You are currently viewing জয় হারজোর কবিতা > অনুবাদ: খায়রুল আলম চৌধুরী

জয় হারজোর কবিতা > অনুবাদ: খায়রুল আলম চৌধুরী

জয় হারজোর কবিতা

আদিবাসী মাসকোকি (Mvskoke) জয় হারজোর জন্ম ৯ মে ১৯৫১ সালে আমেরিকার ওকলাহামার তুলসায়। ২০১৯ এ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পোয়েট লরিয়েট মনোনীত হন। কবি, সংগীত শিল্পী এবং নাট্যকার জয় হারজো আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে। প্রথম এ বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৬ এ নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষে তিনি আইওয়া রাইটার্স  ওয়ার্কশপ থেকে এমএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

নেটিভ আমেরিকান কবি জয় হারজো কবিতায় যতটা রাজনীতি সচেতন কিংবা নারীবাদী, তারও বেশি তিনি মিথ আর অবচেতন-ভাবনার কবি। কবিতায় যে চিত্রকল্প আর প্রকৃতির ছবি তিনি আঁকেন তা যতটা আমাদের অজানা মনোভুবনের দিগন্তে বিস্তৃত তা ঠিক ততটাই ছড়িয়ে থাকে আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার দৃশ্যপট জুড়ে। বলা যায়, প্রকৃতিই জয় হারজোর কবিতার প্রধান বিষয়।

জয় হারজোর কবিতা পড়া যেন পৃথিবীর কথা শোনা, এ যেন   একই সাথে সময় আর সময়হীনতার দেশ-ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজেকে বোঝা, চেনা আর বাঁচার তীব্র আকুতির সাথে পরিচিত হওয়া।

কবিতায় মিথ, লোককাহিনী আর আত্মজীবনীর সংশ্লেষে জয়   হাজরো তার জ্যোতির্ময় অন্তর্দৃষ্টির আলোয় জগত সংসারে একাধারে খুঁজে ফিরেন আর নতুনভাবে বিনির্মাণ করেন সাংস্কৃতিক  ঐতিহ্য। কবিতায় তিনি যেন প্রসারিত করছেন আমরিকার ভাষা, সংস্কৃতি আর আত্মা।

জয় হারজোর কবিতা এক হিশেবে তার আত্মিক পরিভ্রমণও। ‘How We Became Man’ (২০০২) কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, কেউ কারো থেকে আলাদা নয়ঃ প্রতিটি মানুষ পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত, এ   জগত পরের জগতের সাথে একই সূত্রে গাথা, অর্থাৎ, মৃত্যু   জীবনের বিপরীত নয়। একটা গল্প হয় স্বপ্ন হয় কবিতা হয় গান এভাবে চলতে থাকে। কবির পথ হলো সত্য আর ন্যায়ের   পথযাত্রা। একজন কখনো মুক্ত নয় যদি আরেকজন বাঁধা থাকে দাসত্বে।

প্রকৃতি আর আত্মার নির্বাণের শক্তি, প্রার্থনার লোকজ ঐতিহ্য আর মিথকে সমকালীন ভাষায় আত্তীকরণ করে তার স্বপ্নদর্শী।ন্যায়ান্বেষী কবিতারা ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক মলিনতাকে রূপ দেয় লাবণ্যে, বিভাজনকে করে সমন্বয় আর ক্ষতকে দেয় আরোগ্য। —অনুবাদক।

 

হনুলুলুয় বৃষ্টি হচ্ছে

 

পাহাড়ের ললাটে লটকে আছে এক টুকরো কুয়াশা,

কচুবন, গাছ আর ঝোপঝাড়ে ফোটা ফুলের প্রতিটি পাপড়ি কাঁপছে খুশিতে।

ফুলের আহবানে ঝরা বৃষ্টির গান তোলে তান অন্তরে।

একাধিক ঋতুর অধিক তৃষিত ফুল অথবা মৃত্তিকার মতো বৃষ্টি আমাদের উন্মোচিত করে।

আমাদের সব কথা, চিন্তা অথবা বাঁশি বাজানো থামিয়ে আমরা পান করি এ রহস্য।

কান পেতে শুনি আমাদের নিঃশ্বাসের অন্তরালের নিঃশ্বাস।

বৃষ্টি এভাবে বৃষ্টি হয়েছে, আমরা হয়েছি মানুষ।

বাদল জল সিক্ত করে সব, দ্বিতীয় ক্যুর অপরাধীদেরও।

যেখানেই দেখবো অমঙ্গল, সেখানেই আমরা ছড়িয়ে দেব গান।

  • দ্বিতীয় ক্যুঃ হাওয়াইয়ের আদিবাসীদের অধিকার খর্ব করা একটা মামলার রায়।

IT‘S RAINING IN HONOLULU

 

শেষ গান

 

কিভাবে সহ্য করো তুমি

বলে সে

তোমার জন্মস্থান

ওকলাহামার গ্রীষ্মের

এই স্যাঁতস্যাঁতে ভারি বাতাসে

দম বন্ধ হয়ে আসে আমার

নিউ মেক্সিকোতে

ফিরে যেতে চাই আমি

এভাবেই শুধু জানি আমি

কিভাবে বাঁচতে হয়

লোকগানে

মাতৃজঠরে বোনা

ঢেঙা জলো ঘাসের

ইতিহাসে

এই দখিনা রাত্রির আর্দ্রতায়

ঝিঁঝিঁ পোকার গ্রীষ্মগানে

নিজের গলা মিলানো ছাড়া

আর কিছু জানি নে আমি

ওকলাহামা আমার শেষ গান

গাইবো আমি চিরদিন

THE LAST SONG

 

মনে রেখো

যে আকাশের নিচে জন্মেছো সে আকাশটাকে মনে রেখো,

জেনে নিয়ো নক্ষত্রদের গল্প।

চাঁদকে মনে রেখো, তাকে খুঁজে নিয়ো।

ভোরের সূর্যের জন্মকে মনে রেখো, এটাই হলো

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সূর্যের বিদায় আর

রাতের জন্য তার জায়গা ছেড়ে দেয়ার কথা মনে রেখো।

মনে রেখো তোমার জন্ম, তোমাকে গর্ভধারণ করে

তোমার বুকে দম দিতে তোমার মায়ের কষ্টের কথা। প্রতিনিধি তুমি

তার জীবনের, তার মায়ের জীবনের, তারও মায়ের।

তোমার বাবার কথা মনে রেখো। সেও তোমার জীবন।

পৃথিবীর কথা মনে রেখো, তার অবগুন্ঠন তুমিঃ

লাল পৃথিবী, কালো পৃথিবী, হলুদ পৃথিবী, শাদা পৃথিবী

বাদামি পৃথিবী, আমরা সবাই পৃথিবী।

তরুলতা, বৃক্ষ, প্রাণীদের কথা মনে রেখো

তাদের সবার নিজেদের জাত, পরিবার, ইতিহাসও আছে।

তাদের সাথে কথা বোলো, তাদের কথা শুনো। সবাই ওরা জীবন্তকবিতা।

হাওয়ার কথা মনে রেখো। তার কন্ঠস্বর মনে রেখো।

সে জানে এ জগত সৃষ্টির আদিকথা।

মনে রেখো তোমরা সবাই মিলে জনতা আর জনতাই তুমি।

মনে রেখো তুমিই এই বিশ্বজগত আর এ বিশ্বজগতই তুমি।

মনে রেখো সবকিছু গতিময়, বিকাশমান, তোমাতেই প্রকাশ।

মনে রেখো এখান থেকেই জন্ম হয় ভাষার।

জীবনের নাম, নাচের ভাষার কথা মনে রেখো।

মনে রেখো।

REMEMBER

 

আগুন

 

শুধু

নিজের দমে

বাঁচে না নারী

তাকে জানতে হয়

পাহাড়ের ভাষা

চিনতে হয়

নীল আকাশের অলয়

সঙ্গী হতে হয়

রাতের অধরা

হাওয়ার

যে নিয়ে যায় তাকে

নিজের কাছে

আমাকে দেখো

আমি কোনো আলাদা নারী নই

নীল আকাশের

অংশ আমি

পাহাড়ের

গ্রীবা আমি

রাতের আমি হাওয়া

যে পোড়ায়

দমে দমে।

FIRE

 

এখান আর ঘরের মধ্যে কথপোকথন

 

এমা লী’র ভাতার তাকে মেরেছে

এ উইকএন্ডে,

ভাতারটার সরকারি চেক হেল্ড আপ আছে, তাই

ধার করে গিলছে এখন।

ছোট বাচ্চাটা অসুস্থ, তাই

এক সপ্তাহ অফিসে যেতে পারে নি আনা।

বললো, “কখনো কখনো বেগ পেতে হয়, কিন্তু

মরদ ছাড়া বরং অনেক শান্তির”।

“জিমের সাথে দেখা হয় নি গত

দুই সপ্তাহ ধরে”, ফোনে বলে আমাকে তার বিবি।

(তাকে দেখেছি আমি শনিবার আনাডারকোর ঐ

মেয়েটার সাথে।)

ক্ষেপা মেয়েরা বাড়ি বানাচ্ছে

পাথর দিয়ে।

খড়ের মতো পাতলা দাঁত

আর ভাঙা পরিবার দিয়ে

কংক্রিট বানাচ্ছে তারা।

CONVERSATIONS BETWEEN HERE AND HOME

 

খায়রুল আলম চৌধুরী : অনুবাদক