You are currently viewing টিকটক সেলিব্রিটি > দেবাশিস ভট্টাচার্য

টিকটক সেলিব্রিটি > দেবাশিস ভট্টাচার্য

টিকটক সেলিব্রিটি

দেবাশিস ভট্টাচার্য

 

পুলিশও মাঝেমাঝে কিছু বে-রসিক কান্ড করে ফেলে। সেদিন হঠাৎ করে সন্ধ্যার দিকে যখন অফিস ফেরত মানুষগুলো ওভারব্রিজ থেকে নেমে আসছিল পিঁপড়ের সারির মত — জীবন তখন চৌরাস্তার মোড়ে দুটো ক্যামেরা নিয়ে টিকটক ভিডিও বানাচ্ছিল। জীবন মানে লাফাঙ্গা। যার মা নেই, বাবা রিক্সা চালাতো। এখন অন্য একটি মেয়ের সাথে সংসার করে। বড় বেদনাময় এক জীবন তার। যদিও সে সারাদিন নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে হিন্দি গানের তালে তালে নেচে গেয়ে। মানুষের মনোরঞ্জন করে। তার বিষাদ আকাশ সমান।

পুলিশ চারদিক থেকে ঘিরে ছোট দুটি ক্যামেরাসহ রেকর্ডপ্লেয়ার, স্লাইড ও জীবনকে থানায় নিয়ে আসে। থানায় অপরাধীদের যেখানে রাখা হয়। সে হাজতে তাকে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। জীবন হাঁটুমুড়ে ফ্লোরে বসে থাকে। তার মাথায় চুল নেই। হাত পায়ের আঙুল লম্বা লম্বা । সবসময় পাতলা দুটি হাত দিয়ে মাথা ঢেকে রাখে। গায়ে একটি বুশ শার্ট। হাঁটু পর্যন্ত একটা ঝিকঝাক জিন্সের প্যান্ট। গলায় দুটি মাইকেল জেকসনের লকেট। হাতে লোহার চুড়ি। সবকয়টি আঙুলে নানানরকম পাথরের আংটি। যে কয়টি চুল আছে তাও রং করা। সকাল থেকে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি তার। সে টিকটক সেলিব্রেটি। তার অসংখ্য অনুসারী আছে ফেসবুকে। তার পেইজে হাজার হাজার লাইক পড়ে ভিডিওতে। তরুণদের সে বিনোদন দেয়।

একসময় থানায় নির্ধারিত অফিসার আসে। যে তাকে ধরে এনেছিল তার নাম আহসান উল্লাহ্। সে এসেই তার রেকর্ড প্লেয়ারটি টেবিলের উপর রেখে সুইচ অন করে দেয়। সাউন্ড ছোট করে শুনতে থাকে। সে সুর, শব্দ জীবনকে আকৃষ্ট করে। সে উঠে দাঁড়ায় হাজতের ভেতর। হাত পা নানানরকম ভঙ্গি করে নাচতে থাকে। একবার ডান হাত বাঁকায় তো আরেকবার বাম হাত। একবার বাম পা বাঁকায় তো আরেকবার ডান পা। কোমর দুলিয়ে নাচতে নাচতে একেবারে উপুড় হয়ে যায়। আবার নাচতে নাচতে পেছনে হেলে পড়ে। এ এক অভিনব দৃশ্য। থানার ডিউটি অফিসাররা সব তার কান্ড দেখে হাসতে থাকে। তারপর তাকে বের করে আনা হয়। বিভিন্ন কাগজপত্রে সই নেওয়া হয়। তাকে সাবধান করা হয় প্রকাশ্যে রাস্তায় যাতায়াতের অসুবিধা করে ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা একটা গর্হিত কাজ। ওটা করা যাবে না। এ কারণে তাকে চালান দেওয়া হবে কাল। এটি অনেকটা শান্তিভঙ্গের অপরাধের মত। পরদিন পুলিশের গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে টিকটক সেলিব্রেটিকে চালান দেওয়া হয় শহরে। এরমধ্যে পুলিশের গাড়ি তাকে নিয়ে জেল হাজতে যায়। সেখানে ঢুকিয়ে কারারক্ষীদের হাতে তাকে সোপর্দ করা হয়। সেখানে দাগী চোর ডাকাতরা থাকে। এক একটা লোক বিকট। যা তা করছে সঙ্গীদের সাথে। হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে পা ছড়িয়ে। চোখ মুখ তাতানো। সারা রাত এখানে কিভাবে থাকবে ভাবতে থাকে সে। বাইরে পুলিশ দুটি পায়চারি করে যাচ্ছে। এসময় ছোট্ট একটা মেয়ে লক আপের কাছে আসে। তার হাতে একটা ঠোঙা। তাতে ঝালমুড়ি আছে। সে পুলিশকে বলে তার কাছে আসে। ঠোঙাটা বাড়িয়ে দেয় তার হাতে। তারদিকে চাইবার মত অবস্থা নেই। পেটে খুব ক্ষিধে। মুঠো করে কিছু মুড়ি মুখে দিয়ে গ্লাসে ঢেলে একটু পানি খেল সে। হঠাৎ বসা থেকে এক লোক মুড়ির ঠোঙাটা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। কথা বললেই মার দেবে এমন অবস্থা। চুপ করে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে সে। কাল সকালে তাকে কোর্টে তোলা হবে। পরদিন সকাল দশটার দিকে তাকে কোর্টে নেওয়া হয়।

সরকারবাদী মামলা এখানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ডিউটি অফিসার স্বপ্রণোদিতভাবে মামলাটি করেছে। বিচারক জানতে চাইলেন তার কোনো উকিল আছে কিনা। সে স্ববিনয়ে বললো নেই। সরকারী পক্ষের উকিল দাঁড়িয়ে তখন বললো। চৌরাস্তার মোড়ে সে ভিডিও করতে গিয়ে নানারকম অশালীন, আপত্তিকর ভঙ্গি করে নাচানাচি করতে গিয়ে চলমান নাগরিকদের চলাচলের অসুবিধা ও বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। এই কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তখন বিচারক জীবনকে উদ্দেশ্য করে বলে– তুমি কি এসব করেছো? উত্তরে জীবন বলে হ্যাঁ। তবে অশালীন কিছু করিনি। আমি টিকটক সেলিব্রেটি। তার জন্য ভিডিও বানাচ্ছিলাম। বিচারক তাকে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠালেন। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছিল জীবনের। তার লেখাপড়া নেই। সে প্রচলিত আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেনা। টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে সে এভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতে পারেনি। তার হাতে তেমন টাকাপয়সাও নেই। এবার কিভাবে সে ভালো উকিল ঠিক করবে, কিভাবে সে জামিন পাবে। এসব চিন্তা অস্থির করে তাকে। এসময় এক মহিলা বয়সে তরুণী, সে আদালতে দাঁড়িয়ে যায়। কালো কোট পড়া। সে আসামির পক্ষে তুমুল সওয়াল করে। সে যে নিরিহ নির্দোষ তা তুলে ধরে। এমন অদ্ভুত অলৌকিক ঘটনা তার জীবনে কেন ঘটছে তা বুঝতে পারেনা। যাওয়ার সময় সে জীবনের কানে কানে বলে ভয় পেওনা। কাল তোমার জামিন হয়ে যাবে।