You are currently viewing রশীদ হারুণ ।। গুচ্ছকবিতা

রশীদ হারুণ ।। গুচ্ছকবিতা

রশীদ হারুণ ।। গুচ্ছকবিতা

নির্জনে, তোমাতে বাহিত সমস্ত নিখিলের নদী

এবং সমস্ত চিন্তাকর্ম দৃশ্যের মোটিফ!

যা কিছু জমেছে অবয়বে— চৈতন্যের বাগিচায়
ফুটেছে কুসুমকলির রঙ; পর্দার ওপাশে আমি
তোমাতে তাড়িত। ইহজনমে, শিশির, শুধুই কি দৃশ্যে ঝরে!
দূরে, ক্রীড়ারত অঙ্কগুলির যৌনতা ভীষণ দৃশ্যবাহিত!

দ্যাখো, জ্যামিতিবক্সের খোলে আস্ত ভূগোল ঢুকেছে—

খেলার ওপাশে আরও কিছু খেলা, ক্রিয়াময় ঘুম
এবং দূরন্ত রেললাইন নিজের মধ্যে ঢুকে গেছে;
একাকী সন্ধ্যার কুঞ্জে বহমান প্রতিটি ভ্রমণ—
দূরে, তারা ওঠে যেন হলুদ বাড়ির রাত্রিবাতি!

নিজের নিঃশব্দ, তুমি কি আবৃত্তি করছো না!

এবং গহীন ছায়া— প্রোথিত হয়েছে শিশিরের বীজ;
সাধু ও সাধুশূন্যতা ভেতর বাড়িতে, তাকে ডাকো—
জানালা খোলার বর্ণলিপি, ডানা ও নির্ভার ওড়া,
সমর্পণ ও ফকিরি বয়ে যাচ্ছে একা-একা।

ভেজো— সব নিস্তব্ধতা অশ্রুতে চূর্ণিত!

চুপ-থাকার প্রভাব ক্রমশঃ ধাবিত বিস্ফোরকে—
এবং নিঃসঙ্গতার ওপারে একটি বর্ষার বাগান
নদীকে ক্রমশঃ টালমাটাল করছে;
নির্জনে, তোমাতে বাহিত সমস্ত নিখিলের নদী!

হলুদ অ্যাকুরিয়াম

একটা চক্করবন্দী চতুষ্কোণ জল :
টুপটাপ, টুপটাপ ঝরছে ঘড়ির কষ—

রাত্রিশূন্য প্রকৌশলে সুরক্ষিত জলের বুদ্বুদ :
উঁকিঝুঁকি মাছভাগ্য, আর রঙজলের লেজার—

এখানে ঘুরতে হবে— এবং নতুন জগতের বার্তা :
আমাকেই বলে যাচ্ছ, হে লেজের জ্ঞানীজল—

নিত্যই গণিত বই, নিত্যই নতুন সংখ্যা :
আমি কষে যাচ্ছি হলুদ অ্যাকুরিয়ামে—

নখকাটা কর্মসূচী

একমাস ধরে লংমার্চ— অবশেষে থামলাম। বারান্দায়, সাদা রোদের ভেতর নেইলকাটার— আঙুল-সৈনিক এখন প্রস্তুত : নেইলকাটার ওয়েপন ক্রলিং করছে— এটা কি ননলেথেল ওয়েপন! ক্ষণে-ক্ষণে মনোযোগ, কাটা-পড়া স্তম্ভিত নখের কি দেখছে! সাদা এক ডুব আর নির্লিপ্তির স্মৃতি বহন করেছি! আমি, বৃক্ষের অনুজ! ঝেড়ে দিচ্ছি দেহপাতা? দেহমধ্যে, বাদ্যযন্ত্র ভরা— করুণ রিডের মাথা ঘষে ঘষে তাজা হয়ে যাচ্ছি! সাড়ে তিনহাত আমি— আঙুলে যা কিছু ঝরিয়েছি, তারচে’ অনেক বেশি! ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে ওঠা মানে মৃত কিছু ফেলে দেওয়া! ম্যানিকিউর, পেডিকিউর কারা শিখিয়েছে? মানে, কিছু চর্চা প্রয়োজন! ঝেড়ে ফেলে বেঁচে থাকা প্রয়োজন! একদিন ফেলে দেওয়ার চর্চায় কাটা যাব…। বাতাস বইছে— দুলছে পেয়ারা পাতা, কয়েকটি ঝরে পড়লো উঠোনে— এই দৃশ্য মনোরম। নেইলকাটারে ফুঁ দিয়ে নিজেকে হালকা লাগছে। মূলতঃ সকল ওয়েপনে চাক বাঁধে মৃত্যুর মৌমাছি!

অনুভব, বিরহ

বেরিয়ে পড়ছি— ঘর, কখনও কখনও ছুঁড়ে ফ্যালে!
প্রকৃত নিজের চোখ কেউ কি দেখেছে! নিখুঁত আশ্চর্যে
জোড়া নদী বয়ে যায় দৃশ্যের সমান্তরাল!

জলের চেতনা শান্ত-বিস্ফোরক : কাঁচ ও আর্শির
পার্থক্য, ইশারা আর ফিজিক্সপাড়ার তুমি
ভাসিয়ে রয়েছ অনুভবে; নৌকো যাচ্ছে—
শাপলার পাতাগুলি ফটাফট বাজে এবং তোমার হাঁস
থিওরি খাতার ভাঁজে ভাসে— লেজ নাড়ে।

ডাকছে গাছের ছায়া— কাছবর্তী পাতা, দৃশ্যনিচয় ভূবিদ্যা
আর তুমি, ভ্রমাত্মক অস্তিত্বে ঘুরাচ্ছ পথ;
জলের জ্যামিতি মাপি। এক বাও, দুই বাও—

তারা ওঠে হাস্যরত : হঠাৎ এসেছে মেঘ,
কোপানো-কোপানো। দুই নদী সাঁতরায়—
তোমার শরীর ঘেঁষে নরম নয়ন ওড়ে!
তৃণঝোপে, জলপাড়ে, নিখিল জোনাকি বুকডনরত—
চোখের আঙুলে আমি, কি যেন, কি যেন, ছুঁয়ে যাচ্ছি!

নৈঃশব্দ্যের গুঞ্জরণগুলো

ব্যস্ততা যতই দেখাও ততই দেরি হয়ে যায়;
গাছেরা মোরাকাবায় বসেছে মাটির মসজিদে—
তোমার বরইপাতা-চোখ দিগন্তে ঝরিয়ে দাও।

দৃষ্টির শামুকগুলো মেঘে-মেঘে হাঁটছে—
বসো, দিগন্তের নীলঘাসের উপর।
দ্যাখো, রাত্রি ডুবে যাচ্ছে জারুলের তলে।

হৃদয় ডুবিয়া গেলে সে ডুবেই থাকে!

আকাশের তলে পৃথিবীর টেলিভিশন বসেছে—
তোমার টেলিস্কোপের মুখ খোল,
নয়ন-নরুনে কাটো হৃদয়ের নখ।

আর শোন, বেজে যাচ্ছে নৈঃশব্দ্যের গুঞ্জরণগুলো…
***************************

Leave a Reply