You are currently viewing নেওমি শিহাব নাই এর কবিতা || ভূমিকা ও অনুবাদ: তূয়া নূর

নেওমি শিহাব নাই এর কবিতা || ভূমিকা ও অনুবাদ: তূয়া নূর

নেওমি শিহাব নাই এর কবিতা || ভূমিকা ও অনুবাদ: তূয়া নূর

মা শোনাতেন তাকে গ্রীক আর বাবা শোনাতেন আরবিয় উপকথা। নিজে এমিলি ডিকিনসন ও হিউজ ল্যাংস্টনের কবিতা শুনতে শুনতে তিনি একদিন কবিতা লিখতে শুরু করলেন যখন তার বয়স ছিল ৬ বছর। নেওমি শিহাব নাই এর জন্মগ্রহণ মিসৌরীর সেন্ট লুইসে ১৯৫২ সালে। তার বাবা একজন প্যালেষ্টাইনী শরণার্থী এবং তার মা ছিলেন জার্মান এবং সুইস বংশোদ্ভূত আমেরিকান। নেওমীর কৈশোরকাল কেটেছে জেরুজালেম এবং টেক্সাসের সান এন্টোনিওয়তে। ওয়েস্ট ব্যাংকের সিনজিল গ্রামে তার দাদীর বাড়ি। তাঁর সঙ্গ নেওমীর জীবনে দাগ কাটে। তিনি সান এন্টোনিওয়ের ট্রিনিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন।

নেওমি শিহাব নাই একাধারে তিনি কবি, লেখক, গীতিকার ও ঔপন্যাসিক। ছোটদের জন্য রয়েছে তার লেখা কবিতা ও উপন্যাস। তার সাংবাদিক প্যালেষ্টাইনী অভিবাসী বাবা আজিজ শিহাবের মতো তিনি বিশ্বাস করেন যে ইহুদি ও আরবরা বাস করতে পারে ভাই বোনের মতো মিলেমিশে। যেমন অনেক আগে থেকেই বাস করে আসছিল। ক্ষমতা ও আধিপত্যের দাপট সৃষ্টি করেছে সমস্যা। তার কবিতায় উঠে এসেছে প্যালেষ্টাইনী জনগণের কথা, বাবার কথা, পূর্ব জেরুজালেমে তার শৈশবের কথা অনেক। নাইন ইলেভেনের পর যে সংশয়, সন্দেহ ও দূরত্বের সূচনা হয় তা নিরসনে কাজ করেছেন তিনি। তিনি সন্ত্রাস বিরোধী কবিতা লিখেছেন। তেমনি আরবদের ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন নাইনটিন গাজল সংকলনে।

শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন অনেক বছর। শিশু কিশোরদের কবিতা লেখায় সাহস ও উৎসাহ দিয়েছেন। তার কবিতা রাজনৈতিক প্রচারে আচ্ছন্ন মানুষের ভুল ধারণা ভেঙে দিতে সাহায্য করেছে।

তিনি প্রতিদিন লিখেন কিছু না কিছু। তার কবিতার উপজীব্য হল সাধারণ বিষয় থেকে শুরু সংবাদপত্রের হেডিং যা তাকে ব্যথিত করে। তিনি তার মানবিক কথা গুলো তুলে ধরেন কবিতায় সাহসের সাথে। এ ক্ষেত্রে তিনি আপোষহীন। তার অসংখ্য কবিতায় এই সাহসের পরিচয় দেখতে পাওয়া যায়।

তার প্রথম কবিতা সংকলনের নাম Different Ways to Pray। তার অন্যান্য কাব্য গ্রন্থ গুলোর ভেতর 19 Varieties of Gazelle: Poems of the Middle East, A Maze Me, Red Suitcase, Field Trip and Fuel অন্যতম। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে Everything Come Next ও Cast Away. শিশু কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন উপন্যাস Habibi, The Turtles of Oman ও The Turtles of Michigan. তিনি সম্পাদনা করেছেন অনেক গুলো কবিতা সংকলন।

নেওমি তার কাজের জন্য পুসকার্ট সহ অনেক সম্মান ও পুরষ্কার পেয়েছেন।

 

প্রতিদিন

একশো বছর বয়সী আমার পাশের প্রতিবেশী আমাকে বলেছিলেন:
প্রতিটা দিন একটি ভাল দিন যদি তুমি বুঝো!
আমাকে এক মুহূর্ত ভাবতে হয়েছিল।

তিনি আরো বললেন, প্রতিদিন একটা উপহার কেউ তোমার
জন্মদিনের টেবিলে রেখে যায়।
আমাকে বিশ্বাস কর! এমনটা উপলব্ধি নাও হতে পারে
তবে এটা সত্যি।
তুমি যখন হবে আমার বয়সী বুঝবে তখন।

এক যুগ সময় এক বড় সম্পদ।
এটা তোমার ব্যাপার
রঙিন কাগজে মোড়ানো মোড়কটা আলতো করে খুলে
আলোকিত সময় গুলো তুলে আনা
বাক্সের নীচটা দেখতে ভুলে যেও না।

 

উৎসব নেই ফিলিস্তিনিদের

তুমি হয়তো বাগানে যত্ন নিচ্ছো গাছের
অথবা পড়ছো প্রিয় বইয়ের পাতা খুলে,
রান্না করছো নিতান্তই সাধারণ কিছু নিজেদের জন্য,
হাত ধুয়ে ভেজা আঙুল দিয়ে আঁচড়াচ্ছো চুল,
এমন সময় মিষ্টি সাইরেনের সুরে
পাহাড়ের উপর দিয়ে উঠে আসতো সংগীত।

স্তূপ করে রাখা চাল, চকচকে জুতা,
ঘূর্ণি নাচের মাতম।
বাচ্চারা পড়েছে ছোট্ট স্যুটকোট
আর মখমলের পোশাক, সাতচল্লিশ রকমের জর্ডান কাজু বাদাম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে গোল হয়ে।

‘কার বিয়ে হচ্ছে? কে এসেছে ফিরে ঘরে
সমুদ্রের ওপার দূর প্রান্ত থেকে?’

এমন কি এসবের কিছুই তুমি জানো না।
না জেনে খেয়ে ফেলেছো সব খাবার।
চুমু খেয়েছো দুই চিবুকে পাশ দিয়ে গেছে যে হেটে,
ড্রাম চাপড়ায়ে তোমার হাতের তালু হয়েছে লাল।
অবশ্য তাতে তোমার মন হয়েছে পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ
এই আন্তরিক উৎসবে।

‘কোথা থেকে আসে লড়াই
এই গল্পে?’

লড়াই হারিয়ে গেছে অন্য কোন জায়গা থেকে।
এটা এমন নয় যে আমরা পছন্দ করি— খাওয়া, পান করা, লড়াই করা।

দেখো, যখন শিক্ষার্থীরা নিঃশব্দে সমবেত হয়
তাদের নিজেদের ক্লাসরুমে
স্কুলের শেষ দিনটা উদযাপন করতে,
এই ভবনের সদর দরজা তখন উড়ে যায় বোমায়।

চেয়ার গুলো এখন খালি যা মেতে উঠতো কলকাকলিতে।
কলকাকলির বাস ছিলো এখানে
চিকন মুদ্রাগুলোর ঝনঝন শব্দ আসতো পকেট থেকে—
এখন এসব কিছু হয়েছে আড়াল।

আসবে না ঘরের দরজায় এক সাবান বিক্রেতা তার পোশাক পরে,
আসবে না সেই পুরাতন ইতালিয়ান দিয়াশলাইয়ের ফেরিওয়ালা নাবলুসের কারখানা থেকে
বস্তা ভর্তি যাদুর কাঠি নিয়ে।

‘তারা বলে এটা নাকি আমাদের আবাস নয়
যেখানে আমরা অনাদিকাল থেকে বসবাস করে আসছি।
আমাদের তারা মুছে ফেলতে পারেনি।’

হাতে রং করা যুবকদের ছবি গুলো দেখ—
কি নিখুঁত, কি ধীর-স্থির।
বোমা মানুষের জবান থামায়ে দেয় মাঝ পথে।

‘কে বানায় এসব? তুমি জানো কে বানায় এসব?’
পুরনো ট্যাক্সি ড্রাইভার মাথা ঝাঁকায় এদিক ওদিক
জেরুজালেম থেকে জেরিকো পর্যন্ত।
মৃদু স্বরে বলে তারা দেখতে পাবে না
গল্পের পিছনে গল্প,
তারা সবসময় গল্পের পরে গল্পের সন্ধান করে
যার মানে দাড়ায়—তারা কখনই গল্পটা বুঝে উঠতে পারবে না।

যার মানে দাড়ায়—এটা চলতে থাকবে।

‘কি ভাবে দাঁড়াবো আমার তাহলে অনন্তকাল ধরে যদি চলতেই থাকে এমন?
অনেক দীর্ঘ সময় তো পার হয়ে গেছে এর মধ্যে।’

এমনকি এখন কেউ পায় না একটা ছোট দুমড়ানো পোস্টকার্ডও
সমুদ্রের ওপার অনেক দূর প্রান্ত থেকে।

কেউ শুনে না সৈন্যরা আসে রাতে
জলপাই গাছ তুলে ফেলতে শীতল ঘুম থেকে।
উপড়ায়ে ফেলে শেকড়, এটা কখনো শিরোনাম হয় না কাগজে
না আমার দেশে, না তোমার।
কেউ শুনে না ড্রয়ারে রাখা মখমল কাপড়ের গুমরে ওঠা
মৃদু কান্না।

 

চালুনি

আমাদের ইংরেজির শিক্ষক যখন এ বছরের প্রথম
সৃজনশীল লেখার আমন্ত্রণ জানালেন
রান্নাঘরের যে কোন জিনিষ নিয়ে দুই প্রস্থ বর্ণনা দিয়ে,
তখন মাংস কাটার ছুরি বা তেলে ভাজার কড়াইয়ের কথা আমার মনে আসেনি।
ঠিক সেই সময় ভাবছিলাম নরম ময়দা ঝিরঝির শব্দে
চমৎকার বৃত্তাকার একটা স্তূপ করে চালুনির ছোট ছোট ছিদ্রগুলো দিয়ে
ঝরে পড়ছে, আর আমি লিখে ফেললাম।
রোবার্টো হলো ফানেল,
রডা হলো চায়ের চামচ,
আর মাফিনের টিনের পাত্র হলো জিম।
আমাদের লেখা গুলো পড়লাম জোরে জোরে
অ্যাবি হলো ব্লেন্ডার।
সবাই হেলেদুলে অভিনয় করলো, হাসলো
কিন্তু যত বেশী ভাবতে থাকি এ নিয়ে
আমরা যেন সবকিছু মিলায়ে পুরাদস্তুর একটা রান্নাঘর হয়ে উঠলাম,
এই যে দেরাজ, পানি টানার যন্ত্র, শিশ দেয়া চায়ের কেতলি
আর দুই ধারে খাঁজকাটা আঙুর ফলের চামচ,
আমরা যেন সবাই চায়ের খালি কাপ ও ট্রে।
এই হলো রূপকথার সৌন্দর্য যা ভাবনার দরোজা খুলে দেয়, আমাদের শিক্ষক বললেন।
একটা চালুনি কিভাবে বছরের পর বছর আমার পাশে দাঁড়াতে পারে জানতাম না তখন।
যখন খারাপ সময় আসতো
আমি চোখ বন্ধ অনুভব করতাম সে গুলো ঝরে যাচ্ছে ছোট্ট ছিদ্র গুলো দিয়ে।
যখন ভাল সময় আসতো,
আমি চেষ্টা করতাম নরম করে ধরে রাখতে
ঠিক যেমন ময়দা ধরা থাকে চালুনির উপর যতক্ষণ না তুমি হাতল ধরে নাড়া দাও।
সময় থেমে থাকে না, এই সময়ে আমি হয়ে উঠেছিলাম চমৎকার একটা চালুনি
আর আমি ছাড়া কেউ তা জানতো না।

 

আমাদের বিশ্বের সবকিছু ঠিকঠাক বলে মনে হয় না

এক সময় তারা আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে,
আমাদের বাড়িঘর এবং গাছপালা দখল করে নেয়,
সীমানা রেখা টেনে দেয়, ঠেলে দেয় আমাদের সংকীর্ণ জায়গায়।
দর কষাকষি বা চুক্তি বা এমনকি এটা কোন বাস্তব যুদ্ধ ছিল না।

আজকের এই দিন পর্যন্ত তারা দেখানোর চেষ্টা করে এটা যুদ্ধ ছিল।

এটা যুদ্ধ নয় ছিলো অন্য কিছু,

আমরা দুঃখিত তাদের উপর যা ঘটেছিলো
এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।
তোমার ভাবনায় কখনো আসবে না ছোট্ট একখণ্ড জমির মানে ততক্ষণ
যখন কেউ তার দখল নেয় আর তুমি সেখানে আর ফিরে যেতে পারো না।

তোমার পা এখনো চায় সেখানে হেঁটে চলে যেতে।

এখন তুমি তলিয়ে যাচ্ছ বস্তুহীন ধুলোকণার চেয়েও দুঃসহভাবে ,
হারিয়ে ফেলার কষ্টকর অনুভূতি।

এমনি আমাদের হলওয়ের কথা ভেবে আমি কেঁদেছিলাম,
দরজার ভিতর দিয়ে শীতল পাথরের পায়ে হাঁটা পথ।বছরের পর বছর মিলবে না কিছুই।

তারা এসেছিলো সামরিক পোশাকে রাইফেল উঁচায়ে সাথে ঘোষণাপত্র নিয়ে।

লাইফ ম্যাগাজিন লিখেছিলো,
বিস্ময়কর যে কিছু আরবকে এখনো তাদের বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যায়।
সত্যি বিস্ময়কর? আমরা থাকবো কোথায়? পাহাড়ের উপরে?
পুদিনা গাছ এবং ভেড়ার সাথে কথোপকথন, মাটিতে গর্ত খুঁড়ে?

আগে থেকে আমাদের যে বাড়িতে বাস করছিলাম
তখন আমাদের নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অন্য কারোর জন্য সেই বাড়িটাই কেন বেশী প্রয়োজন হয়ে উঠলো?

এই কথার কেউ ব্যাখ্যা দিতে পারে না যথাযথ ভাবে।
কিন্তু তারা খুঁজে পায় কথা বলার অন্য অনেক বিষয়।

 

আমার বাবার আনজীর গাছ

অন্যান্য ফলের ব্যাপারে আমার বাবা ছিলেন একদম উদাসীন
তিনি চেরি গাছের দিকে ইশারা করে বলতেন,
এগুলো দেখো? সব গুলো যদি আনজীর গাছ হত!

সন্ধ্যায় তিনি আমাদের বিছানার পাশে বসে
লোককথার গল্প বুনতেন প্রাণবন্ত ছোট ওড়নার মতো করে।
সবসময় সেই গল্পে অবধারিত থাকতো একটা আনজীর গাছ।
এমনকি যখন বিষয়টা মানানসই নয়, তিনি কোন এক প্রসঙ্গে টেনে ঠিকই তুলে আনতেন।
যেমন— একবার জোহা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময়
দেখতে পেলেন একটা আনজীর গাছ।
অথবা, তিনি তার গাধাকে আনজীর গাছের সাথে বেঁধে রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
অথবা, পরে তাকে ধরলো ও গ্রেফতার করলো,
তার পকেট ভরা ছিল আনজীর ফলে।

ছয় বছর বয়সে আমি একটা শুকনো আনজীর ফল খেয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়েছিলাম।
তিনি বললেন, এটা সেই ফল নয় যার কথা আমি বলেছি!

আমি বলেছি সেই আনজীর ফলের কথা
যা এসেছে সরাসরি মাটি থেকে—আল্লাহর দান!— একটা ডালে ঝুলে আছে ভারাবনত মাটি ছুঁই ছুঁই।

আমি বলছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়, মোটা ও মিষ্টি আনজীর ফল তুলে আমার মুখের ভেতর রাখা।
এই বলে তিনি থামতেন চোখ দু’টো বন্ধ করে একদণ্ড।

কতো বছর পার হলো,
আমরা কতোবার বাসা বদল করলাম কিন্তু কোনটাতেই আনজীর গাছ ছিল না।

আমাদের ছিলো লিমার বিচি, জুকিনি, পার্সলি ও বীটের গাছ।

মা বলতেন একটা গাছ লাগাও না কেন!
বাবা কখনো লাগান নি।

তিনি আধেক মন দিয়ে বাগানের পরিচর্যা করতেন, ভুলে যেতেন পানি দিতে,
বলতেন,ঢেঁড়সটা আরেকটু বড় হতে দাও।

মা বলতেন, দেখ কী স্বাপ্নিক সে, কত কিছু শুরু করে
এবং শেষ করার নাম নেই।

শেষবার যখন বাবা বাসা পাল্টিয়েছিলেন,
আমি একটা ফোন পেলাম একদিন।
বাবা একটা আরবি গান শ্লোগানের মতো করে গাচ্ছে যা কখনো শুনি নি।

কি এটা বাবা?
অপেক্ষা করো যতক্ষণ না দেখো নিজ চোখে।

তিনি আমাকে নতুন উঠানে নিয়ে গেলেন।
টেক্সাসের রাজ্যের ডালাস শহরেরে কেন্দ্রে একটা বাসার,
বিশ্বের বৃহত্তম, সবচেয়ে মোটা, মিষ্টি আনজীর সহ একটা গাছ।

তিনি বললেন, এটা ছিলো একটা আনজীর গাছের গান
তার ফল ছেড়া যেন তুলে নেয়া কোন পাকা মুদ্রা,
যা প্রতীক ও সারা জগতের নিশ্চয়তা
সবসময় ছিলো তার একার।

রক্ত

বাবা বলতেন, একজন সত্যিকার আরব জানে
কিভাবে হাতের তালুতে আটকাতে হয় মাছি।
তিনি ভন ভন করা মাছি মুহূর্তে তালু-বন্দী করে তাঁর কথার সারবত্তা প্রমাণ করে দিতেন;
অতিথি-জন মাছি মারার জালি হাতে নিয়ে তাঁর দিকে
তখন নির্বাক চেয়ে থাকতো।

বসন্তে আমাদের পাম গাছ গুলো সাপের মতো খোসা ছাড়ে।
সত্যিকারের আরবদের বিশ্বাস তরমুজ নিরাময় করতে পারে পঞ্চাশটি উপায়ে
এ সব কিছু পাল্টে আমি নিজের মতো মাপে ছাঁচে ফেলে যুতসই করে নিয়েছিলাম।

একটা মেয়ে কড়া নাড়ে দরজায় বছর খানেক আগে,
একজন ‘আরব’ দেখার খুব ইচ্ছে তার।
আমি বললাম, আমাদের এখানে এমন একজনও নেই।

এরপর বাবা আমাকে ডেকে বললেন, কে ছিলো সে?
‘শিহাব’ মানে উল্কা— ছুটে আসা তারা—
ভীষণ সুন্দর একটা নাম, আকাশের কাছ থেকে ধার করে নেয়া।
একবার বলেছিলাম, মারা গেলে এ সব কিছু কি ফিরিয়ে দিতে হবে?
তিনি বললেন, এটাইতো একজন আরবের মতো কথা!

আজকের কাগজের প্রথম পাতায় একটা শিরোনাম আমার রক্তে জমাট বেঁধে দিলো
ছোট্ট প্যালেষ্টাইনী শিশু ঝুলছে ট্রাকে
বাস্তুহারা আরবিয় ডুমুর, এ এক নৃশংসতা ও ভয়াবহতার ইতিহাস যা খুব ভারী আমাদের জন্য।
কোন পতাকা আমরা দোলাবো বাতাসে বলো?
টেবিলের ম্যাটের উপর নীল সেলাই
আমি ওড়ায় পাথর ও বীজের পতাকা।

আমি বাবাকে ফোন করে সংবাদটা নিয়ে কথা বলি
সহ্য করা তার পক্ষে খুব কঠিন
যা অসম্ভব তাঁর জানা দুটো ভাষার কোনটা দিয়েই প্রকাশ করা।
আমি গাড়ি চালিয়ে গ্রামে ঢুকি, খুঁজি ভেড়া, গরু,
সনির্বন্ধ মিনতি করি ইথারে:
কে কাকে সভ্য বলে?
কাতর হৃদয় দাঁড়াবে কোথায়?
একজন সত্যিকার আরব যে —কি করণীয় এখন তার?

****************************