You are currently viewing সুমন শামসুদ্দিনের কবিতাগুচ্ছ

সুমন শামসুদ্দিনের কবিতাগুচ্ছ

সুমন শামসুদ্দিনের কবিতাগুচ্ছ

বৈগুণ্য লিখনী


আমি লিখতে চাই
কি লিখতে চাই, ঠিক জানি না! কি
ন্তু আমি লিখবো।
হয়তো লিখতে চাই
একটি নির্বাক আর্তনাদ, নির্বাক হলেও বিদারক তীব্র
যে আর্তনাদ প্রবল পীড়নে নাদ বর্জিত!
অথবা লিখতে চাই
একটি নিগূঢ় হাহাকার, নিগূঢ় তবে বাকশক্তিহীন
কিন্তু কোথাও কোন দুঃখাপনোদন নেই!
কিংবা লিখতে চাই
একটি নীল বেদনার ক্ষত, ক্ষতের গর্ভ ক্রমশঃ কালচে বর্ণ
কিন্তু জনবসতির কোন ভ্রুক্ষেপ নেই!
নতুবা লিখতে চাই
একটি প্রান্তবর্তী ক্ষুধা, ক্ষুধার তাড়নায় অন্তিম শয্যাগত
কিন্তু ব্রক্ষান্ড ব্যাপী নরত্ব বিলুপ্তপ্রায়!
হয়তো লিখতে চাই
একটি বিষদুষ্ট শীৎকার, যা পুলক
বিবর্জিত ও জরুরৎমুন্ডিত
কিন্তু পৃথিবীজ বিবেক বিস্ময়কর বীতস্পৃহ!
অথবা লিখতে চাই
একটি ধ্বনি শূন্য প্রতিবাদ, প্রচন্ড প্রতিবাদে অনৈতিহাসিক প্রদাহ
দেহযষ্টি বিদারে তমসাচ্ছন্ন উষ্ণ প্রবহণ!
কিংবা লিখতে চাই
একটি ভয়ংকর নির্যাতনের চিৎকার, কর্ণপাতে দানবও কুর্নিশ করে মানবকে
সৃষ্টিকূল সেরা মনুষ্যত্ব নিকৃত ও প্রমথিত!
নতুবা লিখতে চাই
একটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় চাহনি, যে দৃষ্টি ত্রাস অবলোকনে আতঙ্কিত
এবং ভীত বিহ্বলতায় আমৃত্যু বোধশক্তিহীন
কিন্তু ক্ষুব্ধ লিখনী আমার দ্রোহের যন্ত্রণায় স্তব্ধ
অবাধ্য কাগজের খতিয়ান বিচ্ছিন্ন এবং অস্থির হয়ে উড়ছে
লিখনীর অঙ্গ ছেদিত,
চিড় নিংড়ানো বিশীর্ণ দেহে শুধুই কৃষ্ণবর্ণ রক্তের প্রস্রবণ
আমার আর লিখা হলো না!

কাব্য প্রয়াস 

গোধূলি লগনে মাধবির বনে লাজুক কিরণ ঝরে,
দিনের প্রান্তে পশ্চিমান্তে রবিকর ঢলে পড়ে।
সোনালী আভায় প্রভূত ধারায় মুগ্ধ সন্ধ্যাকালে!
পাখিরা সদলে নেমেছে ভূতলে নীড় খোঁজে তরুডালে।
বিমর্ষ মনে অন্তরোদনে ভাবছি মনের কথা,
যা-ই গেছে চলে আসবে না বলে মনে তাই শত ব্যথা!
সারাদিন ধরে ভাবনার চরে রচেছি যত না কাব্য,
দিন শেষে দেখি ভুলে গেছি একি! তিমিরালোকে কি ভাববো!
দিবস সহসা করে যে বচসা সন্ধ্যা কেনো যে আসে!
নিশাগম বলে রাত শেষ হলে নবীন সূর্য হাসে!
প্রতি নিশি শেষে রবি ওঠে হেসে আঁধার হারায় দূরে,
নতুন আশায় প্রদীপ ভাসায় নবীন কাব্য সুরে।

সারারাত জাগি পরিশেষে ভাবি এখনো অনেক বাকি,
বাকিটা বেলায় না ভেবে হেলায় কাব্য প্রণীতে থাকি।

সৈকতে তুমি  গোধূলী
  

হরিত শোভা বৃক্ষরাজী উজান পানে বিজন বনে;
ভুতল জুড়ে বালির ঢিবি হাঁটছি একা উদাস মনে।

মৃদুমন্দ বাতাস বহে সৈকতে পাই তোমার ঘ্রাণ;
হৃদয় যেন অনাবিষ্ট গোধূলী ক্ষণে শীতল প্রাণ।

হঠাৎ যেন খোলা হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে আঁচলখানি;
অবাধ চুলে এলোধাবাড়ী বাজে পায়ের নূপুরখানি।

তোমায় দেখে বৃক্ষ নাচে বাতাস গাহে মধুর সুরে;
আঁধারবেলা ছড়িয়ে দ্যুতি সুবাসমোহ ভুবন জুড়ে।

কে যাও তুমি? তোমায় দেখে থমকে যেন ঊর্মিমালা;
সাগরতটে অভিনিবেশ মহার্ণবে সুরের ডালা।

সন্ধ্যালোকে শীতল দ্যুতি দিগ্বলয়ে লোহিত সাঁঝে;
মেরূপ্রভার চমক লাগে তোমার আঁখি রূপের মাঝে!

ঢেউয়ে নাচে রক্তিমাভা তটের বুকে আছড়ে পরে;
মোহাবিষ্ট মোহনসাঁঝে চিবুকরাঙা লজ্জা ঝরে।

ভাসে তোমার কাঁকনধ্বনি নিশাগমের জললহরে;
হৃদয়বাণী নৃত্যরত ঋষভস্বরে সুরনহরে।

আজ গোধূলী বাঁধনহারা বেলাভূমির অবাক পথে
নগ্ন তোমার চরণ চলে মনে আমার সুপ্ত রথে!


বাক্য-স্বাধীনতা

সব শহীদের রক্তবর্ণ হয়ে গেছে কালো।

তাইতো এখন স্বপ্ন দেখি; স্বপ্ন দেখাই ভালো!লক্ষফুলে শোভন করে, শহীদ মিনার দেখি।ফেব্রুয়ারি ফুরোলেই সব, নাই হয়ে যায়; একি!একুশ শুধু একটি মাসের মহাযজ্ঞের মেলা?বাংলা ভাষার উৎসবে তাই চতুরঙ্গের খেলা?
ভুলেই গেছি ভাষা-শহিদের বংশধরের ব্যথা;
জীবন-গতি কেমন তাদের, ভাবিনি সেই কথা!

পেলাম ভাষা, নাই বা পেলাম বাক্য-স্বাধীনতা।

স্বাধীনদেশে বসত করে, পেলাম অধীনতা
একুশ তবু হৃদয়জুড়ে, ভাষার কলতান
একুশ বুকে, একুশ চোখে, একুশের গাই গান।

=*=*=*=*=*=*=*=*=*=