You are currently viewing বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ রাসেল রায়হান

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ রাসেল রায়হান

বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ রাসেল রায়হান

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য কবি-সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি কবি ও কথাসাহিত্যিক রাসেল রায়হানের সাথে। তাঁর উপন্যাস ‘আরও গভীরে’ প্রকাশিত হয়েছে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে। বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ২৯৯-৩০২ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ধ্রুব সাদিক।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার প্রকাশিত গ্রন্থের ব্যাপারে জানতে চাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতিও যদি শেয়ার করতেন।

রাসেল রায়হান: এই বইমেলায় আমার একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে—‘আরও গভীরে’। আমি এটিকে প্রেমের উপন্যাস বলছি। ‘প্রেমের উপন্যাস’ কথাটি ব্যবহারের সঙ্গে ব্যবসায়িক একটি সম্পর্ক রয়েছে বলতে পারেন। সত্যি সত্যি প্রেমের উপন্যাস হলেও বাস্তবে ‘আরও গভীরে’ প্রেমেরও অধিক কিছু। খুব শৈশব থেকে বয়ে বেড়ানো প্রবল অন্ধকার একটি ক্ষত এক নারীকে কতটা বিহ্বল রাখতে পারে, তার বর্তমান জীবনকে কত কতখানি প্রভাবিত করতে পারে—‘আরও গভীরে’ মূলত তারই আখ্যান। সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের কল্পনার বাইরে গিয়েও মানুষ কতটা বড় হতে পারে—শেষমেশ উপন্যাসটি তারই একটি চিত্র তুলে ধরবে। অনুভূতি বলতে দুশ্চিন্তার কাছাকাছি একধরনের কৌতূহল বোধ করছি। ‘আরও গভীরে’ আমার তৃতীয় উপন্যাস, বই হিসেবে সপ্তম। সুতরাং আলাদা কোনো অনুভূতি এখন আর কাজ করে না সেভাবে। দুশ্চিন্তার একটি কারণ হলো, ভীষণ রকম জটিল একটি গল্প আমি বলতে চেয়েছি, খুব সরল ভাষায়। আমার কাছে মনে হয়েছে, এমন কঠিন একটি গল্প সরল ভাষায় না বললে পাঠক রিলেট করতে পারবে না। এখন এই দুইয়ের মিশ্রণ তাঁরা কীভাবে নেন, সেটা নিয়ে কৌতূহল আছে।

মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন? 

রাসেল রায়হান: আমার আগে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে তিনটি উপন্যাস—‘আরও গভীরে’, ‘অমরাবতী’ আর ‘একচক্ষু হরিণীরা’ এবং একটি কবিতার বই ‘বিব্রত ময়ূর;’ পাঠক মেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। বাকি বইগুলোর মুদ্রিত কপি এখন আর নেই।

মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই। 

রাসেল রায়হান: গ্রন্থমেলা প্রাণবন্ত করতে সবার আগে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু বই আসলে একটি জাতির মনন তৈরি করে, সুতরাং রাষ্ট্রের এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। তাদের প্রচারমাধ্যমগুলোকে বইমেলার প্রতি আরও জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে পাঠক ও মেলায় আগত ‘দর্শনার্থী’র প্রতি আমাদের আরও উদার হতে হবে। এই যে মাঝেমধ্যে বইমেলায় ঢুকতে হলে ‘টিকিট-প্রক্রিয়া চালু করা প্রয়োজন’, ‘প্রত্যেকের হাতে একটি বই থাকতেই হবে’ ইত্যাদি নানা ঝোঁক ওঠে, এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। মেলা একটি উৎসব। এখানে মানুষ বই কিনতে আসবে, বই দেখতে আসবে, বইয়ের দোকান দেখতে আসবে, মানুষও দেখতে আসবে—যার যা খুশি তা-ই করবে। জামাকাপড় বা অন্য যেকোনো পণ্য না কিনলে দোকানে ঢুকতে পারব না—এই নিয়ম তো মোটেই ভালো নিয়ম হওয়ার কথা নয়।

মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনায় জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।

রাসেল রায়হান: গ্রন্থমেলার সাথে অনেকের রুটিরুজি জড়িত। সেটা যেমন লেখকের, তেমন প্রকাশনায় জড়িত মানুষগুলোরও। এখন আর তেমন কেউ লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিতে চান না অথবা সাহস পান না বলেই লেখালেখির পাশাপাশি প্রায় সবাই অন্য কোনো কাজ করেন। ফলে এই মাধ্যমটির প্রতি পুরোপুরি নির্ভরশীল আসলে প্রকাশনায় জড়িত মানুষগুলোই। সমস্যা হলো রুটি-রুজির জন্যই তারা অনেক মানহীন বই প্রকাশ করেন (কখনো কখনো লেখকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও)। এর ফলে হয়তো সাময়িক একটি লাভ হয়, কিন্তু শেষমেশ একদিন এই ইন্ডাস্ট্রিও নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির মতোই। এখনো হয়তো প্রকাশনা ইন্ডাস্ট্রির সুযোগ আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। একদিন থাকবে না। এখনই সবাইকে বই প্রকাশে সতর্ক হতে হবে, যত্নশীল হতে হবে। অনেক অনেক শিক্ষিত মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে এ ক্ষেত্রটিতে। সোজা কথায় প্রকাশনা ব্যবসাটিকে ভালো না বাসলে একদিন নিজেদের ব্যবসায় ধসের মুখ দেখবেন তারা। আরও অনেক কিছু বলা যায়। আপাতত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উল্লেখ করলাম।

মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ বিশেষ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন। 

রাসেল রায়হান: দুর্ভাগ্যক্রমে পাঠকের কাছে বই পৌঁছাতে মোটা দাগে একমাত্র ভূমিকা রাখেন লেখক নিজেই। বই প্রকাশ আর সেটি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো ভূমিকাই প্রকাশক রাখেন না বললে চলে। অথচ এ ক্ষেত্রে প্রকাশককেই মূল ভূমিকা নিতে হবে। তারা মূলত এক বইমেলা আর অনলাইন বুকশপগুলোর প্রতিই নির্ভরশীল। কিন্তু আমি মনে করি এখনো বইগুলো প্রতিটি বইয়ের দোকানে পৌঁছে দেওয়া উচিত। নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া উচিত সেই বইয়ের। বাজেটে না পোষালে কয়েকজন প্রকাশক মিলে একটি দল তৈরি করুন, যারা সারা বাংলাদেশে বই পৌঁছে দেবেন। নিয়মিত গিয়ে খোঁজ নেবেন। এককথায় প্রতিটি পাঠক বই না কিনতেই পারেন। কিন্তু প্রতিটি পাঠক যাতে বইগুলোর নাম জানেন, চেহারা দেখেন—সেই উদ্যোগ তাদের নিতেই হবে।  

মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।

রাসেল রায়হান: কোভিড পরিস্থিতি এখন অনেকটা কেটে গেছে। পাঠক এখন মেলা থেকে বইটি কিনতে পারেন। সব বই একজন পাঠকের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়, কিন্তু অনেক বই একটু পাতা উল্টে নেড়েচেড়ে দেখা সম্ভব তার পক্ষে। একটি বই নেড়েচেড়ে দেখার আনন্দও অন্য রকম। এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হওয়ার অনুরোধ প্রত্যেক পাঠককে। তবু কেউ অতিমাত্রায় সচেতন থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শেষ ভরসা বই বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো। এখন বাতাসেই করোনা কম ছড়াচ্ছে, সুতরাং কাগজে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে কাগজে জ্ঞান ছড়ায়, আনন্দ ছড়ায়, ‘মন ভালো’ ছড়ায়।