You are currently viewing পিপুফিশু – ১৬ || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু – ১৬ || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু || আলী সিদ্দিকী

কিস্তি-১৬

অর্পিতায় লালনীল পদাবলীর রঙধনু

আমার খুব বোরিং লাগছে। স্কুল থেকে আসার পর একদম একা একা লাগে। আন্দ্রেইনা চলে গেছে আরকানসাসে, ম্যাগধা আর ক্রিস্টিনারা চলে গেছে অন্য স্কুল ডিস্ট্রিক্ট-এ। এখন একমাত্র সাথীই হলো আমার কাছের বন্ধু। ওর মনে খুব কষ্ট। ওর বাবা ওদের পুরো ফ্যামিলিকে ফেলে বাংলাদেশে গিয়ে নাকি আবার বিয়ে করেছে। একটা স্টুপিড! ওর বড়ো দুই ভাই আর মা সারাক্ষণ কষ্ট করে। অনেক কষ্ট করে ওর মা ফ্যামিলি চালায়। আন্টির দিকে তাকাতে আমার খুব খারাপ লাগে। সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগে সাথীর সামনে আব্বু যখন আমাকে আদর করে। তখন সাথীর মুখটা মলিন হয়ে যায়। সে তো বাবার আদরটুকু পায় না। আব্বুটাও এসব খেয়াল রাখেনা। কাজ থেকে ফিরেই আমাদেরকে পাগলের মতো আদর করে। বলে, আমার বাচ্চাগুলোকে সকাল থেকে দেখিনি। চিৎকার, হইচই করে আদর করাটা আব্বুর স্বভাব। আম্মু একেবারে আব্বুর বিপরীত। আম্মুর প্রকাশটা অনেকটা অর্কের মতো। মুখে কথা বলবে, হাসবে, খুনসুটি করবে আর অংশু অবিকল আব্বুর ডুপ্লিকেট। আমি যে কেমন তা বুঝতে পারি না। কখনো মনে হয় আব্বুর মতো হইচই করে বেড়াই আবার মনে হয় আম্মুর মতো নিভৃতে থাকতে ভালোবাসি। আবার এও মনে হয়, আমি আব্বু-আম্মু দু’জনকেই ধারণ করেছি।
আমার আব্বু আম্মু দু’জনই ওভারপ্রোটেক্টিভ। এটা করবি না, ওর সাথে মিশবি না, এভাবে চলবি না, এটা খাবি না, এ জামা পরবি না- এমন হরেক রকম ’না’ এর সমষ্টি হলো আমাদের তিনজনের প্রটেকশন। এই তো আদিব মিডল্ স্কুলে যাবে আব্বু বললো, অর্পিতা তুমি ওকে গাইড দিয়ে নিয়ে যাবে।
তুমি কি আদিবকে বেশী বোকা মনে করো আব্বু?
না তা নয়, আব্বু হাসে, তুমি তো আগে গেছো, তোমার যেসব মিসটেক হয়েছিলো আদিবের তা যেন না হয় আর কি!
তুমি চিন্তা করো না আব্বু, আমি বোঝাই, ও নিজেকে সামলে নিতে পারবে।
তাই যেন হয়, আব্বু দীর্ঘশ্বাস চাপে, ও একটু কম বুদ্ধিমান-।
আমেরিকায় আমাদের আত্মীয় স্বজন কেউ নেই, দু’চারটা বাঙালী পরিবারের সাথে মিশতে গিয়ে হাজার রকম ফ্যাসাদে পড়তে হয়েছে আমাদের। কয়েকজন বান্ধবী পেয়েছিলাম মিডল্ স্কুলে। কিন্তু মনের দিক থেকে ওরা অনেক সংকীর্ণ। অহঙ্কার, ঈর্ষা আর ওভারএক্সপোজ-টাই ওদের কাছে বেসিক। এসবই ওদের জেনুইনিটি। কয়েকজনের বাসায় গিয়ে আমার চোখ অনেক খুলে গেছে। ওদের বড়ো ভাইয়েরা কেমন যেন কুকুরের চোখে তাকায়, দুয়েকজন তো রীতিমতো পিছু নিয়েছিলো। আমি ছায়া মাড়ানোই বন্ধ করে দিয়েছি। তাছাড়া বাঙালী সংগঠন করতে গিয়ে কিছু বাঙালী ফ্যামিলির আমাদের বাসায় আসা যাওয়া বেড়েছিলো। ক’দিন যেতে না যেতে এক আঙ্কেল আন্টি আব্বুকে বলে বসলো, আপনার মেয়েটা আমাদের দিয়ে দিন।
শুনে আমি চমকালাম। আব্বুর দিকে তাকিয়ে দেখি তার হাসিমুখটা পাল্টে গেছে। ভয় পেলাম রাগ করে কিছু বলে ফেলে কিনা। কিন্তু আব্বু বললো সম্পূর্ণ ওল্টো কথা।
সে চিন্তার সময় এখনো হয়নি ভাই, আব্বু মুখে হাসি ফোটাতে চাইলো, আগে পড়ালেখা শেষ করুক তারপর দেখা যাবে। তাছাড়া ওর জীবনের ব্যাপারে আমি কেন সিদ্ধান্ত নেব? ওর ভালোমন্দ ও বুঝবে। আমি ওর পছন্দের জনের কাছেই ওকে তুলে দেবো সময় হলে।
এরপর থেকেই ঐ আঙ্কেলরা আমাদের বাসায় আর আসেন না। আব্বু বলে, বুঝলিরে মা, সবাই ধান্ধাবাজ। এসব লোকদের সাথে মিশতেও রুচি হয় না।
এই হলো আমার আব্বু। একেবারে স্ট্রেইট ফরোয়াড। কাউকে তোয়াজ যেমন করেনা তেমনি কাউকে গায়ে পড়ে অপমানও করে না। বলে, মনে রাখিস রে মা, মানুষের জীবনে বন্ধু সংখ্যা খুবই কম হয়। চলার পথে অনেককে পাবি, সবাই কিন্তু বন্ধু নয়। সবার সাথে সদ্ভাব থাকবে কিন্তু বন্ধু হবে হাতেগোনা। তাহলেই ভালো থাকবি।
এখন আমার কাছে আব্বুর কথাগুলো সত্য মনে হয়। মেরী নামের যে বন্ধুটার জন্যে অনেক কিছু করেছি, এমনকি আমার লেখাপড়ারও ক্ষতি করেছি, তার ইদানীংকালের আচরণ আমাকে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রথমে আমি কষ্ট পেয়ে কেঁদেছি নীরবে, সারাক্ষণ মন খারাপ করে থেকেছি। নিজের রুমের বাইরে এসে সবার সাথে বসিনি কিছুদিন। সবাইকে এড়িয়ে চলেছি। কিন্তু আব্বু যেন সব টের পায়। আমার মন ভালো করার জন্যে নানা রকম চেষ্টা করে।
বলে, তুই মুখ আধাঁর করলে যে আমার দুনিয়াটা আধাঁর হয়ে যায় তা বুঝি এখনো বুঝিস না?
আমার টুনটুনিটা পাখা মেলার জন্যেই ছটফট করছে? সময় হলে তো আমিই তোর আকাশের দুয়ার খুলে দেবোরে পাগলী। এখন একটু হাসতো দেখি -।
তখন কি আর না হেসে পারা যায়!
এসব ভাবতে ভাবতে আমি হেসেই ফেললাম। আর অমনি নীচে আব্বুর গলা শোনা গেলো। নিয়মমত আবির আর আদিবকে আদর করেই আমার ডাক পড়ে। এই মা, মা’রে – বলে দরাজ গলার ডাকটা আমার সবচেয়ে প্রিয় সুর, অপার আনন্দ। আমি চুপ করে সে ডাক শোনার অপেক্ষায় রইলাম। এক মিনিট, দুই মিনিট করে পাঁচ, দশ মিনিট হয়ে গেলো আব্বুর গলা শোনা যাচ্ছে না। আমি হাতের বইটা বিছানায় রেখে টিভি অফ করে নীরবে সিঁিড়র মাথায় দাঁড়িয়ে রইলাম। একমাত্র মুড অফ থাকলে আব্বু ঘরে ঢুকে চুপ হয়ে থাকে। আজকেও সেরকম কিছু হয়নিতো ?
সবাই বলে আমেরিকায় ফার্স্ট জেনারেশনের আশা আকাঙ্খার বলি না দিলে নেক্সট জেনারেশন টিকতে পারে না। কথাটা আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি। আব্বু একজন স্বাপ্নিক মানুষ। দেশ নিয়ে, দেশের মানুষ নিয়ে কতো রকম স্বপ্নের কথা শুনি তার কাছে। এখানের অন্যান্য বাঙালী মুসলমানদের মতো আব্বু আম্মুর মধ্যে কোন ধর্মীয় গোঁড়ামী নেই। আব্বু বলে, মানবতাই মানুষের সত্যিকার ধর্ম। বিশ্বের মানুষকে ধর্মই বিভক্ত করে ফেলেছে, আর তাই এতো অশান্তি। জীবনে কিছু করতে হলে মানুষের জন্যেই করা উচিত।
আর এই মানুষের জন্যে কিছু করার একটা প্রচন্ড তাগিদ আব্বুর মধ্যে দেখতে পাই। দেশের গরীর মানুষদের জন্যে, আত্মীয় স্বজনদের জন্যে কিছু একটা করতে হবে-এমন ভাবনা নিয়ে সারাক্ষণ একটা অস্থিরতার মধ্যে তার সময় কাটে। সবচেয়ে বেশী অস্থির হয়ে ওঠে দেশে মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্থানের কথা ভেবে। গত বছর ১৭ই আগস্টে সারাদেশে এসব মৌলবাদীরা একযোগে বোমা হামলা করলে আব্বু একেবারে রেগে যায়। বলে, কিছুলোক নিজেদের ক্ষমতার লোভে এসব নরপশুদের লাই দিয়ে মাথায় তুলেছে। এদের বিষদাঁত এখুনি ভেঙে না দিলে বাঙালীর কপালে অনেক দুঃখ আছে।
এটিএন বাংলায় রক্তাক্ত মানুষের ছবি দেখে আমরা সবাই সত্যি সেদিন আঁতকে উঠেছিলাম। এদের বিরুদ্ধে আব্বু সব সময় লিখে থাকে। যদিও সংসারের কারণে খুব একটা লেখা হয়ে ওঠে না। কিন্তু যতটুকু সময় পায় তা নষ্ট করে না। তাছাড়া আমরাই শুধু জানি, ছাত্রজীবনে মৌলবাদীদের কাছ থেকে পাওয়া তার বামহাতের আঘাতটা মাঝেমধ্যে তাকে খুব কষ্ট দেয়। বামহাতের কনুইয়ের অবশ স্থানটি শরীরে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটালে তীব্র ব্যথায় কষ্ট পায় আব্বু। আর তার এই কষ্ট পাওয়া অইসব নরপিশাচদের জন্যে আমাদের মনে জাগায় লেলিহান ঘৃণা। আদিব আবির বিষয়টা তেমন না বুঝলেও আমি জানি এসব ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে আমাকে একদিন কিছু করতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে নীচে নেমে দেখি আব্বু সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে, আবির তার হাতে গরম শেঁক দিচ্ছে, আদিব মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
কি হয়েছে আব্বু? আমি হাঁটু ভেঙে বসলাম।
প্রচন্ড ব্যথারে মা, ইচ্ছে হচ্ছে হাতটা কেটে ফেলি- ব্যথাতুর গলায় বলে আব্বু।
অমন করে বলে না আব্বু, আমি হাত ধরলাম, তোমার এখনো অনেক কিছু করা বাকী আছে।
সে বুঝি আর হবে নারে মা, আব্বু উঠে বসার চেষ্টা করে, তোদের জন্যেই এখন আমার বড়ো চিন্তা।
তোমাকে বেশী চিন্তা করতে হবে না, ডাক্তারের সাথে কথা বলে এটার একটা বিহিত করো আগে।
বলেই মনে পড়ে গেলো আব্বুর হেলথ্ ইন্স্যুরেন্স নেই। কোম্পানী থেকে ইন্স্যুরেন্স না পেলে এদেশে চিকিৎসা করা বড়ো মুশকিল, অনেক টাকার ধাক্কা। ব্যক্তিগত ভাবে ইন্স্যুরেন্স কিনতে গেলে প্রতিমাসে অনেক টাকা গুণতে হবে। এমনিতেই বাড়ী কেনার পর থেকেই টানাটানি লেগেই আছে, তাই বাড়তি খরচের ব্যাপারে আব্বু-আম্মুকে অনেক হিশেব করে চলতে হচ্ছে। ইস্ আমি যে কখন আব্বু-আম্মুকে একটু হেল্প করতে পারবো !
আব্বু ভাত রেডি করি?
করবি? কর মা।
প্রায় প্রতিদিনই আব্বু আমাদের খাওয়া রেডি করে ডাক দেয়। আজ তাকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে হলো না। আম্মু তো বিকেলে কাজে থাকে। উইকএন্ডে ছাড়া আম্মুকে আমরা পাই-ই না। আমরা তিনজনের জন্যে আব্বু বিকেলে বাসায় থাকে। অন্যদের মতো পার্টটাইম করে না। তাহলে হয়তো টানাটানিটুকু কমতো কিন্তু আমরা তিনজন একদম একা হয়ে যেতাম। আর এতে অনেক সমস্যা দেখা দিতো। আমরা মূলতঃ একবেলা ভাত খাই। স্কুল থেকে আসার পরে চারটা হতে পাঁচটার মধ্যে আমরা খেতে বসি। রাতে সামান্য নাস্তা করি। তাই বিকেলের খাওয়ার সময়টা আব্বু উপভোগ করে।
সারাদিনের শেষে এই যে তোদের নিয়ে খেতে বসেছি এটা আমার জন্যে কতো আনন্দের বাবা-মা হবার পর তোরা বুঝবি, আব্বুর চোখজোড়া আনন্দে ছলছল করে।
তার এই উপলব্ধি আমাদের মনকেও ছুঁয়ে যায়।
আব্বু এসো খাবে, টেবিলে সব নিয়ে এসে ডাকলাম।
আসো আব্বু, আদিব আর আবির দু’হাত ধরে আব্বুকে টেবিলে নিয়ে আসে।
আব্বু আর আদিব আবিরকে নিয়ে ভাত খেলাম। খেতে খেতে আব্বু ঘরের গুমোট ভাবটা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো।
তা আদিব, কেমন লাগছে মিডল্ স্কুল?
নট সো গুড -।
হোয়াই?
টু মাচ হোমওয়ার্ক।
ও তো করতেই হবে, আব্বু আবিরের দিকে তাকায়, তোমার কি অবস্থা নিউ ক্লাসে?
মিস্ রবার্টস সো মীন, নো বডি লাইকস্ হার।
এ সময় ফোন বেজে উঠলো।
তোর আম্মু, আব্বু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে।
আমি ছুটে গিয়ে ধরলাম।
হ্যালো আম্মু, আমরা খাচ্ছি, আব্বুও। আম্মু , আব্বু খুব সিক, হাতে প্রচন্ড ব্যথা। তুমি চলে আসো না আম্মু। নাও, আব্বুর সাথে কথা বলো।
না না তেমন কিছু না, আব্বু আম্মুকে সান্ত¡না দেবার চেষ্টা করলে আমি বাধা দেই।
আম্মু, আব্বু তোমার কাছ থেকে হাইড করছে, অন্য ফোনের রিসিভার অন করি আমি।
তুমি তো জানই, আব্বু হাসার চেষ্টা করে, আমি পেইন কিলার খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে নিচ্ছি। তুমি নাস্তা করেছো ?
না, করবো- আম্মু জবাব দিলো, তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও।
ঠিক আছে রাখি।
ফোন রেখে আবার খেতে বসলাম আমরা। আমি জানি খাওয়ার পর আব্বু কম্পিউটার খুলে বসবে। দেশের নিউজ পেপারগুলো পড়ে বিবিসি’র খবর শুনে তারপর নিজের লেখা লিখতে বসবে। যদি কোন টাচি নিউজ থাকে তাহলে আব্বু আমাদের ডেকে দেখাবে। যেমন ক’দিন আগে ড. ইউনুস নোবেল প্রাইজ পাওয়াতে আব্বু এমন খুশী হয়েছিলো যে, ঘরে একেবারে হইচই ফেলে দিয়েছিলো। আম্মুকে চিৎকার ডেকে নিয়ে এটিএন বাংলার নিউজের সামনে বসিয়ে দিয়েছিলো।
দেখলে, বাঙালী জাতি হলো একটি অমিত সম্ভাবনাময় জাতি- উচ্ছ্বাসে উদ্বেল হয়ে ওঠে আব্বু, আজ থেকে আমাদের বিশ্বমুখ হলো ড. ইউনুস।
আমি তো কখনো ড. ইউনুসের নাম শুনিনি, তাই অবাক হয়ে আব্বুর আনন্দোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাবতে লাগলাম, দেশের কথা শুনলে মানুষ যে এতো খুশী হতে পারে তা আব্বুকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। নিজেকে বাঙালী বলতে গর্ব বোধ করে আব্বু। দেশের কথা, ভাষা আন্দোলনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহীদদের কথা বলতে পারলে আব্বু – আম্মু সুখানুভব করে। তাদেরকে দেশ নিয়ে এতো উৎফুল্ল হতে দেখে অবাক হয়ে ভাবি, দেশকে কেন আমি কিংবা আদিব- আবির তেমন উপলব্ধি করি না ? দেশের আত্মীয়-স্বজনদের কথা মনে পড়ে, মাঝে মধ্যে কথাও বলি। কিšত্তু সব মুখগুলো কেমন ঝাপসা, ছবিগুলো কেমন যেন অচেনা। আমাদের বাড়ীর ছবিও কেমন অস্পষ্ট মনে পড়ে। বাংলা চ্যানেল আর নাটকের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ দেখি তা আমার কাছে সম্পূর্ণ অচেনা এক দেশ, অপরিচিত মানুষের মুখ। আমেরিকার আবহের সাথে এসব মুখচ্ছবি কিংবা দৃশ্যচিত্রকে কোন ভাবেই মেলাতে পারি না। আর বাংলাদেশে সারাক্ষণ ঝড় বন্যা, রক্তপাত, হাঙ্গামা দেখে এক ধরণের ভীতিপ্রদ অনুভূতি হয় আমার। নানুর স্ট্রোক হবার পর গত বছর দেশে গিয়ে হাজারো ঝক্কির মধ্যে পড়তে হয়েছিলো আমাদের। আদিব তো অসুস্থ হয়ে আব্বুর টেনশন বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তাছাড়া পাসপোর্টে ভূল এরাইভ্যাল ডেট দিয়ে এয়ারপোর্টের লোকেরা আব্বুর জন্যে আরেকটি ঝামেলা তৈরী করে। তদুপরি আবিরের পাসপোর্টে ওভাররাইটিংয়ের অজুহাতে ট্রাভেল এজেন্সির লোকেরাও ঘাপলা তৈরী করে। আবার ভ্যাপসা গরম, অবিরাম বৃষ্টি, ঘাতক মশা, বিদ্যুত- পানিহীনতা, খানাকন্দময় দুর্গম রাস্তাঘাট আমাদের অল্প দিনের অবস্থানকে দুর্বিষহ করে তুলেছিলো। কেমনে চলে আসবো- যাওয়ার দু’দিন পর থেকেই ভেবে অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।
সব মিলিয়ে পাঁচ বছর পরে গিয়ে দেখা বাংলাদেশকে আমাদের একটুও ভালো লাগেনি।

অর্পিতা ? নীচ থেকে আব্বু ডাক দিলো।
জ্বী আব্বু ?
দেখ কারা এসেছে ?
আসছি।
একপ্রকার দৌঁড়ে নীচে এসে দেখি সুমি আর রথী দাঁড়িয়ে। আমার এ সময়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। গত কয়েক মাসে ওরা দু’জন আমার খুব কাছের হয়ে উঠেছে। ওরা দু’জনের জীবনে রয়েছে দু’রকমের কষ্ট। আপনাদের আরেকদিন তাদের কষ্টের কথা জানাবো। এখন আমরা গান শুনবো, ড্রইং করবো, মুভি দেখবো আর স্কুলে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে কলবল করবো।
ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি। সুমি আমার সাথে নাইন গ্রেডে আর রথী হাইস্কুলে টেন গ্রেডে।
হাই, আমি দু’জনকে নিয়ে ওপরে চলে এলাম।
আব্বু আদিব আর আবিরকে নিয়ে বেসবল মাঠে চলে গেলো।

****************************