মঈনুস সুলতানের দুইটি কবিতা
মনের মৌন ভ্রমর
মেঘের ভাসমান মশারি ছিড়েখুঁড়ে বেরিয়ে আসা গ্রহনরিক্ত চাঁদের দিকে তাকিয়ে সচেতন হই যে, আমার দেবসর্বস্ব সত্ত্বাটি হয়তো নয় সম্পূর্ণ অন্তঃসারশূন্য, এর অন্তঃস্থলে সক্রিয় হয়ে আছে মনের মৌন ভ্রমর। নীলচে–সবুজ পতঙ্গটির তালাশ পাওয়ামাত্র শর্করার সঞ্জীবনীতে নেশাগ্রস্থ মৌমাছিকে তুলে আনি অবচেতনের অতল থেকে। আতশ কাঁচের তলায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিতেই ফুটে উঠে বৃষ্টিবন, জলপ্রপাত, আগুন পাহাড় ও রঙধনু। প্রয়োজন হয়ে পড়ে আরেকটু খতিয়ে দেখার— সহায়তা নেই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের, প্রতিটি স্বতন্ত্র দৃশ্যপট ভেঙ্গে চুরে খন্ড বিখন্ড হতে থাকে, ব্লার ভিশনের ভেতরও ক্ষণতরে দেখতে পাই— নিকোবরের বর্ণাঢ্য কবুতরের পালক, হরপ্পার বেলেমাটিতে পুঁতে থাকা চাকার আকৃতি ও সাঁচির বৌদ্ধস্তূপের কিয়দংশ। প্রতিটি খন্ডিত অবয়ব বিবর্তিত হয় নানাবিধ রেখাচক্রে, তা থেকে ছিটকে ওঠে বর্ণের নীলচে–পার্পোল বিচ্ছুরণ..।
ডাকঘর
বহতা সময়ের অভিঘাতে ফিনফিনে আদ্দির পিরহানে ফিকে হয়ে আসা চা এর দাগের মতো— আমাদের চলমান দিনযাপনের এপিক পরিসর থেকে চিঠিচাপাটির বিষয়–আশয় সম্পূর্ণ মোছে যাওয়ার আগে তৈরী করতে চাই নিজস্ব একটি ডাকঘর। এ জন্য রসদপত্রের বিরাট যোগাড়যন্ত্র সম্পূর্ণ নিষ্প্রোয়োজন। ঢেউটিনের ছোটখাট একটি চারচালা হলেই হবে, সিঁড়ির গোড়ায় থাকবে লোহিত বরণ একটি ডাকবাক্স। বারান্দার এক কোণে বুড়েসুড়ো ডাকহরকরা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে টিপবে খৈনী। ডান দিকের জানালায় বাইফোকাল চশমার ফাঁকে পোস্টমাস্টার ঘাঁটবে লেফাফা, এরোগ্রাম ও ডাকটিকিট। বাম দিকের জানালায় দেখা যাবে ইউনিফর্ম পরা পিয়ন খটাখট মেরে চলছে সিলমোহর। একটি টেলিগ্রাফ যন্ত্র থাকলে দ্রুত যোগাযোগে সুবিধা হয়। আর যদিবা ভাগচক্রে এ ডাকঘরে জোটে আমার একটি চাকুরি, টেলিগ্রাম ক্লার্ক হিসাবে আমি মেতে থাকবো টেরে টক্কায়, রুখকাশুকা বৃক্ষের মতো বর্ষার সম্ভাবনায় অপেক্ষা করবো একটি বার্তার।
*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*=*