প্রাতঃস্বপ্নের কুজ্ ঝটিকায়
শাহাব আহমেদ
কুয়াশায় ঢাকা ভোর। নির্জন রাস্তায় গাড়ি ছুটছে কুয়াশার বুক চিরে শিশিরপাতের মত কুয়াশাপাতের
শব্দ গাড়ির ছাদে।
মিষ্টি এক অনুভূতি, মুখে দারুচিনির মত। এলার্ম বাজার সময়টাতে শীত শীত লাগছিল। জেগে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। প্রত্যুষের সেই শীত শীত লাগা ভোরে, নরম লেপের উষ্ণতায় আমার যার সাথে দেখা হল, তার সাথে দেখা হবার কথা নয়। কল্পনায়ও নয়, কারণ সময়ে সবকিছুই শেষ হয়ে যায়। যা শেষ হয়ে যায় তার কোনো বীজ কোথাও প্রোথিত থাকে না। অথচ অস্বাভাবিক এক স্বপ্নে অসম্ভব কাছাকাছি, তপ্ত চুম্বনে আবদ্ধ, কোমল ঠোঁট ঠোঁটে, বুক বুকে, উইস্টিরিয়া লতার মত একে অন্যে নিবিড়।
অদ্ভুত!
নেভা নদীর যে বুক জমে পুরো বরফ হয়ে যেতো এবং যেখানে ছেলে মেয়ে কিশোর কিশোরি বা যুবক যুবতীরা আইস স্ক্যাটিং করতো অনায়াসে এবং আমরা ওভারকোট বুট আর টুপি পরে হাঁটতাম, তাই এখন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে সাঁতারাতে শুরু করেছে সাদা সাদা হাঁসের মত।
যে স্রোত এতদিন জমে ছিল তাই জেগে উঠেছে তীব্রতায়, যেন কত কাজ বাকি পড়ে আছে। ছুটছে পাতি হাঁসের মত বা
বকের মত, বা রাজহাঁসের মত, অথবা নানা মাপ ও নানা আকারের দ্বীপের মত বরফের খণ্ডগুলো কাঁধে নিয়ে।
কী অদ্ভুত দৃশ্য! যেখানে সবকিছু স্থিত স্তিমিত ছিল সেখানে কী অদ্ভুত জীবনের চঞ্চলতা!
শীত চলে গেছে, বসন্ত এসেছে চারিদিকে, রং বেরংয়ের টিউলিপ ফুটতে শুরু করেছে।
একদিন বাইরে হেঁটে হেঁটে ওর বাসায় যাই, মা কাজে, আসবে ৬টার পরে। সোফায় পাশাপাশি বসে, খুব কাছে।
জানালার অন্যপাশে মৃত গাছগুলোতে মুকুল ধরতে শুরু করেছে। ডালাগুলো দুলছে নি:শব্দ নিরবে, শালিকেরা ক্যাঁচর ম্যাচর করছে।
গ্রাচ, ওরা বলে, গ্রাচি বহুবচনে।
“প্রি-লিতিয়েলি গ্রাচি” (শালিকেরা উড়ে এলো) বলে যখন, ওরা বোঝায় বসন্ত এসে গেছে। বাইরে যখন সেই মধুর বসন্ত, ভেতরে বসন্ত উৎরিয়ে চৈত্রের নৈদাঘ। ওর চোখের রং আসমানের রংয়ের সাথে এক ও একাকার, গভীরতা আসমানের গভীরতার চেয়েও বেশি।ত্বকে তার দ্রুত-গলা শুভ্র বরফের রং। আমার চোখ কালো, চুল কালো আর শ্যামদ্রৌপদি শরীর।হয়তো রংয়ের বৈচিত্র, হয়তো অচেনা কোনো রংয়ের সম্মোহন, আমাদের বুকগুলো, আমাদের ঠোঁটগুলো আঠার মত
একে অন্যের সাথে নদী-জল, জল-নদী হয়ে আছে।
মালাইয়ের ঘ্রাণের মত মিষ্টি এক ঘ্রাণ ওর মুখে, কৈশোরের ঘ্রাণের মত নিষ্পাপ।ঠোঁটগুলো ‘মালিনা’ বেরির মত কোমল ও মিষ্টি।
ইসপিস নিসপিস করতল কখন কোন্ ফোকর গলে হারিয়ে গেছে পাহাড় ও ভ্যালির দৃঢ় ও টানটান অশিথিল
উষ্ণ কোমলতায় এবং মটরশুটির
মত মায়া দানারা ঘুমের অলসতা
ভেঙে স্ফিত চঞ্চল হতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। ঠোঁটে ঠোঁটে উপচে পড়ছে মধু। উড়ছে মধুকর, উড়ছে রংয়ের প্রজাপতি আর অনুভূতির
উচ্ছন্ন হামিংবার্ড।
গ্রাচি হৈ চৈ করছে।
এবং সেই শব্দে আমার ঘুম টুটে যায়, কয়েকটি মিনিট হতবুদ্ধির কুঝ্বটিকায়
বুঝে উঠতে পারি না আমি কোথায়, এখানে, না ওখানে?
না অন্য কোথাও?
“তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তোমাকেই পেলাম স্বপ্নে। জানতাম যদি এ শুধুই স্বপ্ন, আমি কি ঘুম থেকে জাগি?“
(অনো নো কোমাচি)
আগস্ট ১৭,২০২১