You are currently viewing গুচ্ছ কবিতা/ আহমেদ স্বপন মাহমুদ

গুচ্ছ কবিতা/ আহমেদ স্বপন মাহমুদ

গুচ্ছ কবিতা

আহমেদ স্বপন মাহমুদ

আগুনের রং

আমি আসলে ভাবতেছিলাম জারুল ফুল আর বরুণ গাছের কথা। দেশে কী কোনো বরুণ গাছ আছে? এ নিয়া কারো ব্যথা নাই মাথা! সে কথা জানি। এমনকি ক্রসফায়ারে না সড়কে খুন হইল কতজন, কে বা কারা তাতে কারো বাড়া কিছু আসে যায় না। টিয়া বা তোতার কোনো বায়না নাই! দেদারসে চলছে সব, যে যা চালাচ্ছে, এমনকি রদ্দি মালেরও কদর খুব বেশি, মেলায় খুব খুশি খুশি ভাব তাই, গলে ঢলে পড়ে!

শুনেছি, কত দীর্ঘ তোমার হাসি ও চুলের রঙের কথা।
আমি না অযথা এইসব শুনেটুনে মনে নেই নাই কিছু।
তবু মন এমন যে, সে-ও না না-বুঝে কিছু রঙের বর্ণনা দেখতে চায়
আর তার সুরের সাথে দিতে চায় উড়াল, ভূমধ্য সায়রের ওপর দিয়া।

সাগর তো মরে যাচ্ছে অতিদূষণে
জাতিসংঘ তাই ঘোষণা করেছে ওশান ডিকেড।
ঘোষণাতেই সার
তার কাজকারবার সবাই জানি
তবুও দুনিয়ায় তারে কিছু আছে মানামানি– রাষ্টের মাস্তানদের কাছে।

মাস্তান মানে প্রত্যেকটা দেশের সরকার একেকটা মাস্তান
না পুলিশ, না বিচারক, না ব্যবসায়ী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী কেউ না
কেবল কবির কাছে এসে মাথা নত করে কুর্ণিশ জানায় সংঘের চেহারা
তাহারা যা যা করে, যা যা করতে চায়, যা যা করেছে সকলি গুলজার
আমার অনুদার মন কিনা জানে না প্রশংসার দাবীদার যারা তাদেরও মনে নিতে

কার সাথে কার পিরিতি জানি না
প্যারিস, কেবল তোমার হাসির রঙ লেগে আছে ভ্রমণের গায়ে
বাতাসে বাতাসে উড়ে এসে সে আমারে প্রায়শ জ্বালায়
আমার তাতে আসে যায় কত, যতটা চেয়েছি তোমারে তত

বারবার
আরো একবার
শতবার
যদি দেখা হয়
যদি আগুনের রঙে লিখি নাম
হাসির ছোঁয়া দিয়ে
সুরের স্পর্শে তারে উজল করে দিও
তোমারে রাঙায়ে আপনায় —

জারুলের রঙে, বরুণের রঙে।

হত্যামুখরতা

স্মৃতি নেই, শূন্যতাও।
গুল্ম ও নদীরেখার কথা মনে আছে–
সামান্য প্রেম যেভাবে জ্বলেছিল অসামান্য জলে
মনে আছে– শুভবার্তা প্রভাতের,
গনগনে উত্তাপ ও অস্থিরতা লয়ে
চোখ যেভাবে অনিদ্রায় কাঁপছিল চেয়ে চেয়ে
মন নাচছিল যার কথা ভেবে, তার কথা।

স্মৃতি নেই, হত্যাকারীও; আড়ালে
রেখে যাওয়া ‘মনে রেখ’ পড়ে আছে
নীরব, গহন বেদনার কাছে জমেছে ঋণ
মলিন সুতোয় জড়ানো কারুকাজ দেখে।

তারপর রক্তনদী, হত্যামুখর পরিণয়!

স্বাধীনতা

কামানদাগা শহরে
খরচৈত্র রোদে
বালির বুকে চেপে বসেছে
আগুনদানব

তপ্ত বালি পুড়ছে
শ্বাসকষ্ট বাড়ছে
দম বন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছে

আর লম্বা নল উঁচিয়ে শাসাচ্ছে
হানাদার কোম্পানির
আগুনের গোলা

আমাদের পোলারা পতাকামোড়ানো বুক উঁচিযে হাঁকছে:
বালির বুক থেকে নেমে এদিকে আয় বন্ধু
ধাতব গোলার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ি এবার!

মানুষ মরুক, বালির হাসি তবুও বেঁচে থাক স্বাধীন।