You are currently viewing তিনটি গদ্য কবিতা/ আলী সিদ্দিকী

তিনটি গদ্য কবিতা/ আলী সিদ্দিকী

তিনটি গদ্য কবিতা

আলী সিদ্দিকী

শব্দপ্রতিবন্ধী সমকাল

কারো ডাকার কথা ছিলো না, ডাকেও নি। তবু শুনি কেউ যেন ডাকে ঝিঁঝিঁর মতো ঘুনপোকার মতো কিংবা দূরে মিলিয়ে যাওয়া নদীর মিহি কান্নার মতো নিশীথ দীর্ণ করা নৈঃশব্দের মতো- পাঁজরে, মজ্জায়, হৃদপিন্ডে। কারো অপেক্ষার কথা নয়, নেইও জানি। অথচ সারাক্ষণ মনে হয় পাতায় লেগে থাকা রোদের ছায়ায়, পথের বাঁকে উবু হয়ে থাকা গাছের মৌন আড়ালে কিংবা আমারই ছায়ার প্রতিবিম্বে হাঁটে কেউ- অলীক অবয়বে, মায়ায়। ডেকেছিলো যারা এখন তারা শব্দপ্রতিবন্ধী রাতদিন হাতড়েও একটা শব্দ পায় না খুঁজে শুনি সবাই এখন নাকি নিরুদ্দিষ্ট, লাপাত্তা হয়তো ঝড়ের ঘাড়ে চড়ে পালিয়েছে কিংবা পাহাড়ের নীরবতায় গুম- নিভাঁজ সময়ের ফসিল। আমি চিৎকার করে ডাকি, প্রতিদিন ডাকি। কি বলে ডাকি কিংবা কি নামে ডাকি সেটা অবশ্যই বিবেচ্য নয় এবং ছিলো না কখনো সাড়া না পেয়ে বুঝি কেউ শোনে না শোনার কথাও নয় কারো এখন- শব্দরা উড়ে গেছে বহুকাল।

 
এইসব কোলাহল মৃত্যুময়তা

আমাদের ছায়া ছায়া আনন্দ অস্তিত্বের আলোর পেছনে সারাক্ষণ জেগে থাকে নিরুপম মৃত্যুময়তা- দুইয়ের মাঝে নিপাট শুয়ে থাকে কলবলি প্রেম- আমাদের এই মাখামাখি- এই চাখাচাখি – এই আঁকিবুঁকি- এই গলাগলি নদীর মতো দু’পাড় ঝাপটে চলে। আমরা চকচকা রোদ হয়ে নাচি পাতায় পাতায় শাখায় শাখায় লতা আর নিবিড় গুল্মে- গাছের ঘামের জরিবুটি নক্সা বিস্তার জীবনরেখার বাঁকে বাঁকে – আমাদের এই ঢলাঢলি – এই চলাচলি – এই ঘষাঘষি – এই মাতামাতি সমুদ্রসম উথালপাতাল চলে। এই আনন্দমঠ- এই আলোকন- এই জাগরস্বপ্ন- রোদ্ধা হয়ে নেচে বেড়ানো পাতাদের সংসারে মাখামাখি- চলাচলি- মাতামাতি- হিমশীতল মৃত্যুকে নিরেট বোকা বানিয়ে হাসে অহর্নিশ অসীম প্রাণময় উষ্ণতায়।

জাগ্রত চোখ

একজোড়া চোখ জেগে আছে আমার ভেতর নি:শব্দ ভাষাহীন, নিষ্পলক-পাথুরে নয়, আলুথালু আলোর প্রাণ নাচে, নিথর অভিব্যক্তি শীর্ষে শূন্যতার অভ্যুদয়। সুতীক্ষ্ম ফলা হয়ে চোখজোড়া গেঁথে আছে অনন্তকাল ধরে, গা শিরশিরে-যেন হুল, ভয়ঙ্কর হিসহিসে হিমশীতল, অর্বাচীন হুঙ্কারে কাঁপে বাড়ীঘর, বনজঙ্গল।