You are currently viewing স্বাধীনতার স্বপ্ন

স্বাধীনতার স্বপ্ন

 

স্বাধীনতার স্বপ্ন ২০২৪

যেকোনো জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস জাতির গৌরবের ইতিহাস। জাতির অস্তিত্ব ও জাতিসত্তা সুরক্ষা এবং বিকশিত করার ক্ষেত্রে এসব লড়াই সংগ্রাম জাতির ভবিষ্যত গতিধারা নির্ণয়ে গভীর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। উপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বিশ্বের দেশে দেশে সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াই বিশ্বের ইতিহাসে এক গভীর ছাপ ফেলেছে এবং অসংখ্য স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটেছে। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। সেই আন্দোলনের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে ভারত উপমহাদেশে। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতায় বৃটিশ শাসকগোষ্ঠী উপমহাদেশে দীর্ঘমেয়াদী সংকট জিইয়ে রাখার লক্ষ্যে উপমহাদেশে দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে ভাগ করে শাসনের অপকৌশল গ্রহন করে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভাজন করে দেয়। ফলে ভারত উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় পরিণত হয়। উপমহাদেশের উচ্চবিত্ত মুসলিম ও হিন্দু নেতৃত্বের ক্ষমতার লোভ বৃটিশদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে দেয় এবং বৃটিশ প্রশাসন সুকৌশলে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলাকে আলাদা করে ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।

পূর্ববাংলার মানুষ দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রত্যাখান করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব্বাংলার মানুষের ভেতর ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার কারনে। পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু ভূস্বামীরা পূর্ব পাকিস্তানের ধনসম্পদ লুটপাট করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যেতে থাকে এবং বাঙালীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদমন করতে থাকে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে গড়ে ওঠা আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালীর জাতীয় জাগরণের পথ সুগম করে দেয়। মাতৃভাষার অধিকারের জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী চলমান জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের স্রোতধারায় যুক্ত করার জন্য বাম ও কমিউনিস্ট দলগুলো যথেষ্ট কার্যকর ভুমিকা পালন করে। জাতিদ্রোহী পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত এবং নির্যাতন নিপীড়ন সত্ত্বেও বাঙালীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ক্রমশঃ তীব্রতর হয়ে ওঠে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপ্ন নিয়ে বাঙালী জাতি পাকিস্তানী প্রায়-উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে নিরস্ত্র বাঙালী জাতির উপর সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং একাত্তরেরর ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে বাঙালী নিধন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বিশেষ বার্তার মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বস্তরের বাঙালী স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নয়মাস রক্তক্ষয়ী লড়াই করে ত্রিশলক্ষ প্রাণ এবং দুইলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালী জাতির ইতিহাসে এই প্রথম একটি জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যূদয় হয়।

সারাবিশ্বকে অবাক করে দিয়ে রক্তলাল সূর্য নিয়ে উত্থিত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এই বছর স্বাধীনতা পদক প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চারনীতি বাস্তবায়নে, ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রের সর্বত্র বাংলাভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে, ব্যর্থ হয়েছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তুলে গণতন্ত্রকে নিষ্কন্টক করতে, ব্যর্থ হয়েছে মৌলবাদী ধর্মীয় রাজনীতি প্রতিহত করে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দিতে,  ব্যর্থ হয়েছে শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার নিশ্চিত করতে। সক্ষম হয়েছে এবং হচ্ছে লাগামহীন লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার, সিন্ডিকেট করে মানুষকে তীব্র শোষণ, ভোটচুরি, বিনাভোটে নির্বাচন প্রহসন এবং ৫৭ ধারায় জনগণের টুঁটি চেপে ধরা এবং মৌলবাদীদের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্র হয়ে গেছে সিভিল স্বৈরাচারের চারণভূমি, মগের মুল্লুক।

আমরা এমন রাষ্ট্র চাইনি। একপার্সেন্ট লুটেরাদল লুটেপুটে খাবে আর নিরানব্বুই পার্সেন্ট আঙুল চুষবে তাতো হতে পারে না। এই  অসম রাষ্ট্রব্যবস্থা, ক্ষমতা কাঠামো, সম্পদের বন্টন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীকে করতে হবে। লড়তে হবে ঘরের শত্রু শোষক ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে। কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের অবহেলার শিকার এবারের স্বাধীনতা দিবসের শপথ হোক দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের- শোষণ মুক্তির।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সকলকে জানাই আমদের শুভেচ্ছা।  এই উপলক্ষ্যে আমরা স্বল্প পরিসরে হলেও বিশেষ আয়োজন করেছি। নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো।

 

শুভেচ্ছান্তে।

 

মনমানচিত্র মহান স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা পাঠের আমন্ত্রণ সকলকে।

গল্প 

১। সত্যজিৎ সিংহঃ ক্যাকটাসের ঘ্রাণ

২। জাকিয়া শিমুঃ একাত্তরের কথা

৩। রোকসানা পারভীন সাথীঃ মুক্তির আলোর পথে

৪। লুৎফর রহমান মণ্ডলঃ আবুল সাপুড়িয়ার মজমা

 

প্রবন্ধ

১। আজিজ কাজলঃ উত্তাল মার্চের শক্তি

২। খালেদ হামিদীঃ সাহিত্যের উদার প্রান্তর আন্তর্জাতিকতা ও ঐতিহ্যিক উপাদান

৩।  সুভাশিষ ভৌমিকঃ মুক্তিযুদ্ধের নাটক ও চলচ্চিত্রে তথ্যবিভ্রাট ও আমাদের দায়িত্ব

৪। হিমাদ্রি মৈত্রঃ স্বাধীনতাত্তোর বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা ও আত্মকথন

 

কবিতা

১। মহান স্বাধীনতা দিবসের একক কবিতা

২। রক্তাক্ষরের পঙতিমালা

=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*