You are currently viewing খসে পড়া সময়ের ভাবনা > লাবণী মণ্ডল

খসে পড়া সময়ের ভাবনা > লাবণী মণ্ডল

খসে পড়া সময়ের ভাবনা

লাবণী মণ্ডল

শিল্প-সাহিত্যে আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে সব রচনা নিয়ে আলোচনা হয় না। কিছু সৃষ্টির পূর্বেই মরে যায়; তার কোনো ছাপ সমাজে থাকে না। সেরকম রচনার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

সাহিত্যের অন্যতম একটি ক্ষেত্র গল্প, যা জীবনেরই আলেখ্য। সমাজে ব্যক্তি মানুষের জীবনের নানা সংকট, ঘাত–প্রতিঘাত, আবেগ–উৎকণ্ঠা, ভালো-মন্দ উপজীব্য হয়ে উঠে গল্পের মধ্য দিয়ে। যেখানে থাকে সমাজচিত্র। প্রতিটি মানুষের জীবনই এক একটি গল্প। সাহিত্যে গল্পের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মৌখিক বা লিখিতভাবে মানুষ স্বভাবত গল্প বলতে ও শুনতে ভালোবাসে। গল্পের কাব্যিক ঢংই পাঠককে আকৃষ্ট করে। গল্পের ভেতরে কাব্যিকতা থাকলে মানুষের মনোজগত সহজেই আকৃষ্ট করা যায়। গল্প নানা রকম হতে পারে– প্রকৃতিকেন্দ্রিক, প্রেমবিষয়ক, সামাজিক, ভৌতিক, হাস্যরসাত্মক, উদ্ভট, সাংকেতিক, ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক, মনস্তাত্ত্বিক বা জীবনসংগ্রামে ভরপুর। প্রাণ-প্রকৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারা বিশেষ যোগ্যতার ব্যাপার।

এতে সমাজ-সভ্যতার বাস্তবতা তুলে ধরা যায় গল্পকারের চিন্তাশক্তি দিয়ে। গল্পকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হতে হয় অল্প কথায় লক্ষ্য স্থির বা বক্তব্য ঠিক রেখে পাঠকের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা। তাহলে গল্পের সূচনা এবং সমাপ্তির ইতিহাস গুলিয়ে ফেলতে পারবে না পাঠকসমাজ। আমাদের সাহিত্যে পাঠককে আকৃষ্ট করতে না পারার বড়ই অভাব! সাহিত্যে রস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গল্পকারদের এ বিষয়টিতে আরও কঠিনভাবে নজর দিতে হয়। সাধারণত গল্প হলো গতিময় বর্ণনা। যে বর্ণনায় সমাজের গতিময়তা উঠে আসে। ভাষাবিন্যাস হয় নির্মেদ; কিন্তু ইঙ্গিতধর্মী। সুন্দর উপস্থাপনার বিশেষ যোগ্যতার জন্য পাণ্ডিত্যে ভরপুর হলেই শুধু চলে না, এর জন্য সমাজের ভেতরের চিত্রগুলো বিশেষভাবে অবলোকন করতে হয়।

গল্পকার ঝুমকি বসুর গল্পগ্রন্থ ‘আলোর খোলস’। এটির সূচিক্রম সাজানো হয়েছে– শেষ থেকে শুরু, সূর্যমুখী জীবন, বিজলি শাড়িঘর, টুং টাং টুং, প্রমিতা, টেডি বিয়ার, মিথ্যা বকুল, এক পাতা ঘুম, সবিতার সংসার, বিভ্রম অথবা নয় এবং গোলাভরা ধান । ১১টি গল্পের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গল্পগ্রন্থটির শক্ত গাঁথুনী, বিষয়বস্তু ও লিপিকৌশল দৃঢ়।

‘শেষ থেকে শুরু’ গল্পটি চুন-সুরকি খসে পড়া জীর্ণ দশা বাড়ির গল্প। ওই বাড়িতে বসবাসরত ষাট পেরোনো দম্পতির কথা। লেখকের বর্ণনায় —‘…বাড়ির সামনে দাবার কোর্টের মতো চারকোনা উঠোন। এক পাশে বেড়াহীন রান্নাঘর, মাটির চুলার পাশে কাঠের পিঁড়ির ওপর বসে মাজেদা বেগম অপলক তাকিয়ে আছেন উঠানের এক পাশে প্রসূতি আতাগাছের দিকে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডব থেকে কোনোরকম প্রাণে বেঁচে গিয়েছে গাছটি। মূল অর্ধেক মাটিতে লেগে আছে। বাকি অর্ধেক মাটির বাইরে। তবু প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে আতাগাছটি এবং বছর বছর নতুন নতুন সন্তান জন্ম দিচ্ছে। ঝড়ের পরে জাফর হোসেন গাছটা কেটে ফেলতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, বাঁচবে না এটা। অযথা রেখে লাভ নেই। কিন্তু মাজেদার বড্ড মায়া হলো। বিয়ের পর থেকেই গাছটা দেখে এসেছেন তিনি, বললেন থাকুক না যত দিন বাঁচে। গাছে এই বছর ফল ধরেছে প্রচুর, আতাগুলো পাকতেও শুরু করেছে। গাছের ডালে বসে একটা শালিক পাকা ফলে অনবরত ঠোকর দিচ্ছে। উড়ে উড়ে এই ডাল থেকে ওই ডালে গিয়ে বসছে এবং নতুন নতুন ফল ঠুকরে ভেতরের কিছুটা অংশ খেয়ে নিচ্ছে। বোঁটা আলগা হয়ে যাওয়া দু-একটা আতা পাখির ঠোকর লেগে টুপ করে মাটিতে ঝরে পড়ছে। অন্য সময় হলে মাজেদা ঢিল ছুড়ে পাখি তাড়াতেন। কিন্তু এখন পাখিটাকে দেখেও তার দাওয়া থেকে উঠতে মন চাচ্ছে না। তাড়িয়ে লাভ তো নেই। এই গাছ এখন কাগজে-কলমে অন্যের, এখন শুধু হস্তান্তরের অপেক্ষা।…’

বলার এ ভঙ্গি হৃদয়ছোঁয়া। প্রাণ-প্রকৃতির মেলবন্ধন যেভাবে লেখনির মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে, পড়লে মনে হবে যেন চোখের সামনেই সব ঘটছে। পাঠকের অনুভূতি জগতে যা নাড়া দিয়ে যায়। গল্প খুব কঠিন বিষয়। পাঠককের ভেতর থেকে যদি নাড়া দিতে না পারে, তবে তা ব্যর্থ হয়ে পড়ে। খেই হারিয়ে দিকভ্রান্ত হবে পাঠক। লেখক এ ক্ষেত্রে পাঠককে ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই মনে করা যায়। মাটির গন্ধ। নদীর ঢেউ। ফসলের জোয়ার, কৃষকের হাসি– সবকিছুর দুর্দান্ত সম্মিলন ঘটেছে এ গ্রন্থে। যাঁরা মাটির গন্ধ নিয়ে বড় হয়েছেন, তাঁদের জন্য এসব গল্প জীবনের আখ্যান। 

দাউ দাউ করে নগর পুড়ছে। প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসলীলায় মেতেছে রক্তখেকোরা। এর মধ্যে মানুষ লিখছে প্রকৃতি রক্ষার গল্প, এটি হয়তো প্রতিবাদেরই অংশ। শিল্প-সাহিত্যের ভাষায় যে প্রতিবাদ, তার অবদান কোনো অংশেই কম নয়। মানুষ তার ভাবনার জগত যখন লেখনির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে, তখনই মনুষ্যজগতের চিন্তাশক্তি উপলব্ধি করা যায়। বিপ্লব-প্রতিবাদ-লড়াই-সংগ্রাম এবং জয়ের গান উঠে এসেছে এ গ্রন্থে। একজন সাহিত্যিককে দৃশ্যশিল্পী হতে হয়। নিজে যেভাবে দেখবেন, সেটাই লেখনিতে আনবেন। চিন্তার এই মেলবন্ধন ঘটানোই তো সাহিত্যিকের কাজ। 

একই সঙ্গে লেখক এ গ্রন্থে সময়কে ধরেছেন। সময়ের সঙ্গে নিজের চিন্তার তাল মিলিয়েছেন। সমাজের অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আবার আলো আসবেই, মুক্তি মিলবে– এমন প্রত্যাশা করেছেন। 

‘সূর্যমুখী জীবন’ গল্পটি বিপ্লবী সূর্য সেনকে নিয়ে লেখা। একজন বিপ্লবীর জীবনে প্রেম-বিয়ে-আবেগ-অনুভূতির ছোঁয়া যে কত নির্মমভাবে আসতে পারে, তা তো আমরা সূর্য সেনের জীবন পাঠ করার মধ্য দিয়েই জানতে পারি। গল্পকার ঝুমকি বুস এ বিষয়টিকে আরও নান্দনিকভাবে গল্পের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। 

পুষ্পকুন্তলার অনিশ্চিত জীবন। এ ষোড়শীর জীবনে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা, কতটা প্রত্যাশিত। সূর্য সেনের বিপ্লবী জীবনকে কোনোভাবেই পথরুদ্ধ করতে চাননি, তিনি চেয়েছেন বিপ্লবের জয়গান গাইতে। কিন্তু পরিবারের একান্ত চাওয়া বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ তিনি হতে চাননি। 

পুষ্পের উৎকণ্ঠা বাড়ে। নিজের ভেতর প্রেমের অনুভূতি জাগে। বুকের বামপাশ চিনচিনে ব্যথা। এটার নামই বুঝি প্রেম! কিন্তু সূর্য-নিরুপায়! এমন বেড়ি তিনি তো বাঁধতে চাননি। যে মানুষ ভাবেন পুরো পৃথিবীকে মুক্ত করবেন, তিনি কীভাবে ফুলশয্যায় আটকে থাকেন। গল্পের বর্ণনায়—‘…স্বামীর ঘরের কোনায় কোনায় বই, মাঝখানে চার পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেগুন কাঠের তক্তপোষে করা হয়েছে ফুলশয্যার আয়োজন। নববধূ স্বামীর ঘরে ঢোকার অপেক্ষায় প্রহর গুনেই চলেছে, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বেড়ে গেছে ফুল এবং বইয়ের অন্তর্দ্বন্দ্ব। সূর্যের গোলাকার মুখে পড়েছে গ্রহণের ছায়া। বড়দার অনুরোধ এবং আত্মীয়স্বজনের চাপে নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে করতে হয়েছে নিয়মরক্ষার এই বিয়ে। থমথমে মুখে ঘরের বাইরে অনবরত পায়চারি করেই চলেছে সে। 

-মেজ মশায়, ঘরে যাও, পুষ্প তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। 

বউদির এ কথায় সূর্যের অস্থিরতা আরও বাড়ে। 

-বউদি, আমি কাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসে আমার মৃত্যু অনিবার্য।…’

সূর্যের ধ্যানজ্ঞান ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। বিয়ের মতো মায়ায় তিনি আটকাতে চাননি। পুষ্প দেশপ্রেমী। তবুও তো এটি আবদ্ধ হওয়া। পুষ্প কাঁদে। ঘোমটার নিচ থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ। কিন্তু সূর্য নির্বাক। নিস্তব্ধ। তিনি তো পথভ্রষ্ট হতে পারবেন না। সে রাতেই বাড়ি ছাড়েন। 

এ ঘটনার যে বর্ণনা গল্পকার দিয়েছেন, সত্যিই বিস্ময়কর। প্রখর চিন্তাশক্তির জোরেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মুহূর্তকে এভাবে গল্পের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা যায়। এমন গল্প পাঠ করলে একজন পাঠকের চিন্তাশক্তি দৃঢ় হবে। ইতিহাসের কাছে ছুটে চলার অনুপ্রেরণা জোগাবে এসব গল্প। 

ঝুমকি বসুর গল্পের শব্দগুলো মৌমাছির মতো—দল বেঁধে ছুটে চলে। শব্দের নিজস্ব শক্তি রয়েছে। দৃঢ়তা রয়েছে। নিজস্ববোধ তৈরি করা একজন লেখকের জন্য চ্যালেঞ্জ। যে চ্যালেঞ্জের পথে হেঁটেছেন ঝুমকি বসু। দিগভ্রান্ত হননি। তবে হোঁচট তাকে খেতে হয়েছে। হামাগুড়ি দিতে দিতে শেখার যে অনুভূতি, তিনি হয়তো সে পথ অতিক্রম করে এবার মেরুদণ্ড টান টান করে হাঁটা শুরু করেছেন। যে হাঁটার পথ কন্টকাকীর্ণ। মসৃণ নয়; তবে অবিচল চলার মানসিকতাই বয়ে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। 

যে কোনো লেখায় শব্দের অপপ্রয়োগ, বাক্যের অতিপ্রয়োগের দিকে নজর দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সে জায়গাটা এ গ্রন্থে খুবই স্পষ্ট। ভাষায় রয়েছে গতিময়তা। বাক্যের মাঝে অসংলগ্নতা নেই। কথ্য ঢঙ রয়েছে। কিন্তু লেজগোবরে পাকায়নি। এটি এ বইয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। 

‘…প্রায় বছর ছয় হতে চলেছে ঢাকার বাসিন্দা কাজল। এই শহরের রাস্তায় সাজানো নিয়ন বাতি, ধুলোর আবরণে ঢেকে যাওয়া সবুজ পাতা, অফিস-ফেরত মানুষগুলোর গায়ে লেগে থাকা ঘামের গন্ধ, বুড়িগঙ্গার নিকশ কালো জল, শক্তির দম্ভ দেখিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলা মেট্রোরেলের লাইন —সব খুব গভীরভাবে চেনা কাজলের। কিন্তু এতগুলো বছরে একটিবারের জন্যও নিউমার্কেট নামক মানুষের স্তূপে প্রবেশ করা হয়ে ওঠেনি।…’

‘বিজলি শাড়িঘর’ গল্পের কথাগুলো নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের কথা। প্রতিনিয়ত এসব দৃশ্যকে মোকাবেলা করেই এ নগরীতে চলতে হয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের ঠেলাঠেলি। দ্বন্দ্ব-বিরোধ। টানাপড়েন। একগেয়ে এ জীবনের অংশ। মুক্তা-কাজল শুধুমাত্র একটি চরিত্র। যে চরিত্রকে গল্পের খাতিরেই নির্মাণ করতে হয়; কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই যে একেকজন মুক্তা-কাজল তা তো গল্প পাঠ করলেই উপলব্ধি করা যায়। 

শাড়ির দোকানের কাচ ভেদ করে চকচকে একটি শাড়িতে মন আটকে যায় মুক্তার। এটি যেন তার লাগবেই। কাজলের সঙ্গে বিয়ে তার মাত্র উনত্রিশ দিন। কাজলের সঙ্গে মুক্তার বিয়েটা আচানক। প্রেম ছিল অন্য এক নারীর সঙ্গে। কাজল তখনও অপ্রস্তুত। কিন্তু পরিবার-সমাজ তাকে এ বিয়েতে মত জোগাতে বাধ্য করেছে। জীবনের এসব কথাই কলমের খোঁচায় ফুটিয়ে তোলার কাজটি করেন লেখকরা। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।

এ ছাড়াও বইটির ‘প্রমিতা’, ‘টেডি বিয়ার’, ‘মিথ্যা বকুল’ গল্পগুলো প্রাণের ভেতর আলাদা সঞ্চার ঘটাবে। বিস্ফোরণ ঘটাবে পাঠকের মননজগতে। ‘সবিতার সংসার’ পড়তে গিয়ে কেন যে পাঠক মনে বার বার ধাক্কা খাচ্ছিলাম। মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে। বরের সঙ্গে পার্থক্য ১৭ বছরের! ধীরে ধীরে সংসারের ভার বহন করার শক্তি অর্জন করে সবিতা। বর মোহন বরাবরই পাগলাটে। ছন্নছড়া। স্বভাববৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সবিতার পড়া শেষ। নারীদের এই বিশাল দক্ষতা, তিনি তার সঙ্গীকে পড়তে শিখেন অল্প সময়েই। তবুও কত অজানা থাকে, লুকোনো কত গল্প। যে গল্প চরম পুরুষতান্ত্রিক সমাজে প্রতিটি সবিতার গল্প।

সবিতার লড়াইয়ে সংসারে সুখ বয়ে আসে; কিন্তু মোহন সেই পাগলাটে। ছেড়ে চলে যাওয়া। আবার আঁচলে মুখ গুঁজে থাকা। এ যেন চিরচেনা। সবিতার রূপ-গুণ-বৈশিষ্ট্য এবং লেগে থাকার তীব্র মানসিকতাকে প্রশংসা করেন গ্রামের মানুষজন। এতে জোর পায়; কিন্তু তারও তো মন রয়েছে। নিজের মতো জীবনকে যাপন করার ইচ্ছে রয়েছে– যে ইচ্ছের বার বার ছন্দপতন ঘটে। শখ-আহ্লাদ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গল্পকার প্রাঞ্জল ভাষায় তা ফুটিয়ে তুলেছেন। 

এসব গল্প জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। মানুষের জীবনই গল্প। জীবন্ত গল্প। যে গল্পকে প্লট আকারে দাঁড় করান লেখকেরা। তা মানুষের ভেতরজগতকে আঘাত করে, দুঃখবোধ হালকা করে– তাকে আরও চিন্তাশীল ও শক্তিশালী করে।

এক ভঙ্গুর বাস্তবতায় লেখক যে দুঃসাহসিক গল্প রচনা করতে পেরেছেন, সেটিই তাঁর দৃঢ়তার পরিচায়ক। এখানে নারী-পুরুষের যে আলাদা শ্রেণিচরিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেটিও চমৎকার। শুধুমাত্র লেখক নারীর ভেতরের বেদনকেই শুধু উপস্থাপন করতে চাননি, চেয়েছেন এক মানবিক সমাজের সুরে তালা মেলাতে। আদি-ইতিহাসের ভেতরের স্বরূপ উদঘাটত করতে। 

=======================

লাবণী মণ্ডলঃ সাহিত্য সমালোচক

=======================