কবিতাগুচ্ছ
হুমায়ুন রেজা
চিঠি
ঠিকানা লিখেছ পাখিদের ডাকনামে
পোস্টম্যান তাকে চেনে?
পথের ঠিকুজি খুঁজে পাবে তুমি জানো?
তুমি চেন তাকে? তবে?
চিঠি যে পাঠালে পাখিদের ডাকনামে!
সাদা খামটিতে ময়ূর পালক দুটো
পাঠাবে জানিয়েছিলে
বিজন বাতাসে ওড়াব ঘুড়িতে জুড়ে
আকাশের গম্বুজে
পতাকার মতো মেঘের কপাল ছুঁয়ে
কবে পাঠিয়েছ মাসের পয়লা? শেষে?
চিঠিটা হয়তো উড়ছে চন্দ্রনাথে, মেঘেদের সাথী হয়ে
খয়েরি বুটির চিল
সাদা ঝুঁটি কাকাতুয়া
দাঁড়ে বসে বসে হয়তো খাচ্ছে
ছোলা
শেখানো বুলিতে শোনাচ্ছে প্রিয় নাম
লিখেছ তোমার বেদনার কথকতা
হয়তো উড়ছে শালগাছ গুলি ছুঁয়ে
কুয়াশার পুঞ্জতা
ঠিকানা লিখেছ পাখিদের
ডাকনামে
দোয়েল ময়না ঘুঘু মাছরাঙা টিয়ে
বেনে বউ নাকি খোকাহোক কালো ফিঙে
চিঠি যে পাঠালে পাখিদের ডাক নামে
পোস্টম্যান তাকে চেনে?
জিরাফ
সেই কবে দেখা হয়েছিলো
অকালে ভেসেছে আজ প্রদোষের কাল
ইতোমধ্যে প্রবাহিত চল্লিশ ফাল্গুন,
মাঝে মধ্যে ঠারে ঠোরে দেখা যে হয় নি
তাতো নয়
স্পর্শ করিনি তাই আজো তার গ্রীবার আদর
আমাকে সুতীব্র টানে!
মনে জ্বলে শঙ্খের আঘাত?
আজো সেই স্কার!
বহুদিন হয়
তাই বলে জলস্পর্শ করিনি কি!
তাওতো বেঠিক
অভিমানে সরে গেছি
সেকথাও ঠিক বলি কেনো
মাঝে মাঝে মনে পড়ে আজো কি আমাকে
পুরনো কাসুন্দি কেনো পুরনো চাল যে ভাতে বাড়ে
ভালোবাসা কাকে বলে সেই কথা বলাবলি করে
কতো প্রেম চাবি ভুলে সিন্দুকের কুঠুরি দেরাজে
নতুন কবিতা লেখা, নতুন বাজার ফর্দে নতুন নতুনে
তবুও তো বোঝা গেলো প্রেম
জেব্রাদের একমাত্র জিরাফ!
ঢের বেশি ভালো হতো যদি
বাকি দিনগুলো স্কারহীন
পাহাড়ে পাহাড়ে কেটে যেতো
ভালোই ছিলাম চরৈবেতি ঘূর্ণিপাকে
ভালোই ছিলাম চরৈবেতি ঘূর্ণিপাকে
পায়ের নীচে সর্ষে নিয়ে ভালোই ছিলাম
তোমার দেখা পেয়েই যে সব গোল বাধাল
তোমার দেখা পেয়েই যে মন থমকে গেল
গোলকধাঁধায় ঘুরছি শুধু কেন্দ্রে তুমি
না আকাশ না সমুদ্র না স্বর্ণভূমি
এখন আমার চোখের ভেতর অন্য আলো
এখন আমার তেষ্টা পেলেও আকাশ ছাড়া
অন্য কোনো কুয়োর জলে মন ভরে না
এখন আমার বোশেখ গেল আষাঢ় এল
তবুও বুকে সোনার নৌকো পাল তোলে না
চৈত্র দাহে এই নাবালে তৃষ্ণা মেটাই
এমন কোনো জলের দিশা আছে কি ছাই!
ভালোই ছিলাম চরৈবেতি ঘূর্ণিপাকে
পায়ের নীচে সর্ষে নিয়ে ভালোই ছিলাম
তোমার দেখা পেয়েই যে সব গোল বাধাল
গোলকধাঁধায় ঘুরছি শুধু কেন্দ্রে তুমি
না আকাশ না সমুদ্র না স্বর্ণভূমি…