You are currently viewing তিনটি কবিতা/ নজরুল হায়াত

তিনটি কবিতা/ নজরুল হায়াত

তিনটি কবিতা/ নজরুল হায়াত

 

রাত্রির কাহিনি 

 

রাত্রিবেলা ফুল পাবো কই

বাগানগুলো কেউটে নিয়ে গেছে

ভাগাড় থেকে নামছে আতরদানি

গ্রন্থরাজির তেষ্টা পেয়েছে যে

আগুন জলে সাজিয়ে রেখে বই

মুঠোমুঠো বাতাস কিনে আনি,

 

নীল পাথরের রৌদ্রপোড়া সুখ

ঘরভরা রং হলুদ পাতার ছানি

তারারা সব জাপ্টে ধরে মুখ

টানছে কাদের দিনযাপনের ঘানি?

 

আলো খুঁড়ে কবরস্থানের ঝাঁপি

খুলে দেখি হৃদয় শুয়ে আছে

ছোবলচেরা চক্ষু যখন রাখি

পাখির ডানা হুহু করে গাছে,

 

কোথায় কাঁটা? আমার উদর ভরা

মর্মরিত মন্দীভূত গ্লানি

ফুল পাবো কই? দিবস জুড়ে জরা

পল্লবিত সারমেয়র বাণী।

 

আমি দ্রাবিড় শ্যামল বরণ

 

একটা নদী বয়ে যাচ্ছে রক্ত এবং ঘামে

সুধাগন্ধ পলল মাটি প্রাচীন হাড়ের খামে

 

জলপ্রপাতের পতন ধ্বনি রোমকূপে ঢেউ তোলে

বৃক্ষশাখার সবুজ পাতা অলক জুড়ে দোলে

 

আমার শরীর খুঁড়ে দেখো মেঘলা আকাশ ত্বকে

পাখির বাসা চন্দ্র তারা সূর্য জ্বলে নখে

 

বাংলাদেশের বদ্বীপ আঁকা আমার শ্যামল মুখে

জলপরিরা সিনান করে সমুদ্র জল বুকে

 

দুহাত ভরা ফুলের বাগান ফসল ফলে পায়ে

ম ম করা সুবাস মাখি কোমল মধুর বায়ে

 

আমার হৃদয় ফুঁড়ে দেখো অযুত লোকের বাস

রৌদ্রপোড়া স্বেদজড়ানো করছে বসবাস

 

আমি দ্রাবিড় রং মেখেছি নানা জাতির লোহুয়

বর্ণ আমার শ্যামল কালো মন ভরেছি কুহুয়।

 

পিতা, পিতা বলে ডাকি

 

পিতা, পিতা বলে ডাকি, পিতা কই?

কারা জানি অসূয়ার কুটিল করাতে

পিতার দিঘল দেহ কুটি কুটি কাটে,

লোহুর সাগরে ভিজায়ে তাহার জামা

কারা জানি লাল রংয়ে সাজিয়েছে তাঁকে,

ঘন লোম,গায়ে দেয়া নিমা, সাদা তহবন্দখানা

লুকাতে চেয়েছে মিছেমিছি, অযথাই

ঘোর তমসাবৃত অমানিশাতে,

পারেনি, ফের রোশনাই

তাঁর দেহখানা আবার এসেছে ফিরে

ঘন সবুজের মাঝখানে এই বাংলায়

লালসূর্যের অফুরান রং সুপ্রাচীন ছায়াময় ভোরে;

 

আজ পাখিদের কাকলি কূজন তাঁরে ঘিরে

নদী বয়ে চলে, সাগরের জল ফুঁসে ওঠে

ছিকায় ছিকায় গাঁয়ের বধূরা কবিতার পদ লেখে

অযুত কৃষক খেতের কিনারে তাঁর কথা বলে বলে

গল্প অশেষ ধানের গুচ্ছে অবিরাম রুয়ে চলে

নগরের পথে মিছিলে মিছিলে তাঁর ছায়া আগে বাড়ে;

 

পিতা, পিতা বলে ডাকি, পিতা কই?

তোমার হৃদয়ে পিতার শরীর, আকাশ-উদার মন

জেগে আছে দেখো অমলিন সেই বজ্র-কণ্ঠস্বর

বদ্বীপ-সমান বন-বীথিকার শ্যামল বাগান ছেয়ে।