You are currently viewing এই দেশে সাহিত্য করা মানে শহীদ হয়ে যাওয়া: রাজু আলাউদ্দিন

এই দেশে সাহিত্য করা মানে শহীদ হয়ে যাওয়া: রাজু আলাউদ্দিন

এই দেশে সাহিত্য করা মানে শহীদ হয়ে যাওয়া: রাজু আলাউদ্দিন

 

সাক্ষাৎকার: ধ্রুব সাদিক

কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিনের জন্ম শরিয়তপুরে। তাঁর লেখাপড়া এবং বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরে। ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষা থেকে বিস্তর অনুবাদের পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি সাহিত্য নিয়ে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ ইংরেজি, স্প্যানিশ, ইতালিয় ও সুইডিস ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর প্রথম কবিতাগ্রন্থ আকাঙ্খার মানচিত্র গোপনে এঁকেছি স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত হয়ে ইকুয়েডর থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। সম্প্রতি ধ্রুব সাদিকের সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি বাংলা কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, অনুবাদের নানান বিষয় ও বস্তু ছাড়াও অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তাঁর প্রকাশিত এবং প্রকাশিতব্য গ্রন্থ নিয়ে কথা বলেছেন।

 

ধ্রুব সাদিক: আশির দশকের শুরুতে কবিতার মাধ্যমেই আপনার সাহিত্য-যাত্রা শুরু। আপনার প্রথম কবিতার বই আকাঙ্ক্ষার মানচিত্র গোপনে এঁকেছি এত দীর্ঘসময় পর প্রকাশিত হওয়ার পিছনে কোন কারণটি নিহিত ছিলো? 

রাজু আলাউদ্দিন: এটা সত্যি যে কবিতার বই বের করতে আমি অনেক বেশি সময় নিয়েছি। প্রথম কথা হচ্ছে, কবিতা, প্রবন্ধ  এবং অনুবাদ— সাহিত্যের কোনো শাখাকেই আলাদা করে ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদায় দেখিনি বলে আমার কখনো মনে হয়নি কোন বইটি আগে আর কোনটা পরে প্রকাশিত হওয়া উচিৎ। আমি হয়তো কবিতার বইটি বিদেশে যাওয়ার আগেই প্রকাশ করতে পারতাম। কেননা, আকাঙ্ক্ষার মানচিত্র গোপনে এঁকেছি‘র কয়েকটি কবিতা বাদে সকল কবিতাই ১৯৯৯ সালের আগেই লেখা। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল আমি আরেকটু সময় নিয়ে দেখি কবিতাগুলো নিজের কাছে বাতিলযোগ্য হয়ে ওঠে কিনা। সময়ের দূরত্ব থেকে পাঠক হিসেবে দেখার পর মনে হয়েছে, এই বইটিতে কিছু কবিতা আছে যেগুলোর বিষয়, প্রকাশশৈলী ও বাচনিক স্বাতন্ত্র্য পাঠককে খানিকটা হলেও আন্দোলিত করবে। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ করার এটাই একটা বড় কারণ।

ধ্রুব সাদিক: আকাঙ্ক্ষার মানচিত্র গোপনে এঁকেছি প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ৮ বছর পর আশ্চর্য এই বই ও অন্যান্য কবিতা এবং পুড়বে যদি নগ্ন এস শিরোনামে একসাথে আপনার দুইটি কবিতার বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বই দুটিতে কোন বিষয়গুলো বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?

রাজু আলাউদ্দিন: ধ্রুব, কবিতায় তো সেই চিরকালীন বিষয়গুলোই ঘুরে ফিরে আসে, হয় প্রেম, নয়তো, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় অনাচার, মানুষের দুঃখ দুর্দশা, অথবা ব্যক্তিজীবনের নানান রকম আনন্দ বেদনা। সুতরাং এসব উল্লেখে নতুন কিছু নেই। বিষয় হলো, ভিন্ন ভিন্ন সময়ের এক একজন কিভাবে এগুলো তার কবিতায় উপস্থাপন করছেন। আশ্চর্য এই বই ও অন্যান্য কবিতা আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। বইটির মধ্যে প্রেম  ও যৌনতার মতো চিরকালীন বিষয় যেমন আছে, তেমনি আছে দেশ ও বিদেশের নানা ঘটনায় আমার প্রতিক্রিয়া ও ক্রোধ থেকে উঠে আসা কবিতা। কিন্তু বলার ধরন ও বিন্যাসে আছে নতুনত্ব। যেমন অযৌন বিষয়কে যৌন আঙ্গিকে পরিবেশন যেমন আছে, তেমনি আছে এর বিপরীত ঘটনাও। যমজ কবিতা নামক কবিতাটিতে আছে প্রেম যৌনতা, ভাষা, দর্শন আর দ্বৈততার সম্পর্কে নতুন কিছু উন্মোচন। জানি না ওতে সাফল্য কতটুকু এসেছে। কিন্তু চেষ্টা করেছি নতুন পথে হাঁটার। এই গ্রন্থের কবিতাগুলোয় আমি চেষ্টা করেছি কখনো নতুন আঙ্গিকে কখনো নতুনভাবে উপস্থাপনের।

পুড়বে যদি নগ্ন এস কাব্যগ্রন্থে আছে এ পর্যন্ত লেখা আমার প্রেমের কবিতাগুলো। আমার ধারণা এই কবিতাগুলোয় পাঠকরা নতুন স্বাদ পাবেন।

ধ্রুব সাদিক: এছাড়াও, দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল আপনার আরও চারটি বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। সেগুলোর ব্যাপারেও যদি বলতেন।

রাজু আলাউদ্দিন: স্বদেশী ভাষায় বিদেশি প্রেম বইটি আমার এ পর্যন্ত অনূদিত বিদেশি প্রেমের কবিতার সংকলন। বইটি বেরুতে যাচ্ছে কথাপ্রকাশ থেকে। নির্বাচিত বোর্হেস বইটি বের করতে যাচ্ছে কাগজ প্রকাশনী। এটি আগে যে পাঁচ খণ্ডে বোর্হেসের রচনা বেরিয়েছিল, তারই অখন্ড সংস্করণ। তবে, বইটি পরিমার্জিত ও খানিকটা পরিবর্ধিত সংস্করণে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। মারিও বার্গাস যোসা ও বোর্হেস: আলাপে পরস্পর বইটি বেরুবে পাঠক সমাবেশ থেকে। এটিতে থাকছে মারিওর বার্গাস যোসার বোর্হেস সংক্রান্ত সাক্ষাতকার ও অন্যান্য লেখার একটি সংকলন। আর মার্কেসের সন্ধানে কলম্বিয়ায় বইটি আমার কলম্বিয়া ভ্রমণের কাহিনী। এই প্রথম আমার কোনো ভ্রমণকাহিনী বেরুতে যাচ্ছে।

ধ্রুব সাদিক: প্রবন্ধ লেখালেখির সাথে বর্তমানে নিবিড়ভাবে যুক্ত তাদের শক্তির এবং দুর্বলতার জায়গা নিয়ে জানতে চাই। বাংলাদেশের বর্তমান প্রবন্ধের মান নিয়ে আপনার অভিমতও যদি শেয়ার করতেন। 

রাজু আলাউদ্দিন: সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশের সাহিত্যের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাটি এখন আসলে প্রবন্ধ এবং গবেষণা। সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধের নামে যা লেখা হচ্ছে তা হয় ভাবনার দারিদ্র্যের মঞ্চায়ন, নয়তো মননের খড়া। এমনকি শৈলীগত দিক থেকেও প্রবন্ধ তার আবেদন হারিয়েছে বহুদিন থেকে। এখনকার প্রবন্ধ দেখলে মনেই হয় না, এই ভাষায় বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, অমলেন্দু বসু, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, কিংবা আমাদের এই বাংলায় সনৎকুমার সাহা, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ-এর মতো লেখকরা প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁরা যে-পাণ্ডিত্য মনন ও সৃজনীশক্তি নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন, তা আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু পাশাপাশি এও বলা দরকার যে গোলাম ফারুক খান, তুষার দাশ, সুব্রত শঙ্কর ধর, কুমার চক্রবর্তী, আজফার হোসেন, সরকার মাসুদ, কিংবা মাসরুর আরেফিনরা পরিমাণে অল্প লিখলেও তাদের কোনো কোনো প্রবন্ধে উন্মোচন যেমন থাকে, তেমনি থাকে নতুন নতুন পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ আর গদ্যের শৈলীগত মিষ্টতা ও নান্দনিকতা। নতুনদের মধ্যে আহমাদ মোস্তফা কামাল, প্রশান্ত মৃধা, সোহেল হাসান গালিব, লীনা দিলরুবা, বিপাশা চক্রবর্তীর গদ্য আমি উপভোগ করি।  প্রবন্ধের এই দুর্যোগের কালে আমাদের উচিৎ যারা ভালো লিখছেন তাদেরকে আলোচনায় রাখা, তাদেরকে তাগিদ দিয়ে আরও বেশি করে লিখিয়ে নেয়া। নাহলে অপদার্থদের চাপে সক্ষমরা কোণঠাসা হয়ে স্বল্পপ্রজ হয়েই মৃত্যুবরণ করবেন।

ধ্রুব সাদিক: ইলিয়াস এবং শহীদুল জহির পরবর্তী বাংলাদেশের উপন্যাসের ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই। 

রাজু আলাউদ্দিন: যদিও উপন্যাস আরও অনেকেই লিখেছেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-পরবর্তী উপন্যাসের ক্ষেত্রে প্রধান স্তম্ভ নিঃসন্দেহে শহীদুল জহির। হুমায়ুন আহমেদ এবং ইমদাদুল হক মিলন জনপ্রিয় ধারার উপন্যাস লিখতে গিয়ে উপন্যাসের বাঁক বদলে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হননি। ইমদাদুল মিলনের নূরজাহান এবং অন্যদিকে হুমায়ূন আহমেদের জ্যোৎস্না ও জননীর অনেক নামধাম শোনা গেলেও ওগুলো শেষ পর্যন্ত আখ্যান মাত্র। শৈল্পিক অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। কিন্তু শহিদুল জহিরের ক্ষেত্রে তা বলা যাবে না। উনি কেবল নিপুণ হাতে আখ্যানই রচনা করেননি, ভাষা এবং উপন্যাস নামক কাঠামোকে প্রচলিত ধারণা বাইরে নেবার চেষ্টা করেছেন। অধিকন্তু যাদুবাস্তবতা বলতে যা বোঝায়– সেরকম এক শিল্পরীতির সফল চর্চাকারী। তবে, দুঃখজনক ব্যাপার কি, এরকম একজন ঔপন্যাসিক সম্পর্কে শিল্পরুচি-বর্জিত সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, “এমন কি অকালপ্রয়াত শহীদুল জহিরের গল্প পড়ার ক্ষমতাও আমার জন্মায় নাই।”  ভাষা বিষয়ে এই কথা বলার মাধ্যমে সলিমুল্লাহ আসলে বলতে চেয়েছেন শহীদুল জহিরের কোনো ক্ষমতাই নেই। যে-সলিমুল্লাহ মনে করেন বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের পরে সবচেয়ে বড় লেখক আহমদ ছফা, ফলে সাহিত্যবিষয়ে তাঁর যে-কোনো মত ও মন্তব্যকে প্রলাপ মনে করাই শ্রেয়। শহীদুল জহির একটি বা দুটি কারণে নয়, সাহিত্যের একাধিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, সলিমুল্লাহ খান ইলিয়াস এবং শহীদুল জহির বাংলা সাহিত্যের ভীষণ শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিককে যাচ্ছেতাইভাবে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। অক্ষমতা থেকে সলিমুল্লাহ’র এইসব অসূয়ার কেউ প্রতিবাদও করছেন না। তাছাড়া, সম্প্রতি জিএইচ হাবীবকে নিয়ে বলা ঘটনাটি তো আছেই। এ-পোড়া দেশে এমনিতেই  সাহিত্যের সক্ষম ও সৎ সমালোচনার তীব্র মঙ্গা, সেখানে এধরনের মন্তব্য সাহিত্যের স্বাতন্ত্র্য ও বিস্তারকে ক্ষতিগ্রন্ত করে। আপনি দেখুন, কথাসাহিত্যে বাঁকবদলকারী এই ঔপন্যাসিক জীবদ্দশায় বলতে গেলে কোনো পুরস্কারই পাননি। মৃত্যুর পরেও বোধহয় পাননি। এই দেশে সাহিত্য করা মানে শহীদ হয়ে যাওয়া।

ইলিয়াস এবং শহীদুল জহির পরবর্তীদের মধ্যে আমি উল্লেখ করতে চাই ওয়াসি আহমেদ, আকিমুন রহমান, ইমতিয়ার শামীম, জাকির তালুকদার, মাসরুর আরেফিন, ফয়জুল ইসলাম, শাহনাজ মুন্নী, আহমাদ মোস্তফা কামাল প্রমুখদের নাম।

ধ্রুব সাদিক: আমাদের দেশে প্রদত্ত পুরস্কারের ব্যাপারে আপনি বেশ কয়েকবার মন্তব্য করেছেন। এইসব পুরস্কারগুলোর ব্যাপারে আপনার মনোভাব এবং অবস্থান জানতে চাই।

রাজু আলাউদ্দিন: হ্যাঁ, বিভিন্ন সময় আমি পুরস্কার সম্পর্কে মন্তব্য করেছি। না করে উপায় ছিল না। দেখুন, পুরস্কার পেলে সব লেখক-শিল্পীই খুশি হয়। এবং আমি মনে করি, লেখক-শিল্পীর জন্য এটা এক সামাজিক স্বীকৃতি। তবে এই স্বীকৃতি তাদেরকেই তৃপ্ত করবে যারা সামাজিক হওয়ার মধ্যেই কেবল তাদের জীবন, আদর্শ ও লক্ষ্যকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। কিন্তু লেখক বা শিল্পীমাত্রই প্রথাবিরোধী, প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধগুলোকে সমালোচনা করাই তার অনিবার্য নিয়তি। প্রত্যেক বড় লেখকই তাই। তাহলে তিনি কিভাবে ওই সামাজিক স্বীকৃতির আশা করতে পারেন কিংবা তাতে তৃপ্ত হতে পারেন? কোন বড় লেখকই তা পারেন না। তবু সমাজ শিল্পীকে স্বীকৃতি দিতে চায় এবং দেয়ও। আমি মনে করি না শিল্পীর পুরস্কার বা সম্মান পাওয়ার মধ্যে কোন দোষ আছে যদি তা লেখক-শিল্পীর সত্যিকারের অবদানকে মনে রেখে দেয়া হয়। তবে, প্রশ্ন হলো আমাদের মতো দেশে সরকারি বা বেসরকারি পুরস্কার প্রদানের পেছনে ওই রকম কোন কারণ সক্রিয় নয়। কয়েকজন দুষ্ট, দুর্নীতিগ্রস্থ লোক পারস্পরিক স্বার্থের বিনিময়ে আমাদের বেশিরভাগ সাহিত্যপুরস্কারগুলো প্রদান করা হয়। আমাদের বেশিরভাগ লেখকরা এত কাঙাল যে তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়।একারণে আমি একে কাঙালদের দ্বারা কাঙালদের পুরস্কার প্রদান হিসেবেই দেখি। এটা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এই দেশের শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনও এই দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়। বাংলা একাডেমি পুরস্কার কয়েকবছর যাবতই সর্বাধিক অযোগ্যদেরকে দেয়া হয়, এমনকি এই পুরস্কার লেখকদের স্ত্রীদেরকেও দেয়া হয়েছে যাদের আসলেই কোন অবদান নেই। আগামীতে লেখকদের বাসার গৃহকর্মীদেরকেও দেয়া হবে। স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় স্বাধীতনাবিরোধীকে। এসব পুরস্কার দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। সত্যিকারের লেখকদের জন্য এইসব পুরস্কার আজ অপমানজনক। এই পুরস্কারগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। সত্যিকারের লেখকদের উচিত এসব পুরস্কার বর্জন করা। ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে এখনও এমন লেখকশিল্পী আছেন যারা পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের সাহস রাখেন।

ধ্রুব সাদিক: আপনার অনুবাদের দিকে দৃষ্টি দিতে চাই। পাউল ব্রিতোর একিলিসের আদর্শ’র অনুবাদ থেকে শুরু করে বোর্হেস, ট্রাকল, যোসার সাহিত্যকর্মসহ দীর্ঘ একটি সময় ধরে আপনি অনুবাদ করে যাচ্ছেন। কোন প্রমা থেকে উপনীত হয়ে সাহিত্য জগতে এসে আপনাকে অনুবাদও বেছে নিতে হয়েছিল? 

রাজু আলাউদ্দিন: অনুবাদ যেহেতু আমি পেশাগত বা বাণিজ্যিক কারণে বেছে নেইনি, তাই এটা সহজেই অনুমেয়, যে,  নিছক ব্যক্তিগত ভাললাগা থেকেই এই জগতে প্রবেশ। এই প্রবেশ কতটা প্রমা আর কতটা প্রমাদ থেকে হয়েছে তা বলতে পারবো না। তাছাড়া, অনুবাদ করার পেছনে আরও একটি কারণ সক্রিয়, সেটা হচ্ছে অনুবাদ করতে গেলে উৎস-রচনাটিকে অন্তরঙ্গভাবে পাঠের মাধ্যমে তার মর্মে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যায়। নিজেকে শিক্ষিত করে তোলার এটাও একটা উপায়। যদিও অনুবাদ না করেও যে-কেউ নিজেকে শিক্ষিত করে তুলতে পারেন, কিন্তু আমি এই হাতে-কলমের পদ্ধতিটাকেই বেছে নিয়েছি।

ধ্রুব সাদিক: অনুবাদকের স্বাধীনতা এবং অনুবাদের বিশ্বস্ততার ব্যাপারে আপনার অভিমতটা আসলে কেমন? 

রাজু আলাউদ্দিন: ধ্রুব, আপনি নিজেও অনুবাদ করেন এবং দুটো ভাষাতেই আছে আপনার অবাধ যাতায়ত। ফলে, অনুবাদের স্বাধীনতা আর বিশ্বস্ততার ব্যাপারটি আপনার অজানা নয়। অনুবাদে আমার নিজের পক্ষপাত মূলানুগ থাকা। মূল রচনার সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ আর বাচনরীতি ও প্রকাশশৈলীর প্রতি অনুগত থাকা— আদর্শ হিসেবে এই পদ্ধতিকে অনুসরণযোগ্য বলে মনে করি। এই পদ্ধতির প্রতি আমার পক্ষপাতের  পেছনে রাজনৈতিক ও দার্শনিক কারণও আছে। রাজনৈতিক ও দার্শনিক এই কারণে, যে, আপনি অন্য সংস্কৃতি ও জাতির স্বাতন্ত্র্যকে মেনে নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি সংস্কৃতি, ভাষা এবং প্রত্যেক জাতির প্রকাশরীতি ও  নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা যা আমাদেরকে আকৃষ্ট করে তোলে একে অপরের প্রতি। ভাষিক ও সাংস্কৃতিক চিহ্নগুলো যতটা সম্ভব ঘষেমেজে নিশ্চিহ্ন না করে প্রকাশ করার মধ্যেই রয়েছে প্রত্যেকের স্বাতন্ত্র্যের প্রতি সম্মান দেখানো। এসবই হচ্ছে অনুবাদের প্রতি মূলানুগ বা বিশ্বস্ত থাকার কারণ। কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্য যে আমরা যতই মূলানুগ থাকতে চাই না কেন, কিছু না কিছু স্বাধীনতা অনুবাদককে নিতেই হবে। স্বাধীনতা নেয়ারও মূল কারণও কিন্তু সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য। অর্থাৎ অনুবাদ প্রক্রিয়ার মধ্যে একটা স্ববিরোধিতার ধর্ম নিহিত আছে।এই ধর্মকে যিনি সতর্কতার সাথে সাধন করতে পারেন তিনিই একজন সফল অনুবাদক। Translation is an art of gain through lose.

ধ্রুব সাদিক: বাংলা ভাষায় বিদেশি সাহিত্য অনুবাদ এবং বাংলা সাহিত্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদের ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই। বাংলা ভাষার সাহিত্যকর্ম বিদেশি ভাষায় কেমন অনুবাদ হচ্ছে এবং এইসব অনুবাদের মানের ব্যাপারে যদি সংক্ষেপে বলতেন। 

রাজু আলাউদ্দিন: বাংলা ভাষায় বিদেশি সাহিত্য এখন আগের তুলনায় বিপুল পরিমাণে হচ্ছে যা আমরা পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারি। তবে পরিমাণে যত বেড়েছে, অনুবাদের নামে আবর্জনাও তত বেড়েছে। বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রেখে দ্রুতগতিতে অদক্ষ হাতে অনুবাদ হচ্ছে। তাতে করে অনূদিত রচনাটির গুণ ও মানের প্রতি অবিচার করা হয়। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, জিএইচ হাবীব, কুমার চক্রবর্তী, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, আলম খোরশেদ, রওশন জামিল, ফারুক মঈনুদ্দিন, আনিসুজ জামান, জাভেদ হুসেন, আফসানা বেগম, মশিউল আলম, জাহিদ রেজা নূরসহ আরও অনেকেই বিদেশি সাহিত্যকর্ম অনুবাদ করে অনুবাদ সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন।

আর বাংলা সাহিত্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদ প্রসঙ্গ খুব কিছু বলার মতো কি আছে? ভিন্নভাষী অনুবাদকদের দ্বারা বাংলাসাহিত্যের খুব অল্পই অনুবাদ হয়েছে, তবে যেটুকু হয়েছে তা মানসম্পন্ন হয়েছে বলেই মনে হয়। কিন্তু আমাদের ঔপনিবেশিক জঙধরা ইংরেজিতে বাংলাদেশি অনুবাদকরা যেসব অনুবাদ করছেন তার বেশির ভাগই অপাঠ্য। লক্ষ ভাষার পাঠকদের কাছে যা প্রায়শই হাস্যকর বলে মনে হবে। তবু দু’একজনের নাম উল্লেখ করতেই হবে যারা বাংলা থেকে ইংরেজিতে খুব ভালো অনুবাদ করছেন, যেমন আবদুস সেলিম, কায়সার হক, ফকরুল আলম, আজফার হোসেন, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, ফায়েজা হাসানাত, শবনম নাদিয়া, বিনয় বর্মণ, রিফাত মুনীম, শাহরোজা নাহরিন।

ধ্রুব সাদিক: আপনার দৃষ্টিতে বিদেশি ভাষায় বাংলা সাহিত্যকর্ম অনুদিত না-হওয়ার পিছনের কারণগুলো  আসলে কি কি? 

রাজু আলাউদ্দিন: বিদেশি ভাষায় বাংলা সাহিত্য ব্যাপক পরিমাণে না-হওয়ার পিছনে আসলে নানান কারণ বিদ্যমান। বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগে আমাদের অক্ষমতা বা বিমুখতা যাই বলি না কেন— এটা একটা বড় কারণ। সরকারী বা বেসরকারিভাবেই আমাদের সাহিত্যকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যেসব প্রণোদনা থাকা উচিৎ ছিল তার কিছুই এদেশে দেখা যায় না। ওই প্রণোদনা থাকলে যোগ্য অনেক বিদেশি অনুবাদক-লেখকদেরকে  আমরা সহায়ক হিসেবে নিতে পারতাম।

সাদিক: সনৎকুমার সাহা আপনার দক্ষিণে সূর্যোদয় বইটির ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসাই শুধু করেননি, বইটির উপর দীর্ঘ একটি গদ্যও লিখেছেন। এছাড়া, অলোকরঞ্জন  দাসগুপ্ত বলেছেন, দক্ষিণে সূর্যোদয় বইটি বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে একটি মূল্যবান সংযোজন। দক্ষিণে সূর্যোদয়-এর পাশাপাশি আপনার ভাষার প্রতিভা বিকৃতি ও বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ অন্য ভাষায় অন্য আলোয় বইটি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

রাজু আলাউদ্দিন: নিজের বই সম্পর্কে বলাটা আমার কাছে সংকোচের যেমন, তেমনি তা অশোভনও দেখায়। তবু বই দুটি সম্পর্কে যারা অবগত নন, কেবল তাদের উদ্দেশ্যেই বলবো, যে দক্ষিণে সূর্যোদয় বইটি প্রথমবারের মতো পুরো একটি মহাদেশে রবীন্দ্ররচনার অভিঘাতের ইতিহাসটি সংক্ষিপ্তরূপে তুলে আনার চেষ্টা করেছি যার মূল ভিত্তি ফার্স্ট হ্যান্ড ডাটা। বাংলা, ইংরেজি এমনকি স্প্যানিশেও এরকম বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বই তো দূরের কথা এরকম শিরোনামই আপনি খুঁজে পাবেন না। আমাদের কাছে অজানা বহু তথ্যের পাশাপাশি, এই বইয়ে এমন দুটি রবীন্দ্র-আলোকচিত্র সংযুক্ত হয়েছে যা স্প্যানিশভাষী ছাড়া অন্যদের নজরে পরেনি কখনো। এখানেই শেষ নয়, এই গ্রন্থে প্রথমবারের মতো সন্নিবেশিত হয়েছে লাতিন আমেরিকার খ্যাতিমান ও স্বল্প পরিচিত কয়েকজনের আঁকা রবীন্দ্র-প্রতিকৃতি যাদের মধ্যে দিয়েগো রিভেরার মতো শিল্পীও আছেন। আর ভাষার প্রতিভা বইটি প্রসঙ্গে আমার বলার কথা এইটুকুই, যে, ভাষা নিয়ে নানান ধরনের ষড়যন্ত্র হয়, নানা স্তরে, মুখরোচক শ্লোগান তুলে, ধর্মের স্বাতন্ত্র‍্যের আবদারে, আঞ্চলিক ভাষার স্বাধীনতার ধুয়া তুলে, কখনো কখনো শ্রেণিসংগ্রামের অজুহাতেও হয়ে থাকে বর্ণচোরা মার্কসবাদীদের মাধ্যমে। এসবের খানিকটা মুখোশ উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে  এই বইটিতে। পাশাপাশি ভাষার সৌন্দর্য, ভাষার যে নিজস্ব একটা প্রতিভা আছে তারও এক নির্ণয় চিহ্নিত হয়ে আছে। আরেকটা মজার ব্যাপারও পাঠকরা এই প্রথম এই বইটিতে পাবেন, তাহলো সাধুভাষা কেন আর লেখা উচিৎ নয়।

“রবীন্দ্রনাথ অন্য ভাষায় অন্য আলোয়” বইটির গুরুত্ব ও স্বাতন্ত্র্য কেউ  লক্ষ্য করেছেন কিনা জানি না। বইটি রবীন্দ্রনাথের  কনভারসেশন ফর্মের সাক্ষাৎকারের একটি সংকলন। রবীন্দ্রনাথের এই ধরনের সাক্ষাৎকারের গ্রন্থ বাংলা ভাষায় আগে ছিল না। ইংরেজি ভাষায় এ ধরনের সাক্ষাৎকার রবীন্দ্রনাথের  ছিল, কিন্তু তা  একক কোনো গ্রন্থে বাংলায় তো দূরের কথা, ইংরেজিতেও ছিল না। এই গ্রন্থের বেশির ভাগ সাক্ষাৎকারই নেয়া হয়েছে তার English writings of Rabindranath Tagore থেকে, কিন্তু চার খন্ডে প্রকাশিত ওই বইগুলোতে রবীন্দ্রনাথের সব সাক্ষাৎকার নেই। যেমন মুসোলিনির সাথে তার সাক্ষাৎকার, তারপরে হিন্দি লিখকদের সাথে তার সাক্ষাৎকার এবং আর্জেন্টিনায় এক সাংবাদিককে দেয়া তার সাক্ষাৎকার।

ধ্রুব সাদিক: আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অজস্র গ্রন্থ রচিত হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে। এই গ্রন্থগুলোর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই। গ্রন্থগুলো ইতিহাসের দায় কতটা মেটাতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

রাজু আলাউদ্দিন: যেভাবে বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক বই স্রোতের মতো বেরিয়ে আসছে, তাতে অবগত না হয়ে উপায় আছে? এগুলোর বেশিরভাগই চাটুকারিতা, আর নিশ্চিত আয়ের লক্ষ্যে বেরুচ্ছে। কারোর ক্ষেত্রে পদোন্নতিও এইসব বই সহায়ক হয়ে উঠছে। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই লিখছেন সরকারের নেক-নজরে পরার আশায়। তাতে তারা সফলকামও হচ্ছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও এই স্রোতের সবটাই খারাপ নয়। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বইও বেরিয়ে আসছে। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো অবশ্যই ইতিহাসের দায় মেটাচ্ছে বলে আমি মনে করি। আমার এখনও বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সঠিক মূল্যায়নে এখনও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। অনেকেই সঠিক মূল্যায়ন করলেও অনেক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ঈষৎ সম্পাদনা করে অর্থাৎ সেন্সর করে লিখছেন; তাদের ভয় ক্ষমতাসীন সরকার তাতে নাখোশ হতে পারে। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুকে পুরোপুরি নির্মোহ দৃষ্টিতে মূল্যায়ণ করার জন্য আমাদেরকে আরও কিছুটা সময়ের দূরত্বে গিয়ে দেখতে হবে। বঙ্গবন্ধু গোটা এশিয়ায় এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যার তুলনা আমি খুব কম নেতার মধ্যেই দেখতে পাই। তাকে নিয়ে শত শত বই বের হলেও, এখনও তার বহুদিক উন্মোচনের অপেক্ষায় আছে।

ধ্রুব সাদিক: প্রাণহীন এক গ্রন্থমেলা ছিলো গত বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এ-বছরও গ্রন্থমেলার পূর্বেই কোভিডের সংক্রমণ হঠাৎ ঊর্ধ্বগামী হয়ে উঠেছিলো। গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু যে সেতুবন্ধনের কাজটিই করে তাই নয়, গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। এই মেলাকে কেন্দ্র করে যেহেতু অনেকের রুটিরুজির সংস্থান হয়, গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ জানতে চাই।

রাজু আলাউদ্দিন: এবারের বইমেলাও মোটামুটি আগের মতোই হবে বলে মনে হয়, কারণ করোনার প্রকোপ তো এখনও অব্যাহত। তবে গত বছরের মতো অতটা তীব্র যদিও নয়, কিন্তু কোভিডের ভিন্ন রূপ ওমিক্রন এখন ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আততায়ীর মতো। সুতরা এই অবস্থায় গ্রন্থমেলায় মানুষের যাতায়াত একটু কম হবে বলে মনে হয়। তবে মেলা কর্তৃপক্ষের উচিত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে গ্রন্থপিপাসুদেরকে আগ্রহী করে তোলা। যেমনটা বলেছেন, এই গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটিই করে। সুতরাং  এই মেলার একটা ভীষণ গুরুত্ব আছে। গ্রন্থপ্রেমিকরা এখানে আসতে পছন্দ করেন। বছরে একবার তাদের এখানে আসার সুযোগ হয়। তাদের সুবিধা অসুবিধাগুলো মেলা কর্তৃপক্ষের আরও ভালো করে ভেবে দেখা উচিত। এটিকে আরও বেশি ক্রেতাবান্ধব করার জন্য নান্দনিক পরিকল্পনা করতে পারলে ভালো হয়। স্বল্পকালীন বিশ্রাম, খাবারের দোকানগুলো এক জায়গায় না রেখে নানান জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা উচিত। শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় কয়েকটা স্পট তৈরি করা উচিত। শিশুদের আগ্রহ ও আরামের ব্যাপারটিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। এই শিশুদেরকে যদি আগ্রহী করে তোলা যায় তাহলে ভবিষ্যতে তারাই হবে এই মেলার নিয়মিত ক্রেতা ও ভিজিটর। তাদের মনোগঠনেও এর একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাদেরকে গ্রন্থমুখী করতে মেলাকে শিশুবান্ধব করা খুবই দরকার। প্রকাশকদের রুটিরুজির কথা বিবেচনায় রেখেই আমি কয়েক সপ্তাহ আগে প্রস্তাব করেছিলাম, এবারের বইমেলায় স্টল বরাদ্দের টাকা অর্ধেক করা উচিত ছিল। জানি না কর্তৃপক্ষ আমার কথায় কর্ণপাত করবেন কিনা।