You are currently viewing হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার > খালেদ হামিদী

হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার > খালেদ হামিদী

হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার

খালেদ হামিদী

কিস্তি-৫

আবু সদাগরের ইন্তেকালের পর অনেক পানি গড়িয়ে শুকিয়েও যায়। স্কুল শেষ করে কলেজে না-যাওয়া হাশেম সেই কাচারি ঘর ভেঙে দোতলা দালান তোলে। ওর বাবার তৈরি দক্ষিণের পাকা এক তলা ঘরগুলিও আয়ত্তে রাখলেও শেষে উভয় অংশই বিক্রি করে আক্ষরিক অর্থেই সপরিবারে উদ্বাস্তু হয়ে যায় সে। একাধিক পাওনাদারের হাতে হাশেমের ঘরবাড়ি নিলাম হওয়ার উপক্রম হলে এমনটি ঘটে। এসবের আগে খোকন ও তার আপন চাচাদের টিনের চালায় গভীর রাতে, আকস্মিক বোমা পতনের শব্দে, কতোবার যে এসে পড়ে হাশেমের ছুড়ে-দেওয়া মদের খালি বোতল তার হিসাব নেই। ওর বউ পেটানো, দোতলার ছাদে বন্ধুদের নিয়ে মদ্য পান, শহরের ঐতিহ্যবাহী রমিজউদ্দীন বাজারে স্থাপিত পিতার বড় বড় আড়তগুলি তার একে একে খুইয়ে ফেলা ইত্যাদি দেখে আসে  খোকন তিন বছর আগে। এবার ছুটিতে থাকাকালে হাশেমকে ওর দক্ষিণের শেষ ঘরটা থেকে দু’বার মাত্র বের হতে দেখে খোকন। শোনা যায়, ওই অংশের বর্তমান মালিক ওর ভাগ্নে। হাশেমের অনাথ স্ত্রী কমরুন শাশুড়ি ও তিন পুত্রকে নিয়ে নিজের মামার বাড়িতেই আশ্রিত। সবাই জানে। খোকন এবার হাশেমের উদ্ভ্রান্ত চেহারায় জ্বলজ্বলে লালচে চোখ দেখে কোনো মায়াই বোধ করে না। বরং মনে মনে বলে:

আমিও তো খাই। কই, আমার মা-বাপ দূরে থাক, কাক-পক্ষীও তো টের পায় না।

দেশ থেকে ফেরার সপ্তাহ খানেক পরে লিকোভিকের মুখে সেই নারাজ রাজপুত্রকে রাজি করানোর গল্পটি শুনতে চায় সে। একই কমপাউন্ডে উভয়ে প্রতিবেশী হওয়ায় আল ইয়ামামার সহকারী রিক্রিয়েশন ম্যানেজার খোকনের সাথে প্রায়ই দেখা হয় লিকোভিকের। কিন্তু নিজের অফিসের ঠিকানাটা পর্যন্ত খোকনকে জানায় না লিকোভিক। কেবল প্রিন্সের প্যালেসের দিকে ওরা এক সাথেই রওনা হয়। নিজের কৌতূহলের জবাব হিসেবে খোকন শুধু শোনে:

জনিকে ওকলাহামায় জেনিফারের কাছে নিয়ে যাই। মেয়েটি কল গার্লরূপে নয়, ফ্রেন্ড হিসেবে প্রিন্সকে সঙ্গ দিতে রাজি হয় অনেক বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। জেনিফারই এমাউন্টটা দাবি করে। সেও এখানকার প্যালেসে আসবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।

খোকন আরেকটু সরব হয়:

জেনিফার কি কল গার্ল?

না। কলেজ স্টুডেন্ট। জনি চায় সোনালি চুলের, নীল চোখের, চিকন ফিগারের তরুণী। জেনিফার ঠিক তা-ই। এতো বছর পরে ওকে আবার কিভাবে পাই? ক্যাথির খোঁজ মেলে। কিন্ত জনি তাকে প্রাসাদেই চায়!

ব’লেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিকোভিক।

জনি তো রাজপুত্রের নাম হতে পারে না। আর, তার এসব প্রত্যাশার খবর তুমি কিভাবে পেলে?

খোকনের এসব কথায় খানিকটা অপ্রস্তুত বোধ করে লিকোভিক। নিজেকে সামলে নিয়ে তবু বলে:

দুঃখিত। জানলেও প্রিন্সের নাম তোমাকে শোনানো যাবে না। দ্বিতীয়ত, খবরটা স্পাই লাগিয়ে জানতে পারি। গোয়েন্দা নয়, আমারই এক কলিগ সিভিল ড্রেসে প্যালেসে আসা-যাওয়ার মাধ্যমে কৌশলে খবরটা বের করে আনে। জেনিফারকে তখন না পেলে আমাদের গভার্নমেন্টের মিশনই সার্থক হতে ক’দিন লাগতো জানি না।

খোকন এবার জানতে চায়:

জনি কি অবিবাহিত?

সঙ্গে সঙ্গে লিকোভিক নির্দ্বিধায় বলে:

ফুলিশ কোয়েশ্চেন! ওর বউ কয়টা সে গুনতে পারে না।

ব’লেই অট্টহাসিতে প্রায় লুটিয়ে পড়ে লিকোভিক। তারপর সজোরে হ্যান্ড শেক করে নিজের ভিলার দিকে এগোয়।

 

আরো কিছুদিন পর আল খার্জ্-এর পথে খোকন আবারো সঙ্গী হয় লিকোভিকের। অন্যান্যবারের মতো এবারও আঙুর-বাগানের হাফ কিলোমিটার আগে ওকে নামিয়ে দেওয়ার প্রাক্কালে, কথায় কথায় লিকোভিক জানায়:

জনি অটল। ক্যাথি না এলে ক্যাথির মতো কাউকে এনে দিতেই হবে। বৈরুতের এক দল ব্যবসায়ীর খবর পাই স¤প্রতি। ওরা পেশাদার-অপেশাদার সুন্দরী পরিবহনের কাজ করে। নিজের চোখে-মুখে আশাবাদ ফুটিয়ে লিকোভিক আরো বলে:

ওরা আন্তর্জাতিক ব্রোকার। বুঝলে?

তারপর আবার সেই অট্টহাসি শুনতে শুনতে খোকন নেমে পড়ে রাস্তায়। অতঃপর দ্রাক্ষাকুঞ্জসংলগ্ন মসজিদটির ইমাম ফসিহউল আলমের মুখোমুখি হতেই দেশের প্রার্থনালয়ের গম্বুজের সাথে রাজপ্রাসাদের শীর্ষভাগের মিল আবিষ্কার করে সে, বুঝিবা এই প্রথম। এদিকে খোকন ঠিক বুঝতে পারে না মাত্র বছর তিনেকের পরিচয়ে লিকোভিক কেন তাকে এতো আপন জানে। আল খার্জ্ থেকে ফেরার সময় সে ভাবে-

না। শুধু লিকোভিক তো না, ইসম, মীপ, ব্যাক উড, ক্যারিনা এবং হেদারের সাথেও তো এরই মধ্যে আমার সখ্য গড়ে ওঠে। ক্যারিনা তো সেদিন বোতল বগলে চেপে নিজের ভিলা থেকে হেঁটে রিক্রিয়েশন সেন্টারে এসে ঘরে তৈরি মাইলড্ ওয়াইন আমাকে উপহার দেয়। ওরা বোধ হয় আমাকে স্বধর্মত্যাগী যুবক ভেবেই খুশি হতে চায়।

 

মজার ব্যাপার, ক্যারিনা খোকনকে এই গিফ্ট্ দেওয়ার সময় উঁকি মারার ধরনে ডানে-বামে তাকায় যাতে কেউ না দেখে। অথচ অন্যান্য পশ্চিমা পাড়ার মতো আল ইয়ামামাও কমপাউন্ডের বাইরে বলবৎ আইনি অনুশাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

‘কি ভাবছো?’ লিকোভিকের এই প্রশ্নে হঠাৎ স্মৃতি থেকে বর্তমানে ফেরে খোকন আর বলে:

তোমার ড্রাইভিং খুব স্মুথ। আমাকে বাথায়, বাংলা বাজারের কাছে নামিয়ে দিও। কাজ আছে।

 

ফুটপাত ধরে বাংলাবাজারের দিকে এগুনোর সময় খোকনের মাথায় পরম্পরাহীন কতো কথা যে পরস্পরকে কাটে তার ইয়ত্তা নেই। যেমন, সে এখনো জিগ্যেসই করেনি জেনিফারের পরে আর ক’জন রমণীর সাথে জনির সংযোগ ঘটিয়ে দেয় লিকোভিক। জানা হয়নি পশ্চিমা বন্ধুটি কেনইবা তাকে প্রাসাদে নিয়ে যায় না। রাজবাড়িতে অ-পশ্চিমা কারোর প্রবেশ কি নিষিদ্ধ? ওর স্বদেশীয় এক ফায়ার ফাইটার নাকি ওয়াদি লেবানের প্রাসাদে নিয়োজিত আছে! খোকনও কেন ওই বাগান পর্যন্ত যেতে রাজি হয় প্রতিবার? এই অসম্পূর্ণ সফর কি অপমানজনক নয়? তাদের কমপাউন্ডের সবাই বিমান ঘাঁটির লোক কি না কেন সে জেনে নেয়নি! এখানকার অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের কাজে স্থায়িত্ব-পাওয়া মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর কোনো একটিতে কি কর্মরত আছে লিকোভিক? তা না হলে সে কোন ধরনের অফিসে বসে?

 

কাফালাত বা স্পন্সর বদলে নিয়ে আগের চাকরি ছেড়ে খোকন আল ইয়ামামায় এলেও সাব-কন্ট্রাক্টের অধীনস্থ থাকায় দেশে কেউ তাকে দুবাইওয়ালা বলে না। অথচ দেশ থেকে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হয়ে-আসা ওর মায়ের কাজিন, এখানকার ব্যাংকার, মন্টু মামাকে আত্মীয়-স্বজন সকলেই এখনো তা-ই ডাকে আড়ালে। আঙুর-বাগানের বাঙালি ভাইয়েরাও লিকোভিকের সাথে ওর অপূর্ণ সফরের হেতু কোনোদিন জানতে চায়নি কেন! কিন্তু তারা ওকেও পশ্চিমাদের অনুরূপ দেবতা জ্ঞান করায় দুঃখ পায় সে। এ-দেশের জনমন্ডলিরও ‘হাদা আমিরিকি নাম্বার ওয়ান’ বা ‘আমেরিকাই সেরা’ ধারণাটি এখনো বদলায়নি। ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে, বাথায় অবস্থিত, বাংলা ভাষায় কল্লোলিত, তার জেলা-শহরের রমিজউদ্দীন বাজারের অনুরূপ এক চিলতে স্বদেশটার এপারে চলে আসে খোকন। ফ্লাইওভারের নিচে হেঁটে রাস্তা পার হলেই বাংলাবাজার। উড়াল সেতুর বিশাল, প্রশস্ত স্তম্ভ বামে রেখে এগুবার সময় হঠাৎ তার স্মৃতি থেকে কথা বলে ওঠে মন্টু মামা:

আমি এ-দেশে এসে এয়ারপোর্ট রোডে, ফ্লাইওভারের নিচে রাতে একা ঘুমাইছি। তুমি কি অতো কষ্ট করছো জীবনে?

অমনি, ঘুমন্ত বা তন্দ্রাচ্ছন্ন কারোর বিছানা থেকে মেঝেয় পড়ে যাওয়ার ধরনে স্মৃতির আবেশ থেকে হঠাৎ, বুঝি বা বিকট শব্দে, বাস্তবে পতিত হয় খোকন। কেননা সে আলোঝলমল নগরের এই সন্ধ্যায় হাশেমকে স্পষ্ট দেখতে পায়। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে এসে খোকনের মুখোমুখি হয়েও, এক মুহূর্তও না থেমে, কোনও কথাই না বলে, পালানোর ধরনে দ্রুত প্রস্থান করে হাশেম।

 

১০

হেলিকপ্টারের হাওয়ার আঘাতে ওড়া সব ধূলিবালির ভয়ংকর ক্ষিপ্র আক্রমণ এড়ানোর ধরনে দ্রুত পায়ে ঘরে ঢোকে অলিভ, এখানে পরিচিত হয়ে ওঠা খোকনের দেশী ভাই। সঙ্গে সঙ্গে কলিং বেল বেজে ওঠায় দরজা খুলতেই ওর রুমমেট আনিস বলে:

কাউরেই তো দেহি না। আপনেরে ধাওয়া করল কেডায়?

এই বিরক্তি ও পরিহাসের সম্মুখীন হবার আগে, খাজ্জান স্ট্রিটের কিং ওয়াহিদ বিল্ডিং-এর পেছনে, চার ফিট মোটা দেয়াল ও চার কক্ষবিশিষ্ট মাটির এক তলা পুরোনো বাড়িতে, ছুটির দিনে, একটু বেলা করেই ঘুম ভাঙে অলিভের। ভিলার বাকি চারজন এই শুক্রবারেও ওর আগে উঠে সন্তর্পণে পার্ট টাইম কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়লেও অলিভ পুলিশের হাতে আটক হবার ঝুঁকি নিতে সাহস করে না। পার্ট টাইম জব এখানে নিষিদ্ধ বলেই কেবল নয়, চায়ের দোকানে কাপ-পিরিচ ধোয়া, কার ওয়াশিং, কাঁধে নানান পণ্যের কার্টন বহন ইত্যাকার কাজ করতে তার রুচিতেও বাধে। বাসা জনশূন্য রেখে সকাল দশটার দিকে টুথপেস্ট কিনতে বেরিয়ে অদূরের ডাস্টবিন সংলগ্ন টাওয়ারটির দিকে চোখ ঘোরাতেই বুঝি এই প্রথম ভয় পায় অলিভ। যেন বাদশার নামে দন্ডায়মান ওই চল্লিশ তলা ইমারতটির দশ তলার জানালা ঘেঁষে উড়ে-যাওয়া এক হেলিকপ্টারের প্রচন্ড শব্দ ওর কানে আসে।

 

ভীরুতা অলিভের সহজাত ধরে নিয়ে আনিসের সাথে সাথে অন্য তিন কক্ষসঙ্গীও ঠাট্টাপ্রবণ হয়ে ওঠে প্রায়ই। কিন্তু অলিভকে ওরা অচেনা আরব ছেলেদের কোনো ইশারা-আহবানেই সাড়া না দেয়ার পরামর্শ দিতেও ভোলে না। এতে সাতাশ বছরের সুচারু চেহারার গৌর বর্ণের স্নাতকোত্তর তরুণ অলিভের শঙ্কা যে ভেতরে-ভেতরে আরো বাড়ে তা ঠাহর করা কারো পক্ষেই সম্ভব হয় না। আরবে আসার সপ্তাহ খানেক পরেই সে সদ্য যুবা এক দল তরুণের টিজিঙে প্রথম বিস্মিত হয়। পুরুষ কিভাবে পুরুষের অমন টার্গেট হতে পারে ভেবে, গত কয়েক বছরে আর অবাক না হলেও, প্রায়ই অনিরাপদ বোধ করে অলিভ। কিন্তু এই মুল্লুকে দুই যুগ ধরে কর্মরত আছে এমন আত্মীয়ের মুখে মাস খানেক আগে শোনা গল্প বা গল্পাংশ রুমমেটদের সঙ্গে শেয়ার করে সে তার আতঙ্কগ্রস্ততার অন্য মাত্রা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহী হতে চায়। কিন্তু স্বজনেরা ওসব বিষয়ে আলাপের ঝুঁঁকি সম্পর্কে তাকে সচেতন করায় আর মুখ খোলে না। দেয়ালেরও কান থাকার অদৃশ্য একটা বাস্তবতা বুঝি হাড়ে হাড়ে টের পায় অলিভ। সেই সঙ্গে আনিস ছাড়াও কাজল, সোহেল এবং শিহাবেরও ঠোঁট-কাটা স্বভাব ও নির্ভীকতা দেখে অবাক হয় সে। কিন্তু উড়োজাহাজটি তার অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে স্বপ্নরূপে ঘুমেও হানা দেয়।

 

জনশ্রুতি আছে, বছর পঞ্চাশেক আগে রাজবাড়ির পুত্র মোহাইমেন ওর চাচা বাদশা আমিনকে রিভলবারে হত্যা করলে রাজপরিবারের সকলে ওর শিরচ্ছেদের রায়ে সম্মতি দেয়। মোহাইমেন এক ইহুদি তরুণীর প্রেমে পাগলপ্রায় হয়ে প্রেয়সীকে বিয়ে করতে চাইলে বাধা আসে। রাজার অনুমোদন মেলে না। আবেদন ও প্রত্যাখ্যানকেন্দ্রিক বিতর্ক ভয়াবহ তর্কে পরিণত হলে রাষ্ট্রপ্রধান গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ভাতিজাকে ক্ষমাও করেন। কিন্তু হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হলে রাজপরিবারের অন্য সকলে সেই মৌখিক ক্ষমার বিষয়টি অগ্রাহ্য করেন। শুধু তা-ই নয়, সেলাইয়ের মাধ্যমে ছিন্ন মুন্ড কোনোমতে পুনঃস্থাপনের পর মোহাইমেনের পুরো মরদেহ হেলিকপ্টার থেকে দড়িতে ঝুলিয়ে সারা দেশবাসীকে দেখানো হয়। অর্থাৎ জনমন্ডলির দৃষ্টিসীমার আওতার মধ্যে, প্রিন্স বলে খ্যাত নিহত মোহাইমেনকে, ওড়ানো হয় সমগ্র আরব আকাশে।

 

অলিভের ছোটবেলায়, নন্দীগ্রামে বিকেলে খেলার সময়, হঠাৎ একটি বা একাধিক চিল উড়তে উড়তে নিচে নামতে চাইলে ঠোকরে বালকদের আহত হওয়ার আশঙ্কা ত্বরান্বিত হতো। ছেলেরা তৎক্ষণাৎ হাঁটু মুড়ে বসে পড়তো মাঠে। আজকাল অফিস পাড়া ওলাইয়ায় কিংবা আবাসিক এলাকা খাজ্জানে সকালে বেরুলেও, কাক-পক্ষীশূন্য এই নগরের আকাশ থেকে নিম্নগামী এক সশব্দ অদৃশ্য ছোবল, হঠাৎ হাতের ছাউনি দিয়ে ঠেকাতে চায় অলিভ। কেউ দেখে ফেললো কি না বুঝতে হাত নামিয়েই সে চারদিকে তাকায়। একবার এক অচেনা দীর্ঘদেহী কালো সুদানীয় পুরুষ অলিভের এই অবস্থা দেখে কি যেন বলে বিড়বিড় করে। আরেকবার দুই ফর্সা তরুণ, সম্ভবত মিশরের, ওর দেখাদেখি একযোগে ওপরে তাকাতে গিয়ে আরেক পথচারীর সঙ্গে ধাক্কা খেলে বিতন্ডা শুরু হয় প্রায়। আর, অলিভ শশকের ধরনে পালায়।