You are currently viewing দুই বিদ্রোহীর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

দুই বিদ্রোহীর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

দুই বিদ্রোহীর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আজ বাংলা সাহিত্যের দুই বিদ্রোহী কবি-সাহিত্যিকের জন্মদিন। দুইজনই ছিলেন বৃটিশ উপনিবেশবিরোধী ও সাম্যবাদী বিপ্লবী এবং সাহিত্যিক। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সোমেন চন্দ। জীবনের  বিস্তৃতিতে সৌমেন চন্দ (১৯২০-১৯৪২) কাজী নজরুল ইসলাম থেকে অনেক কম সময় পেয়েছেন। কিন্তু সমচেতনায় সমুজ্জ্বল দুই দ্রোহী সত্তা বাংলাসাহিত্যে সমহিমায় অবস্থান করে নিয়েছেন। সোমেন চন্দের তুলনায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের অবস্থান অতি উচ্চে। আমরা শুধু দুইজনের কর্ম, সাহিত্যে তাঁদের অবদানের দিকটি বিবেচনায় রেখে যৌথভাবে তাঁদের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।

 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম

বিংশ শতাব্দীর বাংলাসাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম ধুমকেতুর মতোই আবির্ভূত হয়েছেন। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার নজরুলের অগ্নিবীণা হাতে প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে ও কাজেও “বিদ্রোহী কবি”। উচ্ছল যৌবনের অগ্নিবীণায় উৎসারিত সাম্যচিন্তা তাঁর মানসজগতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো। সাম্যবাদী কবি হিসেবে তিনি যতোটুকু উজ্জ্বল, যতোটুকু অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক তা ধর্মকেন্দ্রিক রচনায় খুঁজে পাওয়া যায় না। দুই পরস্পরবিরোধী চৈতন্যের অধিবাসী নজরুল সাম্যবাদী  হিসেবেই অধিকতর দেদীপ্যমান। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতার অনন্য দৃষ্টান্ত হলো তিনি প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন এবং চার সন্তানের নাম হিন্দু ও মুসলিম উভয় নামেই নামকরণ করেন। যেমন: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ(বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ। 

কাজী নজরুল কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী। এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন।

ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত । মধ্যবয়সে তিনি পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। আজ বিদ্রোহী কবির জন্মদিনে তাঁরই ভাষায় বলতে হয়, “আমি চির বিদ্রোহী বীর, বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।”

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

============

 

সোমেন চন্দ

বাইশ বছরের টগবগে তারুণ্য। সোমেন চন্দ- এক অনন্য নাম। ‘তরুণের প্রেরণা’, ‘গল্পকার’, ‘সাহিত্যিক’ কিংবা ‘বিপ্লবী’, যে নামেই তাঁকে ডাকা হোক না কেন, খুব অল্প বয়সের সব কিশোর ও তরুণের জন্য আদর্শ তিনি। বড় স্বল্পায়ু নিয়ে তিনি এসেছিলেন এই পৃথিবীর বুকে। তাঁর জন্ম ১৯২০ সালের ২৪ মে ঢাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গার পশ্চিম পাড়ে শুভাড্ডা ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে, মামার বাড়িতে (তথ্য ভেদে নরসিংদী জেলার আশুলিয়া গ্রামে)। তবে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সোমেন চন্দ (জীবনী গ্রন্থমালা) বইয়ে হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, ‘সোমেন চন্দের জন্ম কেরানীগঞ্জ থানার অধীনস্থ পারজুয়ার এলাকায় অবস্থিত ধিতপুর গ্রামে।’ তাঁর বাবার নাম নরেন্দ্রকুমার চন্দ, আর মায়ের নাম হিরণবালা। সোমেন চন্দের পিতামহের নাম রামকুমার। নরেন্দ্রকুমার চন্দের আদিনিবাস ছিল তৎকালীন ঢাকার অন্তর্ভুক্ত নরসিংদী জেলার বালিয়া গ্রামে। 

সোমেন চন্দের পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারে। বিশেষ করে বাবার কাছে। তারপর পড়েন অশ্বিনীকুমার দত্ত মহাশয়ের কাছে। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে ১৯৩০ সালে তাঁকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয় পুরান ঢাকার পোগোজ হাই স্কুলে। এই স্কুল থেকে ১৯৩৬ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তি হন ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে। কিন্তু খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে অর্থাৎ ডাবল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই পড়াশোনায় ইস্তফা দেন।

বই খোঁজার আগ্রহ থেকেই সোমেন চন্দ পাঠাগারমুখী হন শিশুকাল থেকে। ঢাকার জোড়পুল লেনের প্রগতি পাঠাগার ছিল সাম্যবাদে বিশ্বাসী মানুষদের পরিচালিত। পাঠাগারে পড়তে পড়তে সোমেন বাংলা সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং অনুরক্ত হয়ে পড়েন মার্কসবাদে। ১৯৩৭ সালে সোমেন প্রত্যক্ষভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই সময় তিনি কমিউনিস্ট পাঠচক্র প্রগতি পাঠাগারের পরিচালকের দায়িত্ব নেন। এ সময় তিনি ও তাঁর পরিবার পুরান ঢাকার দক্ষিণ মৈশণ্ডিতে থাকতেন। প্রগতি পাঠাগারের পরিচালক হন তিনি ১৯৩৮ সালে। এ সময় তিনি বিপ্লবী সতীশ পাকড়াশীর মতো আজীবন বিপ্লবী শিক্ষকের রাজনীতি ও দর্শনের পাঠ নেন। রণেশ দাশগুপ্তের সান্নিধ্যে থেকে বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, ম্যাক্সিম গোর্কি, মোপাঁসা, রঁলা, বারবুস, জিদ, মারলোসহ আরো অনেকের লেখা বই পড়েন। 

 

স্কুলজীবন থেকেই গল্প লিখতেন সোমেন। তখন তাঁর প্রকাশিত লেখা বা নতুন লেখার কথা পরিবারের কেউ জানতেন না। ১৯৩৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশ পায় সোমেনের প্রথম গল্প ‘শিশু তপন’। এরপর আরো উল্লেখযোগ্য কিছু লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ওই বছরেই প্রকাশিত হয়। এই ১৭ বছরেই বাংলাদেশে বন্যার যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভোগ, তা নিয়ে সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে প্রথম উপন্যাস ‘বন্যা’ লেখেন সোমেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় নবশক্তি পত্রিকায়।

সোমেন ‘প্রগতি লেখক সংঘ’-তে যোগ দেন এবং যুক্ত হোন মার্কসবাদী রাজনীতি ও সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে। বাংলা সাহিত্যে প্রথম গণসাহিত্যের ওপর কাজ করেন তিনি। ১৯৪১ সালে সোমেন চন্দ প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। অনন্য মেধাবী সোমেন চন্দের লেখা সাধারণত প্রগতি লেখক সংঘের সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক সভাসমূহে পাঠ করা হতো। ১৯৪০ সালে তাঁর ‘বনস্পতি’ গল্পটি ‘ক্রান্তি’ পত্রিকায় ছাপা হয়। ১৯৪১ সালের দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে সোমেন গল্প লেখেন দাঙ্গা। মৃত্যুর পর বিভিন্ন গল্প সংকলন ছাপা হয় তাঁর। ১৯৭৩ সালে রণেশ দাশগুপ্ত তাঁর গল্পসমূহের একটি সংকলন সম্পাদনা করেন। তাঁর ‘ইঁদুর’ গল্পটি অনূদিত হয় বিভিন্ন ভাষায়। সোমেন চন্দ পুরস্কারের প্রবর্তন করে কলকাতার বাংলা একাডেমি। 

তারুণ্যের গান, সৃষ্টির উন্মাদনা ও বিদ্রোহের অগ্নি জ্বেলে সাহিত্যে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন সোমেন চন্দ। তাঁর সম্পর্কে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘নিজস্ব একটি জীবনদর্শন না থাকলে সাহিত্যিক হওয়া যায় না। সোমেন চন্দ ছিল কমিউনিস্ট। সাহিত্যিক হিসেবেও তার রচনায় নানাভাবে ফুটে উঠেছে কমিউনিজমের জয়ধ্বনি।’

অন্যায়, অত্যাচার, অসঙ্গতি ও অসহায়ত্বের কাছে কখনো মাথা নত করেননি সোমেন। সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। রাজপথে শোষিত মানুষের অধিকার আদায় ও শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার সংগ্রাম আর লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে আনার অবিচল প্রত্যয়ে তিনি ছিলেন ইস্পাতদৃঢ়। সোমেন চন্দের সাহিত্যে ছিল কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষকে ঘিরে। শোষণ-বৈষম্য থেকে মানুষকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন সেই শৈশব থেকে। ইস্পাতদৃঢ় সংকল্প নিয়ে শোষণমুক্তির লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। সোমেন চন্দ এমন একটি মানুষ, যার সৃষ্টি হতাশাগ্রস্ত প্রতিটি মানুষকে জাগ্রত করে নতুন উদ্যমে পথ চলতে সহয়তা করে। বিপ্লবী রোমান্টিসিজম বা প্রথাগত কমিউনিজমের ফ্যাশনের মোড়কে নয়, সত্যিকারার্থে কমিউনিজম ছিল তাঁর প্রেরণা। কমিউনিজমের দর্শনের আলোয় চেতনাকে শান দিতেন প্রতিনিয়ত। কমিউনিজমই ছিল তাঁর মূল জীবনদর্শন। কলম ছিল তাঁর সংগ্রামের পাথেয়। আর খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ ছিল তাঁর বেঁচে থাকার প্রেরণা ও সৃষ্টির মৌলিক কাঁচামাল। খাঁটি কমিউনিস্ট বলতে যা বোঝায়, সোমেন চন্দ ছিলেন তাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ লিখেছেন, ‘সোমেন হত্যার ব্যাপারটি, বিশেষ করে তখনকার পটভূমিতে এবং প্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী। সোমেন ছিলেন সে সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন, সোভিয়েত সুহ্রদ সমিতি, আর প্রগতি লেখক সঙ্ঘের অনেকখানি।’ ১৯৪২ সালে সোমেন চন্দের মৃত্যুর পর কলকাতায় সম্মেলনের সময় প্রগতি ‘লেখক সঙ্ঘের’ নামকরণ হয় ‘ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’। ১৯৪৫ সালে কলকাতায় আবার এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ’।

সোমেন চন্দের মৃত্যু সম্বন্ধে সরদার ফজলুল করিমের স্মৃতিচারণা : ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন বাংলার সব জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্যে ঢাকা শহর ছিল অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্র। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকার বুদ্ধিজীবী, লেখক প্রভৃতি শহরে এক ফ্যাসিবাদবিরোধী সম্মেলন আহ্বান করেন। স্থানীয় জেলা পার্টির অনুরোধে কমরেড বঙ্কিম মুখার্জি ও জ্যোতি বসু সেখানে বক্তা হিসেবে যান। সম্মেলন উপলক্ষে শহরে খুবই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক মহল প্রায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রথম যারা সম্মেলনের পক্ষে, দ্বিতীয় যারা সরাসরি বিপক্ষে, তৃতীয় যারা মোটামুটিভাবে তুষ্ণীভাব অবলম্বন করে নিরপেক্ষতার আবরণ নিয়েছিলেন। শেষোক্তদের মধ্যে প্রধানত কংগ্রেস মতবাদের অনুসারীরা ও দ্বিতীয় দলে ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী, বিশেষত শ্রীসংঘের লোকেরা। যাই হোক, সম্মেলনের দিন সকালে উদ্যোক্তাদের অন্যতম তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দ আততায়ীর হাতে নিহত হন। তিনিই বাংলার ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পরও যথারীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং আমাদের প্রতি আরো লোক আকৃষ্ট হয়।’

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের অসাধারণ উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাই-এর এক স্থানে সোমেন চন্দের কথা উঠে আসে। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হায়াত মামুদের সোমেন চন্দ গ্রন্থটিও উল্লেখযোগ্য। তবুও বাংলাদেশের সাহিত্যে সোমেন চন্দকে খুঁজে পেতে সেলিনা হোসেনের ‘নিরন্তর ঘন্টাধ্বনি’ হাতে নিতে হবে। সোমেন চন্দকে জানতে এ উপন্যাস প্রয়োজনীয়। লেখিকা উপন্যাসটিতে সযত্নে ফুটিয়ে তুলেছেন সোমেন চন্দের জীবনচরিত।

সোমেন চন্দ সাহিত্যেও বিপ্লবের স্রোতধারা আশা করতেন। বিশ্বাস করতেন, সাহিত্য দ্বারা ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করার অনুপ্রেরণা মানুষের মধ্যে সঞ্চার করা সম্ভব। আর সেই লক্ষ্যকে সামন রেখে মানুষের মুক্তির কথা চেতনায় ধারণ করে রচনা করেছিলেন সমাজ পরিবর্তনের কথাশিল্প।

১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকায় এক সর্বভারতীয় ফ্যাসিবিরোধী সম্মেলন আহ্বান করে। তথাকথিত জাতীয়তাবাদী কিছু দল এ সম্মেলন বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে। রেল শ্রমিক সাধারণ সম্পাদক সোমেন চন্দ রেল শ্রমিকদের মিছিল নিয়ে যখন সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ওই দিন ঢাকার সূত্রাপুরে সেবাশ্রম ও লক্ষ্মীবাজারের হৃষিকেশ দাস লেনের কাছে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক পার্টির (আরআরপি) গুন্ডারা তাঁর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। শহীদ হন সোমেন চন্দ।

তিনি রালফ্ ফক্স নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন, সেটি নিম্নে উল্লেখ করা হল।

রালফ্ ফক্সের নাম শুনেছো?

শুনেছো কডওয়েল আর কনফোর্ডের নাম?

ফ্রেদরিকো গার্সিয়া লোরকার কথা জান?

এই বীর শহিদেরা স্পেনকে রাঙিয়ে দিল,

সবুজ জলপাই বন হলো লাল,

মার – বুক হল খালি –

তবু বলি, সামনে আসছে শুভদিন।

চলো, আমরাও যাই ওদের রক্তের পরশ নিতে,

ওই রক্ত দিয়ে লিখে যাই

শুভদিনের সংগীত।

===============