You are currently viewing পাঁচটি কবিতা /হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাঁচটি কবিতা /হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পাঁচটি কবিতা / হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ধরে থাকলে 

ধরে থাকলে বুঝতে পারি আমিও কোথাও যেন একটা বসে আছি। অথচ ভরদুপুরে বেরিয়েছি। কেউ ডাকেনি। আমিও ডাকিনি কাউকে। ছক কি জিনিস জানি না। পা ছাড়লে আর কি কিছু দরকার পড়ে! সময় জানি না। গাছও গণনা করিনি। তবুও মনে হয় এমনটাই তো ভেবেছিলাম। চোখের সামনে পট বদলের মতো একের পর এক কিছু কি গ্রহণ করতে পেরেছি? অঙ্ক না মিললে দু’হাত মুঠো করে চোখ বুজে অনেকটা হেঁটে গেছি। হাওয়ায় জামা টান ধরে। হাত হাঁ থাকলেও মনে হয় এও এক চর্চিত পথ।

সম্পর্ক 

গাছের সঙ্গে আগুনের কি সম্পর্ক আমি জানি না। আর সেটা খুব একটা দরকারিও নয়। আগুন তো দেখা যায় না। আসলে গাছের কাছে এসে তাকে তো নিজের পরিচয় দিতে হয়নি। নিজের বৈশিষ্ট্যেই হাওয়ায় হাওয়ায় কথা হয়। আমরাও বলি —— আলো আলো। কিন্তু সে তো অন্ধকারের ঘরদুয়ার এখনও ঠিক ঠিক চিনে উঠতে পারিনি বলে। অন্ধকারকে পড়তে যে আলো হওয়া দরকার তা এখনও পর্যন্ত আমাদের জানা হয়ে উঠলো না। আমরা সেদিনই অন্ধকারে গাছ বসাবো যেদিন আমাদের বিশ্বাস জন্মাবে যাবতীয় কথার শেষে একটু অন্ততঃ আগুন লাগে যে আগুনটুকু নামের আগে ও পরে থাকলে শুধু নিজের নয়, প্রতিবেশীদের ঘরদুয়ারও একটু গরম থাকে।

তোমার দুয়ার

তোমার দুয়ারে একটা বাক্য লিখব বলে অনেকদিন এলাম। কাদা হয়ে গেছে রাস্তায়। ভেঙে ভেঙে গেছে পা। কি লিখতে চাই জানি না। ঘরদুয়ারের বাক্য ভেবে রাখা যায়? প্রতিদিনের জলযাত্রায় ধরা দেয় সে? আমি তো কিছুই পাইনি। তবুও দুয়ারে আসি। আবার ফিরে যাই না লিখেই। কোথা থেকে শুরু করব? প্রতিদিনই বদলে বদলে যায় জল হাওয়া মাটি। ফিরে এলেও নিজেকে রোজই অপ্রস্তুত মনে হয়। জল দেখি। বাগানের রাস্তা চোখে এসে লাগে। তোমার দুয়ার অনেক দূরে বলে মনে হয়। একজীবন এ পথ পার হয়ে যাবার পক্ষে যথেষ্ট নয়।

ভুলে যাওয়া 

ভুলে যেতে যেতে পার হয়ে যাই জল। যাকে ভুলে যাই তার কি কোনো গোপন ইচ্ছা ছিল? গা হাত পা ভিজে ভিজে মনে হয়। বুঝতে পারি এখনও আমার গা হাত পায়ের কথা মনে পড়ে। স্মরণ করে করে আমি তাদের হাতে পায়ে জল দি। ভুলে গেলে তো তীরে বেজে ওঠে বাঁশি। পড়ে ফেলা যায় ওপারের যাবতীয় জল হাওয়া। ভুলে যাওয়া মানে চৌকাঠের বাঁধনে অভ্যস্ত আমরা চেনা জিনিসদের চোখে পাই না। ভুলে যাওয়া মানে আরও এক গভীর গর্তের কাছে পৌঁছে যাওয়া।

শাসনের ভাবানুবাদ 

সেই কোন সকাল থেকে গাছ দেখছি। কতটুকুই বা দেখেছি অথবা আদৌ কিছু দেখছি বলে কি মনে মনে মেনেছি? বারবার কি মনে হয় নি, আমারই চোখের সামনে আমারই কিছু সবুজের সমর্থন! এখানেও যেন পরপর দাঁড়িয়ে যায় কিছু চোখ। সেও তো আমাদেরই রঙ করা। রঙের ভেতর দিয়ে কতটুকু দেখা যায় সবুজ। বরং সেই রঙের হাত ধরে ডালপালা লতায় পাতায় চলে নিজ রঙের বংশবিস্তার। পথে পথে সবুজের নেই কোনো অলিগলি, যা আছে সব শাসনের ভাবানুবাদ।

**********************************

কবি পরিচিতি 
 
জন্ম ২ জানুয়ারি ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের হুগলী জেলার ধনিয়াখালি গ্রামে। লেখালিখির শুরু খুব ছোটবেলা থেকেই। পেশায় গৃহশিক্ষক হলেও সাহিত্যই চব্বিশ ঘণ্টার ধ্যানজ্ঞান।
প্রকাশিত গ্রন্থ  — তুমি অনন্ত জলধি (কবিতা), মধ্যরাতের সংলাপ (কবিতা), জানলা সিরিজ (কবিতা), চিরহরিৎ ( ই বুক), অস্বীকারের অসৌজন্য উড়ে যাবে আকাশ (কবিতা),  বৃষ্টিদিনে অক্ষরগান (কাব্যনাট্য), বিমূর্ততার অনন্ত প্রবাহে (কবিতা সংক্রান্ত গদ্য), দু এক পশলা মান্না (ছড়া), চার ছক্কায় শচিন (ছড়া)।
সম্পাদিত পত্রিকা : ছায়াবৃত্ত, কাটুম কুটুম।