You are currently viewing কবিতাত্রয়ী/ অসীম ইশতিয়াক

কবিতাত্রয়ী/ অসীম ইশতিয়াক

কবিতাত্রয়ী

অসীম ইশতিয়াক

 

মাছরাঙা ও কাছিমের গাথা

রাজকন্যাকে মাছরাঙা ভাবা হয়

সে রঙীন সুখের জন্মজাত, আমাদের মর্যাদার স্কেল।

কাছিম হলো দুখীদের ঈশ্বর

খুবই স্লথ, সাদাকালো আর আটপৌরে।

কাছিম বলতে একটা ঢাউস পাহাড় কিংবা জঞ্জাল ভাবুন।

কখনও ভাববেননা পায়ের নিচে লুকিয়ে থাকা ঘাস

প্রতিটি রাজকন্যা হত্যার পর একটি কাছিমের জন্ম হয়

আমাদের কাছিম ও রাজকন্যারা হলো রূপক

এদের কোনো প্রয়োজন নেই।

 

একজন দোতারাবাদককে আপনারা গ্ল্যাডিয়েটর বানালেন

আর খেলতে দিলেন সাপলুডু; হাস্যকর।

 

সুফিদের আয়না

প্রিয় সুফির সঙ্গে সমতালে নৃত্যে মেতে থাকা চাঁদ, তোমার শক্তি সঞ্চয় হতে আর কতো সময় লাগবে?

বৃদ্ধ সিংহ মরেছে অনেক আগেই। গুহাতে প্রদীপ জ্বালানো হয়েছে তাও বহুকাল আগে। শিকারের আইন একই রয়ে গেছে। গোত্রপিতার মতো মহান কোন নেকড়ে তার ঔদার্য ছড়িয়েছে বহু আকাশে, সাদা ফুলের মতোই। আর তোমার হিংস্রতার ঠিকানা হয়েছে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা। পৃথিবীর জৌলুস আরও উজ্জ্বল হয়েছে। পাখিদের ভাষা বুঝে নিতে কবিগণ হয়েছে আরও ক্লান্ত। কোথাও শান্তি নেই; নেই প্রেমিকাদের বুকে বা সন্তানদের মুখে। এই তো নিষ্পাপ অভিশাপ। এর পরিনতি হলো নিজেকে মহান ঘোষণা করা, সকলে এবার বশ্যতা স্বীকার করুক। একেই বলে রাজা হয়ে ওঠা।

পৃথিবীর প্রাচীনতম মমতাসমূহে মিশে আছে বিষ। তোমার সুফলা সময়ে সে তোমাকে মেরে ফেলতে পারে। এবং খুন হবার পর তার পরিচয় পাওয়া যাবে সে তোমার বন্ধু ছিল। এখন তোমার শহরের রাজকীয় পদধারী।

বেলুনের মতো কিছুটা বাতাস তোমার প্রাণের কাছে বলবে তুমি শক্তিশালী হয়ে ওঠো, রাজা হয়ে ওঠো। রাজা হবার পথটা সহজ। কানের কাছে কোকিলের গান বলে যাবে জাহাজের ব্যাবসার  খোঁজ। তুমি হয়ে উঠবে পুঁজিপতি। বেড়ালের ঘ্রাণ শক্তির মতো আদুরে অবিশ্বাস তোমাকে বজ্রপাতের মতোই নিখুঁত কারিগর বানিয়ে নেবে। যুদ্ধের ময়দানে তুমি ফিরে পাবে অপার কোনো মরমী সঙ্গীত।

 

নক্ষত্রকুমির

হা হা করে হাসতে থাকো আর উপভোগ করতে থাকো নিজেকে। যা কিছু মনে আসে করো। তোমার উপভোগ্যতা, পাগলামী প্রাচীন জ্ঞান বিকাশের মতো মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে। কী আর মেনে নেয়না সমাজ? সবইতো নেয়। এক সুমহান ইলাস্টিসিটি নিয়ে টিকে আছে সে। আছে মদ,  জুয়া, অভিশাপ আর ক্ষমতার গান।

সময়ের অজস্র ত্রাসে তুমি হয়ে উঠবে নক্ষত্রকুমির। এ যেন ঘনায়িত চাপ বা অমূলক সংখ্যা নির্ণয়। কী-ই বা চাও তুমি? ক্ষমতা,  স্বচ্ছলতা! এভাবে ভাবতে থাকার পর মানুষই তোমার স্বপ্নসাইকেল থেকে খুলে নিয়েছে চাকা। এই সরল অংকে পড়ে আছে অনাদি জীবন। স্বপ্নে পাখা গজালে তুমি ক্লান্তিতে ভর দিয়ে উড়ো।

নিস্ফলা আকাশ, বেবুনবৃক্ষের মতো অনাদি স্মৃতিচিহ্নসমেত শান্ত সমাধিস্থ কবর আমাদের যন্ত্রনাখন্ড। ভেসে থাকো মহাকালে সুফিদের জ্ঞান আর প্রেমরস নিয়ে। বাজারে যাও;  চাল কেনো। ডাক্তারের কাছে যাও, বাসনা জিইয়ে রাখো, যেন আশ্চর্যকে মেনে নিয়েছো।

মানুষের চারপাশে কাকদের কা কা, নৌকার চলাচল আর ছোটগল্প থেকে বেঁচে ফেরা তরকারি বিক্রেতার হরেক পসরায় তোমার ক্লান্তির ঘা। অতৃপ্ত আত্মার মতো সবখানে বিতাড়িত হতে গিয়ে তুমি প্রাণ নিয়ে এক জটিল অঙ্ক উপহার পাবে। নিমগাছে বসে থাকা ঘুঘুদের দেখ। আরোগ্য সাড়াতে নয়, তোমাকে আরও বিভ্রান্ত করতে পাশেই উড়বে হলুদ প্রজাপতি, লাল পিঁপড়া আর কালো পিঁপড়ারা। সময়ের গভীর ক্ষত হতে তুমি শুধু দুর্গন্ধ পাবে গলিত শবের।