You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ নভেরা হোসেন

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ নভেরা হোসেন

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ নভেরা হোসেন

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে কবি-সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি সাহিত্যিক নভেরা হোসেনের সাথে। তাঁর গ্রন্থ “কেউ জানতে চায়নি “প্রকাশিত হয়েছে দেশ পাবলিকেশন্স থেকে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দেশ পাবলিকেশন্স-এর ৪৬১-৪৬২-৪৬৩নং স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ধ্রুব সাদিক

মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার প্রকাশিত গ্রন্থের ব্যাপারে জানতে চাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতিও যদি শেয়ার করতেন।

নভেরা হোসেন: প্রতিবছর বইমেলা হচ্ছে আর গুচ্ছ গুচ্ছ বই প্রকাশিত হচ্ছে। এখানে না আছে কোনো সম্পাদনা পর্ষদ , না আছে লেখা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা -সমালোচনা। বহু বছর ধরে লিখেও লেখকদের মেরুকরণ রাজনীতির কারণে- বহু ভালো কবিতা , গল্প , উপন্যাস , অনুবাদ, প্রবন্ধ চোখের আড়ালে থেকে যায়। পাঠকদের কাছে বার্তা পৌঁছায় না প্রকাশক ও গণমাধ্যম কর্মীদের অজ্ঞতাও একপেশে দেখার নীতির কারণে। সে যাই হোক যথারীতি এবারও আমার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।গতবছর আমার দুটি নভেলা/ উপন্যাসিকা প্রকাশিত হয়েছে প্রথম। এবারের উপন্যাসের নাম ” কেউ জানতে চায়নি ” -প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স। সমকালীনমধ্যবিত্ত জীবনের চালচিত্র এবং সামাজিক -জাতিগতবৈষম্য, নিপীড়ন নানা বিষয় স্থান পেয়েছে উপন্যাসটিতে। আমরা যারা সমতলের মানুষ তারা খড়গহস্ত হয়ে আদিবাসীদের জমি -জীবন সব গ্রাস করে নিচ্ছি।সেই সাথে নিজেদের জীবন ও নিষ্কলুষ রাখছিনা।এরমধ্যেও প্রাণ বাঁচতে চায় , নিঃশ্বাস নিতে চায়। ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর নারী আবার জেগে ওঠে , সহমর্মী হয় অন্যদের প্রতি। নারী একা একা লড়াই করে যায় তবে মনুষত্ব এখনও পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। দু -একজন বন্ধু হাত বাড়িয়ে দেয় তার চলার পথে। পুরুষ বা নারী বলে আলাদা কেউ নেই যা আছে তা হচ্ছে চিন্তা। এই চিন্তা পুরুষকে চালিত করে , নারীকে চালিত করে। একমাত্র হলিস্টিক মানবতাবাদী চিন্তানারী ও পুরুষকে তাদের মতো করে গ্রহণ করতে পারে।

মন-মানচিত্র: আপনার পূর্ব-প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?

নভেরা হোসেন: একুশে বইমেলায় দেশ পাবলিকেশন্সের স্টলে গল্পগ্রন্থ “জৌলুসী বেওয়া“এবং “নভেলা সংকলনঅন্তর্গত করবী” পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া এডর্ন-এর স্টলে কবিতার বই ” একটু একটু করে বোবা হয়ে যাচ্ছ তুমি‘ এবং সম্পাদিত গ্রন্থ “নির্বাচিত কবিতা: শামীম কবীর” পাওয়া যাচ্ছে। চৈতন্যের স্টলে কবিতার “বই বারুদ লোবানের গন্ধ ” থাকার কথা।

মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটিই শুধু করে তাই নয়, এই সময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজ ও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।

নভেরা হোসেন: বইমেলা হচ্ছে লেখক ও পাঠকের মধ্যে পরিচয়, চিন্তার আদান -প্রদানের স্থান।মেলা শুধু বই বিক্রির জায়গা না বরঞ্চ বই সস্পর্কে ধারণা পাওয়ার জায়গা। কিন্তু আমাদের এখানে তেমন চর্চা নেই।পাঠক খুব কমই লেখকদের সাথে চিন্তার বিনিময়ের সুযোগ পান বা আগ্রহীও হন। লেখকরা লেখকদের সাথেই সময় কাটান।বাংলা একাডেমি শুধু লেখকদেরকে মঞ্চে না উঠিয়ে লেখক-পাঠকমঞ্চ তৈরী করতে পারেন। যেখানে কথা হবে সাহিত্য নিয়ে কবিতা নিয়ে পাঠকের ইচ্ছা , লেখকের স্বপ্ন সবকিছু নিয়ে। পাঠকের জন্য প্রবেশ মুখে কুপন কেনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।মেলার শেষদিকে পাঠকদেরকে বই উপহার দিয়ে উৎসাহিত করা যায়। পত্র -পত্রিকায় পাঠকের পাতা নামে একটা আয়োজন করা যেতে পারে এবং বইগুলো সম্পর্কে আলোচনা থাকলে পাঠক তার রুচি অনুযায়ী পড়ার সুযোগ পেতেন। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়।প্রতিটি স্টলে না হোক অন্তত একেকটি সারিতে কয়েকটি করে অস্থায়ী বসার ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা থাকা দরকার , এছাড়া যেটি খুব জরুরি টয়লেট পরিষ্কার করা দরকার সার্বক্ষণিকভাবে।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার সাথে প্রকাশনায় জড়িত মানুষের রুটি-রুজির সংস্থানের ব্যাপারটি জড়িত।এই ব্যাপারে আপনার অভিমত যদি আলোকপাত করতেন।

নভেরা হোসেন: বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি মনোপলি বা একচেটিয়া কারবারের অন্তর্ভুক্ত।সেজন্য দেখা যায় বই প্রকাশকরা কম মূল্যে অধিক পরিশ্রম নীতিতে বিশ্বাসী। যারা বাঁধাইয়ের কাজ করেন , পেস্টিংয়ের কাজ করেন , ছাপাখানায় কাজ করেন তারা স্বল্প মজুরির বিনিময়ে কাজটি করতে বাধ্যহন। এ বিষয়ে পুস্তক -প্রকাশক সমিতি ও কর্মচারী সমিতির মধ্যে চুক্তি থাকা দরকার এবং আইন যা আছে তার প্রয়োগ ও মনিটরিং দরকার।

মন-মানচিত্র: একটা ব্যাপার আমাদের পরিলক্ষিত হয় যে, বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ বিশেষ থাকেনা। এদিকে, আমাদের দেশে বইয়ের দোকান ও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।

নভেরা হোসেন: বইমেলায় আসলে ভুঁইফোড়ের মতো অসংখ্য প্রকাশক ও লেখকের সমাবেশ দেখা যায়।সারাবছর তাদের উপস্থিতি দেখা যায় না।এ বিষয়ে আমার মনে হয় প্রকাশনাশিল্পের ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সম্পাদক নিয়োগ করে বই বাছাই করে কিছু বইমেলাতে আসা দরকার। যা বই নয় তা মেলায় না আসাটাই ভালো।প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ও অনলাইন পত্রিকাগুলো বই সংগ্রহ করে সমালোচক, লেখকদের দিয়ে বই সম্পর্কে আলোচনা , সমালোচনা করতে পারেন এবং ধারাবাহিকভাবে সারাবছর জুড়ে তা আলাদা একটি পাতায় প্রকাশ করতে পারেন। এছাড়া অন-লাইন শপের মাধ্যমে বইয়ের বিপণন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়।শুধু শহর মুখীনতা নয়। ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম এবং প্রিন্ট মিডিয়া এবিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।

মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

নভেরা হোসেন: কোভিড এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। খুব বেশি মানুষ মেলায় ভিড় করা বিপদজনক। যারা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী, বই পড়েন তাদের সমাবেশে মুখরিত হোক মেলা। পার্ক বা বিনোদনের জায়গা হিসাবে খাওয়া -দাওয়ার জন্য নয় , সেজন্য ঢাকা শহরে অসংখ্য হোটেল – রেস্তোরাঁ খোলা রয়েছে। মাস্কপরা, জ্বর মাপা এবং হাতকে জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত থাকা দরকার।পাঠক যাতে ঘরে বসে সহজে বই পড়তে ও কিনতে পারেন সেবিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া দরকার।এখন ঢাকা শহরের যে অবস্থা দূর থেকে মেলায় আসাটা খুব শ্রমসাধ্য এবং ব্যয়-বহুল , সেক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে।