You are currently viewing লিটল ম্যাগাজিনের সক্ষমতা ও অক্ষমতার দ্বন্দ্ব / নাহিদা আশরাফী

লিটল ম্যাগাজিনের সক্ষমতা ও অক্ষমতার দ্বন্দ্ব / নাহিদা আশরাফী

লিটল ম্যাগাজিনের সক্ষমতা ও অক্ষমতার দ্বন্দ্ব

  নাহিদা আশরাফী

পুঁজিবাদী সভ্যতার একটা নির্মম আর নিষ্ঠুর চেহারা রয়েছে। তার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে লিটল ম্যাগাজিন বা ছোট কাগজের নিত্যযুদ্ধ। ছোট কাগজ সঙ্কটে ও সম্ভাবনায় কতটা পিঠ সোজা রেখে , নৈতিকতা বিসর্জন না দিয়ে চলতে পারে তা ভাবার সময় পেরিয়ে গেছে। এ কথার মানে এমন নয় যে লিটল ম্যাগের সক্ষমতা বা তার অক্ষমতা নিয়ে নতুন কিছু বলবার নেই। তবে তার টিকে থাকার প্রাণান্তকর লড়াই যে সকল যুগেই ছিলো, আছে এবং থাকবে এবং তাকে এই অগ্নিপরীক্ষায় সর্বকালেই উত্তীর্ণ হতে হবে তা নিয়ে দ্বিমত করবার অবকাশ নেই বোধকরি।

সাহিত্যের সৃজনশীলতাকে দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ, নব চিন্তা ও চেতনায় অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সঞ্চার, ব্যক্তি ও সামগ্রিক মূল্যবোধের মূল্যায়ন, তারুণ্যের চিৎকারকে স্বাগত জানানো, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধশক্তি হিসেবে নিজের অবস্থানকে পরিস্কার উপস্থাপনই ছোট কাগজকে আলাদা করে অন্য সব কিছু থেকে ৷ সংঘাতে ও সংগ্রামে লিটল ম্যাগকে সাহিত্যের অস্ত্রাগার বলেই ভাবি আমি।

সক্ষমতা ও অক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখতে গিয়ে যে প্রশ্নগুলো সামনে এসে দাঁড়ালো তা হল-

১- লিটল ম্যাগ আন্দোলন মূলত কোন দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে?

২- লিটল ম্যাগ কী প্রতিষ্ঠানবিরোধী হতে হতে ব্যক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে? যদি তাই হয় সেক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা কী?

৩- সৃজনশীলতার পাশাপাশি সামগ্রিকের মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাজনৈতিক চেতনা নিয়ে লিটলম্যাগের করনীয় কী?

৪- লিটলম্যাগকে চিরস্থায়ী করার প্রবণতা তার চরিত্রের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?

এমন হাজারো প্রশ্ন আছে। সেই  ভিড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে। তাতে যে লিটলম্যাগ এর সক্ষমতা ও অক্ষমতার জায়গাগুলো পুরোপুরি চিহ্নিত হবে এমন দাবী না করা গেলেও কিছুটা ধারণা করা যাবে অন্তত। তবে প্রশ্নগুলোর সদুত্তর আমি কেন, এককভাবে কারো পক্ষেই খুঁজে বের করা সম্ভব নয় । মত ও পথের সব বাঁক যে সবার চোখে স্পষ্ট হবে এমনও  নয়। সম্মিলিত আলোচনা ও ছোট কাগজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বৃত্তান্ত পর্যালোচনায় হয়তো কিছুটা অনুধাবন করা যাবে।

লিটলম্যাগের সংজ্ঞা কী? কেন একে লিটলম্যাগ বলা হয়? আকারে ছোট তাই বলে? নাকি নিয়মিত প্রকাশিত হয় না বলে? নাকি প্রচার সর্বস্ব নয় বলে?  ম্যাগাজিনের সংক্ষেপিত রূপ যে ম্যাগ এটা নতুন করে বলবার কিছু নেই কিন্তু এর সাথে লিটল কেন যুক্ত হল তা জানতে একটু পেছনে ফিরতে হবে। আঠেরো  শতকের শেষ দিকে কিংবা উনিশ শতকের প্রথম দিকে আর্থিক যাঁতাকলের বিরুদ্ধে গিয়ে, প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখার বিপরীতে গিয়ে  নতুন চেতনা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে প্রকাশ করার মাধ্যম হিসেবে যার আবির্ভাব হল তাকেই লিটল ম্যাগ বা ছোট কাগজ  অভিধায় অভিহিত করা হল।

বারুদভরা লিটলম্যাগ মূলত কোন দিকে যাচ্ছে? ইতিহাস ঘাটলে লিটলম্যাগ এর যে লালনভূমি সেখান থেকে কিছুটা নয় আমি বলি বেশ খানিকটাই সরে এসেছে। বাজার ভর্তি বাণিজ্যিক কাগজের  ভিড়ে  লিটলম্যাগ তার স্বরূপ ও স্বভাব হারাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানিক তাবেদার ও সাহিত্য ইজারাদার এর সংখ্যা বাড়ছে। ফলত তারুণ্যের যে সাহিত্যপ্রবণতা তা রুগ্ন আকার ধারণ করে প্রতিষ্ঠানের তোষামোদি ও প্রচার প্রপাগান্ডার স্থুলতায় চাপা পড়ে ভগ্ন ও মৃতপ্রায় শাখায় পরিণত হয়েছে।  আদর্শিক চেতনা ও মননশীল চর্চার নিশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। আশার কথা এটুকুই যে, এর মধ্যেও ছোটকাগজের চর্চা নিভু নিভু  করে হলেও জ্বলছে। আঠেরো শতকের মাঝামাঝি প্রকাশিত আমেরিকার বোস্টন থেকে  প্রকাশিত, যৌথভাবে রেলফ ওয়ালডো এমারসন ও সারা মার্গারেট সম্পাদিত  ‘ডায়াল’ (১৮৪০-৪৪), বিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার শিকাগো থেকে প্রকাশিত ও কবি হেনরিয়েট মনরো এবং কবি এজরা পাউন্ড (বিদেশি সম্পাদক)  সম্পাদিত ক্ষুরধার লিটলম্যাগ ‘পোয়েট্রিঃ এ ম্যাগাজিন অব ভার্জ'(১৯১২) জাপান থেকে প্রকাশিত ‘গারাকুতা বুনকো'(১৮৮৫), ভারত উপমহাদেশে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গদর্শন’, অবিভক্ত বাংলায় কলকাতার ‘কল্লোল'(১৯২৩), বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা'(১৯৩০), পঞ্চাশের দশকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ এর ‘কৃত্তিবাস’, হাংরি জেনারেশন এর ‘হাওয়া ৪৯’ ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘মিজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা’ ‘সমকাল’ ‘স্যাড জেনারেশন’ এরকম আরো অনেক নাম বলা যায় যারা লিটল ম্যাগ এর আদর্শিক চেতনাকে ধারণ ও লালন করেছেন।
প্রশ্ন এসে যায়  সেই চেতনা এখন কেন বিলুপ্তপ্রায়। এটা কী প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখায় লিটল ম্যাগকে ঢেলে সাজাবার অপচেষ্টায় নাকি তরুণদের সাহিত্যের প্রতি অনিহা। ভাববার বিষয় বোধকরি। এই অপচেষ্টা বা অনিহার কারণ কী? একটা সূক্ষ্ম যোগ কিন্তু রয়েছে। অর্থদেবতার পদতলে ফুল দিয়ে ফল পেলে যাপনের চিন্তা যখন মাথা থেকে কমে যায় তখন সাহিত্যসেবার নাম করে ধরাধামে নিজের নামগীতি গাওয়ানোর একটা ব্যবস্থা তো করা চাই। সে ব্যবস্থার জন্যে প্রথমেই তারা যে কাজটি করেন তা হল তার ঢাক বা ঢোল পেটানোর কিছু মুরিদ বা আশেকান জোগাড়ে নেমে পড়েন। অতঃপর  তাদের লেখা তা কিছু হোক বা নাই হোক জড়ো করে একটা বেশ গালভরা নাম দিয়ে আর তার নিচে সম্পাদক হিসেবে নিজের নামখানা জুড়ে দিয়ে বানিয়ে ফেলেন তথাকথিত লিটলম্যাগ। যেহেতু অর্থ ও ক্ষমতার পর্যাপ্ত যোগান রয়েছে , দরকার শুধু নিজেকে সম্পাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সেক্ষেত্রে বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে এইসব জড়ো করা আর জুড়ে দেয়া গালভরা নামের পত্রিকাটি বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে সয়লাব হয়ে যায়। দর্জি দোকান থেকে দূরদর্শন, মুদি থেকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কোন কিছুর বিজ্ঞাপনই বাদ যায় না। ঘরের পোষা বেড়ালকে যেমন আদর করে নাম দেয় টাইগার, লায়ন  ; এসব পত্রিকাকেও তারা আদর করে ডাকে লিটল ম্যাগ, ছোট কাগজ। কিন্তু লিটল ম্যাগ এর সত্যিকারের ব্যঘ্ররূপ বা সিংহের হুঙ্কার যদি এরা শুনতে বা দেখতে পেতো তাহলে এসব নামসর্বস্ব পত্রিকাকে লিটল ম্যাগ বলার আগে  অন্তত দশবার ভাবতো। বাংলাদেশ সরকার “প্রতি বাড়ি একটি খামার’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছিলো একবার। সাহিত্য পত্রিকাগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয় প্রতি লেখক একটি সাহিত্য পত্রিকা। খামচা দিয়া দশটা কবিতা, পাঁচটা প্রবন্ধ আর তিনটা গল্প ছাপিয়ে তারা সম্পাদক বনে যান। এদের হিসেব শুরু করলে তো আর ছালচামড়া থাকবে না। ক’জন সম্পাদকের বুকের পাঁটা আছে লেখা ফেরৎ দেবার? রি রাইট করতে বলার? সব তো তেলের ড্রামে গড়াগড়ি খায়। এসবের লম্বা  ফিরিস্তি দেয়া  যায়। নিজের ভিটা  নিজে ঠিক না রাখলে মানুষ ঘুঘু নিয়ে হাজির হবেই। তার উপরে আরো আছে সংকলকদের হম্বিতম্বি। সব সংকলকই এখন সম্পাদক বনে যাচ্ছেন। তার মানে লেখক হয়ে ঠিক পোষাচ্ছে না। ব্যাপারখানা তাই তো? এবার লেখক, সংকলক বান গ্যায়া সম্পাদক। লাগাও তালিয়া।

দেশ পত্রিকায় ‘সাহিত্যপত্র’ প্রবন্ধে বুদ্ধদেব বসুর কথা এখানে স্মরণ না করলেই নয় –
“সাহিত্যের পত্রিকা- তার মানে সৃষ্টিশীল, কল্পনাপ্রবণ সাহিত্যের। যে সব পত্রিকা সাহিত্য বিষয়ক জ্ঞানের পরিবাহক, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব বা পাঠমূলক গবেষণায় লিপ্ত, দৃশ্যত কিছু মিল থাকলেও সাহিত্যপত্রের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তারা বিশেষজ্ঞের পত্রিকা, জ্ঞানের একটি বিশেষ বিভাগে আবদ্ধ, আপন সম্প্রদায়ের বাইরে তাদের আনাগোনার রাস্তা নেই। কিন্তু সাহিত্যপত্রের দরজা খোলা থাকে সকলেরই জন্য, কেননা সাহিত্য যেখানে সৃষ্টি করে সেখানে তার আহ্বানে কোনো গণ্ডি নেই, যদিও সে আহ্বান শুনতে পায় কখনোবা পনেরো জন কখনো পনেরো লক্ষ মানুষ। আজকের দিনে যাদের কণ্ঠ লোকের কানে পৌঁছাচ্ছে না, যারা পাঠকের পুরনো অভ্যাসের তলায় প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে, তাদের এগিয়ে আনা, ব্যক্ত করে তোলাই সাহিত্যপত্রের কাজ। এর উল্টোপিঠে আছে যাকে বলে অম্নিবাস ম্যাগাজিন, সর্বসহ পত্রিকা; তাদের আয়তন বিপুল, বিস্তার বিরাট, সব রকম পাঠকের সব রকম চাহিদা মেটাবার জন্য ভুরি পরিমাণ আয়োজন সেখানে মাসে মাসে জমে ওঠে। বাছাই করা পণ্যের সাজানো গুছানো দোকান নয়, পাঁচমিশেলি গুদোম-ঘর যেন; সেখানে রসজ্ঞের  কাম্যসামগ্রি কিছু হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে, কিন্তু বিজ্ঞাপনের গোলমাল পেরিয়ে বর্জাইস অরের অলিগলি বেয়ে সেই সুখধামে পৌঁছানো অনেক সময়ই সম্ভব হয় না- পাতা ওল্টাতেই শ্রান্ত হয়ে পড়তে হয়। এসব পত্রিকা তাদেরই জন্য যারা নির্বিচারে পড়ে, শুধু সময় কাটাবার জন্য পড়ে- আর সংখ্যায় গরিষ্ঠতম তারাই। এদের মধ্যে উৎকৃষ্ট লেখাও থাকে না তা নয়, কিন্তু দৈবাৎ থাকে, কিংবা নেহাৎই লেখক বিখ্যাত বলেই থাকে; সেটা প্রকাশ নয় প্রচার মাত্র; তার পেছনে কোনো সচেতন সাহিত্যিক অভিপ্রায় থাকে না। এসব পত্রিকা শুধু সমাবেশ ঘটায়, সামঞ্জস্য সাধন করে না, যা সংগ্রহ করে তার ভেতর দিয়ে কিছু রচনা করে তোলার চেষ্টা এদের নেই; শুধু কালস্রোতে ভেসে চলা এদের কাজ; কোনো নতুন তরঙ্গ তোলা নয়।”

এবার আসি দ্বিতীয় প্রসঙ্গে। ধরুন  প্রচারসর্বস্ব কিছু মানুষ নিজেকে আরো বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু করে তুলতে ও নিজেকে একজন সম্পাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একটা মোটাতাজা সাহিত্য পত্রিকা বের করলেন। তার গুটিকয়েক সাগরেদ, অনুসারী ও গুণগ্রাহীর লেখা অন্তর্ভুক্ত করে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে পত্রিকার প্রচার করলেন। আমি বলছি না তাতে একেবারেই সাহিত্য থাকে না। তবে যেটুকু থাকে তাতে ওরকম পত্রিকা দেখলে আমার সোনার জলে ধোয়া নকল গয়নার কথা মনে পড়ে। এই মনে পড়ায় তাদের, মানে যারা বেশ বুক ফুলিয়ে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের পশম আমি ফালাই না।’ আর সেই হুঙ্কারে মিউ মিউ করা কিছু কুসাহিত্যিক (চাইলে কেউ কু বাদ দিয়ে ধামাধরাও পড়তে পারেন) বলে ওঠেন, ‘চমৎকার সে চমৎকার / হুজুরের মতে অমত কার?’ তাদের কিছুই যায় আসে না জানি। তবু আপনা মাঝে শক্তি ধরে আমি তো বলবোই এরা সবই কালপরম্পরায় প্রতিষ্ঠানের তাবেদার নইলে প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রভাবিত সাহিত্য ব্যবসায়ী। তাই চাইলেও গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে এদের কিচ্ছুটি করার নেই। থাকবেও না কোনদিন। আত্মপ্রচারে এরা সাহিত্য পত্রিকার আশ্রয় নেয়। দলবাজি আর গলাবাজি করে সাংগঠনিক ঢোলে পুরো সাহিত্য পাড়া একাকার করে ফেলে। ফলত তারুণ্যের যে মহাশক্তি নিজেদের সৎ ও সাহসী মনোভাব নিয়ে লিখতে বসেন তারা বুঝে উঠতে পারেন না; লিখবেন নাকি দুহাতে কান ঢাকবেন। শুধু কী তাই? সাহিত্যের মেইন স্ট্রিমের লেখকদের এরা ভাসুর মনে করে নাম মুখে নিতে চান না। এদের সামনে সেই সব লেখকের নাম কেউ যদি ভুলক্রমেও বলে ফেলেন তাহলে দাত খিচুনির চোটে দাতের প্রকৃত রঙ বেরিয়ে পড়ে।

লিটলম্যাগ কোন সুরে কথা কইবে। জন্মেই যে সুতীব্র চিৎকারে জানান দেয় আজন্মের ক্রোধ , শিশুকাল অতিক্রম করতে করতেই যে ঘোষণা দেয় নবতর জীবনবোধের, কৈশোরে যে প্রতিবাদী আর দুর্দান্ত আঠেরোয় যে বুর্জোয়া মানসিকতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মোহ আর মাৎসর্যের থোড়াই কেয়ার করে সত্য ও সৃজনের গান গায়। যাকে ক্রফোর ‘প্ল্যানড ভায়োলেন্স’ এর সাথে তুলনা করা চলে। চর্বচূষ্যপেয় কর্পোরেট বা ভোগবাদী পত্রিকা যখন তালিয়া বাজানো লেখক তৈরি করে লিটল ম্যাগ সেখানে সাহস, সময় ও স্বাতন্ত্র্য তৈরি করে। আবদুল মান্না সৈয়দ এর মত করেই বলতে হয়, ‘ লিটল ম্যাগাজিন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একটি ব্যাক্তিগত সুঁড়িপথ’। এই সুঁড়িপথ দিয়েই স্বরচিত সুরের আলো ও স্বরের গাম্ভীর্য চোখে পড়ে। স্থুল রীতি আর দায়বদ্ধতায় অবিশ্বাসী পত্রিকা যেখানে প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছে মাথা বন্ধক রাখে সেখানে লিটল ম্যাগ জীবনের গান গায় প্রতিবাদের তানপুরায়। এই উদ্ধত সাহস, ঋদ্ধ সৃজনশীলতা, প্রথা ভাঙার শক্তি আর নৈতিকতার স্বরলিপি যারা আয়ত্বে আনতে পারেন না তাদের লিটল ম্যাগ করার যোগ্যতা ও অধিকার কোনটাই নেই বলেই মানি। এ প্রসঙ্গের ইতি টানবো নিসর্গ সম্পাদক সরকার আশরাফের ‘লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্র-সন্ধান’ প্রবন্ধের কয়েকটি লাইন তুলে ধরে-
‘ ‘লিটল ম্যাগাজিন হচ্ছে সর্বশেষ মানুষের কন্ঠস্বর’ পরবর্তী প্রজন্মের কন্ঠস্বরও। এখানে পশ্চাৎপদতার কোন সুযোগ নেই। ক্রমাগত ভাঙচুর, নিরীক্ষাপ্রবণতার মধ্যে স্থবির পুরনো দর্শন জায়গা পায় না।’

লিটলম্যাগ এ তারুণ্যের ছোঁয়া ও আলো না থাকলে তাকে কী লিটলম্যাগ বলা যায় । তবে হ্যাঁ এই ‘ছোঁয়া’ আর ‘আলো’র ব্যাখ্যাটি জরুরি মনে করছি। জনাকয়েক ছেলেমেয়ের নিজের মত লিখবে বলে, আত্মদর্শনের ঐশ্বর্য প্রকাশ করার বাসনা নিয়ে যার যার মাটির ব্যাংক ভেঙে যা পেলো এনে জড়ো করে নিজেদের মত একখানা কাগজ বের করলো। সে কাগজের ফর্মা গুনে হতাশ হলেও ফর্ম আর ফিউচার নিয়ে আপনার মনে আলো জাগবেই। এই আলোর নাম আশা। আর সেই আশার হাত ধরে ধরে আপনি তাকে পৌঁছে দিলেন আরো কিছু হতাশ-বিতৃষ্ণ-বিচ্ছিন্ন অন্তরে। এই ভগ্নপ্রায় হৃদয়গুলো আলো পেলো। এই সব উজ্জ্বল তরুণদের জিজ্ঞেস করে দেখুন আমি নিশ্চিত তাদের দশজনে দু’জন অন্তত পাবেন যারা বড় পত্রিকার তাবেদারি বা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের চাহিদা মাফিক লেখা লেখেন না। তারা নিজের স্বস্তিতে লেখেন। কারন তারা জানেন লেখা নিজ আত্নার প্রশান্তির জন্যে। তারমানে এই দু’জন অন্তত পাওয়া গেল যারা সাহিত্যের মহাকাল ছোঁয়ার জন্যে নিরুত্তাপ ও নিরুদ্বিগ্নভাবে লিখে যান।

এবার সমস্যার কথা বলি। ওই যে দশজনের বাকী আটজন সেসব তরুণের বুকের পাটা নেই এইসব পণ্যপত্রিকার সম্পাদকদের মুখের উপর না বলে দেবার। এরা নিজের ব্যক্তিত্বের কাছে, নৈতিকতার কাছে পরিস্কার নয়। পত্রিকার পাতায় নিজের নামখানা দেখার স্বপ্নে বিভোর এইসব লেখকের সাধ্য নেই সম্পাদকের মুখের উপর বলার, “জোর করে আমাকে দিয়ে লেখাতে পারবেন না।“ এইসব নামধারী লেখকরাই তো এই তেলবাজ সম্পাদক তৈরির বড় কারখানা। আর লাগে?  আমার লেখা ছাপতেই হবে। নিজের আত্মসম্মানবোধ আর লেখার প্রতি যথেষ্ট কনফিডেন্স যাদের নেই তাদের  চেয়ে বড় কারখানা আর কই পাবেন? আমি এইসব নামধারী ব্যাবসায়ী সম্পাদকদের দায়ী করার আগে সেই লেখকদেরকেই দোষারোপ করবো।  এরকম সম্পাদককে লেখা কেন  পাঠাতে হবে? লেখকরা নিজেই নিজের আত্মমর্যাদা রাখতে জানে না। যে বন্ধুর পথে চলে পা রক্তাক্ত করে, দিনশেষে শুকনো, রুক্ষ আর রিক্ত মুখ সন্ধ্যের অন্ধকারে ঢেকে পেছনের দরজা দিয়ে বাড়ি ঢোকে সেই মুখেই লিটল ম্যাগ এর নির্মোহ উচ্চারণ মানায়। জৌলুসের জগতে যখন নিজেরাই আপোষ করে বসে থাকি তখন লিটল ম্যাগ শিল্প ও সাহিত্যের বাজারে এক শো  পিস মাত্র ।

এবার আসি সম্পাদকদের কথায়। লিটলম্যাগ এর একজন সম্পাদকের যে তুখোড় প্রজ্ঞা,যে নিবিড় চৈতন্যবাদ, নিজের ক্রিয়েটিভ জোনকে বলা যায় এক প্রকারে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দেবার সাহস থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি তা এখন বিরল। সুবিধাভোগী, মধ্যস্বত্বভোগী, আর বুর্জোয়া মানসিকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে মানুষটা নতুন আলোর যাত্রাপথ তৈরি্র কারিগর, তিনিই  তো হতে পারেন ছোট কাগজের প্রকৃত সম্পাদক। কিন্তু ভাবুন সেই লিটলম্যাগ যখন মেধাহীন, আস্থাহীন, চেতনারহিত, বুলিসর্বস্ব সম্পাদকের হাতে পড়ে তখন সে আর আন্দোলন না হয়ে হয়ে যায় আন্দোলনের ভাষ্কর্য। সমুদ্রের ঢেউ ফ্রেমবন্দী করে এরা যেমন গৃহসজ্জা করেন লিটলম্যাগ নামটিকেও তদ্রূপ ফ্রেমবন্দী করে এরা সাহিত্যের জগৎ সাজাতে চেষ্টা করেন। বিভ্রান্তি আর বিজ্ঞাপনের ধান্ধায় দিনাতিপাত করা সম্পাদক আর এদেরই চামচাগিরি করে লেখক হওয়া কিছু গৌণ ও নিম্নরুচির লেখকের হাতে যখন লিটলম্যাগ চালিত হয় তখন যে তার পরিণতি কী হয় ভাবলেই শিউরে উঠি। বাধাহীন, ভয়হীন উচ্ছ্বসিত বুনোফুলে কে যেন ঘাস কাটার মেশিন চালিয়ে নিজেদের আয়তন ও দৈর্ঘ্য মাফিক ছেটে নিলো। মোদ্দাকথা চাইলেই তুমি লকলকিয়ে বেড়ে উঠবে সে সুযোগ ও শক্তি তোমাকে দেয়া হবে না। মোদ্দাকথা কাঁটা ,ডালপালা ছেটে এমন করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যেন চাইলেই হাত বাড়িয়ে ফুলটি তুলে টাই পিনে গুজে নিতে পারো।
অথচ লিটলম্যাগ বলতেই আমরা বুঝি,

‘কাটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে
দুঃখ বিনা সুখলাভ হয় কী মোহিতে।’

আরো আছে। যেমন-

১-
লেখা যা থাকে তার চেয়ে থাকে বিজ্ঞাপন বেশি। কেন?  কারণ একটাই । আরে বাবা এটাই তো তাদের আয়ের উৎস ।

২-
বেশিরভাগ খবরের কাগজের সম্পাদকরাই এখন ছোট কাগজের সম্পাদক । ফলত জাতীয় দৈনিকের কৃপায় তাদের ছোট কাগজের মিডিয়া কাভারেজ পায় দারুণভাবে ।

৩-
প্রকাশনা সংস্থাগুলোতে কাজ করছে এমন কিছু কর্তাব্যক্তিরাও এখন লিটলম্যাগ – এর সম্পাদক ।

তাহলে এই যে মুষ্টি আঁকড়ে মুষড়ে পড়ে থাকা বুনোফুলের অবস্থা কী দাঁড়ালো? অর্থ নামক, প্রতিষ্ঠান নামক ভয়ঙ্কর ভগবানের পাল্লায় পড়ে এদের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। এস্টাবলিশমেন্টের আশা বৃথা। এবার কেউ নিশ্চয়ই চোখ দইবড়া (সর্বদা ছানাবড়াই হতে হবে এমন তো কথা নেই।) করে ভাবছেন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার গপ্পো শোনাচ্ছো আবার এস্টাবলিশমেন্টের কথা বলছো। তাহলে তো যেই লাউ সেই কদুই হলো। না মশায়, তা হল না। এস্টাবলিশমেন্ট আর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এক ব্যাপার নয়৷ আমি যদুরাম বললে আপনারা বিরক্ত হতে পারেন। তারচেয়ে চলুন ছোট কাগজ আন্দোলনের এক অনন্য পথিকৃৎ মলয় রায়চৌধুরী এর কাছে শুনে আসি এ সম্পর্কিত তার ধারণা। গেওর্গে আব্বাস এর সাক্ষাৎকারে এ সংক্রান্ত করা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন-

‘এস্টাবলিশমেন্ট শব্দটির বাংলা ”প্রতিষ্ঠান” কেন যে করা হয়েছে কে জানে? এস্টাবলিশমেন্ট বলতে কোন প্রতিষ্ঠান বোঝায় না, অরগানাইজেশন বোঝায়। এস্টাবলিশমেন্ট একটি অ্যাবস্ট্যাক্ট ব্যাপার। প্রতিষ্ঠান শব্দটি দ্বারা ঠিক কোলাসা হয় না। এস্টাবলিশমেন্ট এর টোটাল পাওয়ার স্ট্রাকচার এর বিরোধীতা করলেই বিপদ ঘনিয়ে আসবে। জেলে পুরে রাখবে, নাই করে দেবে। প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা করলে আর কী করবে? কিছুক্ষণ চেচামেচি করবে। এস্টাবলিশমেন্ট হচ্ছে সিস্টেমেটিক পাওয়ার স্ট্রাকচার, একটা সমাজের। এসটাবলিশমেন্ট বলে একটা অ্যাক্ট আছে যা দোকান খোলার জন্য প্রয়োজন হয়। ঐটা ট্রান্সলেট করার সময় প্রতিষ্ঠান আইন করা হয়েছিল, তা থেকেই শব্দটি এসে গেছে। সে যাই হোক, আমি অনেকের সঙ্গেই আলাপ করেছি শব্দটি নিয়ে। কেউ বলেছেন, ব্যবস্থা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক, আসলে স্পেসিফিক শব্দ তৈরি হয়নি এখনও। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় বলতেন- পশ্চিম বাংলায় চারটি পাওয়ার স্টেশন আছে। ঐ চারটি মিলিয়ে হলো এস্টাবলিশমেন্ট। এক. পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দুই. আনন্দবাজার। তিন. রামকৃষ্ণমিশন। চার. ব্রাহ্মণ সমাজের ঘাটি শান্তিনিকেতন- বিশ্ব ভারতী। এই মিলিয়ে পশ্চিম বঙ্গের স্টাবলিশমেন্ট।’

এস্টাবলিশড হবার আগেই ‘গুটিয়ে যাও। গুটিয়ে গেলেই সুখ। রোদ দুপুরে পুড়বে না আর বুক।’ এভাবেই বারবার লিটল ম্যাগ গুটিয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায়। আর  তাবেদারীর এই তপ্ত রোদে ঝলসে ওঠার চেয়ে এমন অক্ষমতার দুঃখে পুড়ে যাবার শান্তি ঢের । তবু আশা থাকে ,তবু স্বপ্নের বীজ হাতে থাকে । একদিন কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণে আবার সলতে পাকানো যাবে, আবার এতটুকু মাটির সন্ধান পেলে স্বপ্নের সেই বীজটি বপন করা যাবে। এক টুকরো ছেঁড়া পাল পেলেও তার ভরসায় উত্তাল জলধি পারি দেবার সাধ জেগে রইবে মনে। এ যেন বুদ্ধদেব বসুর সেই কথারই প্রতিধ্বনি ।

“লিটল ম্যাগাজিন বললেই বোঝা গেল যে জনপ্রিয়তার কলঙ্ক একে কখনো ছোঁবে না , নগদ মূল্যে বড়োবাজারে বিকোবে না কোনোদিন, কিন্তু- হয়তো কোনো একদিন এর একটি পুরোনো সংখ্যার জন্য গুণীসমাজে উৎসুকবার্তা জেগে উঠবে। সেটা সম্ভব হবে এই জন্যেই যে, এটি কখনো মন যোগাতে চায়নি, মনকে জাগাতে চেয়েছিলো। চেয়েছিলো নতুন সুরে কথা বলতে। কোনো এক সন্ধিক্ষণে, যখন গতানুগতিকতা থেকে অব্যাহতির পথ দেখা যাচ্ছে না, তখন সাহিত্যের ক্লান্ত শিরায় তরুণ রক্ত বইয়ে দিয়েছিলো- নিন্দা, নির্যাতন বা ধনক্ষয়ে প্রতিহত না হয়ে। এই সাহস, নিষ্ঠা, গতির একমুখিতা, সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা- এইটেই লিটল ম্যাগাজিনের কুলধর্ম। এর এটুকু বললেই অন্যসব কথা বলে হয়ে যায়, কেননা এই ধর্ম পালন করতে গেলে চেষ্টা করেও কাটতি বাড়ানো যাবে না, টিকে থাকা শক্ত হবে, আকারেও মোটাসোটা হবার সম্ভাবনা কম। অবশ্য পরিপুষ্ট লিটল ম্যাগাজিন দেখা গেছে- যদিও সে সময়ে ও-কথাটার উদ্ভব হয়নি- যেমন এলিয়টের ‘ক্রাইটেরিয়ন’ বা আদিকালের ‘পরিচয়’। কিন্তু মনে রাখতে হবে তারা ত্রৈমাসিক ছিলো; সমসাময়িক গণসেব্য মাসিক পত্রের তুলনায় তারা যে ওজনে কত হালকা তা অল্প একটু পাটিগণিতেই ধরা পড়বে। ভালো লেখা বেশি জন্মায় না, সত্যিকার নতুন লেখা আরো বিরল; আর শুধু দুর্লভের সন্ধানী হলে পৃষ্ঠা এবং পাঠক সংখ্যা স্বতঃই কমে আসে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলি সাহিত্যপত্র, খাঁটি সাহিত্যের পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন তারই আরো ছিপছিপে এবং ব্যঞ্জনাবহ নতুন নাম।”

(আপাতত আমার কথা ফুরাল। তবে আমার কি মনে হয় জানেন লিটলম্যাগ নিয়ে লিখতে গেলে  প্রতিবার লেখার শেষে “চলবে” অথবা “টু বি কন্টিনিউড” টাইপ কিছু লিখে দেয়া ভালো। কারন লিটলম্যাগ এমন এক মহাসমুদ্রের নাম যার জলের ফোটা একবারে গুনে ফেলবেন তা  কী করে  হয় ,বলুন? )

 

নাহিদা আশরাফীঃ লেখক, সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রকাশিত বই-
★গল্প-
(১) মায়াবৃক্ষ(একাত্তর প্রকাশনী -২০১৬)
(২) জাদুর ট্রাঙ্ক ও বিবর্ণ বিষাদেরা(জলধি – ২০২১)
(৩) ঝুলবারান্দা তিনটি মাছ আর একটি বিন্দুবর্তী জলাশয় (২০২২)
★কবিতা-
১- শুক্লা দ্বাদশী (বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব-২০১৪)
২- দীপাঞ্জলি(জাগৃতি -২০১৫)
৩- এপিটাফ (কুঁড়েঘর -২০১৫)
৪- প্রেম নিয়ে পাখিরা যা ভাবে- (পরিবার পাবলিকেশন্স – ২০১৮)
৫- Tenets of sadness (Bilingual book of poetry) (পরানকথা-২০২০)
★সম্পাদিত গ্রন্থ –
১- মুক্তির গল্পে ওরা এগারোজন (মুক্তিযুদ্ধের গল্প সংকলন)
(পরিবার পাবলিকেশন্স – ২০১৭)
২- বিজয় পুরাণ – (বিজয়ের গল্পসংকলন- ২০২০)( বাংলাপ্রকাশ)
৩- রুদ্ধ দিনের গল্প ( অতিমারীর গল্প সংকলন, ২০২১ জলধি)
গবেষণাগ্রন্থ –
১- বাংলার বেগম ( বাংলাপ্রকাশ-২০২১)
★সম্পাদক- জলধি
ইমেইল- nahidaashrafi.na@gmail.com