You are currently viewing তিন কবির কবিতাঃ রায়হান উল্ল্যাহ, এইচ বি রিতা ও বাসব রায়

তিন কবির কবিতাঃ রায়হান উল্ল্যাহ, এইচ বি রিতা ও বাসব রায়

রায়হান উল্ল্যাহ’র তিনটি কবিতা

মাটিকাব্য

মাটি থেকে আগমন
মাটিতেই নাড়াচাড়া
মাটিরই নাড়াচাড়া
মাটিতেই বেগবান
মাটিময় সংসার
মাটিপুত্র ঝংকার
মাটিতেই মিশে যাবে
বাঙময় মাটিগাথা
বর্ণময় মাটিখাতা
মাটিতেই চুষে খাবে
মাটিসূত্র বিকিকিনি
মাটিকাব্য রিনিঝিনি

বোশেখের হাহাকার

স্মৃতির মারবেল গড়ায়- একবিংশ শতাব্দীর এপ্রিলের বিখ্যাত বেলায়। মারবেল ছুঁয়েছে- গহীন আজান, বালকীয় গোল্লাছুট, গ্রামীণ মক্তব। মারবেল বাজায়-সবুজের ঢিং ঢং, বেহিসেবি বান্নি। মারবেল সুরেলা- ভয়ার্ত আমতলা, হাতের ইশারা, গহীনের ভয়। মারবেল ছান্দসিক- উদাসিন স্কুল, বোশেখের ঘণ্টা, কাঁসার সাদা-নীল কাঁপন, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। মারবেল ছুঁয়ে যায়- করমচা বাগিচা, উর্বরা উঠোন, মাটির দাপাদাপি। মারবেল রিনিঝিনি- সবুজ দলন, পশুদের জ্বালাতন, গন্ধাল ভাত। মারবেল নেশাতুর- তালের ঝুপঝাপ, জলের প্রসন্নতা, গ্রামীণ বৃষ্টি। মারবেল এঁকে যায়- অগুনতি মুখচ্ছবি, ভাবনার জীবন। মারবেল কেঁদে যায়- নিয়ন আলোয়, বেদনার হুতাসন। মারবেল দলে যায়- বোশেখের মন্ত্রণা।

আমিই অমানুষ
চারপাশে অসংখ্য মুখ দেখি, মুখোশ দেখি। কারসাজির হাত দেখি, হাতে হাতে হাতবদলের ফেরি দেখি। পায়দলে মিশে যাওয়া পা দেখি। সিনায় সিনায় জড়াজড়ির মায়া দেখি। অনেকগুলো ধূর্ত চোখ দেখি। চোখে প্রেমের বানোয়াট কাব্য দেখি। অনেক অনেক বুক দেখি। বুকে আশার হুতাসন দেখি। চারপাশে কথার ফুলঝুরি দেখি। মানব-মানবীর প্রেম দেখি। ঘরহীন সংসার দেখি। ইট-কাঠ-পাথরের ভালোবাসা দেখি। চারপাশে অনেক কিছুই দেখি। শুধু দেখি না মানুষ। দেখার বড়ই শখ। আমিই হয়তো মানুষ নই। তাই চোখের ক্ষুধা রয়েই গেল!

এইচ বি রিতা’র কবিতা

আমার বন্ধু জগদীস 

জগদীস আমার বন্ধু।

হিন্দুর ঘরে জন্ম হলেও সে ঠিকই জানে,

মুসলমানকে সালাম দিতে হয়।

কোরআনের বেশ কিছু নিয়ম-নীতি, সূরা মুখস্ত তার

এক সাথে আছি আজ প্রায় তেরটি বছর,

ধর্ম নিয়ে বিরোধে জড়াতে হয়নি কখনো।

ইফতার-ঈদ পালন করেছি বহুবার তার সাথে

আলোচনায় ধর্ম এসেছে বিশ্বাস ভালবাসা রেখে।

পূজায় নিমন্ত্রণ করেছিল! যাওয়া হয়নি।

আমার অবশ্য কখনোই পূজা মন্ডপে যাওয়া হয়না

সে কথাও বন্ধু বেশ ভাল করেই জানে।

তবু, প্রশ্ন তুলেনি কখনো

সম্পর্ক বিপরীতমুখী হয়নি, টিকে আছে এখনো।

জীবনের ‌অনেকটা সময় লড়াইয়ের মাঠে আমি যখন;

একদম একা

তখন নিঃস্বার্থভাবে সবদিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে,

সাহস যোগানো মানুষটাই- জগদীস!

আমার পাশে থাকা হিন্দু মানুষটাই সে।

আমি মানি কোরআন-সে মানে শ্রীমদ্ভগবদগীতা

উভয়ই সৃষ্টিকর্তার একেশ্বরবাদ বিশ্বাসে বলেছেন,

‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই,

তাঁর কোন প্রভু নেই, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই’।

আকার নিরাকারে সৃষ্টিকারী একজনই; যিনি অবিনশ্বর।

আজ তার হাত কেটে গেলে,

ফিনকি দিয়ে তাজা যে রক্তপ্রপাত নিঃসৃত হবে

আমার কাটা হাতে তাই হবে

হিন্দু-মুসলিমের রক্ত একই রঙ; লাল-কালচে লাল।

বিনাশ হলে পুতে দেয়া শরীর-পুড়ে যাওয়া শরীর;

গন্ধ একই হবে।

সভ্যতা বিকাশের সময়ে আজ ও আমরা ধরে রাখি

মানুষে মানুষে সহিংসতা, বিরোধ, বিদ্বেষ

ধর্ম নিয়ে ফিতনা-মতভেদে উন্মাদনা বাড়াই

বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে অন্তর্হিনিত রক্তপাতে বিপন্ন করি;

মানবতা সভ্যতা।

বোঝাপড়ার বড় ঘাটতি আজ

শিক্ষার জ্ঞানীয় আলো থেকে বিতাড়িত আমরা ভুলে যাই,

একই বৃন্তে দু’টি ফুল হিন্দু আর মুসলিম!

 

বাসব রায়-এর তিনটি কবিতা

হৃদয়কথা 
অষ্টমীর চাঁদের আলোয় শিউলি সৌরভ
ক্লান্ত পায়ের ধুলোপথ কালেরই গৌরব
মোহিত অনুভবে সেই কিশোর সন্ধ্যার গল্প
ভিড়ের পথে কোলাহল ; ভালোবাসা অল্প ৷
ঢাকুরের বাজনায় মাতাল নেশার আরতি
ধূমচি হাতে নিয়ে যুবতীর চোখ যেনো পার্বতী
গানে গানে ভরপুর স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে ওরা
হয়নি প্রেম পুরনো , থরে থরে সাজা তোড়া ৷
কাশবনে রেখে আসা আবেদন গাঁথা সারি
শেষ হলে আয়োজন চুপিচুপি ফেরা বাড়ি
নবমীর মহাভোগ অমৃত সুধায় মাখামাখি
দশমীর সাঁঝ হোক চোখে চোখ রাখারাখি ৷
অধরা তুমি 
তোমার পায়ে অঞ্জলি দিয়েছি অকৃপণ
শতাধিক পদ্মকলির সাথে বেল-তুলশীর পাতা ;
অবিচল বিশ্বাসে ভর দিয়ে আছি পুরষ থেকে পুরুষানুক্রম –
প্রাপ্তির যোগফল বরাবরই শূন্য এবং মহাশূন্য
সময়ের বিবর্তনে অবিবর্তিত তোমাকে কখনও
নিতান্তই স্বার্থপর ভাবি –
ধৃষ্টতা মার্জনা করতে পারলে কোরো ;
আমি দ্বিধাবিভক্ত -!
তুমি জাঁকজমকে আগমন করো
চলে যাও তোমার অবিনাশী চেতনার স্বর্গে –
আমরা বিপর্যস্ত সময়ের মোকাবেলা করি
পরাজিত হই , লাঞ্ছিত হই হাজারবার –
তোমার অনুভূতি বা আবেগের ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই ;
আমরা তোমার সন্তান বিশ্বাসে নত হই –
প্রকৃত বাস্তবতা অধরাই থেকে গেলো ৷
কবি থেকে মহাকবি 
কবি হতে চাওয়া সংসারী-বাউল
চর্ব চষ্য লেহ্য পেয় শেষে নিরামিষাশী
মিথ্যের প্রলেপ দিয়ে সত্যের বচন দুরন্ত
কপট অন্তরে সুমিষ্ট সংলাপ –
অনুসারীরা পরম সমাদরে শ্রদ্ধায় বিগলিত
সুযোগসন্ধানী সাধুর মহত্ত্ব দিকে দিকে – !
দুর্বিনীত অতীত অপেক্ষা বর্তমান ভালো
দৃষ্টিভঙ্গির অনবদ্য প্রসারতায় এগিয়ে একধাপ –
আমরা বিমুগ্ধ -!
জীবনকে সঁপে দিয়ে নির্ভার হই
বেচারা কবি তখন মহাকবি রূপে আবির্ভূত -৷