You are currently viewing ‘দেবযান’–একটি কমলহীরে…/ পারমিতা ভৌমিক

‘দেবযান’–একটি কমলহীরে…/ পারমিতা ভৌমিক

‘দেবযান’–একটি কমলহীরে..

 পারমিতা ভৌমিক

‘দেবযান’ একটি বিশ্রুত ও বিতর্কিত উপন্যাস যেখানে বিভূতিভূষণ সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন তাঁর বিশ্বাসের জগতকে প্রস্তুত করতে। অলৌকিক আর লৌকিকের এমন একত্রীকরণ বোধকরি দ্বিতীয় বিরল । বিভূতি রচনা সাগরে দেবযান একটি স্বতন্ত্রঢেউ—-গোত্রছাড়া, দলছুট । বিতর্কের অবকাশ না রেখেই বলা যেতে পারে দৃষ্টিপ্রদীপ, ইত্যাদি উপন্যাসের ধারা বেয়ে বিভূতিমানস নিজেকে দেবযান রচনার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তবুও একথা ঠিক যে এমন বহুরৈখিক দিক নির্ণয় যা দেবযান কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, তা একেবারে স্বতন্ত্র ও তা বিভূতিভূষণের নিজস্ব অবদান ; অন্য কিছুর ফলশ্রুতি নয়।

বিভূতিভূষণ এর মৃত্যু চেতনার পরিণত ফসল দেবযান ।এখানে একটা চিরন্তন খোঁজ রয়েছে ।প্রশ্ন এই যে মর ও অমর জগতের মধ্যে তফাৎ কতটুকুই বা ?এসব প্রশ্ন মানবমনের শাশ্বত প্রশ্ন, চিরকালীন প্রশ্ন। লেখক এর উত্তর খুঁজেছেন শাস্ত্রে ,উপনিষদে, পুরানে এবং তাঁর নিজস্ব বিশ্বাসের জগতে। শুধু মৃত্যু চিন্তাই নয় গভীর ঈশ্বরবোধ, আধ্যাত্মিক চেতনাও এসে মিশেছে দেবযানের কাহিনীপটে ।গভীর চিন্তা ও মনন ,পড়াশোনার বিস্তীর্ণ ভূমি, নিজস্ব বিশ্বাস, অলৌকিক মায়ার জগত ও তাঁর রোমান্টিক চেতনা দেবযান কে একটি সার্থক উপন্যাস করে তুলেছে। চিরবিচ্ছেদ মুহূর্তে বেদনাকাতর বিভূতিভূষণের স্ত্রী কল্যাণী জানতে চেয়েছিলেন-” দেবযান কি সত্যি?” গভীর প্রত্যয়ে শান্ত উদার স্বরে লেখক জবাব দিলেন-” সত্যি।আমার দেবযানে বিশ্বাস রেখো। আত্মা অবিনাশী।”

মর্ত্য ও অমর্ত্যের cosmic ভূমিতে জলরঙা প্রেমের ছবি এঁকেছেন বিভূতিভূষণ ,এই উপন্যাসে। এখানে উপন্যাস ধর্মের সঙ্গে মিশেছে অলৌকিক বিশ্বাস । তার সঙ্গে তৈরি হয়েছে প্রেমের নতুন এক বিস্তৃত জগৎ।

দেবযানের অন্তর্স্থলে বইছে ত্রিকোণ প্রেমের ফল্গু। মাটির রসে পরিপূর্ণ এক কল্পকাহিনী। পার্থিব কামনা-বাসনার স্তর অনুযায়ী মানুষের অদৃশ্য-লৌকিক জগতে কেবল যাওয়া আসা এবং কামনা তিরোহিত হলে পুনর্জন্মচক্রের আবর্তন থেকে মুক্তির কথা দেবযানের উপন্যাস ধর্মে জারিত হয়ে মানুষকে এক সুস্থিতির আলো দিয়েছে।

দেবযানের নায়ক-নায়িকা, যতীন ও পুষ্পের বাল্যপ্রেমে অভিশাপ ছিল। তারা মিলিত হতে পারেনি পার্থিবজীবনে। কিশোর জীবনের কাম গন্ধহীন সেই প্রেমই পার্থিব বন্ধন থেকে যে মুক্তি দিতে পারে, পুষ্প তার প্রমাণ।বৈষ্ণবীয় প্রেম conceptকে দেবযানে, বিভূতিভূষণ কুশলতায় চিহ্নিত করেছেন ।কিন্তু যতীন আশাকে বিয়ে করে দেহ জীবনের আবর্তে জড়িয়ে ব্যথাহত ও দুঃখিত ।যদিও অসহ্য কষ্ট স্বীকারের মাধ্যমেই যতীনের ,পুষ্পের সঙ্গে দেখা হয়েছে ।যে প্রেম ও স্নেহ সুধারস পরলৌকিক জীবনের বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে বিভূতিভূষণ এঁকেছেন তা আপনাতে আপনিই স্বর্গীয় —-অন্য কোনো স্বর্গের বোধ করি প্রয়োজন নেই।দেবযানের স্বর্গ-নরক রচনা ও কাহিনী বিন্যাসে Dante র  Divine comedy র ছায়াপাত আছে ।লেখক এখানে প্রেমিকা বিয়েট্রিস কে খুঁজতে এসেছিলেন। বিভূতিভূষণকে কেউ কেউ খুঁজেছেন Marie corelli এর রচনা সাযুজ্যে।

বিভূতিভূষণের দেবযানের প্রেক্ষাপটে মহাকাব্যিক বিস্তৃতি আছে এবং সেখানেই নশ্বর, পৃথিবী,প্রকৃতি , অতি-প্রকৃতি বাস্তব পরাবাস্তব প্রেম ও পরিজন এসে একটা বিরাট জীবনের চলচ্চিত্র রচনা করেছেন এরা কেউ স্বতন্ত্র নয়, সঙ্গমিত।

এ উপন্যাসে দেখি ‘মৃত্যুপারে ‘ যতীন সময়ের হিসেব পায়না (দেবযান)। কালের বিচিত্র গতি কি তবে সেখানে স্তব্ধ নাকি ?সে এক অদৃশ্য অগম্য অনুভূতি মনে হয়েছে সদ্যমৃত যতীনের কাছে।এ কি প্রহেলিকা মাত্র?পুষ্প কিন্তু অধিক দিন ঐ দেশে (space/sphere)থেকেছে বলে ইতিমধ্যেই কালের একটা নতুন হিসেবে পেয়ে গেছে। তাই সে যতীনের শ্রাদ্ধের দিনটিকে অনায়াসে চিহ্নিত করতে পেরেছে ।পরলৌকিক স্তরের সপ্তম তল পর্যন্ত বিস্তৃতির কথা, এ প্রসঙ্গেই এসেছে। পরলোকে তবে মন ক্রিয়াশীল এভাবে? একে বলি বিভূতি-বিস্ময়। বিভূতি নিজস্ব কিছু অনুভূতি দিয়ে একটি অদ্ভুত বিশ্বাসের জগৎ তৈরি করেছেন।

এই উপন্যাসের প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো,মোক্ষই কী শেষ চাওয়া?তবে যে , ঠিক মুক্তির মুহূর্তটিতে  পুষ্প বলেছিল,—

” মনে হল ভূমা নয়, অল্পেই যেন সুখ !”যতীনের পরিণত প্রেম ও দেহ বোধ থেকে তৈরী হয়েছিল যে সংসারতৃষ্ণা আশালতাকে ঘিরে , তা ব্যর্থ হয়েছে অথচ যতীনের কামনা সেইদিকেই ছুটেছে ।এও এক জীবন-বিস্ময়।অভয় নামে মাত্র কয়েক বছরের জন্য যতীন পৃথিবীতে জন্ম নেয় ।বসে এক অল্প মেয়াদী জীবন। তা যতীনের অভীপ্সিত ছিল না। স্বর্গের আশ্বাসও পেয়েছিল যতীন, যে প্রায়শ্চিত্ত করে আশা (যতীনের স্ত্রী) পাপমুক্ত হলে আবার আশার সঙ্গে তার পুনর্মিলন ঘটবে।আর ঠিক ঐ পার্থিব কামনার জন্যই যতীনকে জন্মান্তরের আবর্তে পড়তে হলো। পুষ্পের বারণ সে শোনেনি ।

পরলোকে যে দেবদেবী সন্ন্যাসী মুক্তপ্রাণ মহৎ মানুষদের দেখা ও সাহায্য যতীন আর পুষ্প পেয়েছিল সেসব স্বপ্নদর্শন বা অলৌকিক বলে মনে করলেও সে সব যে ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মধ্যে পড়ে, আজকের মেটাফিজিক্স এটা স্বীকৃত । ক্ষিতি দেহ ছেড়ে যাবার পরে যে বায়োপ্লাজমিক দেহ থাকে তা আজ বিজ্ঞান কর্তৃক স্বীকৃত। দৃশ্য (যেখানে স্পন্দন স্থূল) ও অদৃশ্য (যেখানে স্পন্দন সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর) জগৎ —- দুইই আজ সত্যের আলোয় এসে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর তথা ব্রহ্মাণ্ডের জন্মকালে দেখি স্পন্দনই ক্রমশ দৈর্ঘ্য বাড়তে বাড়তে স্থূল হয়েছে। অবশেষে তাই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন উপাদান নিয়ে জড়দেহ ধারণ করেছে। তাহলে অদৃশ্য জগতের অস্তিত্ব নিয়ে কোন বিতর্ক থাকার কথা নয়, তবে এসব জগৎ ঠিক ঠিক দেখা সম্ভব কি-না সে নিয়ে বিতর্ক আছে। এ পথে strong imaginationই একমাত্র “যান” কিনা সে ক্ষেত্রেও সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে।তবু বলতেই হয়, চিত্তের বিস্ফারণ(expansion) সম্ভব এবং সেটি হলেই অলৌকিক দিব্যদর্শন হওয়া অসম্ভব নয়। দেবযানেও সে বর্ণনাই আছে ।

অলৌকিক বলে বস্তুত সেই অর্থে কিছু নেই। ইহলোক ও পরলোক দুইই সত্য। মানুষকেই যদি একমাত্র সত্য ও নিত্য বলে ধরে নিই তবে তারই তো মনের যাতায়াত ও নানা অভিঘাতের ছবিই দেবযানে আছে। মানুষের অন্তর্জগৎ ও বহির্জগতের কথাও বিজ্ঞানে আজ স্বীকৃত ।সৃষ্টিলগ্ন থেকেই ক্রমোন্নত বিজ্ঞান-চেতনার সঙ্গে সঙ্গে পাশাপাশি চলেছে আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের রথ। কল্পবিজ্ঞানেও  আগে কল্পনা ,তারপর ফলিত বিজ্ঞানে তার প্রতিষ্ঠা। এনার্জি বা শক্তির প্রকাশ দেখি, রূপ কি দেখতে পাই ?শক্তির স্পন্দনে যদি মানবের জড়দেহ তৈরি হয় তা হলে সূক্ষ্মের দিকে উজান বাওয়াকে অস্বীকার করা যায় কি?

এসব সরিয়ে রেখেও, বলা যায়, একটা অনন্ত প্রেমধারণা যা পেতে পারি এই দেবযান উপন্যাসে, আর এখানেই দেবযানের সার্থকতা ।

পার্থিব প্রেমের আঁচলটি জড়িয়ে পুষ্প অপেক্ষা করেছিল যতীনের জন্য। যতীন কিন্তু চাইল আশার সঙ্গে তার অপূর্ণপ্রেমের সংসার আবার পূর্ণ করতে। পুষ্প তখন  ,ভাবনা ও কল্পনাতে সৃষ্টি করে রেখেছিল শা গঞ্জের কেওটার ঘাট যেখানে আগের মতই যতীনের পরলোকগত সত্ত্বাকে সে পেতে পারবে। এ থেকে বোঝা যায় এটি ভাবের জগৎ, মানুষের অন্তর্মন এখানে কাজ করে।

উচ্চতর বিজ্ঞান বা সাহিত্য সবটাই প্রথমে অপৌরুষেয় ,পরে প্রতিভাত। মানবমনে যে মুহুর্তে যে ভাবনা উদয় হয় তার অস্তিত্ব ,অযোধ্যার অস্তিত্বের মত সত্য ।একেই আমরা বলি virtual reality.দেবযানের ঐশী ,ঐহিক ও পার্থিব যাত্রার বুনোটে কি বিজ্ঞানের string theory র প্রতিভাস নেই?সে বিশ্বটি কি কোয়ান্টাম বিশ্ব নয়?দেবযানকে একটা সূক্ষ্ম সত্যের ওপর দাঁড় করিয়ে রোমান্টিক চাদর দিয়ে মুড়ে দিয়েছেন লেখক বিভূতিভূষণ।তাই তা কখনও কোনদিনও পাঠককে পীড়িত বা অতৃপ্ত রাখেনি।আজ ও তা সমান সমাদৃত।সমানভাবে আকর্ষণীয়।

দেবযানের গায়ে একটু মাটির প্রলেপ ধরিয়ে দিলেই দেবযান হয়ে যেতে পারে মাধবীযান । পৃথিবীর মাধবীযান। মাটির বদলে দেবযানে  এসেছে আকাশ, সেও কিন্তু নিরালম্ব নয়। মাটির অপরাহ্ণের রঙ লেগে আছে তাতে !

এ উপন্যাসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি সুন্দর মর্ত‍্যকাহিনীকে জড়িয়ে রেখেছে মমতায়, মাধুর্যে, প্রকৃতিতে ,পরিজনে,মহত্বে,কারুণ্যে।এভাবেই এ কাহিনী উদ্ভাসিত।”দেবযান”—এ প্রেমই মুখ্য উপজীব্য। ত্রয়োদশী পুষ্পের ভালোবাসায় দীর্ঘ দশ বছরেও ধূলো পড়ে নি।নিষ্পলক নয়নে সেই ত্রয়োদশী,যখন তেইশ বছরের যুবতী তখনও প্রিয়তম পুরুষটির জন্য পথ চেয়ে আছে স্বর্গলোকে, the blessed demozel (ডি,জি,রসেটি)—এর মতো আগ্ৰহে নীচু হয়ে সে সোনার বারান্দা থেকে,নীচে , মর্ত্যে খুঁজছিল প্রিয়তম পুরুষটিকে। যতীনকে।

আশ্চর্য মন।পুষ্পের হৃদয়কীট হয়ে রয়েছে কিন্তু , যতীনের আশালতা ।এই স্বর্গেও সে সম্পর্কটি বিচ্ছেদের ছায়া ফেলেছে। ঠিক এইখানেই পুষ্প অবিমিশ্র এক মর্ত‍্যবাসিনী, অসপত্ন এক প্রেমপ্রার্থিনী। যতীনকে সে যৌথতায় গ্রহণ করবে কেমন করে? এর চেয়ে মৃত্তিকাগন্ধী প্রেম আর কি হতে পারে ?কিন্তু যতীন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভুলতে পারেনি ।আশালতার উদাসীনতা ও অপ্রেম তাকে ব্যথিত করলেও অবৈধ প্রণয়ের শিকার আশালতার আত্মহত্যা তাকে বিচলিত করেছিল ।

নাড়া দিয়েছিল দুটি পিতৃমাতাহীন শিশুর ভাবনা। স্বর্গ মর্ত্যের সীমানা এখানে কে নির্দেশ করবে? এখানে যে মহাকাব্যিক ব্যপ্তি আছে, তাইই দেবযান উপন্যাসকে ক্লাসিকধর্মী করেছে ।যতীনের নবজন্মের( অভয় জন্ম) আকাঙ্ক্ষা, বর্ষামুখর রাত, মায়ের কোলের আঁচ!এ দেবযান কি শুধুই স্বর্গযান? নাকি মাটির মায়ের টান?

মা আর আশালতা!

মধুর আর বাৎসল্য!

এসব মাটির পৃথিবীর বাইরের কিছু ?এখানেই বিভূতিভূষণের সাহিত্য যতখানি মৃত্তিকাগন্ধী ততখানি লোকোত্তর। পরলোক শুধু একটা নতুন নামরূপ। মূলত সবটাই অবিচ্ছিন্ন দেশে(spece)-র পটে স্থিত।

দেবযান উপন্যাসটিকে  মূলতঃ মর্ত্যযান বলতে হলেও দেখি, বৃত্তগঠনে ও চরিত্রচিত্রণে মর্ত্য সজীবতা ও সংবদ্ধতা এখানে অনেকটা শিথিল। কিন্তু কাহিনীতে এমন একটা পরিচয় ও অপরিচয় এর ঘ্রাণ আছে যা দেবযানকে সাহিত্যের শাশ্বত বেদীতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ।

আমরা আশ্চর্য হই যখন দেখি, অমোঘ বিধানের বোঝা নিয়ে মুক্তির পথে যেতে যেতে কষ্ট পেয়েছে পুষ্প । বুড়ো শিবতলার ঘাট ফেলে যেতে হবে তাকে ? শেষ সান্ত্বনা খুঁজতে হয়েছে তাকে তাই মহান দেবতার আধবোজা স্বপ্নময় দুটি চোখের ছায়াছবিতে। চলে যেতে হবে পুষ্পকে জন্মহীন নিরাশ্রয় লোকে!! সেখানে সে একা অজর অমর আত্মা।পুষ্পর মনে হয়েছে, কিন্তু কি লাভ এতে? ভূমা নয়, পুষ্প ভেবেছে অল্পতেই বোধহয় সুখ !প্রেমবঞ্চিত নারী কণ্ঠে ধ্বনিত এ ক্রন্দন একান্তই মাটির পৃথিবীর।

বিভূতির মাধবী জিজ্ঞাসা(পার্থিব এপ্রোচ) অনুসন্ধিৎসা কি  প্রথম থেকেই তাঁর রচনায় ছিলনা ?দৃষ্টিপ্রদীপেই এর পূর্বাভাস পাই। পুষ্পের গাঢ় ব্যথা , একটা suffocating sentimentality-র মধ্যে পাঠক কে নিঃশ্বাস নিতে দেয় না যেন।

বিভূতি পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় দেবযানকে দু’ভাবে দেখেছেন ১—-এটি একটি রূপক উপন্যাস এবং  ২—-এটি বিভূতিভূষণের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের একান্ত প্রতিবেদন।  তাঁর মতে, সত্যিকারের ভালো প্রতীক ,উপলব্ধির বস্তু, ব্যাখ্যার নয়। একজন সাহিত্যিকের মনোরাজ্যটি অদ্ভুত রকমের আলো-আঁধারির মধ্যে খেলা করে বেড়ায়।

তাই বলতে বাধা নেই, দেবযান প্রধানতঃ মানবিক রসের বলিষ্ঠ উপন্যাস।জড়যুগের বস্তুগত প্রাপ্তির অধীরতা কখনো কামনার রাশ টানতে পারে না। অথচ সেই রাশই টেনে নিতে চাইলেন বিভূতি ।উদ্ভ্রান্ত মানবসমাজকে জীবনযাপনের মহৎ আশ্রয়ে ত্যাগের ও কামনা মুক্তির ক্রমপ্রসারিত স্বর্গে সরিয়ে আনতে চাইলেন তিনি। দেবযানে যতীন দুঃখ-কষ্ট মৃত্যুহীন স্বর্গে বাস করেও ধূলিমলিন পৃথিবীতে জন্ম নেবার স্বপ্ন দেখেছে ।এই পৃথিবীতেই তার প্রেম , প্রতিষ্ঠা চেয়েছে ।দেবযান ,মানবজীবনের এক অদ্ভুত রূপক ছবি‌।

নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ব্যাখ্যাতীত কিছু ঘটনা লেখক বিভূতিভূষণকে অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাসী করেছিল। এসব ঘটনা যেমন প্রমাণ করা যায় না, তেমনি অপ্রমাণও তো করা যায়না । বিভূতি সিংভূমের অরণ্যে ,খাটিয়ায় শায়িত নিজের মৃতদেহ দেখে ছিলেন। এরপর তিনি মাত্র দুই মাস বেঁচেছিলেন। জার্মান ভাষায় এই ধরনের প্রতিরূপ দর্শনকে বলেdoppelganger. মহাকবি গ্যেয়টেও নাকি নিজের এমনই প্রতিরূপ দেখেছিলেন। এসব সত্ত্বেও বিভূতিভূষণের রচনা মানবমুখী।মাবমুখী বলেই তা কালোত্তীর্ণ।

দেবযান-এ প্রতিফলিত সমাজতান্ত্রিক দিকটিও বিশেষভাবে আদৃত ।লেখক বিভূতিভূষণ তৃতীয় বিশ্বের ঔপনিবেশিক কাঠামোয় দারিদ্র‍্যলাঞ্ছিত নানা ভাঙ্গনের ছবিতে পর্যুদস্ত সাধারণ মানুষের জীবনের মুক্তির স্বপ্ন এঁকেছেন দেবযানে।

সেখানে আনন্দময় জীবন প্রবাহ প্রকৃতির মরণজয়ী জাগরণের পটভূমিতে উপস্থাপিত।দেবযানের কল্প স্বর্গেও পার্থিব জীবনের প্রেম প্রীতি ভালোবাসা ও দুঃখ আনন্দকে বিভূতিভূষণ স্বাগত জানিয়েছেন। কল্পরাজ্যে চরম মুক্তি তাঁর পুষ্প তাই চাইল না।বস্তুনিষ্ঠ শিল্পী বিভূতি চেয়েছিলেন একমাত্র প্রকৃতিতেই দারিদ্র অভাব ক্ষুধা অনাহার নেই ।

বিভূতিভূষণের মনোরাজ্যে  একটা আধ্যাত্মিক অনন্তযাত্রার কথা আছে- সে যাত্রা জরা মৃত্যু উত্তীর্ণ হয়ে চলার নির্ভয় ছবি রূপ। সেখানে অনন্ত আকাশ আর নাক্ষত্রিক শূন্য আছে।সে এক অপূর্ব পথ চলা। মহাকবির এপিক যাত্রা! ইউলিসিসের মত। তবে এ যাত্রার গতি ও অভিমুখ মঙ্গলের দিকে।জাগতিক দুঃখ উত্তীরণের ঋজুপথ।তাঁর সমকালে দেশ মুক্তির রাজনৈতিক আন্দোলন ও গভীরতর স্তরে তারই তাৎপর্য হীনতা দেখেছিলেন বিভূতিভূষণ।অলোক নিবিষ্টতায় দেখেছিলেন শুধু মানুষই বাঁচে আর প্রকৃতি বাঁচে ।শত শত সাম্রাজ্যর ভগ্নাবশেষ পরে, ওরা কাজ করে।

১৯৪২-এর আগস্ট আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ততা ও ব্যর্থতা তাঁর চোখ এড়িয়ে যায়নি। মনে হয় ওই আসন্ন শেষের পটভূমিই দেবযানের উপযুক্ত সূতিকাগার। কল্পনার মুক্তি রাজ্য এই দেবযান রচনাতেই ।জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছের মধ্যেই মাদকতায় আনন্দের ছবি-Magic of lifeকে বিভূতিভূষণ এ উপন্যাসে দেখেছেন ।

ছোট কে বড় করে দেখা ও পাওয়ার মতো একটি বলিষ্ঠ মাইক্রোস্কোপ হল দেবযান।১৯৪৩ এর মন্বন্তর এর ছবি ছায়া ফেলেছে দেবযানে। দুর্ভিক্ষের মধ্যে আত্মারা কাজ করছে যাতে দুর্ভিক্ষে মৃত ব্যাক্তিরা দিশাহারা হয়ে না যায়। এক মেয়ে আত্মা জানিয়েছে জার আইভ্যানের রাজত্বকালে এক কৃষক পরিবারের কন্যা সে। রাশিয়ার কৃষক চিরদুঃখী।এরাই দুর্ভিক্ষ কবলিত হয় ।

ডাঃ আর্মান্ডো মানুষের দুঃখ যন্ত্রণার মুক্তির দিশারী হয়েও স্ট্যালিনের সুনজরে ছিলেন না ।গরিবদের জন্য প্রাণ দিয়েছেন তিনি। এসব তো মর্ত্যকাহিনী। বিভূতিভূষণের  দেবযানে গরীব ও কৃষক সমশ্রেণীভুক্ত । উচ্চ লোকের আত্মারা পৃথিবীর মানুষের জন্য কি এক অদ্ভুত টানে কাঁদেন, পৃথিবীতে আবার নেমে আসেন সাহায্যের জন্য।। কি মমত্বময় পরলোকের এইসব উচ্চ আত্মারা।দেবযানে পুষ্প বলেছে-” কলকাতায় আসতে পারিনি, কষ্ট হয়”। মানুষের অর্থলোভ কুচিন্তা অনর্থক বেপরোয়া বিলাসিতা একটা ঘন কুয়াশার পর্দায় পৃথিবীকে ঢেকেছে । “আমরা জানি না , এভাবেই স্বর্গের সাহায্য আসা বন্ধ হয়েছে কিনা, পৃথিবীর পাপ ও লালসায়।

বিভূতিভূষণ চিন্তাকে সূক্ষ্ম বস্তু বলেছেন । তাই দেখি পুষ্পের মনেও দুঃখের ছায়ায় এসে পড়তেই বাইরের জ্যোৎস্না ম্লান হয়ে গেছে। এতেই প্রমাণ হয় মনের প্রফুল্লতা নষ্ট হলে মানসিক সৃষ্টিও ক্ষুন্ন হয়। অদ্ভুত লাগে যখন যতীনের প্রশ্নের উত্তরে পুষ্প বলে যে সে বেঁচে যাবে। মৃত্যুর পরে এই বাঁচার অর্থ কি!? পুনর্জন্ম ?

দেবযান -জীবন-মৃত্যু সমন্বিত পৃথিবী ও প্রেতলোক জড়িয়ে এক কল্পবাস্তবের কাহিনী ।এই জন্ম-মৃত্যুর কক্ষপথে আসা-যাওয়ার আশ্চর্য এক বিভূতি-বিশ্বাস। দেবযানের জগৎ মিথিক জগৎ। এই জগৎ প্রত‍্যক্ষ‍ করেছে সেই যুগ,যখন দেবতারা পৃথিবীতে নেমে আসতেন,মিশতেন মানুষের সঙ্গে, মানুষ ও উঠে যেত ঊর্ধ্বলোকে। এই সেই জগৎ যেখানে স্বর্গের গঙ্গা দেবী শান্তনুর প্রেমে নেমে এসেছিলেন মাটিতে।মিথের জগতে এই আসা যাওয়া কত সহজ ছিল ও দেবতাদের সঙ্গে মিলেমিশে দেবতা হয়ে যাওয়ার সাধনার কথাই মনে হয় বিভূতিভূষণ রূপক-এ প্রতিষ্ঠা করে দেন।

এটি যে একান্ত সত‍্য, এই স্বপ্ন বাস্তবের সত্যতায় যেমন দ্বন্দ্বের প্রশ্ন ওঠে , তেমনি মুক্তির স্বাদ ও ফোটে । এত বছর পরেও তাই পাঠক দেবযান উপন্যাসে লেখক এর ঈপ্সিত ও প্রতিপাদ্য তাৎপর্য খোঁজে এবং তারই সঙ্গে অন্য তাৎপর্য খোঁজে।

এ খোঁজ অনাদি অনন্ত।

স্বপ্নসম্ভব একটি প্রাতিভতাই দেবযানের মূল থিম। কল্পনার এই অবাধ প্রসাধনই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্পস্বর্গ।দেবতা কারা?দুর্জয় দুঃসাহসী পাইওনিয়ার।এরাই কল্পবিজ্ঞানের নায়ক ।মহাকাশ যাত্রীদের মতোই এরা গ্রহে গ্রহান্তরের অসীম অনন্ত ফুটে থাকা নক্ষত্র জগতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়ভুবন খুঁজে বেড়াচ্ছেন । এখানেই জগতের প্রচন্ড বিজ্ঞান শক্তির বিকাশ -বিভূতি এসব কথা বলেছেন, পার্থিব ভালোবাসার পূর্ণবীক্ষা থেকে।শক্তি এখনো মানুষের পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয় । শুধু চিন্তা দিয়ে বস্তু সৃষ্টি হয় একথা দেবযান ই শুনিয়েছে।মানব চেতনা যত নিখুঁত যন্ত্র হবে গীর্বাণীর প্রকাশ সেখানে তত সুন্দর হবে। দেবযানে একটি কল্পবিজ্ঞানের অদ্ভুত ছবি পাই-সেই ঘর খানার ছবি ওর মনে তো আছে -ওর চিন্তা সেই ছবির সাহায্যে ঘরটা গড়েছে। এটি কি বিশেষ কল্পবিজ্ঞান নয়?দেবযানে একের পর এক বর্ণনায়- সৃষ্টি হয়েছে কল্পবিজ্ঞানের জগৎ-” আকাশের রঙ এখানে নীল নয়, অনেকটা ধূসর মিশ্রিত বেগুনী, কোনটার সোনালী, ফুল-ফল যেন রঙীন আলো দিয়ে গড়া __”,,,”এদেশে বাতাসে একটা অদ্ভুত শান্তি ও আনন্দের বার্তা -,একটা বিচিত্র জীবন উল্লাসের ঈঙ্গিত ।”নিজেদের কল্পলোক নিজেদের কল্পনা থেকেই গড়ে ওঠে। পৃথিবীছাড়া বহু জীবলোক ,বহু জগত সেখানে আছে ।এখানে মানুষ পৃথিবী থেকে বেশি দীর্ঘজীবী ।এসব গ্রহে জীবে জীবে যুদ্ধ, রক্তপাত নেই। মানুষ এখানে পরার্থে জীবন উৎসর্গ করে ।সহজে খাদ্য মেলে প্রকৃতির কাছে।জড়ের প্রতি লোভ নেই ।কল্পবিজ্ঞান এখানে স্বর্গের সমীপবর্তী।

দেবযানের আরেকটি সম্পদ আছে- আধ্যাত্মিকতা।ব্রহ্ম ও আত্মা মিলিয়ে এক প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গী। অকল্পনীয় বিরাট বিশ্বের বিস্ময় বোধ! সেখানে মানুষ স্বাধীন বলেই অন্যকে সে পরাধীনতায় বাঁধেনা। বস্তুত জগৎটাও এক জাগ্রত স্বপ্ন ছাড়া আর কি? যোগনিদ্রামগ্ন যে বিরাট, যে স্বরাট, তিনিই  স্বপ্ন দেখছেন নিরন্তর, তাঁর স্বপ্নে আমরা সবাই আছি‌। সে ঘুম ভাঙ্গা আর মহাপ্রলয় একই কথা। নিরীশ্বরবাদীরা অস্বীকরণের মধ্য দিয়ে অস্তিকেই খোঁজে- সে পথ, ঘুরপথ। বিভূতিভূষণ গভীর আস্তিক্যে সেই খোঁজ পেতে চেয়েছেন দেবযানে সোজা পথে।

দেবযান প্রেতলোককে চিত্রিত করেছে। এ উপন্যাসে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তাই মৃত্যুর পরে কি আছে? ভারতীয় দর্শন তাকে এর উত্তর খোঁজার পথে আলো দেখিয়েছে। শ্বেতাশ্বতর ও ভগবৎগীতা থেকে বিভূতি উদ্ধৃতি দিয়েছেন–

“সর্বজীবে সর্ব সংস্থে বৃহন্তে

অস্মিন হংসো ভ্রাম্যতে ব্রহ্মচক্রে!”

“ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচি-স্নায়ং ভূত্বা ভবিত্বা বা ন ভূয়ঃ।

অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো

ন হন্যতে হনমানে শরীরে”।

উপনিষদীয় আলোর বিচ্ছুরণে বিভূতি স্পষ্ট দেখেছেন দেবযানকে। একবার অচিন্ত্য সেনগুপ্তকে তিনি জানিয়েছিলেন-” প্রেতলোকের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ করার কিছুই নেই”‌। পৃথিবীর ঊর্ধ্বে বহুস্তর বিদ্যমান ।বিশ্বে বহু লোক, বহুস্তর, গ্রহ আছে মৃত্যুর পর সেখানে জীবের গতি হয়।এইসব,supermundane world’s আছে এবং ঋষি রাই এই প্রাচীন যুগে এদের অস্তিত্ব জেনেছিলেন। বৃহদারণ্যক ঈশোপনিষদে এদের কথা আছে ।”দেবযান” শব্দটি কৌষীতকি উপনিষদ থেকে আহৃত।

দেবযানে দেবতার মুখে শুনতে পাই অবস্থা অনুসারে জীবের গতাগতি নির্দিষ্ট হয়”। অনন্ত উন্নতিতে জীবাত্মার অধিকার তিনিই দিয়েছেন ,যিনি এই বিশ্ব রচনা করেছে। গভীর উপনিষদ ভাবনায় জারিত হয়ে বিভূতি বলেছেন —-“উচ্চতর সাধনা মানুষকে দেবযান পথে উন্নততর লোকে নিয়ে যায়”। মর্ত‍্যলোকেরও দূরপারে ব্রহ্মাণ্ডের বহিস্থিত যে ব্রহ্মলোক সেখানে যারা যান, ভগবানের সঙ্গে তারা এক হয়ে যান। তিনি কোথায় নেই ,?বাষ্পকণায় ,জ্যোতিঃকণায়,পৃথিবী সমূহের প্রতি তৃণ,প্রতি ধূলিকণায় তিনি।”

নরকের বর্ণনাতেও উপনিষদীয় ভাবনা গ্রহণ করেছেন বিভূতিভূষণ-‘এই ভীষণ অন্ধ তমিস্রা — একশ বছর পর্যন্ত হয়তো টিকে যায় সেই অন্ধকার, কোন পাপী আত্মার কাছে”। দেবযান প্রসঙ্গে জনৈক আলোচক বলেছেন-“দেবযানে মানুষের দেবতা হয়ে ওঠার সে কথা আছে।” সেই বিবর্তনবাদের উপর অরবিন্দের বিবর্তন ভাবনার প্রভাব বর্তমান।” বিভিন্ন স্তর (অতি মানবীয় শক্তি) পারম্পর্যের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে।” উচ্চ মানবিক শক্তির অধিকারী না হলে এই অতি মানবীয় স্তরের অধিবাসীদের দেখা এবং তাদের ভাষা বোঝা সম্ভব নয়”।

দেবযানে রয়েছে অফুরন্ত আনন্দ রসের সন্ধান। অলৌকিকতার পথে পথে রয়েছে অনৈসর্গিকের নিসর্গ ধ্যান। পথিক দেবতা এখানে বলেছেন –ওই রজনীর তারা লোকের ব্যপ্তির মধ্যে বনপুষ্পের সুবাস ও এই নব অদ্ভুত গ্রহের বনানীর নির্জনতা ও বন বিহঙ্গের কূজনের মধ্যে ,বিশ্বাসের, রহস্যের মধ্যে আমি তার নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকবার প্রার্থনা জানিয়ে ছিলাম মনে মনে।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ধারণায় মৃত্যুই ছিল বিভূতিভূষণের প্রিয় বা অপ্রিয় একটি অবসেশন। মৃত্যুর পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বুঝতে হয় দেবযান এর স্বাদ। তবে এ মৃত্যু অমৃতময়।ক্ষিতি ভারহীন বায়োপ্লাজমিক দেহের নির্ভার যাত্রার নাম দেবযান।

আলোচনার ইতি টানতে হয় একসময় । তাই শুধু বলে যাই, “দেবযান” আসলে খনি থেকে তোলা একটি হীরকখণ্ড। যুগান্তরে তার খোদাই চলছে। যত কাটা হচ্ছে ততো বহু কৌণিক বিচ্ছুরণ ঘটছে।এর শেষ নেই। অনন্ত জীবনের সাথে সমান্তরাল জনপ্রিয়তায় ও জিজ্ঞাসায় বয়ে চলেছে দেবযান প্রবাহ।দেবযান আসলে একটি কমলহীরে, তার থেকে ঠিকরে পড়েছে যে আলো তাই জীবনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং একে আমরা বলব বিভূতি -কাল্ট।।