You are currently viewing “সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে” একটি পাঠপর্যালোচনা || বিচিত্রা সেন

“সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে” একটি পাঠপর্যালোচনা || বিচিত্রা সেন

সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে” একটি পাঠপর্যালোচনা
বিচিত্রা সেন

২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় বিশ্বজিৎ চৌধুরীর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ “সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে”। আমার আজকের আলোচ্য গ্রন্থ এই গল্পগ্রন্থটি। গল্পগ্রন্থটি প্রকাশের পর সুধীজনের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে “আগামী প্রকাশনী”। প্রকাশক ওসমান গনি। প্রচ্ছদ করেছেন পীযুষ দস্তিদার। এতে গল্প আছে আটটি। প্রথম গল্প “কৃষ্ণগোপালের ভবিষ্যৎ”।
ধোপাপাড়ার হরিকিশোর শুক্লদাসকে নিয়ে এ গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। জেলেপাড়ার জলদাসদের মতো ধোপাপাড়ার শুক্লদাসরাও বংশ পরম্পরায় কৃষ্ণবর্ণের অধিকারী। যা ধোপা হরিকিশোরের মর্মপীড়ার কারণ। অথচ ভদ্রলোক পাড়ার উচ্চবর্ণের হিন্দুরা কী ধবধবে গৌরবর্ণের অধিকারী! সে স্বপ্ন দেখে একদিন তার বংশও গৌরবর্ণের অধিকারী হবে।ঘটনাচক্রে এক ধবধবে ফর্সা অসুস্থ নারীকে সে স্ত্রী হিসেবে পায়। সেই নারী তারই বর্ণের এক হৃষ্টপুষ্ট শিশু জন্ম দিয়ে মৃত্যু বরণ করে। ব্রাহ্মণ জ্ঞান চক্রবর্তীকে অনেক উপঢৌকন দিয়ে হরিকিশোর তার ধবধবে ফর্সা ছেলের নাম গৌরগোপাল রাখতে সমর্থ হয়। অত্যন্ত সুদর্শন এ ছেলেটি লেখাপড়াতেও প্রচণ্ড মেধাবী। মাস্টার জ্ঞান চক্রবর্তীর ভবিষ্যৎবাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এ ছেলে ঠিকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাশ করে পিএইডি করতে আমেরিকা চলে যায়। কিন্তু তারপরেই ঘটে ছন্দপতন। এক চিঠিতে একটা ফটোগ্রাফ পাঠিয়ে সে জানায় এই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান রমণী তার স্ত্রী এবং কৃষ্ণাঙ্গ শিশুটি তার পুত্র। ভালবেসে গৌরগোপাল তার পুত্রের নাম রেখেছে কৃষ্ণগোপাল। হরিকিশোরের সারাজীবনের স্বপ্ন ধুলায় মিশে যায় কালো কুচকুচে নাতি দেখে। তবু জিইয়ে থাকে একটি স্বপ্ন,যা তার ছেলে তাকে দেখিয়েছে,একদিন কৃষ্ণগোপাল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে। মুমূর্ষু অবস্থায় সে ডাক্তারের কাছে জানতে চায়,কোনো কালো মানুষ কি কখনো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবে? ডাক্তারের আশ্বাসবাণী তাকে শান্তি দেয় না। তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে, কালো কুচকুচে তার নাতি ময়লা কাপড় নেওয়ার জন্য উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একজন ধোপা হরিকিশোরের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালানো বর্ণবাদের কী চমৎকার চিত্র এঁকেছেন বিশ্বজিৎ এ গল্পে।
এ বইয়ের নামগল্প “সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে”। অসাধারণ বাঙময় একটি গল্প। গল্পটি পাঠককে গভীরভাবে ভাবায়। সোলেমান নামক এক ব্যক্তি কুয়েতে অনেক বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসায় তার পরামর্শদাতা ও সার্বক্ষণিক সঙ্গী বদি আলম। বদি আলমের প্রতিটি কথাকে সে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। বাড়িতে পরিবার রেখে ঢাকা শহরে একা বাসা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে সোলেমান। একসময় বদির পরামর্শে মাসিক পেমেন্টের ভিত্তিতে এক কর্লগার্লকে সে তার বাসায় রাখে। শাহানা নামের মেয়েটা তার সংসারের যাবতীয় কাজও গুছিয়ে রাখতো। একসময় পাড়ার মাস্তানরা তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে এবং না পেয়ে বাসায় এসে তার বউ ভেবে শাহানাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। সোলেমান খুব খুশি হয় এই ভেবে যে,কলগার্লের বিনিময়ে তার তিন লাখ টাকা বেঁচে গেল। এরপর থেকে রাস্তায় তাকে দেখলে মাস্তানগুলো তার বউয়ের কথা জিজ্ঞেস করে বিব্রত করতে চাইতো। কিন্তু সে এতে বিচলিত হতো না,কারণ সে তো জানে শাহানা ওর বউ নয়।সে বরং তৃপ্তি পেত এই ভেবে যে,মাস্তানগুলো চরমভাবে ঠকে গেছে। কিন্তু বদি আলম ব্যাপারটি জানতে পারলে তাকে গল্পের ছলে বুঝিয়ে দেয় শাহানা যেই হোক,মাস্তানরা তো তাকে তার বউ ভেবেই ধর্ষণ করেছে,সুতরাং আসলে তারা সোলেমানের বউকেই ধর্ষণ করেছে। সোলেমান ব্যাপারটি বুঝতে পারলে আতংকে, নিরাপত্তাহীনতায় দেশ থেকে আবারও পালাতে চায়। লেখক এ গল্পে মাস্তানদের দৌরাত্ম্য যেমন দেখিয়েছে,তেমনি দেখিয়েছে সাধারণ মানুষের প্রতি পুলিশের দায়বদ্ধহীনতা। সোলেমান পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পায়নি। বরং এটা জানতে পেরে মাস্তানরা তার প্রতি আরও নির্মম হয়েছে। মাস্তানদের ক্রমাগত দৌরাত্ম্যের যন্ত্রণায় সোলেমানের অনুভূতি লেখক তুলে ধরেছেন এভাবে–”এই কথার মধ্যে অদ্ভুত ঔদ্ধত্য আছে, থানা-আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর দম্ভ আছে,সবচেয়ে বড় কথা সোলেমানের দৌড় কতদূর তাও বুঝতে পেরে তার প্রতি এক ধরনের তাচ্ছিল্য আছে। কিছুই করার ছিল না,মাথা নিচু করে সরে যাওয়া ছাড়া।” হ্যাঁ,এভাবেই প্রতিনিয়ত মার খায় এদেশের সাধারণ জনগণ। লেখক এ গল্পে সমাজ নিরীক্ষক।
“মৃত্যুকে ছাপিয়ে অঝোর শ্রাবণ” এক প্রেমহীন দাম্পত্যের গল্প। ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামী হায়দারের মৃত্যুতে শত চেষ্টা করেও নাসরিন শোকাভিভূত হতে পারেনি। নিজের কাছে প্রশ্ন করেও নাসরিন এর উত্তর পায়নি। শেষে তার বন্ধু শান্তনুই তাকে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে- “এটা আমার ধারণা,একেবারেই অনুমান,হায়দারের কারণে তোর মা হওয়া হবে না কখনও এই ব্যাপারটা তোকে অসুখী করে রেখেছিল দীর্ঘদিন ধরে,তার ওপর গত এক বছর ধরে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকা একজন মানুষকে সর্বক্ষণ সঙ্গ দিতে দিতে…”। গল্পকার এ গল্পে দেখিয়েছেন শত প্রাচুর্য, শত কেয়ারিং একজন নারীকে তৃপ্তি দিতে পারে না,যদি না তার মানসিক আকাঙ্ক্ষাটা না বোঝে।
“সায়রাবানু সিনড্রম” জেবল হোসেন নামক এক বৃদ্ধের নৈতিক স্খলনে পড়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার গল্প। এলাকার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এই বৃদ্ধের অর্থ, প্রতিপত্তি, সম্মান সবই ছিল। কিন্তু ঘরের গৃহকর্মী সায়রাবানু নামে এক কিশোরীর ফাঁদে পড়ে তার ভেতর দেহজ কামনা উথলে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে একটা হোটেলে ওঠে। কিন্তু তাঁর প্রতিপক্ষ লোকজন হোটেলের দরজা ভেঙে তাঁকে অনৈতিক অবস্থায় হাতেনাতে ধরে এবং সায়রাবানুর দোষারোপের প্রেক্ষিতে জনসমক্ষে পেটায়। এই ঘটনায় তার পরিবারে ভয়ংকর দুর্যোগ নেমে আসে এবং শাস্তিস্বরূপ তাঁকে আত্মহত্যা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু জীবনের মায়া এমন মায়া তিনি রেলগাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যা করতে গিয়ে তা না করে রেলগাড়ির কামরায় চড়ে বসেন। এ গল্পে লেখক পুরষমানুষের জৈবিক তাড়নাকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন। জেবল হোসেন জানতেন তিনি যা করছেন, অন্যায় করছেন,তবুও তিনি নিজেকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। তবে ব্যাপারটা একপাক্ষিক ছিল না। লেখকের ভাষায়–”না বলা একটা ভাষা তৈরি হয়,যা মুখের কথায় উচ্চারিত হয় না বা তাতে অন্য স্বাভাবিক আচরণে কোন খামতি চোখে পড়বে না বাইরে থেকে,কিন্তু শুধু নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছুর বিনিময় ঘটে এবং এটা শুধুই স্পর্শের মধ্য দিয়ে,যেন নিজেকেও ফাঁকি দিয়ে।” হ্যাঁ,গৃহপরিচারিকা সায়রাবানুর সাথে এরকম বিনিময় করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিরুদ্দেশ হতে হয়।
“বৃক্ষশাখায় তীব্র ঝড়ের আর্তনাদ” এক নারীর মনস্তাত্ত্বিক সংকটের গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী গ্রাম্য যুবক শাহরিয়ারকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল শহরের ধনাঢ্য বিচারপতির একমাত্র সুন্দরী কন্যা নাজনীন। পরবর্তীতে শাহরিয়ার নিজের মেধা ও কর্মকুশলতা দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। সেইসাথে পরিবর্তন করেছে নিজেকেও। এখান থেকে নাজনীনের মানসিক সংকটের শুরু। মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া নাজনীন এখন নিজেকে অপাংক্তেয় মনে করে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সে মনে মনে কল্পনা করে তার স্বামী পরনারীতে আসক্ত। কিন্তু সব জেনেও সে কোনো প্রশ্ন করে না স্বামীকে,বরং নিজেকে আরও অনুগত করে তোলে। লেখক এ অবস্থায় নাজনীনের সংকটকে তুলে ধরেছেন এভাবে–”কেননা সত্যিই যদি তার মানসিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটে আচরণে,কোনও নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়,এতে শাহরিয়ার যদি দোষী সাব্যস্ত হয় কিংবা নিজেই সে স্বীকার করে তার দুর্বলতা,তাতে কি আরও বিপদের মুখে গিয়ে পড়ছে না নাজনীন?….. সুতরাং তার প্রথম কাজটিই হচ্ছে, সে যে জানে এ কথা জানতে না দেওয়া।” ধীরে ধীরে নাজনীন মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে। তাকে মানসিক ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়,কিন্তু সেখানে সে মুখ খোলে না। বরং তার মনে হয়–” তার চেয়ে বরং এই ভাল নয় কি নাজনীন কোনও একসময় মানসিক ভারসাম্য হারাবে,সচেতন ভাবনার ধারাবাহিকতা থাকবে না বলেই এই দুঃসহ পরাজয় বা বিষাদ বহন করতে হবে না তাকে।” নাজনীনের বিষাদময় পরিণতি পাঠককে ভারাক্রান্ত করে।
“আত্মজ ও একটি নীল মনিটর” ২০০৪ সালে প্রকাশিত গল্প হলেও এর প্রেক্ষাপট মনে হয়েছে একেবারেই সমকালীন। কম্পিউটারের বদৌলতে পাল্টে গেছে আমাদের সমাজ, পরিবার,মূল্যবোধ সবকিছু। তেমনি এক মায়ের ক্ষরণ গল্পকার এ গল্পে তুলে ধরেছেন। এই মা স্বচক্ষে দেখেছে তার দশ বছরের ছেলেকে কম্পিউটারে ব্লু ফিল্ম দেখতে। মা বাবা কর্মজীবী হওয়াতে বাসায় একা থাকে ছেলেটি। আর সেই সুযোগ নিয়ে ছেলেটি নীল মনিটরে পর্নোগ্রাফি দেখে। নিজের সন্তানের শৈশবে নীলছবির বিষাক্ত ছোবল মাকে কষ্ট দিয়েছে,উদ্ভ্রান্ত করেছে। এ গল্পের মাধ্যমে বিশ্বজিৎ চৌধুরী আধুনিক শিক্ষিত সমাজের জীবনাচার,তথা সন্তানকে দূরে রাখার প্রবণতার প্রতি আঙ্গুল তুলেছেন।
“গল্পকথার সত্যমিথ্যা” অসাধারণ একটি ছোটগল্প। যার শুরু থেকে গল্পকার নাপিত প্রাণহরির মুখে একের পর এক গল্প বলিয়ে পাঠককে টেনে নিয়ে গেছেন একেবারে শেষ প্রান্তে। উপজেলা সদরে রূপবান সেলুনের মালিক প্রাণহরি। তার দোকানে কাস্টমার আসে দুকারনে।এক. দামে সস্তা,দুই. গল্প শোনা। একেকজন কাস্টমারকে যখন প্রাণহরি একেকটি গল্প বলে,তখন কাস্টমারের মতো পাঠকও গল্পগুলি গোগ্রাসে গেলে। কিন্তু গল্পটির শেষেই হচ্ছে আসল চমক। একদিন তার দোকানে আসে একাত্তরের রাজাকার তৎকালীন শান্তি কমিটির সভাপতি সিদ্দীক মুনসি। কিন্তু আজ গল্প বলতে প্রাণহরির অনীহা। সে আজ শুনতে চায়। শুনতে শুনতেই সিদ্দীক মুনসিকে দিয়ে সে স্বীকার করিয়ে নেয় এক মর্মান্তিক গল্প। পাঠক জানতে পারে প্রাণহরির একমাত্র ছেলে যে ছিল মুক্তিযোদ্ধা, তার ঘাতক হল এই মুনসি। গল্পটি পাঠ করে পাঠক গভীর বেদনায় অনুভব করে, সেই ঘাতক রাজাকার মুনসি আজ প্রবল প্রতাপশালী,আর শহিদ মুক্তিযোদ্ধার বাবা দীনহীন প্রাণহরি জীবনযুদ্ধে হার মানা এক সৈনিক।
“দ্বিতীয় বৃত্তের তৃতীয়জন” এক অদ্ভুত মানসিক দ্বন্দ্বের গল্প। ঘৃণা করতে করতেও যে মানুষ ভালোবেসে ফেলে তারই চিত্র এঁকেছেন লেখক এ গল্পে। স্বাতী ও তানভীর স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু তাদের জীবনে আরেকজন অবধারিত,সে হল তানভীরের বন্ধু রাফি। হানিমুন থেকে শুরু করে সব পার্টিতে তানভীরের পাশে রাফির উপস্থিত থাকা চাই। এ নিয়ে রাফির প্রতি স্বাতীর তীব্র ঘৃণা। অথচ বছরের পর বছর গড়াতে গড়াতে এমনই হল রাফির উপস্থিতি স্বাতী অনিবার্য হিসেবেই ধরে নিল। একসময় ছোট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাফি দূরে সরে যায়,এবং তানভীরকে না জানিয়ে খুবই সুন্দরী একটা মেয়েকে বিয়ে করে হানিমুনও সেরে ফেলে। স্বাতী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করল,ব্যাপারটাকে তার স্বামী খুব স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলেও সে নিতে পারছে না। রাফির সাথে তার স্ত্রীকে দেখলেই তার হৃদয়ে যন্ত্রণার সৃষ্টি হচ্ছে,যা তানভীরেরও দৃষ্টি এড়ায় না। কিন্তু এর জন্য দায়ী কে? তানভীর? নাকি স্বাতী? নাকি রাফি নিজেই? এ প্রশ্নের উত্তর লেখক আমাদের দেননি। কারণ তাঁর কাজ হল সত্যকে তুলে ধরা,মীমাংসা করা নয়।
“সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে” গল্পগ্রন্থের গল্পগুলোতে লেখক একদিকে যেমন সমাজের অনেক অসংগতিকে তুলে ধরেছেন,তেমনি তুলে ধরেছেন মানুষের মানসিক সংকটকে। সেইসাথে তুলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও। পুরুষের জৈবিক তাড়না নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে জীবন কতটা দুর্বিষহ হয় সেই চিত্রও পাওয়া যায় এ গল্পগ্রন্থের গল্পগুলোতে। বিশ্বজিৎ চৌধুরী পুরোপুরি নাগরিক মননের অধিকারী। তাঁর গল্পে বিকশিত হন নগরজীবনের নর-নারীরাই। আর নগর মানেই মনোজগতের সংকট।এ সংকট আঁকতে লেখক সিদ্ধহস্ত। কেউ কেউ বলেন,বাংলাদেশের বৃহত্তর পল্লী জীবনের চিত্র না থাকলে কথাসাহিত্যের জগৎ অসম্পূর্ণ। এ গ্রন্থের দুটি গল্পে লেখক গ্রামের জীবনযাত্রাকেও তুলে এনেছেন। তবে আমি মনে করি একজন কথাসাহিত্যিকের কাজ হলো চারপাশের সমাজকে তুলে আনা। আর সেই সমাজের জীবনযাত্রাকে তুলে আনা। কেউ যদি এই সমাজ নির্বাচন করতে গিয়ে গ্রামের জীবনকে বেছে নেন,আরেকজন নাগরিকজীবনকে বেছে নিতেই পারেন। আমরা নাহয় বিশ্বজিৎ চৌধুরীর গল্প-উপন্যাসে নাগরিকজীবনের চিত্রায়ণই খুঁজে নেবো।

*********************************

বিচিত্রা সেনঃ কথাসাহিত্যিক
*********************************