You are currently viewing লিপি নাসরিনের কবিতা

লিপি নাসরিনের কবিতা

লিপি নাসরিন

ক্যালাইডোস্কোপিক দৃষ্টি

——————————-

রাস্তা কি একটু উঁচুতর নাকি নিম্নগামী ছিলো? ঠিক মনে করতে পারছি না, তবে ছিলো এক অনবদ্য চলন্ত ক্যালাইডোস্কোপি। ক্লান্ত রোদের ক্ষণিক অবসর ছিলো পথজারুলের ছায়া, ম্যাজেন্টা আর আকাশির সঙ্গমে ফুটেছিলো থোকা থোকা মধুমঞ্জরি। পাটখেতের সারি আর জলাশয়ের নিমগ্নতার মাঝে শরতের মেঘেরা মুখ দেখেছিল। হঠাৎ সমুখে আমার চোখে শান্ত প্রকৃতি জেগে উঠলো, তাকে দেখলাম – এক মেদহীন অনাভরণিত সান্দ্রসঙ্গী নারী, মুখে তার সৌরবিভা; নারী-নাকি প্রকৃতির হেঁয়ালি খেয়াল !! যেন উঠে এলো সমুদ্র থেকে এইমাত্র – মারমেইড, তার ভরহীন দুলকি চলন আর বাতাসে শাঁখের মৃদু ধ্বনি পৃথিবীর সমস্ত চিত্রকলাকে বিপন্ন করে তুললো। লিওনার্ড আর পিকাসোর তুলি থেমে গেলো, রঙ মুছে গেলো গোধূলির, জলাশয় ভেঙে প্রস্ফুটিত হলো বিচিত্র পদ্মকোরক। তার পশ্চাদচারিণী কেশ বাতাস কাটে আর সভ্যতা ফিরে যায় অগ্নিঝড়ে, তার নগ্ন চরণপল্লব মুদ্রা তুলে অগ্রসর সমুখে- হয়তো জীবনানন্দ হেঁটেছিলো হাজার বছর তার সাথে! খসে পড়া আঁচলে আলতো জড়ানো শীর্ণ কোমর দুলে ওঠে কচি শাখার মতো। সে কোন অবিনশ্বর পৃথিবীতে ভেসে চলে তার পৃথিবীকে ভুলে? কতোদূরের পথচারী সে নারী আমি জানি না, জানি না কোন তৃষ্ণার্ত  আবাদভূমির সুক্ষ্ম ফাঁটল সে ধরে আছে তার ঈষৎ উন্মুক্ত দুঠোঁটে, তার চোখে কোন সুদূরের নেশা! তার বক্ষে দারুচিনির সৌগন্ধ্য , পুষ্ট হৃদয়ে প্রজন্মের শৈল্পিক বিন্যাস। নারী চলে, আমি চলি- নারী হারিয়ে যায় আমার সীমানা থেকে তবু সে জেগে থাকে অন্তহীন বেদনাভারে।

 

অলৌকিক শব্দ 

———————–

আচমকা নিস্তরঙ্গের সমতল পৃষ্ঠে মৃদু ঢেউ লাগে এক অলৌকিক শব্দ-গুঞ্জনধ্বনির। শব্দগুলো দলছুট, একবার গুনগুনিয়ে মিশে যায়, আবার অন্য একটা, এক পলকা বাতাসের শাঁই শাঁই, তারপর সব শুনশান। শব্দহীন সঙ্গীতের লহরী বেজে ওঠে ঘড়ির কাঁটা মধ্যমায় মিলিত হতেই, ঠিক তখনই বাতাসের আগে দৌড়ে যায় হরিলাল, সবুজচোখ মেয়েটি কাশ্মীরের লেকে ডুব দিয়ে নিজের লিঙ্গ বদলে নেয় আর কনফারেন্সে আগামীকালের গল্প শোনায় অন্য একজন। অন্ধ ভিখারি মেয়েটি সারাদিনে উপার্জন করে দুটো ফুটো পয়সা। সবচেয়ে সুন্দরী যে, তার চোখেও মধ্যরাতে বৃষ্টি নামে। কেউ কখনো বুঝতে চায়নি তার কষ্টের কথা। আয়নাপথ পার হয়ে আসা কিশোরীর চোখে থাকে শিল্পবোধ। কী করি বলতো? এসব পড়তে পড়তে আমি একজনম বয়ে চলা জীবনবোধের মুখোমুখি হই। ওদের অনস্তিত্ব আমার থাকাকে দোদুল্যমান করে তোলে। আমি নিজেকে খুঁজতে খুঁজতে হাজারও শব্দের গুঞ্জনের ভেতর ঢুকে পড়ি, মধ্যরাতের শিশুরা তখন জেগে থাকে আমার দেয়াল জুড়ে।

====================