You are currently viewing বেজন্মা রাস্তায়/ ইমতিয়ার শামীম

বেজন্মা রাস্তায়/ ইমতিয়ার শামীম

বেজন্মা রাস্তায়

ইমতিয়ার শামীম

রেলক্রসিং পেরুলে হাতের বামদিকের রাস্তাটা একেবারেই বেজন্মা হয়ে গেছে ক’দিন ধরে। এখানে সেখানে ইটের খোয়া-সুড়কি কোনো কিছু নাই, কোথাও গর্ত হয়ে গেছে, খানিকটা আবার এমন এবড়োথেবড়ো যে চাকা আর ঘুরতেই চায় না। কোনো মতে যদিবা ঘোরে, সঙ্গে সঙ্গেই নতুন কোনো গর্তে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ে। গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে প্যাডেল ঘুরায় কাজল, রিকশা খানিকক্ষণ ধক্কর ধক্কর করে মনে হয় পাহাড় বাইতে থাকে। তার পর ফের ধপ করে ঢুকে পড়ে নতুন কোনো অপরিসর গর্তে। ধুলাবালি চক্কর দেয়। কোনোখানে আবার খানিকটা সহৃদয় কাঁদামাটি প্যাঁচ প্যাঁচ করে পরম মমতায় চরম আবেগে জড়িয়ে ফেলে রিকশার চাকাকে। এখন ডান বাম যেদিকেই যাওয়া যাক না কেন, কেবলই কারওয়ান বাজার আর কারওয়ান বাজার। কামারশালার অস্পষ্ট গন্ধটুকুকে গলা টিপে ধরে হাচড়পাচড় করছে আড়তের মালপঁচা গন্ধ, নাকি জোর কুস্তিতে নেমেছে রাজ্যের শুটকির সঙ্গে। কিন্তু সেসব কিছু ছাপিয়ে এখন এই রাত দশটার দিকে ধুলার গন্ধ শোঁ শোঁ করছে পুরো এলাকাজুড়ে। তা না করে উপায় আছে? ঘাড়ের ওপর দিয়ে নাকি ট্রেন-বাস যাবে, সেসবের লাইন বসাতে সিটি করপোরেশন একবার চিৎ করে রাস্তা কাটছে তো আরেকবার কাত করে কাটছে, একবার উপুর করে কাটছে তো আরেকবার কাটছে হাঁটু মুড়িয়ে। এত যে কাটাকাটি করছে, তবুও শান্তি পাচ্ছে না, সুখও পাচ্ছে না।এইসব ঝাইঝক্কি শুরু হওয়ার বছরখানেক আগে আবার দু’চারটা পুরানা বিল্ডিংও ভাঙা হয়েছে। ওই ভাঙা পর্যন্তই, সেসব জায়গায়ও নতুন করে কোনো কিছুর কাজ শুরু হয়নি আজ অব্দি। অতএব পড়ে আছে সেসব জায়গাও উদাম হয়ে। উদাম, এতিম জায়গার বেশ খানিকটা জুড়ে এখন টেম্পো আর ভ্যানের বসবাস। আর এইদিকে রেললাইনের ধারঘেঁসা দোকানপাটগুলোও ভেঙে ফেলায় আজকাল এই রাস্তা দিয়ে যেতে কাজলের কেমন ফাঁকা-ফাঁকা লাগে। দিনের বেলাতেও ভীষণ অপরিচিত লাগে। চোখ কুঁচকে আসে, আরেশ্শালা, এত আলো আসে কোত্থেকে!

এখন এই রাত দশটায় আবারও একটু-একটু ফাঁকা-ফাঁকা লাগলে আর বেশ লম্বাটে এবড়োখেবড়ো রাস্তাটার মধ্যে রিকশার চাকাটা হাঁচড়পাঁচড় করতে শুরু করলে কাজল আর প্যাডেল মারে না। বরং রিকশাটা টেনে তুলে বামদিক ঘেষে দাঁড় করিয়ে হাত দিয়ে মুখটা মোছে আর তারপরই চমকে ওঠে কানের কাছে একটা মেয়ের তেজি গলা শুনে, ‘কয়ডা?

‘কয়ডা?’ – আবারও পাশেই অন্য কাউকে লক্ষ্য করে আরও কেউ বলে ওঠে। উত্তরে কে কী বলে, কাজল তা বুঝতে পারে না, বোঝার চেষ্টাও করে না। সে বরং তার একেবারে সামনে এসে দাঁড়ানো ধূলি-ধূসরিত মেয়েটিকে ভালো করে দেখে। প্রিন্টের কামিজ-সালোয়ার, হাতে-গলায় কোনো কিছু নাই, তবে দুইটা দুল আছে কানে, আবার কপালে একটা টিপও দিয়েছে। হয়তো আরও একটু সাজগোছও করেছে; কিন্তু হয়তো এখানে আলো কিছু কম বলে কিছু আর বোঝা যাচ্ছে না, হয়তো এর মধ্যেই ধুলো-বাতাসে সেই সাজগোছ তার ম্লান হয়ে গেছে। তা যা হোক, তারপরও সুন্দর লাগছে; খালি কণ্ঠেই কোনো সৌন্দর্য নাই, কেমন খড়খড়ে তড়তড়ে গলা, ‘আরে তাড়াতাড়ি কও না মিয়া, কয়ডা?’

কিন্তু এইসব কয়ডা-ফয়ডা বাদ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কাজল দিনচারেক হয়। টাকায় পোষায় না, শরীরেও না। এখন আর কোনো ইন্দ্রধনুও ওঠে না তার আকাশজুড়ে এইসব টানাটানিতে। প্রথমদিকে ভারী ভালো লাগত, বুঁদ হয়ে ‘মনসামঙ্গল’ শুনতে যাওয়ার দিনগুলোকে চিন্তা করতে। পা কেটে গেলে ঘাস চিবিয়ে তার রস লাগিয়ে দেয়ার কথা ভাবতে। কিন্তু এখন শুধু টানতেই ইচ্ছা করে, ভাবতে আর মন চায় না। তাছাড়া এইসব মালপত্র কি আর অচিন কোনো বাজার থেকে কেনাকাটা করা উচিত? সে তার গাঁঞ্জা কেনে বাড্ডার ঘিঞ্জি থেকে। জায়গাটা ময়লা, কিন্তু খুব নিরাপদ, সারাদিন চার হাত-পা ছড়ায়ে টানলেও কোনো সমস্যা নাই। কারওয়ান বাজারে তার আসা-যাওয়াও কম। তবে এইটা ঠিক, এইসব কয়ডা-ফয়ডা বাদ দেবে বলেই সে কয়দিন হলো এইদিকে প্যাসেঞ্জার নিয়ে খ্যাপ মারতে শুরু করেছে। নতুন জায়গায় চিন-পরিচয় থাকে কম, খায়খাতির হতে হতে আর রাস্তাঘাট খুঁজে পেতে-পেতে এইসব কয়ডা-ফয়ডার কথা মোটামুটি ভুলে যেতে পারবে, এরকমই চিন্তা ছিল তার। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। আজ সে উঠে কার মুখ দেখেছে? শালার রাস্তাঘাটই তো দেখা যাচ্ছে হাঁটতে হাঁটতে তার সামনে এসে হাজির হয়েছে!তবু সে ভালো হয়ে থাকার শেষ চেষ্টা চালায়, সিটের ওপর বসে পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে মেয়েটির দিকে সর্বনাশা দৃষ্টি ফেলে বলে, ‘কয়ডা-ফয়ডার ঠ্যাকা নাই রে সোনা…’

‘ঠ্যাকা নাই তো চোপার সামনে রিকশা খাড়া করাইছিস ক্যান? ভাগ এহান থেইকা-’

কাজল খ্যাপ মারতে বের হয়েছে ঘন্টাখানেক হয়, এখনও শরীরে টান ধরে নাই, হাসতে হাসতে বলে সে, ‘খাঁড়াইছি ক্যান? তোক দেইখ্যা। তোক খুব দরকার, বুঝলি-’

মেয়েটার চোখেমুখেবিস্ময়ের সঙ্গে রাগ মিলেমিশে দুলতে থাকে এই কথাতে, আর তাতেই যেন তার বয়সটা ফুটে ওঠে-আঠারো থেকে একুশ-এর মধ্যেই হবে, বাজি ধরে তা বলতে পারে কাজল। কিন্তু এই সময় বাজিটা ধরবে সে কার সঙ্গে! তাছাড়া বিস্ময় ছাপিয়ে মেয়েটার চোখেমুখে এখন ভয়ানক ক্রোধ জ্বলজ্বল করছে, গলার স্বরেও তার আঁচ ফুটে ওঠে,‘হারামজাদা, লুইচ্ছা, জানিস কি তুই, কার মাগী আমি?’

না, সেটা তো জানা নেই, কিন্তু তা জানাটাও কি খুব দরকারি? মুখ দিয়ে হঠাৎ করে ওই কথাটা বেরিয়ে গেল। নইলে কাজল নিজেও কি কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে ওইরকম একটা খাস্তা কথা বলার মানুষ! কিন্তুবন্দুক দিয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে, কোথাও না কোথাও ঠিকই লেগেছে, হয়তো রক্ত বেরুচ্ছে, হয়তো বেরুচ্ছে না। অবস্থা যেমনই হোক না কেন, কথাটাএখন আর ফিরিয়ে নেয়ার কোনো উপায় নেই। অতএব সে ধীরেসুস্থে সামনের দিকে এগোয়, ‘আমি তো জানি তুই আমার-’

তা শুনে মেয়েটি এবার আর ফুঁসে ওঠে না। অবশ্য রাস্তার এই আলোয় ঠিক বোঝাও যায় না, তার চোখে এখন আগের রাগই খেলা করছে নাকি লাজুক কোনো আভা জমেছে নতুন করে। হয়তো সে কাজলের দিকে তাকিয়ে অনুমান করার চেষ্টা করে, সে আসলে কে যে এমন একটা বারী মেরে বসল অনায়াসে। কথাটা তো বেশ ওজনদার আর দামিই বলেছিল ও, লোকটার তো ভড়কে যাওয়ার কথা, কিন্তু কী আশ্চর্য, কী নির্বিকারভাবে উল্টো তারই মালিকানা দাবি করে বসল!

বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলা রেললাইনের পাশের এই এক ফালি জায়গা জুড়ে এখন কী ভীষণ উদাস ও শূন্য আলোছায়া খেলা করছে রাত্রি নেমে আসায় গুটিয়ে ফেলা দু’চারটে ভ্যানগাড়ি, সিগারেটের দোকান কিংবা চটপটি ফুচকার দোকানের সঙ্গে। উন্মত্ত কোলাহল আর রিকশা-গাড়ি চলাফেরার শব্দ কোথায় যেন উড়ে গেছে পাখি হয়ে। একটা ভ্যানের পাশে বিকেলের বাতাসে একেবারে জবুথবু হয়ে পড়া একটা বড়সড় পলিথিন পেপারের পাশে প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে বসে আছে খায়রুল। ডান হাতের আঙুলগুলো মুঠি করে ফস ফস করে সিগারেট টানছে সে, পায়ের ওপর পা তুলে নাচাচ্ছে তো নাচাচ্ছেই। এইসব ভঙচঙ কথাবার্তাসে শুনছে কি শুনছে না বোঝা যায় না; তবে কিছু একটা যে তার পছন্দ হচ্ছে না সেটা বেশ ভালো করেই বোঝা যায় তার কথা থেকে, ‘ক্যা রে লায়লা, ফুরায় না তোর?’

লায়লা ফুঁস করে হুঁশ ফিরে পায়। এক লাফে চাঙ্গে উঠে পড়েছিল সে, এখন আবারও মাটিতে ফেরে। সে যে সত্যিই কারও ওইরকম একটা কিছু-ব্যাপারটা সেরকম না; কিন্তু এই বছরখানেক হয় দেখে আসছে সে, এই কথাটা বেশ কাজ দেয়। দিনরাত কত রকমের হারামজাদা ঝুরঝুরায় মেয়েমানুষের পাশে, তা তো সে সেই সাত বছর বয়স থেকেই জানে। মুখ যে তার আসমানীদের মতো বেদম চালু, সেরকমও না। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে এরকম একটা কথা বলে বসার পর টের পায় সে, কথাটা বেশ দামি, কথাটা বেশ ওজনদার। শালার অঙবঙচঙ মানুষজন মনে করে, না জানি কত বড় মাস্তান তার নাং; আবার একটু-আধটু মাস্তান-মুস্তানরা চিন্তা করে না জানি কত বড় সব নেতা-নুতা, কাউন্সিলর-মেম্বরদের কেউ মাঝেমধ্যেই ভাও করে তাকে। খালি খালি তাদের খেপিয়ে দিয়ে বিপদে পড়ার কোনো মানে আছে! অতএব সিধা হয়ে যায় তারা। আর এই সবের ফাঁকফোকর দিয়ে উতরে যায় সে, বেঁচেবর্তে থাকে কোনোমতে। এই কাজে আয়ইনকাম ভালো, বিশ্রাম-আরামও নেওয়া যায় ভালো, কিন্তু ঝক্কিঝামেলা যখন আসে তখন আসতেই থাকে একের পর এক।এই তো, দিনতিনেক আগেই তো, অল্পের জন্যে সে বেঁচে গেছে ঠাপ খাওয়ার হাত থেকে। সেঘটনা মনে পড়লে এখনও কলজে শুকিয়ে আসে তার। রাত নয়টার দিকে এইখানে এসে দাঁড়িয়েছে সে ‘কয়ডা’র প্যাকেটপুকেট নিয়ে, কিন্তু খায়রুল ভাই তাকে রাস্তার ওপর দাঁড়াতেই দিলো না, ‘আইজ তোরে বেইচতে হইব না লায়লা, কাম আছে, আমার সঙ্গে চল-’

‘হ, বেইচতে হইবো না! ট্যাকাপয়সা তো গাছের গোটা, বাতাস ছাড়াই আমার সামনে ঝুরঝুরাইয়া পড়ে আরকি।’

‘নাকে ত্যাল দিয়া কান্দিস, না? অ্যার আগে যাস নাই? কমিশন পাস নাই? কমিশন তো কমিশন, উপরিও পাইছিস। মনে নাই কা?’

তা মনে আছে লায়লার। বেচাবিক্রি ছাড়াই ১০০ পুরিয়া বিক্রির কমিশন- অত পুরিয়া সে জন্মেও বিক্রি করতে পারে নাই। তার ওপর ওই খ্যাপে যাওয়ার জন্যে বাড়তি টাকা। কিন্তু ওইসব ঢলাঢলি করতে তার ভালো লাগে না। তা না লাগুক, এত নির্বিবাদে এত টাকা কামাইয়ের সুযোগই বা কে ছাড়ে! সে তাই আবারও গিয়েছিল। কাজ বলতে তেমন কিছুই না, এইসব মর্দা মানুষগুলো কী যে সব ষড়যন্ত্র করে, তা তারাই জানে, তার আর আসমানীর কাজকাম বলতে গরুর মাংস কষিয়ে রান্না করা, শশা-টসা কেটে দেয়া, চানাচুর-ফানাচুর পিরিচে ঢেলে এগিয়ে দেয়া আর ওই মালটাল গ্লাসে ঢেলে দেয়া। কিন্তু বিপদও যে ঘটতে পারে, তা টের পেল দ্বিতীয় বারে। কোথাকার কোন হারামজাদা, পেটে তার একটু পড়েছে কি পড়ে নাই, তার বুকে হাত দেয়ার জন্যে অস্থির হয়ে উঠল; আর খালি কি বুকে হাত দেয়া, আবার বলে, বেশি না, খালি একটু ঠেকাবে, ঠেকাতে না ঠেকাতেই কাজকাম কমপ্লিট হয়ে যাবে, তার নাকি খুব খরা যাচ্ছে। হারামজাদা নিশ্চয়ই বড়সড় কেউ, নইলে খায়রুলই বা অত হাত কচলে কথাবার্তা বলবে কেন! তা ভাগ্য ভালো, উত্তেজনায় খাবি খেতে খেতেই সেই লোকের কী না কী হলো, লায়লার দুই হাত নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বুকের কাছাকাছি জড়ো করে হঠাৎ হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো আর বলতে লাগল-ব্যাটায় নাকি সারাজীবনে অনেক পাপ করেছে, এখন আর তার কোনো কিছুই ভালো লাগে না। চাঁদ ভালো লাগে না, জ্যোৎস্না ভালো লাগে না; ছায়া লাগে রোদের মতো, বৃষ্টি লাগে ঝড়ের মতো। আর মেয়েমানুষকে মনে হয় আশ্বিন মাসের বুনো শুয়োরের মতো। বলতে বলতে ধাক্কা দিয়ে তাকে দূরে সরিয়ে দেয় সেই লোক। লায়লার ভাগ্য ভালো, ব্যাটায় সারাজীবনে অনেক পাপ করেছে, আর তাই টাল হয়ে বেদিশা কান্নাকাটি জুড়ে হাসফাঁস করে, মেয়েমানুষকে বুনো শুয়োর ভাবে। না হলে নিশ্চয়ই তার কপালে খারাপি ছিল। তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলেই লোকটা বমি করতে শুরু করেছিল, আর খায়রুল চোখ ইশারা দিয়েছিল তাকে, সঙ্গে সঙ্গে বস্তির ছাপড়া থেকে বেরিয়ে নাক বরাবর রওনা হয়েছিল সে আর আসমানী। হুড়মুড় করে হোঁচট খেয়ে না-খেয়ে আরও অনেকটা রাস্তা আসার পর টের পেয়েছিল, পেছন পেছন খায়রুলও আসছে। বাড়ির রাস্তায় ঢোকার পর খায়রুল বলেছিল তাকে, তোর খুব পেরেশানি গেল রে আইজকা। নে একশ’ টাকা বেশি রাখ।

লায়লা টের পাচ্ছে, ভালো করেই টের পাচ্ছে, খায়রুল আসলে তার দরদাম তৈরি করছে। নইলে তার শরীরে অত দয়ামায়া নাই যে লায়লার ইজ্জতের চিন্তা কান্ধে নিয়ে সে ঘুরে বেড়াবে। তাদের গাঁয়ের সেই সুরতন বুড়ি যেমন ছাগল পেলেপুষে সেটার গায়েগতরে তেল জমাতো বেশি দামে বিক্রির ধান্ধায়, খায়রুলও তাই করছে।আপাতত মালের আসরে খাওয়াদাওয়ার যোগানদার হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে, হারামজাদাগুলোর চোখে টনটনানি জাগাচ্ছে, যেদিন মনের মতো একটা রেট পেয়ে যাবে, সেদিন ঠিকই মায়াদয়া সব কিছু ঝেড়েঝুড়ে ফেলে তাকে ঠেলে এগিয়ে দেবে বিছানায় শুয়ে পড়ার জন্যে। কিন্তু দরদাম যতই উঠুক, এই শরীরের ওপর কোনো ভরসা নাই লায়লার। কত তল্লাশ করে সে মাঝেমধ্যেই, কিন্তু কোনো সুখ-শান্তির শখ-আহ্লাদই আর খুঁজে পায় না এই শরীরটার ফাঁকফোকড়ে। নিজের শরীরে হাত রেখে নিজেই সে চমকে ওঠে, কোথাও কোনো উত্তাপ নাই, মরা নদীর টানা বাতাস ছাড়া কোনোখানে কিছু নাই। মানুষজনও কি টের পায় না তা? নিশ্চয়ই পায়। কিন্তু তারপরও এত খাই-খাই কেন যে করে! নিজের নিরুত্তাপ শরীরটা এইভাবে তার নিজেরই শত্রু হয়ে উঠতে শুরু করেছে সেই কবে থেকে! তা হলে এখন কী করে সে এই শরীর নিয়ে? অথবা এই মরা শরীর,-কুকুর-শেয়াল আর নেকড়ের চোখ আর নখড়ের ঘায়ে মৃত্যুস্রোতে ভাসতে থাকা এই শরীর,  দিনদুনিয়ার দুঃশ্চিন্তায় নেতিয়ে পড়া এই শরীর, হঠাৎ যদি একদিন আবারও জেগে ওঠে, তখন কী হবে এই শরীরের? তা যা হয় হবে, এই খায়রুল ভাই-ই তাদের সব, বাঁচিয়ে রাখলেও সে-ই রাখবে, মেরে ফেললেও সেই ফেলবে। ওইসব নিয়ে আর চিন্তা করে না সে। কিন্তু এই যে কেমন ঠান্ডা গলায় বলে উঠল খায়রুল, ‘ক্যা রে লায়লা ফুরায় না তোর?’ এ ভারী কঠিন বলা। মুহূর্তে নিজের মনের সব কিছু ঝেড়েঝুরে ফেলে বলে ওঠে সে কাজলের দিকে তাকিয়ে, ‘নিলি নে, না নিলে ভাগ-’

বলে সে একটু পিছিয়ে গিয়ে আসমানীর গা ঘেষে দাঁড়ায়। আসমানী খিলখিল করে হাসে। হাসতেই থাকে। কিন্তু মনে হয় না কাজলের সেদিকে কোনো মনযোগ আছে। সে মন স্থির করে ফেলেছে-এই পুটলি-পুরিয়ায় মোড়ানো জীবনটাকে আসলে সে বাদ দিতে পারবে না, নতুন পাড়ায় নতুন রাস্তায় গেলেও এইসব তার পিছে পিছে আসবে, বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে; শূন্য দৃষ্টিতে অনেক কড়া গলায় কিন্তু নিচু স্বরে বলে কাজল, ‘পাঁচটা দে-’

‘পাঁচ… পাঁচটা?’ -মনে হয় একটু হোঁচটই খায় লায়লা, বিশ্বাসই হয় না, এই শালার কোথাকার কোন রিকশাওয়ালা একসঙ্গে পাঁচটা পুরিয়া নিয়ে যাবে! খুব অবাকই লাগে তার।

‘হ, পাঁচটা-পাঁচটা। কথা কানে যায় না তোর?’

‘যায় কি না যায়, হে তো পরের ব্যাপার, ষাড়ের মতো চিল্লাতিসিস ক্যান?’

চিল্লানিটা অবশ্য লায়লাই দেয়, আর এত জোরে যে হাত দশেক দূরে দাঁড়িয়ে ‘কয়ডা’ ‘কয়ডা’ করতে থাকা আসমানীও প্রায় দৌড়ে তার পাশে এসে দাঁড়ায়। রণংদেহী চেহারা তার। কিন্তু ভারী ভালো লাগে কাজলের, বহুদিন পরে ষাড়ের কথা মনে পড়ে যায় বলে। এই শহরে গরুর মাংস তো ডালভাতই, না কি? মানুষ যা অহরহ ডাস্টবিনে ফেলে দেয়, তার মধ্যে ওই গরুর তেহারি কিংবা কাচ্চিবিরিয়ানি জাতীয় উচ্ছিট্টই তো বেশি, গরুর কথা এখানে অহরহ বলাবলি করে মানুষ, কিন্তু ষাড়ের কথা কেউ বলে না। এই মেয়ে ভুলে যাওয়া ষাড়ের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। সে মায়া-মায়া চোখে তাকিয়ে থাকে লায়লার দিকে।

খায়রুল তার আরামের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু লায়লা লাজুক-লাজুক চোখে পাশে এসে দাঁড়ানো আসমানীর গায়ে ঢলে পড়ে আর উচ্ছ¡সিত কিন্তু খরখরে ফাটা বাঁশের মধ্যে দিয়ে বেরুনো চ্যানচেনে গলায় বলে ওঠে, ‘মর্দা ক্যামনে তাকায়া আছে! এই ব্যাডা, পাঁচডা নিব্যার চাইস?ট্যাহা আছে ট্যাকে?’

‘হÑবেশি ভগর ভগর না কইরা কামের কতা ক।’ – আসমানীও গলা তোলে আর খায়রুলকে হাতের পাঁচ আঙুল ঘুরিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে, এইরকম কেস তারা নিজেরাই সামলাতে পারে, খায়রুলের কোনো দরকার নেই চোপা-চাপা খরচ করার। কিন্তু কাজল খুব উদ্ধত এখন, কাল রাতেও কত কায়দাকানুন করে নিজেকে বুঝিয়েছে সে, গাঞ্জা কত খারাপ আর আজ দিনটা পার হতে না হতেই জিনিসটা কি না নিজে থেকে এসে তার কাছে ধরা দিচ্ছে! নাহ্, ভালো আর হওয়া গেল না। কাল রাতের খ্যাপ মারা টাকা এখনও খরচ হয় নাই, আর আজকে এর মধ্যেই দু’বার খ্যাপ মেরেছে, যদিও একেবারেই কাছের খ্যাপ-মাত্র ১৫ যোগ ১৫-তে মোট ৩০ টাকা। কিন্তু এসবের ভরসাতেই তাঁতিয়ে ওঠে সে লায়লার দিকে চেয়ে, ‘কইলাম কী? তুই কোনকার রাজরাণী, এহনো কানে কতা ঢোকে না?’ – বলে সে এবার আসমানীর উদ্দেশে কথা বলে ওঠে, ‘তুমি তো মনে কয় কানে আবার একটু বেশি শোনো। বুঝায়া কও, খালি পাঁচটা ক্যান, তোমার পড়শিরে শুদ্ধা নিবার পারি।’

আসমানী আর লায়লা দুলে দুলে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে মনে করার চেষ্টা করে, কারওয়ান বাজার আর তেজগাঁ ট্রাক স্ট্যান্ডের এই ম্যাড়মেড়ে জীবনে এমন রসের কথা এর আগে আর কোনোদিন শুনেছে কি না। কিন্তু খায়রুল দাঁড়িয়েই আছে। এইসব ‘কয়ডা’রসব কিছু তো সামলাতে হয় তাকেই, আর তাই সুর কখন বেসুর হয় সেই খেয়ালও তাকেই রাখতে হয়। এইখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যায় না আর আগের মতো। এলাকার নেতা, কাউন্সিলর, এএসআই-অনেকজনের সঙ্গে দেনদরবার করে মাত্র মাসতিনেক আগে ফের ব্যবসাটা চালু করতে পেরেছে এমপি রসুল ভাই। বছরখানেকের মধ্যে কেউ আর ঝামেলা করবে না, রাত নয়টার ট্রেন চলে গেলে রেললাইনের ওই সিগন্যাল থেকে এই কামারপট্টির আগ পর্যন্ত জায়গাটুকুর মধ্যে ঘন্টাদুয়েকের জন্যে ব্যবসা করতে পারবে তারা। যদিও স্টিক-পুরিয়া-পোটলা কোনোটার ব্যবসায়ই খুব একটা লাভ নাই আজকাল, লাভের গুড় পিঁপড়ায়ই খায়; যত লাভ এখন ওই ই-এর ব্যবসাতে। কিন্তু এখন ই-এর ব্যবসায় ঝামেলা চলছে খুব, চালান ঠিকমতো পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, একদিন পুলিশের পকেটে টান পড়ে তো সব ভুলে যায়, ভ্যান নিয়ে টান মেরে চলে এসে হুটপাট করে দুই-তিনজনকে টান মেরে তুলে নিয়ে সোজা থানায় চলে যায়। অতএব রসুল ভাই বলে দিয়েছে, ই-এর ব্যবসা থেকে এখন একটু দূরে থাকতে।আর সেটা অক্ষরে অক্ষরে মানেও অবশ্যখায়রুল, ইয়াবার চালান বহুদিন হয় আনে না তারা। কিন্তু এখন যদি শালার এই ‘কয়ডা’রও বারোটা বাজে, তাহলে দিন যাবে কী করে! অতএব সে গলাখাকারি দিতে থাকে, ‘এত কথা কিসের রে? ফ্যালো কড়ি, মাখো তেল; মামলা শ্যাষ। কয়ডা বাজে, হুঁশ আছে?’

তা রাত বাড়ছে অবশ্য। সারা দিন সিটি করপোরেশনের জঞ্জাল ঘেটেছে লায়লা, গু-মোত আর পঁচা ময়লার গন্ধ সহ্য করতে পারলে, হাত দিয়ে ধরে নাড়ানাড়ি টানাটানি করতে পারলে এই শহরে খাওয়াপরার কোনো সমস্যা নাই,- তা এই বছরখানেকের মধ্যেই বোঝা হয়ে গেছে তার।কিন্তু আসমানীর আবার এইসব কাজ ভালো লাগে না। সোজাসাপটা কথা তার, ‘টাউনে আসছিই তো ভালো থাইকতে, দিনের পর দিন গু-মোত ঘাটার জইন্যে এহানে আসছি না কি?’ অতএব ‘কয়ডা’ই এখন তার ২৪ ঘন্টার ধ্যানজ্ঞান। খায়রুলও মনে হয় তার মতো অত চিন্তা করে না এই টানাটানির ব্যবসা নিয়ে।তবে লায়লাকে কারও ভালো লাগলে আসমানীর নিজেরই ভালোই লাগে। লায়লার পিঠে যে একটা রামদার কোপের বিশাল গর্ত আছে, আছে কাটাছেঁড়ার ভয়ঙ্কর উঁচুনিচু থেতলানো চিহ্ন, ফলে বলতে গেলে পুরো পিঠটাই হয়ে গেছে এই বেজন্মা রাস্তার মতো উঁচু-নিচু, সেটা আসমানী ছাড়া আর কেইবা জানে! স্টাইল করে জামার মতো বড়সড় ব্লাউজ পরে ওইসব বিশ্রী চিহ্ন ঢেকে রাখে লায়লা, এইটাজানে কেবল আসমানী। অবশ্য শুধু আসমানী কেন, খায়রুলও জানে এবং তা আসমানীই বলেছে তাকে। অবশ্য তার স্বার্থও আছে এই বলাবলিতে। নিজের গাঁ থেকে অনেক মেয়েকেই টাউনে নিয়ে এসে ভাসিয়ে দিয়েছে সে, কিন্তু লায়লার পায়ে পা আটকে গেছে তার।কোনোখানে তার বোধহয় এখনও একটুআধটু মায়ামমতা বেঁচে আছে, নয়তো এরকম হবে কেন। জামাই যেদিন লায়লার পিঠে ওইভাবে রামদার কোপ বসিয়েছিল, সেদিন আসমানী গাঁয়েই ছিল, চিৎকার শুনেই এগিয়ে গিয়েছিল আর দেখেছিল কীভাবে রক্তে ভেসে যাচ্ছে লায়লার গা-গতর সব। পিঠের ব্যান্ডেজ কী করে বসল, কী করে তা বার বার অদল-বদল করা হলো দিনের পর দিন, ঘাঁ-পুঁজ কী করে সারল আর এসবের বদলে পিঠটা হয়ে গেল এবড়োথেবড়ো এই যে এই বেজন্মা রাস্তাটার মতো, সব তো তার চোখের সামনেই ঘটল। এখন এই লায়লাকে পুটলির মতো করে জড়িয়ে ধরে ঘন্টাখানেক না হোক, মিনিট ১৫ শুয়ে থাকলেও তার মনে হয়, শরীর-মনের সব যন্ত্রণা দূর হয়ে যায়। এতো গেল মাত্র একটা-আরেকটা কারণও আছে। সে চায় না, তার আর খায়রুলের মধ্যে লায়লা একটা উপদ্রব হয়ে উঠুক। অতএব বলেছে এবং একটু বাড়িয়েই বলেছে- আর সেই বলা অনুযায়ী, শুধু পিঠ নয়, লায়লার পাছা-উরু পর্যন্ত বিস্তৃত রাম দায়ের এইসব শুকনো ক্ষতচিহ্ন। খায়রুল বিশ্বাস করেনি। অতএব একদিন সে লায়লার অজান্তে ভাও বুঝে পিঠের খানিকটা চিহ্নও দেখিয়ে দিয়েছে খায়রুলকে।তা দেখে খায়রুল শিউরে উঠলে বলেছে,‘পাছা আর উরাতে আছে না কি নাই, তা আকাম-কুকামের সোময় নিজের চোহেই দেইখা নিও।’

তা শুনে পুরো টেসে গেছে খায়রুল। আর টেসে যাওয়া খায়রুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আসমানী বলেছে,‘কী কতা কও না ক্যান? কী মনে কয় তোমার? অ্যার আর কুনু বাজার আছে? অ্যার দাম বড়জোর একবার-তারপরই তো মুহে মুহে ছড়ায়া পইড়ব, ভেতরে মাকাল ফল!’

তারপর সিরিয়াস আলোচনা হয়েছিল তাদের দু’জনের মধ্যে। খায়রুল বলেছিল, ‘তাইলে কুনুমতে কুনুখানে গছায়া বিদায় কইরা দেই, নাকি কস?’

আসমানির বয়স কি খুব বেশি লায়লার চেয়ে? তা তো না। কিন্তু পাক্কা জহুরির মতোসে হিসাব কষেছিল, এইরকম ভালো মানুষও দুই-একটা রাখা দরকার হাতের কাছে। অতএব সেই থেকে তার হাতের কাছেই আছে লায়লা। আজকাল সে-ও যায় বটে সেইসব মদ-গাঁজার আসরে, যেখানে আসলে শলাপরামর্শ হয়, ভাগবাটোয়ারা হয়, হিসাবনিকাশ হয়; সেখানে কতজন কত টালটু-মালটু করার চেষ্টা করে তাদের সঙ্গে,কিন্তু কখনোই ঈর্ষা জাগে না আসমানীর। কিন্তু আজ একটু একটু করে সত্যিই ঈর্ষা হচ্ছে আসমানীর, ঈর্ষা করছে সে লায়লাকে আর ইচ্ছা করতে এই লোকটাকে ভাগিয়ে দিতে।

খরখরে গলায় দ্রুত বলে আসমানী, ‘পড়শির হিসাব পরে কইর। পোটলা একশ’ টাকা।’

‘পোটলা ১০০ টাকা? ক্যান, স্টিক নাই তোগারে কাছে?’

‘ওইসব স্টিক-ফিকের ব্যবসা আর করি না আমরা। বহু ঝামেলা, একজন কয়, এত কড়া ক্যা, আরাকজন আবার কয়, এত পাতলা ক্যা? অ্যাহন নিজের মাল নিজে বানায়া নিব্যা, কড়া-পাতলা যতটুক দরকার, ততটুক নিজেই কইরা নিব্যা।’

‘তাইলে যে ডাক দিলি, কয়ডা?’

‘ডাকাডাকিত সমস্যা কি? কয়ডা মানে কয়ডা পোটলা নিবা। কী, নিবা পাঁচ পোটলা?’ – আসমানী সতর্ক চোখে তাকিয়ে থাকে কাজলের দিকে।

কাজল এখন ঘোরের মধ্যে আছে। প্রচন্ড সেই ঘোর। প্রচন্ড অজানা সেই ঘোর। ঘোরের মধ্যে সে হাসতে থাকে, ‘আমি কি কইছি, নিমু না?’

লায়লা তার ওড়নার কোঁচড়ে হাত ঢুকাতে গেলে থামিয়ে দেয় আসমানী। তার বদলে নিজের কোঁচড়ে হাত ঢুকিয়ে পুটলি গুণতে থাকে। আর সেদিকে তাকিয়ে যেন গোঁ গোঁ করে ওঠে কাজল, ‘তুই ক্যান হাত দাও? হ্যার কাছ থে’ কিনতেছিলাম না আমি?’

বলে কাজল দেখায় লায়লাকে। আর লায়লা খরখরিয়ে হাসতে থাকে। খুব স্বাভাবিক খরখরানো হাসি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় আসমানীর, বিজয়ীর হাসি হাসছে সে। বিজয়ীর, এবং অনেক গ্রীষ্মের পর আসা বৃষ্টির মতো হাসি।মেজাজটা ভারী তিরিক্ষি হয়ে যায় আসমানীর, কী বিরাট দান মারল লায়লা, এক গ্রাহকের কাছেই পাঁচ পোটলা! কারেন্টের শক খাওয়া মানুষের মতো ছিটকে আবারও খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায় সে। রাত যতই হোক, ঢাকা শহরে কি আর মানুষজনের কমতি আছে? সে হেঁটে হেঁটে আসতে থাকা লোকদের দিকে তাকিয়ে, গতি ভারী ধীর করে ফেলা রিকশা কিংবা সিএনজির দিকে তাকিয়ে দুলে দুলে বলতে থাকে, ‘কয়ডা?’… ‘কয়ডা?’ বলে আর দেখে, পোটলা নেয়ার পরও কাজল দাঁড়িয়ে আছে রিকশা নিয়ে। লায়লা অবশ্য আবারও ‘কয়ডা’ ‘কয়ডা’ বলতে শুরু করেছে, কিন্তু গলার স্বর কেমন নরম হয়ে এসেছে। ঘটনা তা হলে প্যাঁচ খেয়ে গেছে। ডাকাডাকি থামিয়ে আসমানী এবার একটু ঘুরে দাঁড়িয়ে খায়রুলকে হাত নেড়ে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করে।