অজগরের খোলস
ফজলুল কবিরী
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই একটা দীর্ঘ কুয়াশার সারি ব্রিজটার নিচে এসে থামে। সারারাত গায়ে শীত মেখে কুয়াশার দীর্ঘ সারিটা এই ভোরে এমন ঘন হয়ে হয়ে উঠেছে যে মনে হয় কয়েক হাত দূরত্বে আস্ত একটা বাঘকেও অদৃশ্য করে ফেলতে পারবে। শীত গায়ে না মেখে এই ঘোর কুয়াশায়ও কয়েকটা কুকুর ভোরের চা বিক্রেতার দোকান খোলার আশায় কেবল গা-ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠেছে। অদূরে কয়েকটা পাখি ডানা ঝাপটিয়ে শীত বিদায় করে কেবল ভেসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্রিজটার নিচে একটা নদী। নদী নয়, যেন অনেক দূর থেকে ছিটকে এসে ধীরে ধীরে পাহাড়ের গহীনে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া একটা স্রোত। অনেকগুলো নৌকা সারি করে বাঁধা। আঁটোসাটো শরীরের বাঁধন। গায়ের রং বেশ কালো। যৌবনে টইটম্বুর নৌকাগুলোর গায়ে এত শক্তি যে, মাঝি যখন বৈঠায় জল টানে, একটা ফরফর আওয়াজ তুলে বাতাসের বেগেই ছোটে। গতি বেশ ক্ষিপ্র। এই পাহাড়ি নদীর দু’পাশে অনাঘ্রাতা যুবতি বাতাস বয়ে চলে অবিরাম। এই বাতাসের মোহে, এই প্রকৃতির লোভে অনেক লোক এখানে ভিড় করে। নদীর ভাষা আছে। কথা নাই। তাই সে সবাইকে ঠাঁই দেয়। প্রায় পাঁচ-সাতটা মাথা, ছোটো-বড়-মাঝারি, এই কুয়াশায়ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা ধীরে ধীরে ব্রিজটার ঠিক নিচে যেখানে নৌকাগুলো সারি করে বাঁধা আছে সেখানটাতেই দাঁড়ায়। এই ম্রিয়মাণ ভোরে সূর্য ঠিক সহজে ধরা দেবে না। তবু মানুষ তার যাত্রা থামায় না।
দৈর্ঘ্যে একটু খাটো আর প্রস্থে বেশ মোটা সাইজের একটা যুবক কোমরে ছোট্ট একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে। এই শীতেও তার পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটু অব্দি অনাবৃত। হঠাৎ কেউ প্রথম দেখায় একটু অবাক হতে পারে সন্দেহ নেই। গায়ে উলের একটা গরম কাপড় আর মাথা পেঁচিয়ে রাখা টুপি তাকে যে উষ্ণতা দিচ্ছে তা শীতকে বশ মানাতে যথেষ্ট নয়। তবুও তার চোখেমুখে যে উষ্ণতা ক্ষণে ক্ষণে ঠিকরে বেরুচ্ছে তা খুব সহজে কারও চোখে পড়ার কথা নয়।
দলের সবাই নৌকায় উঠে পড়লে যুবকটি কোমরে ঝোলানো ব্যাগের পকেট থেকে একটা লালচে ধরনের সানগ্লাস বের করে। এই কুয়াশায় রোদের চশমা দরকারি নয় জেনেও সে যত্ন করে চশমাটি কপালের সাথে আটকে দেয়। ব্যাগটার মধ্যে আর কী কী জিনিস থাকতে পারে তার একটা তালিকা করা গেলে দেখা যেত প্রাত্যহিক জীবনে অভ্যস্ত অনেক কিছুই সাথে করে নিয়ে এসেছে। এমনকি একটু মনোযোগী হলে ব্যাগের গলি-ঘুপচি থেকে মেইড-ইন-চায়না খচিত বেম্বো টুথপিকের বাক্সও পেয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়।
কপালে অকারণে একটা সানগ্লাস ঝুলিয়ে রাখলেও তার মনের ভেতর একটা আনচান করা অস্থিরতা হঠাৎই জাগে। কিংবা হঠাৎ করে নয়, এই অস্থিরতা সে বয়ে এনেছে অনেক দূর থেকে। মনের ভেতর গাঁইগুঁই করা অস্থিরতা বেরিয়ে আসতে চায় আচমকা। সে পাশ ফেরে। চিন্তাটা বেপথু করে। তারপর বাদবাকি সঙ্গীদের চোখেমুখে খানিকটা বিরক্তি জমানোর সুযোগ করে দিয়ে নৌকা থেকে কিছুটা তফাতে গিয়ে দাঁড়ায়। কেউ না দেখে মত করে এক ঝটকায় প্যান্টের চেইনটা খোলে। সরসর শব্দ তুলে গরম জলের তীক্ষ্ম ধারা নদীর শীতল জলে মৃদু আলোড়ন তোলে। একটা ভোঁতা গন্ধ কুয়াশায় ছড়িয়ে পড়ে। স্বস্তি আসে শরীরে। তলপেট খালি করার স্বস্তি মাথায় নিয়ে সে নৌকার দিকে এগিয়ে যায়। একটা চোরা স্রোত এসে নৌকায় ধাক্কা মারে। সবাই একটু সতর্ক হয়ে নড়েচড়ে বসে।
নৌকায় বসে একটা ভারী নিশ্বাস ছাড়ে। অনেক বড় একটা পাথর বুকের উপর থেকে নেমে গেল। নিশ্বাসের ধাক্কায় পাথরটা গলে গিয়ে পাহাড়ি নদীর জলে মিশে গেল মুহূর্তে। জীবনের উপর কোনো গ্লানি অনুভব করছে না এখন। প্রাত্যহিক জীবনের সংশয়গুলো একটু আগে এই নদীর জলে বিসর্জন দিয়েছে। আর কোনো টানাপোড়েন সে অনুভব করবে না। নিসর্গের তরতাজা রস চারপাশে উপচে পড়ছে। তার খুব করে জানতে ইচ্ছে করে এই নিসর্গের মনের কথা। নিসর্গ জবাব দেয় না। কে যেন তার মনের ভাবনা কেড়ে নেয়। ফোড়ন কাটে। একটা ঘোরের ভেতর তাকে নিয়ে যায়। ফিসফিস শব্দ বাতাসে ভাসে। কানের কাছে মুখ এনে তাকে উপহাস করে। যুবক ঘুম ঘুম চোখে স্মৃতি হাতড়ায়।
পাহাড়ি নদীর জলরাশিকে ঘিরে থাকা নির্জনতার বুকে নিজেকে এলিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় তার। কিন্তু তা সে পারে না। নগরজীবনের যোগ-বিয়োগ মাথায় কিলবিল করে। পোকাগুলো এখনো মরেনি। তাকে স্থির হতে দেয় না। অপ্রস্তুত লাগে নিজেকে। অনেকক্ষণ চুপ মেরে থাকে। তার ভেতরে কি প্রচন্ড তোলপাড় শুরু হয়? কোনো বন্ধনই আর তার কাছে আরাধ্য নয়। বন্ধনকে সে এড়াতে চায়। নাগরিক জীবনের গ্লানি বয়ে বেড়াতে ইচ্ছে হয় না তার। ভেতরে তীব্র ঘৃণা জাগে। এই জটিল শহর-সংস্কৃতির গোলকধাঁধাকে সে ঘৃণা করে। একটা চতুর বিড়াল তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে ভেবে অসহায় বোধ করে। বিড়ালটি তাকে উপহাস করে। যুবকের চারপাশে একটা শ্লেষের হাসি ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ঢেউয়ে আছড়ে পড়ে।
যুবক শক্তি জমা করে মনে মনে। দুর্বলতাই কি শেষ কথা? এই যে মানুষ বারবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে নেতিয়ে পড়ে, তারপর আবার ফিরে আসতে চায় সর্বশক্তি দিয়ে, সবাই কি পারে ফিরে আসতে? এ প্রশ্নের উত্তর সে খুঁজে পায় না। একটা অজানা ভয় তাড়া করে। ভয় কি একটু পায় সে? কাকে ভয় পায়? মনে মনে উত্তরটা হাতড়াতে থাকে। তার চোখ পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে এগিয়ে চলে নৌকার সমান্তরালে। একটা মাছরাঙা পানিতে ঠোঁট নামিয়ে খাবার নিয়ে উড়ে গেল চকিতে। যুবকের ভেতর আশ্চর্য এক ভাল লাগা তৈরি হয় নিমেষে। কত সহজ আহার জোগানো! হঠাৎ শৈশবের মাছরাঙা শিকারের কথা মনে পড়ে। বাবার একটা এয়ারগান ছিল। ছোটোবেলায় বাবাকে এয়ারগানটা দিয়ে অনেক মাছরাঙা আর বক শিকার করতে দেখেছে। কী যে আনন্দ পেত তখন, বোঝানো মুশকিল। এখন আর সে-আনন্দের অনুভূতিটা নেই। বাবার উপর প্রচন্ড রাগ হয়। পাখি শিকার এখন তার কাছে এক ধরনের বর্বরতা মনে হতে থাকে।
তীব্র কুয়াশামাখা ভোরের সীমাহীন শীত যুবকের বুকের মধ্যে চালান করে দিতে দিতে নৌকাটি চলতে শুরু করে।
পাহাড়ি নদী পার হয়ে তারা আরও অনেক দুর্গম পথে উঠে এসেছে। নদীর কোমরে একটা তাবিজ গেঁথে তার ভেতরে মনের সব আবর্জনা পুঁতে দিয়েছে যুবক। এই জনপদের বিশুদ্ধ বাতাসে মিশিয়ে দেবে সব হতাশা। কিন্তু এসেই একটা ধাক্কা খেল মগজে। পাড়ার সব বয়স্ক পুরুষ একটা ভয় আর সন্দেহ চোখে নিয়ে তাদের এড়িয়ে গেল। কেউ কোনো কথা বলতে চাইছে না। কুয়াশার যে দস্তানাটা সকাল থেকে মাথার উপর পাক খাচ্ছিল তা অনেকটা কেটে গেছে। ফলত এক পশলা রোদ হালকাভাবে তাদের মনে একটু উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবুও এমন শীতবস্ত্র মোড়ানো দেহগুলো এই মারমাপাড়ার আর্দ্রতাকে প্রতিরোধ করতে পারে না। কয়েকটা বাঁশের তৈরি চিরায়ত আদিবাসী ঘর আর গুটিকয় দুরন্ত বালকের শরীর থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া উষ্ণতাটুকুই তাদের ভরসা।
উহ্লাচিং মারমা নামের নয়-দশ বছরের এক বালকের নিরাবরণ শরীর থেকে যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে, ভেবেছিল তা দিয়ে সবাই উষ্ণ হয়ে উঠবে। কিন্তু শরীরের উত্তাপ এই মধ্য-দুপুরেও তার মুখে ঠিকরে পড়ছে না। মাত্রই ক’দিন আগে নিখোঁজ হয়েছে এই মারমাপাড়ার সবচেয়ে উচ্ছল কিশোরীটি। তার আদরের বোন।
প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে। কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। শোনা যায় পাহাড়ি ডাইনিদের রাহুতে পড়ে তারা নিরুদ্দেশ হয়। কেউ কেউ রাহুর দশা কাটিয়ে ফিরে আসতে পারে। বেশিরভাগই চিরতরে হারিয়ে যায়। ডাইনির দেওয়া শাপমোচনের পর পাহাড় থেকে অনেক দূরের কোনো শহরের অভিজাত বিনোদন হোটেলে কেউ কেউ পুনর্জন্ম পায় বলে সমতলের মানুষেরা প্রচার করে। যেসব সমতলের মানুষ এখানে আসে তারা সবাই এসব গল্প সাথে করে নিয়ে যায়। এই অ লের ডাইনির খবর তারা শহরের রাস্তাঘাট, হোটেল এমনকি মদের বারগুলোতেও প্রচার করে।
অনেকদিন আগে যারা এই অ লে বসতি গেড়েছিল উহ্লাচিং তাদেরই সন্তান। কয়েক ঘণ্টা দুর্গম পাহাড়ি পথ পায়ে হেঁটে পার হলে একটা ত্রিপুরাপাড়া পাওয়া যাবে। দুই পাড়াকে ঘিরে থাকা একটা সেনাক্যাম্প ছাড়া আর কোনো জনবসতির দেখা মিলবে না এই গহীন অ লে। আগে এখানে আরও বড় সেনাছাউনি ছিল। অনেক ভারী ভারী অস্ত্র নিয়ে সেনাপোশাক পরা অফিসাররা চষে বেড়াত।
বালক উহ্লাচিং নির্লিপ্ত মুখে তাদেরকে পথের দিশা বাতলে দিল। ইশারা-ইঙ্গিতে বলা কথার অনেক কিছু তারা বুঝে উঠতে পারে না। প্রয়োজনে একটা অ্যাডভে ারাস নাইট পাহাড়ের বুকে কাটিয়ে দেবে এমন মতলব দলের কেউ কেউ মনে পুষে রাখা সত্তে¡ও রাতযাপনের বিধি-নিষেধ তারা আমলে রাখে। সবাই হাঁটার গতি দ্রæত করার তাগিদ অনুভব করে। যুবকদেরকে পথ চিনিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরতে বালক উহ্লাচিং-এর কোনো সমস্যা হবে না এই নিশ্চয়তা পেয়ে দলের সবাই তাকে সাথে রাখতে সম্মত হয়। এই সুযোগে বোনের খোঁজে উহ্লাচিং কিছুটা পথ তাদের সাথে চলতে পারে। যদিও সে জানে পাড়ার শক্ত-সমর্থ পুরুষ তার এই ইচ্ছের কথা জানতে পারলে ভয় পাবে। তাই সবার অগোচরে অভিযাত্রীদলের সাথে সে হাঁটতে শুরু করে।
প্রায় ঘণ্টাদেড়েক পাহাড়ি পথের চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার পর সবাই ক্লান্তি অনুভব করে। দলের একজন সহযাত্রী পথিমধ্যে যুবকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে, একটু আস্তে পা চালান সেলিম ভাই! যুবকের গা ঘেঁষে এতক্ষণ ধরে সহযাত্রী তরুণটি হাঁটছিল খোশমেজাজে। সে-ই প্রথম যুবকের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করে। জানা গেল যুবকের নাম সেলিম। পুরো নাম শাহাজাদা সেলিম। প্রশ্নসূচক অঙ্গভঙ্গি করে শাহাজাদা সেলিম সহযাত্রীর দিকে তাকায়। তরুণটি জিজ্ঞাসু দৃষ্টির কোনো জবাব না দিয়ে মুখে খানিকটা হাসি বিলিয়ে দিয়ে দ্রæত একটা পাহাড়ি খাদের দিকে এগোতে থাকে। মনে মনে যা-ই ভাবুক, যুবক মাথা খানিকটা দুলিয়ে সহযাত্রী তরুণকে সম্মতি জানায়। পেটের ভেতর মোচড় টের পাচ্ছে তরুণ। আয়েশি ঢঙে পেছনে তাকিয়ে বাকি সহযাত্রীদের সাথে দূরত্বটা পরখ করে যুবক। হাঁটার গতি কিছুটা ধীর করে।
একটু ভীতও হয় সে। এই দুর্গম পাহাড়ি পথে খুব বেশি জনবসতির চিহ্ন নেই। যারা এই গহীন নির্জন জায়গায় বসতি গড়ে তাদের জন্য মূলত পাহাড়ি ফলমূল আর জুম চাষই ভরসা। নিজেদের ভূমি ছেড়ে উপরের দিকে যাওয়ার তাড়না এদের কম। শহরে এদের অনেকেরই যাওয়া হয় না। তারা যে পথ ধরে এসেছে সেই পথ ধরেই হয়তো এগোনো যেত। কিন্তু একটু বন্য হয়ে ওঠার লোভ কেউ সামলাতে পারেনি। এখন অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। সবারই হাঁটার গতিতে একটু ক্লান্তি ভর করেছে। এই পথটা ধরে কতদূর হাঁটতে হবে তাদের জানা নেই।
যুবকের মাথাটা ভারি হয়ে উঠতে শুরু করে পুনরায়। এ পথেই কোথাও হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা মাথায় ভর করে। মনে মনে একটু হাসি পায় তার। একটা অদ্ভুত টানাপোড়েন একটা বিড়ালকে একই সাথে মাছের লোভ আর কাঁটার ভয় দেখায়। বিড়ালটা মাছের ঘ্রাণ ছেড়ে যেতে পারে না। দ্বিধা চোখ রাঙায়, গলায় বেড়ি পড়িয়ে দেয়। মনের সাথে দ্বন্ধ তৈরি হয়। কত ঠুনকো মানুষের সম্পর্কসূত্রগুলো। কোনো ভোগযোগ্য ফল নেই নিশ্চিত হয়ে গেলে মানুষ পিছিয়ে যায় অবলীলায়, দ্রুত পালিয়ে বাঁচে। দলের বাকি সদস্যদের কেউ কেউ তাদের চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে। পাহাড়ি পথ সবাইকে কাবু করেছে। ত্রিপুরাপাড়া পৌঁছাতে এখনো অনেক পথ বাকি। পথটা পাহাড়ি সাপের মত লম্বা হয়ে উঠছে ক্রমশ।
হঠাৎ দূর থেকে একটা আর্তনাদ কানে এলে যুবক শাহাজাদা সেলিম সেদিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকায়। কী করবে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে দাঁড়িয়ে পড়ে। সতর্ক-কান পেতে আওয়াজটি কার হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করে। একটু আগেই সহযাত্রী একজন তরুণ ওই খাদটার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। তার ভাল-মন্দ কিছু একটা হয়েছে এরকম অজানা একটা শঙ্কা ভর করল মনে। বালক উহ্লাচিং মারমার কণ্ঠ কি না তাও একবার ভাবে। ছেলেটি তাদের আগে-আগেই ছিল। সবাই তাকে অনুসরণ করে হাঁটছিল। বালকের কিছু একটা হল না তো? দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটার ক্লান্তিকে উপেক্ষা করে খাদের কিনারে পৌঁছানোর জন্য সবাই দ্রুত পা চালায়। একটা অদ্ভুত ভয় তাদের শরীরে ভর করে।
খাদের কিনারে পৌঁছে যুবক শাহাজাদা সেলিমের মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে ওঠে।
তারা দেখে একটু আগে খাদের দিকে এগিয়ে যাওয়া সহযাত্রী তরুণটি প্রায় নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক কর্ম সারতে গিয়ে বেখেয়ালে একটা দশ-বারো হাত লম্বা অজগরের ফেলে যাওয়া খোলসে পা পেঁচিয়ে ভয়ে থর থর করে কাঁপছে।
[লেখক পরিচিতি : জন্মসাল: ১৯৮১। লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততা দুই দশকের। সাহিত্যকর্মসমূহ কথা, উলুখাগড়া, পুষ্পকরথ, সূনৃত, ছান্দস, চারবাক, সমুজ্জল সুবাতাস, ঘুড়ি, উত্তরাধিকার, ইত্যাদি ছোটকাগজসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ওয়েবজিনে প্রকাশিত । গল্পগ্রন্থ : বারুদের মুখোশ, প্রকাশকাল : একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৫, প্রকাশক: বাঙলায়ন, প্রকাশিতব্য, গল্পগ্রন্থ: ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া গল্প, প্রকাশক: জেব্রাক্রসিং, প্রকাশকাল: একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮, গল্পগ্রন্থ: ডোরাকাটা ক্যাডবেরি, প্রকাশক: জলধি, প্রকাশকাল: একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২। উপন্যাস: ঔরসমঙ্গল, প্রকাশকাল: একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭, প্রকাশক: বেহুলাবাংলা।