You are currently viewing পিপুফিশু, কিস্তি-৩ ||  আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু, কিস্তি-৩ || আলী সিদ্দিকী

 

পিপুফিশু

আলী সিদ্দিকী

কিস্তি-৩

বিশ্বমেলার সৌরভে

নিজের হাতে রান্না করে খাওয়া এক ঝকমারি। রান্না করতে গেলে সবসময় আমার মা’র দুষ্টুমীর হাসিমাখা মুখটা মনে পড়ে। একপ্রকার বিরক্তিমাখা অস্বস্তি নিয়ে রান্নার আয়োজন করতে গিয়ে যখন নাস্তানাবুদ হই তখন যেন মা হেসে কুটি কুটি হয়। যেন বলছে, কিরে খোকা কি করছিস্? রান্না? ওম্মা! তুই বুঝি রান্নাও করতে পারিস্? মাংস, মাছ, কোরমা আর পোলাও? তা এমন কুঁজো হয়ে আছিস কেন? শীত করছে বুঝি?
শীত লাগছে? সত্যি কেমন শীত শীত লাগছে। মনে হলো নিশ্চয় ঘরের হিটার অন করতে ভুলে গেছি। কিন্তু হিটার টার্মিনাল ছুঁয়ে দেখি হিটার যথারীতি অন করা আছে। মনে হয় বিয়ারের কারনে একটু নেশা হয়েছে। হয়তো শরীরের বাঁধনটা একটু ঢিলে হয়ে আছে এ মুহূর্তে। কিন্তু মা কি করে তা দেখতে পেলো? সেই তিন বছর আগে কয়েকদিন জ্বরে ভুগে মা মারা গেলো। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি মা এভাবে মারা যাবে। বড় আপারা আমার কথা মতো শহরের বড় ডাক্তারই দেখিয়েছে। কিন্তু ডাক্তার কিছু বুঝে ওঠার আগেই একরাতে মেজর স্ট্রোক হয়ে মা চলে গেলো। স্ট্রোক হবার দু’দিন আগে ফোনে কথা হয়েছিলো মা’র সাথে। ফোনে মা আমার সাথে দুষ্টুমী করছিলো। আর পাশে বসে সবাই হাসাহাসি করছিলো।
খোকা আমার বয়েস কতোরে?
ধরো, ত্রিশ বত্রিশ – । আমিও দুষ্টুমী করলাম।
ত্রিশ বত্রিশ, না? মার অসুস্থ ভাঙা ভাঙা গলায় হাসির আভাস, তোর বড়ো’পা’র বয়েস তাহলে কতো?
এই ছাব্বিশ সাতাশ- ।
ও মা! বলিস কি তুই? মা শব্দ করে হাসলো, তাহলে তোর বয়েস কতোরে খোকা?
ধরো বারো তের -। আমি মজা করলাম।
ভালোই বলেছিস খোকা, মা আবারও হাসে, ছোট থাকলে অনেক ভুলত্রুটি মাফ পাওয়া যায়। চালাকিটা ভালোই শিখেছিস বাপের কাছ থেকে।
মা! আমি অনুযোগ করি। কারন বাবাটা হাফ প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে অনেকদিন। বয়েসও হয়েছে সত্তরের উপরে। একেবারে অস্থি চর্মসার অবস্থা দেখে এসেছি। দোর্দন্ড প্রতাপে যিনি বিশটি বছর চেয়ারম্যানী করে এসেছেন তাকে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে তা কি কখনো ভেবেছেন? মানুষ যা ভাবে না তা-ই হয়। অর্ধমৃত বাবার কথা ভাবলে আমার খুব কষ্ট হয়। তাই মা’র কথাতে ক্ষুন্নতা প্রকাশ করলাম।
হয়েছে বাবা, ভুল হয়েছে- মা অপর প্রান্তে নিজেকে শুধরে নেবার ভান করে, তা শোন খোকা- ।
বলো মা -।
আমাদের কিন্তু বেলা ফুরিয়ে এসেছে -।
এসব কেন বলছো মা – আমি বাধা দিলাম।
শোন খোকা, তুই বড়ো হয়েছিস। জীবনের পথ চলতে শিখেছিস। এটাই আমার সবচেয়ে বড়ো পাওয়া। মা একটু থেমে দম নেয়, নিজের পছন্দ মতো মেয়ে বিয়ে করে সংসারী হবার সময় হয়ে গেছে তোর। আমাকে দেখানোর ইচ্ছে হলে তুই শিগগির জানিয়ে দে, আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলি, এখন রাখি।
সেদিন মা ঝট করেই রেখে দিয়েছিলো ফোন। আর আমি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবার আগেই ছট করে চলে গেলো মা। এমন হতভাগ্য আমি, মাকে শেষবারের মতো দেখারও সুযাগ পেলাম না।
সেই সিদ্ধান্ত আজো নেয়া হলো না। আদৌ হবে কিনা সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত নই।
একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসতে চাইলো বুক ছিঁড়ে। তাকে বুকেই চাপা দিয়ে মিউজিক অন করে দিলাম।

দুম দুম দুম!
দরোজায় সজোরে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। পাশের বাসা মনে করে নিজের কাজে মনযোগ দেবার চেষ্টা করলাম। ছ’টা বেজে গেছে। দরোজায় আবার সশব্দে আওয়াজ হলো।
দরোজা খুলে দেখি চাঁদপনা আবির দাঁড়িয়ে।
হেই আবির, কি মনে করে? এসো, ভেতরে এসো- ।
কিছু না বলে আবির ফ্লোর থেকে এক টুকরো কাগজ কুড়িয়ে আমার হাতে দিলো। কাগজটা হাতে নিয়ে লজ্জায় পড়ে গেলাম। তাতে লেখা: আঙ্কেল টু ডে ইজ মাই সেভেনথ বার্থ ডে, য়্যু আর ইনভাইটেড এ্যাট সিক্স ও ক্লক। আই উইল ওয়েট ফর য়্যু। আবির।
দেখি মুখটা দুঃখী দুঃখী করে আবির মাথা নীচু করে আছে। আমার অনুপস্থিতিতে সে কখন চিরকুটটা দরোজার হাতলে লাগিয়ে গেছে কে জানে। আমি যে ঝড়ো বাতাস ঠেলে ঘরে এসে জনের ডাক শুনে তড়িঘড়ি বেরিয়ে গেছি তাতে ওর কাগজের টুকরোটা চোখে পড়েনি।
ওকে মাই বয়, আমি ওকে স্বাভাবিক করার জন্যে আদর করে দিলাম, তুমি ঘরে যাও, অই উইল বি দেয়ার ভেরি শর্টলি।
এখনো কেক কাটিনি আঙ্কেল- সে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো।
আমি আসছি -। আমি আমার নিজের জন্ম তারিখটাই জানি না। মা-বাবা কারো তারিখটা মনে নেই। সার্টিফিকেটে যে জন্ম তারিখটা আছে তা সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর, আমার এক শিক্ষকের দেয়া। আর এই অনুমিত তারিখ নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। তাছাড়া আমাদের পরিবারে কখনো কারো জন্মদিন নিয়ে আনন্দ করতে দেখিনি।

বাইরে তাকিয়ে দেখলাম বরফের তোড় ধরে এসেছে। ম্যানেজমেন্টের লোকেরা পায়ে চলার পথটুকু পরিষ্কার করে দিচ্ছে। ভেরি গুড !
একা ঘরে থাকি। একা একাই কাটাই বেশীর ভাগ সময়। আশপাশের দুয়েকটা পরিবারের সাথে টুকটাক মেলামেশা ছাড়া তেমন কারো কাছে আমার যাওয়া হয়ে ওঠে না। ওয়াই বিল্ডিংয়ে সপরিবারে থাকেন আফসার ভাই। উনি এবং বিশাখা ভাবী বড়ো অমায়িক। দু’জনেই প্রাণখুলে কথা বলেন। অন্যদের মতো তাদের মধ্যে কোন জড়তা নেই। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে একপ্রকার হইহুল্লোড় করে সময় কাটান তারা। তাদের সাহচর্যে গেলে মনে হয় আমি যেন আপনজনদের মাঝেই আছি। অর্পিতা, আদিব আর আবির। তিনটা প্রাণ চঞ্চল শিশুর সাথে আফসার ভাইও যেন এক শিশু। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার প্রায়ই ডাক পড়ে। আমিও চেষ্টা করি উপস্থিত থেকে আনন্দটুকু পেতে। আবির আর আদিব তো প্রায়ই খেলতে খেলতে আমার বাসায় চলে আসে। আবিরটা আবার আমাকে একটু বেশী পছন্দ করে। যখন তখন চলে আসে। আমারও ওর সাথে খেলতে খেলতে কিংবা কথা বলতে বলতে ছোট বেলায় চলে যেতে ইচ্ছে হয়। সেই আবিরের জন্মদিনটা ভুলে গেলাম কি করে! না হয় ভুলে গেছি কাজের চাপে। কিন্তু ওর দরোজায় লাগিয়ে যাওয়া স্লিপটাও চোখে পড়লো না! কিন্তু এখন ওকে কি দেয়া যায়? গাড়ী নিয়ে বরফ ঠেলে ওয়ালমার্ট কিংবা সিয়ার্স এ যাওয়া এখন সম্ভব নয়। কি করি কি করি . . . ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়লো, আরে আমার কাছে তো একটা পঞ্চাশ ডলারের গিফট কার্ড আছে, ওটা দিলে ও ভীষণ খুশী হবে।
রান্নার আয়োজন বাদ দিয়ে ঝটপট তৈরী হয়ে নিলাম। নতুন কেনা ডিজিটাল ক্যামেরাটা নিতে ভুল করলাম না।

বাব্বা! এতক্ষণে আসা হলো?
বিশাখা ভাবীর উল্লসিত কন্ঠে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো। ঘরের ভেতর একঝাঁক শিশু আনন্দে মেতে আছে। আফসার ভাই তাদের ইনডোর গেম-এ লাগিয়ে দিয়েছেন। সবসময় দেখেছি ছেলেমেয়ের জন্মদিনের অতিথিরা হয় শিশুর দল। তারা হুল্লোড় করে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমেরিকান, আফ্রিকান, ভিয়েতনামীজ, হিস্পানিক, ইন্ডিয়ান আর বাঙালী ছেলেমেয়েরা যেন পুরো পৃথিবীটাকে এ মুহূর্তে আফসার ভাইদের ঘরে নিয়ে এসেছে। ড্রইংরুমটাকে বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে জমকালোভাবে। ডাইনিং টেবিলে রাখা হয়েছে বিচিত্র রংয়ে তৈরী বড়োসড়ো একটা কেক।
সবসময় দেখি আফসার ভাই আর বিশাখা ভাবী ছেলে মেয়ের পেছনে বিস্তর খরচ করেন। ভিডিও গেমস্, নতুন নতুন বাইক, সবসময় নতুন নতুন জামাকাপড়, জুতো, রোলার স্কেট, স্কুটার, আর আমেরিকান খাওয়া দাওয়া। তাদের একটাই কথা: আমরা অভাবী দেশের মানুষ। ছোটবেলায় অনেক আনন্দ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। ওদের কেন করবো? তাছাড়া ওরা এদেশে বড়ো হচ্ছে, এদেশের সবকিছুর সাথে ওদের খাপ খেয়ে চলতে হবে। ছোটকাল থেকে চেপে চেপে রাখলে ওরা মানসিকভাবে হীনমন্যতায় ভুগবে। আমরা তা চাই না।
অনেকে অবশ্য আড়ালে মুখ মোচড়ায়, উনাদের একটু বেশী বেশী। কিন্তু আমারও মনে হয়েছে উনারা মন্দ কিছু বলেন নি। উনাদের এই উদার দৃষ্টিভঙ্গী আমার ভালো লাগে।

কিছুদিন আগে শুনেছিলাম মসজিদের হুজুর আবিরকে মারার কারনে আফসার ভাই তিন ছেলেমেয়েকেই আরবী পড়া থেকে নিয়ে এসেছেন। তার একটাই কথা: বিরূপ পরিবেশে ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার জন্যে পাঠিয়েছি। আরবী ওদের বাস্তব জীবনে কোন কাজে আসবে না জেনেও পাঠিয়েছি। ছেলে মেয়েরা ওতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তাই হয়তো পড়ায় অমনযোগী হয়, সমবয়েসীদের সাথে খেলায় মেতে ওঠে। এজন্যে মারতে হবে? বলতে হবে, বেয়াদব? আর যেখানে স্কুলের টিচাররা ছেলেমেয়েদের প্রচন্ড আদর করে খেলাচ্ছলে পড়ায় সেখানে বেতের ব্যবহার কি অপরাধ নয়? এব্যাপারে কমপ্লেইন করলে একেবারে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে। ভাই আমি যদ্দুর পারি ঘরে পড়াবো। ওতেই চলবে।
আফসার ভাইয়ের এসব ছাঁচাছোলা কথাবার্তায় অনেকে ক্ষুন্ন হন। অনেকে বলে, উনি ভীষণ একরোখা। আর ধর্মের ব্যাপারে সমালোচনায় অনেক সময় বিধর্মীদেরও ছাড়িয়ে যান। এইতো গত কিছুদিন আগে বাঙালী গ্রোসারীতে উনার সাথে দেখা হলো। আরো অনেকে সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায় ছাপানো বিভিন্ন সংবাদ নিয়ে আলাপ করছে। বিশেষতঃ লাদেনের ভিডিও ক্যাসেটে দেয়া হুমকি আর সাদ্দামের ওপর সম্ভাব্য হামলার বিষয় নিয়ে একেকজন একেকভাবে মতামত দিচ্ছে।
-দেখুন এসব হচ্ছে ভাঁড়ামী, বিল চুকিয়ে বেরুনোর মুখে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন আফসার ভাই, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি অধর্মেরই নামান্তর। কোন ধর্মই পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারেনি। পারবেও না। ধর্মও একটা পলিটিক্স। এতোদিন পলিটিক্সটা ছিলো কমিউনিজমের বিরুদ্ধে খ্রীস্টান আর মুসলমানদের যৌথ লড়াই। এখন কমিউনিজমের পতনের পর তা রূপ নিয়েছে খ্রীস্টান আর মুসলমানদের মধ্যে লড়াই। খ্রীস্টানরা আগেও ধুয়ো তুলেছিলো গণতন্ত্রের, এখনো তাই। আর মুসলমানরা (তাদের বিপ্লবী অংশ!) ধুয়ো তুলছে ধর্মযুদ্ধের। দেখবেন আগে পরে গণতন্ত্রীদেরই জয় হবে। কারণ আধুনিক প্রযুক্তিতে বলীয়ান গণতন্ত্রীরা সর্বতোভাবে শক্তিশালী। তা শুধু মূর্খরাই অস্বীকার করে। আর মুসলিম দেশগুলোর দিকে তাকান, সেখানে মুষ্টিমেয় শাসকগোষ্ঠী জগদ্দল পাথর হয়ে বছরের পর বছর চেপে বসে আছে। সিংহভাগ মানুষ পড়ে আছে দারিদ্রসীমার নীচে। কি আশা করেন সেখান থেকে?
আফসার ভাইয়ের তীব্র কন্ঠে উচ্চারিত কথাগুলোর ন্যায্যতা কেউ অস্বীকার করেনি সেদিন। আমারও এমন সোজা সাপটা বক্তব্যের জন্যে উনাকে ভীষণ ভালো লেগেছিলো। সত্যিইতো, মুসলিম দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা কি দেখি ? এখনো সে-ই মান্ধাতার আমলের রাজকীয় নতুবা জবরদস্তিমুলক শাসনের নিগড়ে বন্দী সেখানকার মানুষ। বুদ্ধিবৃত্তি আর আধুনিক প্রযুক্তিতে অমুসলিম দেশগুলো যেখানে অনন্য সাফল্য অর্জন করছে সেখানে মুসলিম দেশগুলো পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায় মানুষকে অন্ধকারের গহবরে আটকে রেখেছে। সেখান থেকে কি আশা করতে পারে পৃথিবী? আফসার ভাইয়ের এ সমালোচনা আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। সে জন্যে তাদের সান্নিধ্য আমার ভালো লাগে।

আজকের আবিরের জন্মদিন সে সুযোগ করে দিয়েছে। আমি গিফট কার্ডটা আবিরের হাতে দেয়ার সাথে সাথে সে তা খুলে চিৎকার করে উঠলো।
ওয়াও, এ টাতো গিফট কার্ড, সে উল্টে পাল্টে দেখে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে, মা আঙ্কেল আমাকে ফিফটি ডলার দিয়েছে -।
বলো কি? বিশাখা ভাবী চোখ বড়ো করে তাকান আমার দিকে, এ কষ্টের দেশে মানুষকে কষ্ট দিতে চাই না বলে ভাই জন্মদিনে তেমন ঘটা করিনা।
ও কিছু না ভাবী, আমি হাসিমুখে বলি, আবির খুশী হয়েছে এটাই আমার আনন্দ।
থ্যাঙ্ক য়্যু ভাই, আফসার ভাই কাছে এগিয়ে এলেন, তা এখন এসো কেক কেটে অনুষ্ঠানটা শেষ করি।
শুনে ছেলেরা হৈ হৈ করে উঠলো। আমি কেকের ছবি, আবিরের বন্ধুদের আর দেয়ালের সুদৃশ্য আলপনার ছবি তুললাম। সবাই সমস্বরে ’হ্যাপী বার্থ ডে টু য়্যু, হ্যাপী বার্থ ডে আবির’ বলার সাথে সাথে সাতটি মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিলো আবির। আমি ঝটপট দৃশ্যগুলোকে ক্যামেরাবন্দী করে নিলাম। কেক খাওয়ার অপূর্ব দৃশ্যটুকু সত্যিই মনে রাখার মতো। একে একে আবিরের বন্ধুরা ওকে কেক খাওয়ালো, আবির ওদের খাইয়ে দিলো। এরপর বিশাখা ভাবীর হাতের সুস্বাদু খাবার যখন টেবিলে রাখা হলো আমি বুঝি ঝট করে দেশের বাড়ীতে চলে গেলাম। একাকিত্বের প্রবাস জীবনে নিজের অপটু হাতের রান্না খেতে খেতে জিভে বুঝি চর পড়ে গেছে। ইলিশের দোপেঁয়াজা, পাঙ্গাসের পেটি, গোরুর ভূনা মাংস আর চিকেন কারীর ঘ্রানে আমার রসনা বুঝি অসংযত হয়ে পড়ে। সাথে আছে পিজা হাটের পিজা আর সোডা। যদিও আমি পেটুক স্বভাবের নই, তবুও অনেকদিন পর একটা ভুরিভোজনই করে ফেললাম।
আমার রান্না অতো ভালো না ভাই, তবু চেষ্টা করেছি- বিনয় ঝরে বিশাখা ভাবীর গলায়।
তা বলে আপনাকে প্রশংসা করে কৃতিত্ব দেবো এটা ভাববেন না, আমি দুষ্টুমী করলাম।
ও মা, কি কিপটে মানুষ! ভাবীও কপট ভঙ্গী করলেন।
বিদায় নিয়ে বরফ ধোয়া রাস্তা মাড়িয়ে যখন ঘরে ফিরলাম তখন আকাশে ফিকে চাঁদ লুকোচুরি খেলছে উড়ো মেঘের সাথে। এলার্ম দিয়ে লেপের নীচে ঢুকতে ঢুকতে খরচ হয়ে যাওয়া আজকের দিনটাকে একটু রিওয়ন্ড করার চেষ্টা করলাম। আর আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।

*************************