You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ ফারুক মঈনউদ্দিন

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ ফারুক মঈনউদ্দিন

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ ফারুক মঈনউদ্দিন
অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য কবি-সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি সাহিত্যিক ফারুক মঈনউদ্দীন-এর সাথে। উৎস প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তাঁর শেখ মুজিব দস্তইয়েফস্কি ও অন্যান্য অনূদিত প্রসঙ্গ গ্রন্থটিবইমেলায় উৎস প্রকাশনীর ১৫১-১৫৩ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। সাক্ষাৎকার: ধ্রুব সাদিক।
মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার প্রকাশিত গ্রন্থের ব্যাপারে জানতে চাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতিও যদি শেয়ার করতেন।

ফারুক মঈনউদ্দীন: এবছর একটি বই-ই প্রকাশিত হয়েছে, শেখ মুজিব দস্তইয়েফস্কি ও অন্যান্য অনূদিত প্রসঙ্গ। বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু অনূদিত লেখা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, সেইসব লেখা জড়ো করে একটি গ্রন্থে সংকলিত করা হলে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার কথা ভেবেই এই বইয়ের পরিকল্পনা। গ্রন্থ প্রকাশ সবসময়ই একটা আনন্দের সংবাদ, কারণ যে পরিশ্রমে লেখাগুলো তৈরি হয়, সেটি ভালো প্রোডাকশনের মাধ্যমে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা তৃপ্তি আছে। প্রতিটি গ্রন্থই একজন লেখকের একেকটি সন্তানের মতো।এই বইটিতে মোট দশটি লেখা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারকারী পাকিস্তানি সেনা অফিসারের প্রত্যক্ষ বয়ান, চিলির নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কথাসাহিত্যিক মারিও ভার্গাস য়োসার নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর ছেলের দিনপঞ্জীর ধরনে একটি লেখা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনী গঠনের নেপথ্যকথা। রয়েছে দস্তইয়েফস্কি সম্পর্কে দুটি গভীর বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ, ছোটগল্প লেখার কৌশল নিয়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ভিন্নস্বাদের একটি লেখা এবং রিজিয়া রহমানের উপন্যাসে ব্যবহৃত ভাষা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতির পরিচয় তুলে ধরার প্রচেষ্টায় ক্লিনটন সিলির প্রবন্ধ। করোনাকালের পটভূমিতে সমসাময়িক দুটো লেখায় রয়েছে বিশ্বব্যাপী মহামারীর ইতিহাস এবং সে সম্পর্কিত নানান তত্ত্ব, তথ্য ও ধারণা। আরো রয়েছে রবীন্দ্রনাথের জাপান সফর নিয়ে দেশটি লেখক-বুদ্ধিজীবীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত বইগুলোও কি অমর একুশে বইমেলার স্টলে পাওয়া যাচ্ছে?

ফারুক মঈনউদ্দীন: আমার আগে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে অবসরে পাওয়া যাচ্ছে মৃত্যুর আগে জীবনের সংগীত, নির্ঘুম নিউ ইয়র্ক, মাসাইমারার প্রান্তরে, অন্যপ্রকাশে বিশ্বজোড়া অনন্ত অঙ্গনে, মরু গুহা ও দ্বীপের গল্প, দৌড়বিষয়ক যতকথা ও সেরা দশ গল্প, পাঞ্জেরীতে হেমিংওয়ের নারীরা, বাতিঘরে দূর ভুবনের পাড়ে, সময় প্রকাশনীতে মোহিনী মুম্বাই ও সুদূরের অদূর দুয়ার ইত্যাদি।
এছাড়া, বইগুলো রকমারি ছাড়া বাতিঘরে পাওয়া যায় বলেই জানি।

মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।

ফারুক মঈনউদ্দীন: প্রাণবন্ত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এখানে কেবল বেড়াতে আসা উটকো মানুষের অহেতুক ভিড় কমানোর জন্য প্রবেশ মূল্য (দশ টাকা) নির্ধারন করা উচিত। এতে লেখক, পাঠক ও বইপ্রেমীদের মধ্যে সহজে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ বাড়বে।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলা শুধু একটি মেলাই নয়, এই মেলার সাথে প্রকাশনার সাথে জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।

ফারুক মঈনউদ্দীনএকথা ঠিক, এটি পাঠকের প্রাণের মেলা তো বটেই, কিন্তু প্রকাশক ও প্রকাশনা শিল্পের সাথে জড়িত একটা বিরাট সংখ্যক মানুষের আয় রোজগারের অন্যতম প্রধান উৎসও। আমাদের প্রকাশনা শিল্পে সরকারি প্রণোদনা কতটুকু আছে কিংবা আদৌ আছে কি না জানি না। প্রণোদনা থাকলে সাশ্রয়ী মূল্যে পাঠকদের কাছে বই পৌঁছে দেওযা যায়, বিশেষ করে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা যায়, যাতে বইয়ের উচ্চমূল্য তাদের বই কেনা থেকে বিরত না রাখে। প্রকাশকদের সংগঠনও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। বিভিন্ন জেলা শহরে সীমিত ব্যয়ে পালা করে বছরব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। সেসব মেলায় প্রকাশকেরা বই পাঠাতে পারেন এবং অবিক্রিত বই ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে পারেন। জেলা শহরগুলোতে এই আয়োজন করতে পারে সুসংগঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কিংবা শিল্পকলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান। মোট কথা ইচ্ছে থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। বইমেলা ছাড়াও জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় বিদ্বজনকে এগিয়ে আসতে হবে, পাঠচর্চাকেন্দ্র, বই পড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বইকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করা যায়।

মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ বিশেষ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।

ফারুক মঈনউদ্দীন: আমাদের বইবাজার এখনো মেলাকেন্দ্রিক, ‘এবারের মেলায় আপনার কি বই আসছে’- এই পরিচিত প্রশ্নটি থেকে বোঝা যায় পাঠকদেরও অনেকের ধারণা, কেবল ফেব্রুয়ারি মাসেই বই প্রকাশিত হয়। দেশব্যাপী ও বছরজুড়ে মার্কেটিংয়ের জন্য দরকার ব্যাপক প্রচারণা যা একটি দুটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করেও থাকে, ডিজিটাল মার্কেটিংকে জনপ্রিয় করে আরো প্রসারের ব্যবস্থা করা উচিত। আমাদের বহু পাঠক বা ক্রেতা আছেন যাঁরা বছরে একবারই বই কেনেন, সেটা একুশের বইমেলা থেকেই। আমাদের এই প্রবণতা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রকাশকদেরই উদ্যোগী হতে হবে।

মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

ফারুক মঈনউদ্দীন:কোভিডের মধ্যে হাটবাজার বাণিজ্যমেলা সবকিছুই যখন চলছে, তখন বইমেলার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নয়। মাস্কই যখন একমাত্র সুরক্ষা, সেটি ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে কি না তার জন্য কঠোর নজরদারী আরোপ করা উচিত, যাতে মাস্কবিহীন মানুষ করোনা সংক্রমণের উৎস ও  শিকার হতে না পারে।