডিয়ানরা তখনও ওখানে থেকে থাকলে তাকে এগুলোর হদিস দেবার কথা : শোন, বসন্তের চান্নি দেখার আগে কোথাও যেও না, তিন তিনবার করে ঝুম বৃষ্টি ওলেনটাঙি ভিজিয়ে দেবে, আর বাচ্চাদের ডাকা হয় আগুনিয়া হৃদয়, শুভ্র শেয়াল, বাজপাখির পালক- এমন সব নামে। তারা তখন গাইছিল ইশকুলের জন্য মন তাগড়া করা গান, দ্বিধাহীন নিঃশঙ্ক তাদের কন্ঠ- একদম মরিয়া যেমন গাছের ডালের নিচে কামড় দিয়ে থাকে বরফের চিলতা। তাদের স্কুলের খেলার দল নতুন আরেকটি স্কুলকে হাড্ডাহাড্ডি মোকাবেলা করবে- সামনে যাবার তীব্র গতির রোখে  ওরা আর আগের জায়গায় নেই- প্রবাহের মধ্যে ছিটকে পড়ে। ওহাইয়োর পাঁচমাইল আগে স্টারলিং বুঝি তার পাখির হাট থেকে বেজান গোত্তা খায়, দল থেকে খসে পড়ে থড়বড় করে ওঠে- ঈশ্বরের এক পলক কুদরতির চিন।

Peter Meinke : Exodus with children.

 

শিরোনামহীন

 

এই কবিতাটি আমার ছেলে পিটারের জন্য
যাকে আমি কতোবার আঘাত করেছি
তার লেখাজোখা নাই
আমার মারমুখিতার কারণে ওর চোখজোড়া
ব্যথায় ঝামিয়ে উঠেছে
ছোটমোট কব্জি, আঙুলগুলো
ছোট ছট তিলভরা পিঠ নেতিয়ে পড়েছে
ও কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছে
এভাবে মিইয়ে দিয়েছি বারবার
ও সারাজীবনের জন্য কুঁকড়ে গ্যাছে
আমার যখনই মেজাজ খিচড়ে মনে হয়েছে
তোকে, তোকেই এবার একচুট নিবো এবার
বাছা আমার, তুমি সবসময়ই ওখানে ছিলে
অজান্তেই আমার ধারণা ছিল-
তুমি জানতে পুত্র আমার- কতোটা ব্যক্তিত্ববান তুমি
কী প্রাণকাড়া তোর চোখ আর চুলের ঢেউ
এখন বুঝি ওইসময় তুমি জানতে না-
তোমার এমন অসামান্য গুণগুলোর কথা।
বারবার এগুলো মনে করিয়ে দিতে হতো
বারবার এগুলো বলা দরকার যতোক্ষণ
কেউ তাতে পুরোপুরি আস্থাবান না হয়ে ওঠে।
আমার মনে হয়, সময় মতো বাৎসল্যে না ভিজালে যে-কোন মোলায়েম গুণ শুকিয়ে যায়।
তোমাকে জানাবার জন্য আজ এই কবিতা লিখছি
বাছা আমার- জীবনের মহিমা বুনতে লিখছি আমি
তোমার পানে সবটুকু মায়া বুঝাতে লিখছি পুত্র আমার-
পিটার, তুমিই সেই মাধুরি-
যে দশ পেরিয়ে এগারোয় পা রাখছো।

Peter Meinke : Untitled.

 

আপেল

 

আমি যে আপেলটা দেখি, আর যে আপেলটা
আমি দেখি বলে ভাবি, অন্যদিকে যে আপেলটা
দেখি বলে জানান দিই
তারা তিনটি এক আপেল নয়- আলাদা আলাদা।
কথাটার মধ্যে কিছুটা মনগড়া
সাত পাঁচ চৌদ্দ ধরনের একটা ব্যাপার থাকতে পারে
কিন্তু তাতে আমার কিছু পরোয়া নেহি।

এমনকী যে-মুহূর্তে তুমি কিছু বলবে বলে
আমি ধরে নিই তুমি বলেইছো
একভাবে ধরতে গেলে তা-ই শেষ কথা
আবার এটিই শেষ কথা না-ও হতে পারে
আমি কেবল আশায় বুক বাঁধি-
এক দশাসই বরফের চাঁই সাদা পাথরের আস্তরণ
তোমার ও আমার মাঝখানে টাইটানিক কায়দায়
আছে কিংবা নেই
হিম খাঁখাঁ বরফের দেশে-
আমার চোখের আপেলের সমুখে তা মড়মড়ে খুলে যায়।

Peter Meinke : Apples.

 

যে লোক প্লাস্টিকের গোলাপ আবিষ্কার করেছিল তার জন্য সনেট

 

যে লোক প্লাস্টিকের গোলাপ আবিষ্কার করে
সে নিজে মারা যায়, তারা তার চোখ ভরে
টিকে রয় নিখুঁত- না পড়ে ঝরে, শুকোয়নি,
প্লাস্টিকের ফুল জেগে থাকে খুলে চোখের মণি।
তমসায় ফুটে থাকে তার কবরের দিকে মুখ তুলে
রাত্রির ভিতর জাল ফুলও জাগে নিথর প্রাক্কালে
মেকি তারা- এই বোঝ আসেনি লোকটির অন্তরে
সত্যিকার ফুল সুন্দর, কেননা তারা মৃত্যুবরণ করে।

ভঙ্গুর বিহ্বলতা ছাড়া সৌন্দর্য কাঠ পাথর নিষ্প্রাণ
তারা মেকি অনাবশ্যক, না জাগায় দিব্য মনের টান
কিন্তু একরোখা ফুলের বণিক এভাবেই বোঝে নির্যাস
জড় ফুলের বনে প্রাণভরে নেয় সে ফুলের সুবাস।
মেকি গুল্ম জাল ফুলের এমনই এলো ঊষর দিন
তমসার উচ্চ রণে কাঁপে খাঁজকাটা আলোর রঙিন।

Peter Meinke : Sonnet on the death of the man who invented plastic roses.

পিটার মাইনকি : পিটার মাইনকি আগে সহজাত, ঘরোয়া একটি ছেলে, তারপর কবি। আমেরিকায় সাধারণত যেমন হয়- কবিতার কোর্সটোর্স করে পাকা হয়ে কবিতা লিখতে শুরু করে, মাইনকি সেই চল থেকে আলাদা; তিনি ছোটবেলায় তাদের পারিবারিক লাইব্রেরিতে বসে আড়ালে আবডালে কবিতা লিখে ওঠেন, মেয়েদের প্রথম গোপনে রজঃস্বলা হবার নীরব বিহ্বলতায় কবিতাচূর্ণে নিজেকে চুবিয়ে রাখেন। তাঁর মনে হতো- তিনি একজন এডগার অ্যালেন পো, বা জন ডান হয়ে উঠছেন। অবশ্য আস্তে আস্তে পিটার মাইনকি নিজের একটি স্বর ও ভঙ্গিমা আয়ত্তে আনতে পারেন। নিজের কবিতা সম্পর্কে মাইনকির বয়ানটিও সুন্দর- কবিতা একটা বেহুদা জিনিস- তার কোন আঙ্কিক বা যুক্তিগ্রাহ্য উপকারিতা নাই, কিন্তু কেউ যখন আনকোরা প্রেমে পড়ে, বা বিয়ে করে, কিংবা কেউ মারা যায়- তাদের যৌক্তিক কারণ থাকার পরও ওইমুহূর্তগুলো উদযাপন করতে, বা সামলে উঠতে ঠিক গদ্যে কাজ হয় না; সেবেলায় কবিতাই বাতাসের ফুঁ-এর মত কাজ করে। অতি চেনা, পাড়ারই নিরাভরণ ছেলেটি- যার নাম মাইনকি- অন্তর বাজিয়ে কবি হবার জন্য জন্মেছিলেন নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রুকলিনে ১৯৩২ সনে।

 

 
     বদরুজ্জামান আলমগীর
     নাট্যকার, কবি ও অনুবাদক
 
    ================