You are currently viewing একগুচ্ছ কবিতা > শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়

একগুচ্ছ কবিতা > শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়

একগুচ্ছ কবিতা

শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

স্বার্থপর

 

বড় স্বার্থ দেখে চলি আজকাল

বয়স যত বাড়ছে

বড় নিজের দিকে মন

পুরোনো স্মৃতি গুলো বের করে

আদর করে মুছি,

জানি উজ্জ্বল হলেই মূল্য হবে বেশি।

নিলামে হাঁক পেড়ে জিতে নিই

গোধূলির আলো আর

সূর্যাস্ত দেখার সময়টা

হয়েছি বেশ সুযোগসন্ধানী ।

 

বেশ বৈষয়িক হয়েছি

জমেছিল চাওয়া আর পাওয়ার হিসেব

অকাজের হয়ে গেছে সব

ওগুলো বদলে, মাঝে মাঝেই এনে রাখি গান গাইবার ইচ্ছে।

এবার বসন্তে গেয়েছি অনেক

ছিপ ফেলে বসে থাকি সময়ের স্রোতে

জহুরীর চোখ নিয়ে অপলক

দিন যায় মাস যায় মূহুর্তরা খেলা করে

কোন মাহেন্দ্রক্ষণে  জ্বলে দ্যুতি

আলতো হাতে তুলে নিই পরাগ কেশর মুহুর্ত

রেখে দিই  মাথায় পরব বলে।

অনেক অভিলাষ তাই

অনেক অন্বেষণ

বড় স্বার্থ দেখে চলি আজকাল

বয়স যত বাড়ছে

বড় নিজের দিকে মন।

 

বসন্ত এসেছে আজ পুরোনো শহরে

 

বসন্ত এসেছে।

 

সামনে মাঠের সবুজে এক পাখি খুঁটে খুঁটে দানা খায়

একটু লাফিয়ে পাশে সরে

নতুনের সন্ধানে উড়ে যায় দূরে

শালপ্রাংশু গাছের নীচে একজন তাকায় এদিক ওদিক

একই পাখি? হয়তো নয়, হয়তো বা আরেক জন।

তাতে কি এসে যায়

বসন্তে মাঠে মাঠে ঘাসে ঘাসে সব পাখিরা খেলা করে

রং তুলি আর কাগজের বান্ডিল কাঁধে

সে উদাসীন ভাবে ঢোকে সংসদঘরে

আজ কলেজের গেট এ সভা

বাড়িতে জ্বরের ঘোরে বোন বলেছিল

দাদা বেশি দেরী করিস না আজ

মালা নিয়ে ফিরিস

দেয়ালে মায়ের নরম হাসি

সেই ছবি চোখে নিয়ে লোকাল ট্রেন ধরে

সংসদ ঘরে

মাটিতে চাটাই আর হাওয়ায় জুড়োনো চায়ে

লেখে শ্লোগানের লাল

কিছু পরে একজন

কলেজের গেটে মাইকের তার ঠিক করে।

এলোমেলো চুল আর উদাসীন চোখ,

একি সে?

হয়তো নয় হয়তো বা অন্য জন

কেউ লেখে কেউ গায়

কেউ পাশের কারো হাত ধরে এসে বসে সামনের সারিতে।

 

আজ সভা শহরে শহরে

কাগজের বান্ডিল হাতে ঘোরে অনেক এলোমেলো চুল।

সভা শেষে সবাই ফেরে ঘরে

যেখানে বেহুঁশ বোন শুয়ে আছে আচমকা জ্বরে

বসন্ত এসেছে আজ পুরোনো শহরে।

 

অসময়

 

অসময় রাজার মত আসে

এসেই হাঁকে আমার আসন কই?

সময় তখন নিড়ান দিচ্ছে মাটি

বাগান বেয়ে টগর বেলা যুঁই।

অবাক সময় ভেবেই জড়োসড়ো

রাখবে কোথায় হাজার ঘোড়ার জিন

বেহাগে না পরজে সুর বাঁধে

কোন কথাটা বলতে সমীচীন।

অসময়ের অট্টহাস্যে কাঁপে

চারটে দেওয়াল একটা আকাশ ঘর

সময় তখন মুখ লুকিয়ে খাতায়

আয়োজনেই  ব্যস্ত অবসর।

অসময়ের যাত্রাদলের  গাড়ী

অসময়ের মুকুট জুড়ে কাঁটা

সময় তখন খয়ের পান সুপারি

সময় তখন নোড়ায় হলুদ বাটা।

দিনের শেষে যাত্রাপালা শুরু

আকাশরথে যুদ্ধে তীরন্দাজ

মধ্য অঙ্কে আবেগ মন্থন

নেপথ্যে বাজে আড়বাঁশি এসরাজ

যবনিকায় মুকুট খুলে রেখে

জানুনত নীরব অসময়

আলিঙ্গনে ছোঁয় সময়ের মুখ

উত্তরীয় ধূলোয় পড়ে রয়

অসময়ের অশ্বারোহে ঝড়

উড়িয়ে বিদায় সাঙ্গ করে খেলা

কাল সময়ের সকালবেলার গানে

অসময়ের ফুলের গন্ধ ঢালা।

________________________________