দশটি কবিতা
আল ইমরান সিদ্দিকী
কোথাও যাইনি আমি
এই-যে বৃদ্ধ লোকটি—লম্বা দাড়ি, মাথায় হ্যাট, রংচটা জিন্স, পপলিনের শার্ট, রবিবার চার্চের দিকে যাচ্ছে, এই লোকটিকে আমি দেখেছি আমার দেশেও—মেহেদি-দেয়া দাড়ি, মলিন সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, মসজিদের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। নিউইয়র্কে একবার সাবওয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম, পাশে একটি কালো লোক এসে বসেছিল; ছেঁড়া ও মলিন জিন্স, মলিন কেড্স, শাহজাদপুর থেকে বসুন্ধরা যাবার সময় কতবার দেখেছি তাকে—লুঙ্গি পরেছে, শার্টের পকেট ছেঁড়া, জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে লোকাল বাসে। আজকের আমাকে আমি দেখেছিলাম কেবল দূর বাল্যকালে, যখন মানুষ যথেষ্ট সৌখিন ছিল, যখন বাড়ির গেটে ছিল বাগানবিলাস, ঘরের সামনে বাগানে ছিল মোরগফুল, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ও পাতাবাহার আর একটু দূরে বড় জবাফুলের গাছ—যখন আমরা ভাত খাবার আগে হাত ধুয়ে প্লেটের পানি গোলাপগাছের গোড়ায় ফেলতাম আর কুকুর লেজ নাড়াতো পায়ের কাছে এসে। কোথাও যাইনি আমি, ওইখানেই আছি, যেখানে আমার কৈশোর, যৌবন, আমার আধেক জীবন সমান্তরাল রেখায় দাঁড়িয়ে আছে।
চোখ
মা আমার, এই দেশে একবার তুমি এসো
বাবাকে নিয়ে
অসংখ্য চেরির ফাঁক দিয়ে
একবার সূর্যোদয় দেখো;
দেখো:
কীভাবে দুপুরে একজন গর্ভবতী ডেফোডিলের সামনে শুয়ে হাসে।
কীভাবে ঝুলন্ত পাখির বাসায় এক কাঠবেড়ালি নিশ্চুপ বসে থাকে।
কীভাবে বালক শিলমাছ একা একা শুয়ে থাকে বালির ওপরে ।
তোমাদের কোনোদিন দেখা হলো না সমুদ্র ও পর্বতমালা!
তোমাদের কথা মনে হলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে
বোলো না আমিই তোমাদের চোখ বিশাল দুনিয়াজুড়ে।
মেঘ-বৃষ্টির এই দিনে
বৃষ্টির দিনে সমুদ্রে গেলে তুমি:
মেঘগর্জন ঢেউয়ের শব্দ ঢাকে
বাতাসে মত্ত ঝাউভরা বেলাভূমি
সূর্য ডুবলো মেঘের কুম্ভীপাকে।
আমার দুয়ারে ছোট ছোট সাদা ফুল;
সর্বশরীর থরথর করে কাঁপে;
এতদিনে হলো আবহাওয়া অনুকূল
টানা সাত দিন পুড়ে গেছে কড়া তাপে।
সাব-আর্বান-জীবনে কত কী দেখি:
দেখিনি যা-কিছু অনেক দেখার ভিড়ে—
ভেজা ডাল ছেড়ে উড়ে চলে গেলে পাখি
কাঁপলো সে ডাল কিছু-ক্ষণ ধীরে ধীরে।
হারাবার ভয় ঘিরছে আমাকে এত
তোমার মমতা আনছে না সান্ত্বনা
মেঘ-বৃষ্টির এই দিনে অন্তত
বোঝা গেলো আর কমবে না যন্ত্রণা!
তোমাকে পূর্ণরূপে আমি পেতে চাই
সান্ত্বনা কিছু হয়তো থাকবে তাতে;
কত যে চড়াই আর কত উৎরাই
সময় ছেয়েছে ঘাতে আর অভিঘাতে।
সাব-আর্বানে শীত এলো
অর্ধেকের মতো দেয়ালজুড়ে এই কাচের জানালা। এপাশে বসে সকাল থেকে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। ওপাশে শীত। খয়েরি পাতা, কয়লা-কালো গাছ, কালো কান্ড, কালো শাখা, কালো প্রশাখা। এত এত ঝরা পাতা গাছ থেকে গাছের গোড়ায়! এত পাতা ঝরে গেল, কিছু নেই আর, সেই না-থাকা থেকেও মন্থরতায় ঝরছে পাতা। নির্জনতা থেকে আরও বিমর্ষতা জন্ম নিচ্ছে এই দুপুরে। তুমি কি কখনও ভেবেছো এই সব দৃশ্য আর রং? দেখেছো রেমব্রান্তের আঁকা প্রতিকৃতি—খয়েরি চুল, খয়েরি পোশাক, খয়েরি নির্জনতার নারী, নির্জনতার নিজস্ব অন্ধকার—ভেবেছো?—যেন সেই নারী, তার পার্রিপার্শ্বিক সব যড়যন্ত্র, সব কোলাহল কালো জলের মতো, শান্ত হয়ে এসেছে, কেবল সে মুদে আছে জলের ওপর একটি অনামা ফুলের মতো।—ভাষা কেড়ে নেয়। এ বেলা কী করে কিছু লেখা সম্ভব বিশাল জানালার এপাশে বসে!
রক্তবীজ
কীভাবে কীভাবে যেন রক্তবীজ সবুজ হয়েছে!
স্বভাব হয়েছে দেখি দুই হাত প্রসারিত রাখা।
জলে ঝুঁকে ছায়া দেখি, পাতাগুলো খুব ধীরে দোলে
পাতায় ফলের ছায়া দুলে ওঠে ফুলের সঙ্কাশে।-
আমার আকাঙ্ক্ষা সব সায়ান-নিখুঁত গাঁথুনির;
বিবিধ বিষাদে ঢাকা পড়ে তবু সহসা স্বরূপে
ফিরে যায়। দুই হাত ফের প্রসারিত করে তোলে।—
কখনও-সখনও ভাবি, আসলে তেমন নয় মোটে;
করপুট ভেঙে গেছে দুরূহ ক্রন্দনভারে যদি
দুই হাত প্রসারিত রাখা তাই স্বভাব হয়েছে?
হয়তো এমনই হবে, অথবা এমন নয় মোটে।
দ্বিধা-দ্বন্দে এ জীবন কী ভীষণ ব্যাহত হয়েছে!-
কত সত্য পরস্পরবিরোধী, পৃথিবী তুলে ধরে!
হীনম্মন্যতায় যার বারেবার সংকুচিত হওয়া
এই প্রতাপী আকাশ, আলো আর বর্ণের জগতে
হাতজোড়া বাড়ানোর আগে তার প্রশ্ন জেগে ওঠে-
‘রক্তবীজ কতটুকু, কতটুকু সবুজ হয়েছে?’
কীভাবে কীভাবে যেন রক্তবীজ সবুজ হয়েছে!
স্বভাব হয়েছে দেখি দুই হাত প্রসারিত রাখা।
উলেন সূর্য
অতি অবমন্তা দিন যেন মিশে আছে এইসব দিনে। ছড়িয়ে পড়ছে প্লেগের জীবাণু। উঠে আসছে বিষণ্নতা আমাদের হরিৎ মানস ম্লান করে দিতে। ভয়াবহ দাবানলের দিন আর জঙ্গলে ধ্যানীর একজোড়া বিস্ফারিত চোখ দেখাই বুঝি নিয়তি হবে আমাদের! প্রতিটি পানির ফোঁটা গোপনে প্রবাহ থেকে সরে যেতে চায় আর সদ্য জন্ম নেয়া ম্যাগাডিতে বদলে যেতে চায় প্রতিটি মানুষ। কত কিছুর পরও সারাদিন উলেন সূর্য ছেটায় তার ওম কিংবা ওমধ্বনি! আজকের মতো সন্ধ্যা নামছে; অস্তপারে ঝুলে আছে বৃত্তাকারে এতিমখানার লাল দান-বাক্সো।
নীলফামারী
সবুজ তামাক-ক্ষেতের পিছে বাঁশঝাড়, তার পিছে সূর্য ওঠে। যদি আগাও আরও উত্তরে, তাহলেই তো নীলফামারী। তুমি দেখবে ঐ জেলা শহরে ঢুকে, তুমি অবাক হবে, যদি বাসে করে যেতে যেতে প্রতিটি জেলার মানুষের আচরণ পরখ করতে থাকো, মনোযোগ দিয়ে। দেখবে ধীর থেকে ধীরতর হচ্ছে মানুষগুলি—এবং নীলফামারী, সব থেকে ধীর মানুষদের জেলা, এক কালে ছিল মহকুমা; দেখবে সবাই এলোমেলো, জবুথবু, সময়জ্ঞানহীন। যদি আরও আগাও, ডোমার হয়ে চিলাহাটী— এত আঁকাবাঁকা রাস্তা পৃথিবীর কোনো সমতলে খুঁজে পাবে না। এরাই বানিয়েছে, কারণ এরা সময়জ্ঞানহীন, জবুথবু, কাচা তামাক-পাতার মতো বাতাসে স্থির, বিড়ির মুথা আর সিগারেটের তুলা ছ্যাবড়া করে ফ্যালে, সুপারি গাছে লতিয়ে ওঠা পানের মতো উচ্ছ্বাসে; এরা ক্রমাগত চাবায় পান, মজায় কাচা সুপারি মাটিতে পুঁতে। এদের ভাষাও তেমন; এরা প্রতি মুহূর্তে ভাষাকে নাচাতে, ঘোরাতে, পেঁচাতে আর চাবাতে ভালোবাসে অভিব্যক্তির পর অভিব্যক্তি এঁকে।
বিভাজিত
Those who eat my flesh and drink my blood have eternal life (John 6:52-59)
একা হয়ে যে-প্রশ্নগুলি পেয়েছি, হয়তো আরও একা হলে তার উত্তর পাবো। দিনমান ঘরদোরে আটকে আছি, আটকে রাখায় আজ আকাশেরও হাত আছে। যেখানে আমার দৃষ্টি গিয়ে থামে—কালো মেঘে ছাওয়া আকাশের তলে, ধূমল দিগন্তের কাছে, বিদ্যুৎ-পোলগুলি ক্রুশের মতো; অত দূর থেকে এক আমাকে টেনে নিয়ে বিদ্ধ করে আরেক আমাকে ডাকে—এমন ধারাপাতের দিনে, কে জানে কী মুক্তি আছে নিজেকে পান করে!
ভাষা
মেঘগুলি বিকালের আলোয়
রুপারং থেকে সোনারঙে বদলে গেছে;
সোনারং থেকে রুবি-লাল হয়ে উঠছে যেন দিনান্তের আলোয়।
যা হতে চাইলাম আমি
দিন দিন সে-রকমই হলাম—লতাগুল্মে ছেয়ে থাকা ছাউনি—
পরিত্যক্ত বলেই সুন্দর।
ভিতরের আলো
ভাসা-ভাসা থেকে ধীরে স্পষ্টরূপে ভাষা দিতে চায়।
কালো বাড়ি
“All that we see or seem is but a dream within
a dream.” ― Edgar Allan Poe
গাছের নাম ’রেড মেপল’, ঋতুর নাম ’ফল’
বাতাস লেগে পড়লো ঝরে পাতা অনর্গল।
সৌন্দর্য-বিষণ্নতা চতুর্দিকে ভরা;
একই সঙ্গে স্বর্গ আর নরক দিয়ে গড়া
এই দুনিয়া। এমন লাগে শীতের আগে আগে
স্মৃতি এবং স্বপ্ন যেন জমজ হয়ে জাগে।
থামিয়ে গাড়ি বনের পাশে তামাকে দিই টান
আসা-যাওয়ার মধ্যে আগে দেখিনি এই স্থান।
কোথাও কোনো মানুষ নাই, শান্তি-নীরবতা;
সামান্য যা শব্দ, সেটা জাগায় কোটি পাতা।—
তার সঙ্গে যুক্ত আছে পাখির ডাকাডাকি
লম্বা ড্রাইভ করার আগে ইচ্ছা হলো থাকি
কিছু সময়। স্বভাবই এই, এই রকমই আমি
ছুটির দিনে রাস্তা-ঘাটে হঠাৎ করে থামি।
কিন্ত এই জায়গাটাকে অন্যমতো লাগে
লাগলো যেন এসেছিলাম, দেখেছিলাম আগে।
কেমন এক শক্তি আছে বনের অন্তরে
সৌন্দর্য নেশার মতো ধীরে ধীরেই ধরে।
হঠাৎ করে পড়লো চোখে একটা জুনিপার
নীলাভ পাতা দেখিনি আমি কখনও আগে আর।
এগিয়ে যাই আস্তে-ধীরে জুনিপারের কাছে
মুগ্ধ আমি গাছের ওই নীলচে অবভাসে।
একটি প্রাণী দৌড়ে গেল বামের থেকে ডানে
জঙ্গলের এ কোন মায়া, ভিতর দিকে টানে;
ঝরা পাতায় ভর্তি আছে গাছগুলির গোড়া
বাতাসে আছে ছেঁড়া পাতার খেয়াল মতো ওড়া।
শীতের ছোঁয়া—হালকা ধোঁয়া উড়লো দিকে দিকে
নিমেষে সব বদলে গেল ভয়াল আঙ্গিকে।
কোথাও থেকে হালকা মতো আসলো ভেসে তান
করছে শুনি কোথাও নারী মৃতের স্বরে গান!
জুনিপারের নীলাভ পাতা উঠলো নড়েচড়ে
ধীরে আসছে কেউ যেনবা, হঠাৎ লাগে জোরে।
এ-ও লাগলো হঠাৎ করে থামলো হেঁটে আসা
সারাটা বন জুড়ে শুধু্ই একা একার হাসা।
থামছে হাসি, বাড়ছে ধোঁয়া, পাতাতে খসখস
মাথায় ধীরে বাড়তে থাকে ভয়ের যত রস।
সাহস করে এগিয়ে যাই পপলারের পাশে
আবার শুনি মৃদু স্বরের গানটা ভেসে আসে।
যতই আমি গানের পিছে ধাবিত হই ধীরে
কিন্তু গান ততই সরে দূরের থেকে দূরে।
পরিস্থিতি এত নাজুক, হলাম খুব ভীত
তাও কী করে হয়ে গেলাম আমি সম্মোহিত!
অনেক হেঁটে খেয়াল হলো এসেছি দূরে চলে
বনপ্রান্ত পিছনে ফেলে এসেছি বন-কোলে।
ছায়ায় ভরা বনকেন্দ্রে নিলাম আমি বাঁক;
অরণ্যকে মাতিয়ে তোলে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।
দেখি একটি ছায়াশরীর সাইপ্রেসের পাশে;
উধাও হলো তৎক্ষণাৎ! বাড়লো গতি শ্বাসে।
ফিসফিসিয়ে বলছে কথা কেউ যেনবা পিছে
তাকিয়ে দেখি কেউ তো নাই, মরা পাতার নিচে
জোড়া ইদুর স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মুখে
বাড়লো ভয় এক নিমেষে, এলো কাঁপন বুকে।—
তার উপরে ছায়াশরীর আবার দেখা দিলো
এক পলকে ডানের থেকে বামে দৌড়ে গেল।
হায় কপাল, কোন বিপদে পড়ে গেলাম আজ
পালিয়ে যাবো, রাস্তা খুঁজি, হলো এ কোন কাজ—
হঠাৎ করে তুষার ঝরে, শোঁ শোঁ বাতাস ছোটে
দপায়ের তলে কাঁপছে মাটি, মরা মানুষ ওঠে?
নাই তো পাতা গাছের ডালে, গাছেরা সব কালো।
এক নিমেষে কেমন করে ঋতু বদল হলো!
ডুব দিয়েছে পাতারা সব গাছ-বাকলে যেন
কোথায় দিয়ে এসেছিলাম, চিহ্ন নাই কোনো।
বিস্ফারিত দুইটি চোখে দেখি চতুর্দিক
ঠান্ডা-কালো বন-ই স্বয়ং হাসি পৈশাচিক।
গাছের ডালে, ঝোপ ও ঝাড়ে তুষার গেলো জমে
তাকিয়ে আছে আমার দিকে দূরে হরিণ থেমে।—
পিছনে তার উদ্ভাসিত কেমন এক আলো;
আলো নেভার আগে হরিণ আলোয় ডুবে গেল।
পুরাটা বন কালো ও সাদা, তুষারে গাছ গাঁথা
দূরে শূন্যে ঝুলছে এক লাল মেপল পাতা।
এগিয়ে যাই সেদিকে আমি, ইশারা তাকে ভেবে
যত আগাই পদপাতেই যাচ্ছে বন দেবে।
থামি একটু, আবার হাঁটি, ডানে ও বামে দেখি
মনে আমার কৌতুহল-ভয়ের মাখামাখি।
কান্নাভেজা দুইটি চোখে ঘৃণাকে উৎসারি
উধাও থাকা ছেড়ে এবার দেখা দিলেন নারী
দীর্ঘ রেডউডের পাশে। দুইটি মেয়ে শিশু
সঙ্গে তার দাঁড়িয়ে আছে—যেনবা কোনো পশু
হিংস্র নখে রক্ত তুলে ভিজিয়ে গেছে দেহ—
শিশু দুইটি মৃতের মতো, লাগছে ভয়াবহ।
নারীর গায়ে কালো পোশাক, না-জীর্ণ না-ছেঁড়া
যেন নতুন শোকে নারীর গলা অব্দি মোড়া।
নীল-বেগুনি দীঘল চুল বুক দিয়েছে ঢেকে
কানের নিচে এসে মাথার চুল গিয়েছে বেঁকে।
গলায় ঝোলে বেগুনিরং-পাথর-খচা হার;
দু’চোখে এসে বিঁধবে যেন, দ্যুতির সে কী ধার!
টানা দু’চোখ, লম্বা নাক আভিজাত্য জানে
মুখটা তার বুঝিয়ে দেয় ’রূপ’-এর যে কী মানে!
শিশু দুইটি দাঁড়িয়ে আছে, রেডিশ কালো চুল
ঘোলা চোখের চতুর্দিক কালিতে মশগুল।
পেটের তলে সাদা জামায় রক্ত আছে লেগে
দু’চোখ দিয়ে আগুন যেন বের হচ্ছে বেগে।—
তাকিয়ে আছে আমার দিকে, চোখে ঘৃণার স্রোত
আমাকে ঘিরে যেন তাদের বহু দিনের ক্রোধ।
দুই কদম এগিয়ে এলো তারা আমার দিকে
টের পেলাম সারা শরীর হলো আমার ফিকে।
দুই কদম এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে গেল তারা
হেসে উঠলো হঠাৎ করে,হাওয়ায় হলো হারা।
তারা দু’জন উধাও হলে নারী গেলেন সরে
দিলেন হাঁটা জোর কদমে। তুষার জোরে পড়ে,
আমিও হাঁটা দিলাম পিছে, হয়েছি বশীভূত
হাঁটছি পিছে কখন থেকে, হাঁটবো আর কত!
তুষারমাখা খাঁ খাঁ শাখায় উঠলো ডেকে কাক;
ক্রুশের মতো গাছটি দেখে হলাম হতবাক।
কালো বিশাল গাছের ভিড়ে হারিয়ে গেল নারী
গাছের থেকে পৃথক করে চিনতে তবু পারি
কষ্ট করে। ধাওয়া করেই এগিয়ে যাই, আর
একটু পরে দেখি চতুর্দিকেতে ঝোপঝাড়।
ঝোপ ও ঝাড়ে পাতাশূন্য ডালপালা যে কত
ছড়িয়ে আছে তুষারমাখা কাঁটাতারের মতো।
নারীর পিছে হাঁটতে গিয়ে ওষ্ঠাগত প্রাণ
হঠাৎ দেখি সামনে নাই, ডানে বিদ্যমান।
ডান পার্শ্বে পিছু নিলেই উধাও হয়ে যান
হঠাৎ বামে হেসে ওঠেন, গেয়ে ওঠেন গান।
এমন ভাবে পাগল হয়ে ধাওয়া করেই শেষে
বনপ্রান্তে কখন জানি দাঁড়িয়ে গেছি এসে।
ঝড়ের বেগে কোথায় যেন হাওয়া হলেন নারী
দাঁড়িয়ে আছে একলা এক কালো মতন বাড়ি,
বহু পুরান। বাড়ির গেটে ঝুলছে খোলা তালা
সরিয়ে তালা এগিয়ে যাই, পিছনে শুনি গলা
বললো কেউ ’খবরদার, করিস না এ কাজ’
পিছনে দেখি কেউ তো নাই! আকাশ চেরে বাজ।