You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/রোজেন হাসান

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/রোজেন হাসান

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/রোজেন হাসান

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য কবিসাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি কবি রোজেন হাসানের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ধ্রুব সাদিক।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার প্রকাশিত গ্রন্থের ব্যাপারে জানতে চাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতিও যদি শেয়ার করতেন।

রোজেন হাসান:প্রথম বই প্রকাশের চার বছর পর এবার প্রকাশিত হলো আমার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘বিষুব রাত্রির দেরাজ‘। কবিতাগুলোর রচনাকাল ধরে বললে এখানে দুইহাজার এগারো থেকে দুইহাজার একুশ পর্যন্ত লেখা কবিতাগুলো স্থান পেয়েছে। আর পাণ্ডুলিপি নিয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কাজ, বইয়ের ধারণা নির্মাণ, বিষয়বস্তু এবং থিমের সামগ্রিক অবয়বদান এসব তো আছেই। বইটিতে একজন কবির জগতে গড়ে ওঠা ভাষা, আর তার সাথে পৃথিবীর যে সম্পর্ক — সেখানে দর্শন, প্রকৃতি, মৃত্যু, জীবন, স্মৃতিবিভ্রম আর স্মৃতিহীনতা সবকিছুই একাকার হয়ে আছে– তার দ্বন্দ্ব এবং সংমিশ্রণসহ, মূখ্য ভূমিকা নিয়ে আছে। অন্যভাবে দেখলে পৃথিবীর কেন্দ্রে যে নিরপেক্ষতা আছে সেটি তো আমাদের জীবনের অর্জন, ক্ষয়, ক্ষণিকতা আর সুক্ষ্ণভাবে অনুভূতির বিচারও করে। আর তার সাথে যোগাযোগটাও কবিতার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। সেই দিকগুলো এই বইয়ে বিশেষভাবে ধরা আছে বলেই আমার মনে হয়। বই প্রকাশের অনুভূতি যেন নির্বাণ প্রাপ্তির পর সুখ-দু:খের চক্রের বাইরের যে অবস্থান, অনেকটা তার মতো। আর মনে হয়, কালের হাতে যে তাকে তুলে দিতে পেরেছি সেটিই গুরুত্বপূর্ণ, বাকিটাও তারই হাতে। এবং বইটির প্রকাশক বৈতরণীর প্রোডাকশন, পেশাদারিত্বসহ সবকিছুই মুগ্ধ করেছ আমাকে।

রোজেন হাসান কবিতার বই : বিষুব রাত্রির দেরাজ প্রকাশক : বৈতরণী বইমেলা পরিবেশক : চৈতন্য, স্টল নাম্বার ৫৭৬-৫৭৭ । প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, 2022 মুদ্রিত মূল্য : ২০০ টাকা মেলায় 25% ছাড়ে ১৫০ টাকা। অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে রকমারিতে। বৈতরণীর পেজ ইনবক্স কিংবা 01717-589274 এই নাম্বারে সরাসরি কল করেও সংগ্রহ করা যাবে। পূর্বপ্রকাশিত বই : অক্ষর স্তব্ধবন (কবিতা, ঐতিহ্য, ২০১৮)

মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?

রোজেন হাসান: আমার প্রথম বই, ‘অক্ষর স্তব্ধবন‘ (কবিতা)। ২০১৮ সালের বইমেলায় ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। বইটি তাদের স্টলে এবং রকমারিতে পাওয়া যেতে পারে।

মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।

রোজেন হাসান: বইমেলা লেখক-পাঠকদের সেতুবন্ধের কাজ তো অবশ্যই করে। বইমেলাকে আরো প্রাণবন্ত করার জন্য লেখকদেরকে তাদের সবচেয়ে ফাইনাল কাজটিকে প্রকাশ করতে হবে। এসব থেকেই নতুন যুগসৃষ্টিকারী বইগুলো আসে। প্রচুর বই তো প্রকাশিত হয়ই, তবে সাহিত্যের বিভিন্ন ঘরাণায় প্রচুর অনবদ্য বইও প্রকাশিত হতে হবে। যেন পাঠকরা বই বাছাই করতে পারেন। আর মেলার অবকাঠামোগত জায়গাটায় ভালো কাজ হচ্ছে বিগত বছরগুলোতে, কিন্তু স্বাস্থ্যগত দিকটিতে জোর দিতে হবে আরো। এবং ছুটির দিনগুলোতে বহুসংখ্যক মানুষকে ধারণ করার সক্ষমতাও আরো বাড়াতে হবে।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনায় জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।

রোজেন হাসান: বই তো পণ্য। এর বিপণন, প্রোডাকশনের মান, বিজ্ঞাপন সর্বোপরি ভালো পাণ্ডুলিপিকে আরো ভালোভাবে উপস্থাপন করা– এসবই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাজ। সেখানে পেশাদারিত্ব লাগে, না হলে সবই বিফলে যায়। একজন ভালো প্রকাশক এসব ভালোভাবেই করেন বলে আমার ধারণা। তবে ওই যে বললাম বই হচ্ছে পণ্য, তাই এখানে পুঁজি জড়িত। পুঁজি এই সবকিছুকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। প্রকাশকরা সবাই যেন ভালো জায়গায় স্টল পান, যেখানে দিনে রাতে আলো থাকে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দিতে হবে। আর প্রকাশকদের নজর দিতে হবে বইয়ের মানের দিকে। লেখকদের দিকেও।

মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ বিশেষ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।

রোজেন হাসান: এখানে বলতে পারি, লাভজনকভাবে টিকে থাকতে হলে প্রকাশকদের সারাবছরই বইয়ের বিজ্ঞাপন আর সরবরাহের ব্যবস্হা নিশ্চিত করতে হবে। থাকতে হবে লেখক আর পাঠকদের সাথে অর্থবহ যোগাযোগ। সারাদেশেই কিন্তু অসংখ্য পাঠক। তারা সারাবছরই বই কেনেন, কিনতে চান। আর তাদের কাছে বই পৌঁছানোর সুন্দর পদ্ধতিটি কিন্তু ইতোমধ্যেই বিকশিত হয়েছে অনেক, সেটি হচ্ছে কুরিয়ার ব্যবস্থা। যতদূর দেখতে পাই এখন আকারে ছোট-বড় অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানই অনলাইনের মাধ্যমে বইয়ের অর্ডার নিচ্ছেন, এরপর ক্রেতাদের কাছে দ্রুততম সময়ে বই পৌঁছে দিচ্ছেন। এর ওপর নির্ভরশীলতা আরো বাড়াতে হবে।

মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

রোজেন হাসান: বেশি বেশি বই কিনুন। তবে নিজের পছন্দপ্রক্রিয়ার প্রতি সতর্ক হোন, তাকে বিশ্লেষণ করুন। আর অবশ্যই পড়ুন।