You are currently viewing রক্তজবা/ রওশান ঋমু

রক্তজবা/ রওশান ঋমু

রওশন ঋমু

রক্তজবা

জয়নাল সাহেব আজ ভোরে উঠেই হাটে এসেছেন। শুক্রবার দিন, তাড়াতাড়ি বাজার সেরে জুমার নামাজে যেতে হবে। সাথে আছে বাড়ির ফাই ফরমাশ খাটার ছেলে বজলু। ওর হাতে চটের বাজারের ব্যাগ। প্রতি হাটবারে গরু জবাই হয়, ভাগে মাংস বিক্রি হয়। তাজা মাংস কেনার জন্য দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে মানুষ আসে। মাংস খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। জয়নাল সাহেবের গরুর মাথার মাংস পছন্দ, তিনি আজ মাথা কেনার চিন্তায় রয়েছেন।

‘ কিরে ফরিদ, মাথা আছে? ‘

‘হয় দাদো আছে ,  ব্যাগে নেবেন না বাইন্ধা দিমু? ‘

‘কত পড়বে?’

‘আ্যা এইয়া একখান কথা কইলেন

আমনের গোনে  দাম চামু? যা মন লয়  দেন।’

‘ আচ্ছা দে, আর দুই ভাগ মাংসও দে।’

”  দেশে অইতেআছে কি কন দেহি ? হোনলাম  মেলিটারিরা নাহি ঢাকার হগল মানুগুলারে  মাইরা হালাইতেআছে ?”

” সত্যই শুনছো ফরিদ, দেশের অবস্থা ভালো না, পঁচিশ তারিখ রাতের বেলা ঘুমন্ত মানুষের উপর মিলিটারিরা গুলি চালিয়েছে, ঢাকায় পথে ঘাট এখন লাশ পড়ে আছে, যারা বেঁচে আছে তারা  সব পালাচ্ছে ঘরবাড়ি ছেড়ে। আল্লাহ জানে কী আছে কপালে।”

মাথা এবং মাংসের দাম মিটিয়ে  তিনি এলেন মাছের দিকটায়,  শোল আর পাবদা মাছ পছন্দ হলো, দুই সের করে মাছ এবং অন্যান্য সবজি কিনে বজলুর হাতে দিয়ে বললেন,’  বাড়ি যা, তোর খালাম্মার হাতে দিয়ে বলবি, আমি একটু পরেই ফিরবো। ‘

জয়নাল সাহেব এলেন নাপিতের দোকানে, চুল কাটবেন তিনি।

‘ আদাব চাচা, চুল কাডাইবেন?’

‘  হ্যাঁ, তা কালা চান তোমার খবর কি?  তোমার কৃষ্ণ ঠাকুর কি খায়?  ‘

‘ হয় চাচা   ,মোর  ঠাকুর মাচায় গোনে নামাইয়া গোইয়া   খায়।’

এইটুকুই কথা, এটা একটা সংকেত। জয়নাল সাহেব এবং নাপিত কালা চান বুঝেছে এই সংকেতের অর্থ।

আর কোনো কথা না বলে কালা চান মন দিয়ে চুল কাটছে, বাইরে থেকে যে দেখবে সে ভাববে একজন নাপিত তার খদ্দেরের চুল কাটছে এবং খদ্দের মন দিয়ে রেডিওতে বাজানো মেহেদি হাসানের গজল  শুনছে।

জয়নাল সাহেব বাড়ি ফিরে স্ত্রী মেহেরুন নেছাকে ডেকে বললেন , ” আজ বেশি করে রুটি বানিয়ো, গোস্তের ঝোল দিয়ে রুটি জমবে ভালো। তুমি বানাও ততক্ষণে নামাজ আদায় করে আসি।”

এই বলে তিনি গোসল করে শাদা টুপি, শাদা পান্জাবী –পাজামা পরে মসজিদে গেলেন।

জয়নাল সাহেবের বাবা মোখলেস উদ্দীন আহমেদ থানার দারোগা ছিলেন, তাঁকে মালদা পোস্টিং করা হয় একবার। সেখানে এক বিহারী পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে তাদের বড় মেয়ে পেয়ারা বেগমকে বিয়ে করে দেশে নিয়ে আসেন। সে ব্রিটিশ আমলের কথা। মোখলেস সাহেব বেঁচে নেই, জয়নাল তাদের বড়  ছেলে, ছোট ছেলে থাকে  দিনাজপুর। পেয়ারা বেগম বৃদ্ধা বয়সে বড় ছেলের কাছে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। জয়নাল সাহেবের দুই মেয়ে কোনো ছেলে নেই। বড় মেয়ের নাম মতিয়ারা বেগম,  ছোটজন মাহমুদা বেগম । মতিয়ারা  বিবাহিত তার দুই ছেলেমেয়ে, সে কাঁচাবালিয়া থেকে বাবার বাড়ি কৃষ্ণকাঠি  বেড়াতে এসেছে,  মাহমুদা  অবিবাহিত তার বয়স সতেরো বছর। দুই বোন দেখতে অবিকল তাদের দাদীর মতো। দুধে আলতা গায়ের রং, ছিপছিপে একহারা গড়ন, টিকালো নাক, চুলের গোছা কোমর ছাড়িয়ে গেছে আকাশে যেন মেঘ করেছে।

মেহেরুন নেছা দুই মেয়ে এবং সখিনা খালাকে নিয়ে রান্নাঘরে, মসলা পিষে মাংস এক চুলায় চড়িয়ে দিলেন, অন্য চুলায় চালের গুড়ার কাই ধরে নামিয়ে রাখলেন ঠান্ডা হওয়ার জন্য। সখিনা খালাকে বললেন, ষোল মাছ জিইয়ে রাখতে, আর পাবদা মাছ কেটে নিতে। মাংস রান্নার সুঘ্রাণ সারা বাড়িতে ঘুরছে, দমকা বাতাসে সেই ঘ্রাণ বোধকরি অনেক দূরে পৌঁছে গেছে। মাটির চুলা দাউদাউ করে জ্বলছে, মাংস রান্না হতে বেশি সময় লাগলো না। কাই ঠান্ডা  হলে মতিয়ারা রুটি বেলতে শুরু করলো, সখিনা খালা ভেজে ফেললো।খাবারের গন্ধে দুই তিনটা কুকুর লেজ নেড়ে নেড়ে রান্নাঘরের পাশে ঘুরঘুর করছে।   কাজ  গোছানো হয়ে এলে মা মতিয়ারাকে  বললেন,  “রান্না শেষ হয়ে এলো তুই এখন পুকুরে যা,  তাড়াতাড়ি গোসল করে আয়। তোর বাবা ফিরলে খেতে দিতে হবে। আর মাহমুদা তুই তোর ভাগিনাদের  গোসল করিয়ে নিজেও করে আয় ততক্ষণে সখিনাকে নিয়ে রান্নাঘর আমি গুছিয়ে ফেলি।”

মায়ের কথা দুইবোন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। শাড়ি, গামছা, সাবান আর বাচ্চাদের নিয়ে গেলো বাড়ির পেছনের  পুকুর ঘাটে। মাহমুদা  বাচ্চাদের হাত পা  ঘষে ঘষে  গোসল দিচ্ছে, মতিয়ারা  নিজের আঁচলে সাবান মেখে গলা, ঘাড় ঘষে  উবু হয়ে পা ঘষে উঠতে যাবে এমন সময়  উল্টোদিকের ঘাটে চোখ পড়াতে শিউরে উঠে চিৎকার করে বাচ্চাদের হাত ধরে  পড়িমড়ি করে বাড়ির দিকে ছুট দিলো। বোনের দৃষ্টি অনুসরণ করে মাহমুদাও চমকে উঠে বাড়িতে চলে গেলো।

তাদের বাড়ি আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বরই, ছফেদা, লিচু , নারকেল, জলপাই ইত্যাদি আরো অনেক রকম গাছে ঘেরা। সেই সব গাছের ফাঁকে ফাঁকে পাক বাহিনী বন্দুক তাক করে আছে তাদের বাড়ির দিকে। সব শুনে মা বললেন,   ” ভয় নেই ওরা আমাদের কিছু করবে না, ওরা মুসলমান আমরাও মুসলমান আর তোদের দাদু, বাবা  বিহারী। ওরা বিহারী শুনলে ওদের লোক মনে করে। তোরা বরং এক কাজ কর, পুরনো শাড়ি পরে বাচ্চাদের নিয়ে উত্তরের ঘরে দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাক, আমি না ডাকা পর্যন্ত দরজা খুলবি না। ”

মেহেরুন নেছা আলমারী থেকে ইয়াহিয়ার ছবি বের করে দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিলেন, ঘরে  উর্দু ভাষায় লেখা বই ছিলো তা বের করে টেবিলে রেখে  পেয়ারা বেগমকে ডেকে সব খুলে বললেন, ভয় নেই বউমা আল্লাহকে ডাকো । এমন সময় জয়নাল সাহেবও ফিরলেন মসজিদ হতে, তার স্ত্রী বাড়ি ঘেরাওয়ের খবর  দিলেন। খবর শুনে জয়নাল সাহেবের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দিলো।

খটখট জুতার আওয়াজ ভেসে আসছে, বাড়ির সবার কলিজা কাঁপছে, বুকের ভেতর ধুকপুক করছে, গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, মনে মনে প্রার্থনা করছে, এই বিপদ থেকে আল্লাহ রক্ষা করুন। বন্ধ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ, মা এবং স্ত্রী কে ভেতরে যেতে বলে তিনি কাঁপা হাতে দরজা খুললেন।

‘আসসালামুআলাইকুম,’

জয়নাল সাহেব সালাম দিলেন।

চারজন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, একজন সামনে এগিয়ে এসে ইয়াহিয়ার ছবির দিকে তাকিয়েই ঘুরে দাঁড়ালো জয়নাল সাহেবের দিকে।

সালামের জবাব না দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ‘মুক্তি  কিদার হে?’

জয়নাল সাহেব চমকে উঠলেন, যদিও তিনি প্রাণপণ চাচ্ছেন স্বাভাবিক থাকার। কিন্তু তার চমকানো পাক সেনার চোখ এড়ালো না।

‘হাম পুছতা, তুম মুক্তি কো কিধার চুপায়া ইয়ে বোলো। ‘

জয়নাল সাহেবের বুকে হাতুড়ি পেটার শব্দ। তবু তিনি বললেন, ‘হামলোক ছব পাকিস্তানি, হামলোক বিহারী, ইধার কোই মুক্তি নেহি। তুম কোন্ ছে মুক্তিকা বাদ পুছায়া?’

“তোমলোককা সাৎ  রেনেওয়ালা মালাওয়ানকা বাচ্চা গোপাল মুক্তি হো গিয়া, হামলোককা পাছ খবরহে ও লোক কাল রাতমে ইধার আয়া। তুমলোক হামকো মদত দেনা উছকো পাকড়ানে কা লিয়ে।”

জয়নাল সাহেব এখন কি করবেন, এ বিপদ থেকে তিনি কিভাবে রক্ষা পাবেন। তিনি মনে মনে বিপদ থেকে রক্ষার দোয়া পড়ছেন। আর ভাবছেন তাদের কিভাবে খুশি করা যায়। তার উপর নির্ভর করছে এই গ্রামের নিরাপত্তা।

গোপাল গতকাল গ্রামে এসেছে সঙ্গে আছে আরো পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা। হঠাৎ তার মাথায় এক বুদ্ধি এলো, তিনি ভাবলেন  ওদের এখানে দুপুরের খাবার খেতে বললে কেমন হয়, শুনেছি ওরা গরুর মাংস খেতে পছন্দ করে। আর আজই তার বাসায় মাংস রান্না হয়েছে।

”হামলোগোকো মালুমহে ওলোক হামারা ইধার নেহি।।

ঠিক য়ে, আপলোক আভি  আরাম কারো, ডাব পিয়ো আওর খানা খানেকে বাদ মে গোপালকো পাকড়ানেকে লিয়ে হামলোক আপকো মদত কারেঙ্গে।”

পাক সেনারা রাজি হলো জয়নাল সাহেবের প্রস্তাবে। বাইরে প্রচন্ড গরম পরেছে, একটু বসে জিরিয়ে নিতে বোধকরি তাদেরো ইচ্ছে হচ্ছিলো।

বজলু গাছে উঠে ডাব পেড়ে প্রত্যেক সেনার হাতে একটি করে ডাব কেটে দিলো। পাক হানাদার তৃষ্ণার্ত, নিমেষে শেষ করে ফেললো ডাব।

দুরুদুরু বুকে জয়নাল সাহেব বললেন, ‘আপলোক হামারা মেহমান আজ ইদার খা লিয়ে জনাব।’

‘আজ কেয়া ইনতেজাম আপকে ঘরমে ‘?

‘মাছেলি, রুটি আওর গোস্ত।’

‘ঠিক হে, লে আইয়ে।’

জয়নাল সাহেব ঘরের ভেতর গিয়ে স্ত্রী কে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি খাবার রেডি কর, যা আছে সব দিয়ে দাও। ওদের খুশি রাখতে হবে এখন।’

মেহেরুন নেছা গভীর দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকালেন, জয়নাল সাহেব সে দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে তিনিও আশ্বস্ত থাকার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, তবে তা কয়েক সেকেন্ডের জন্য। মেয়েদের কথা মনে পড়ায় জিজ্ঞেস করলেন,

‘মেয়েরা কই? ‘

‘ওদের উত্তরের ঘরে থাকতে বলেছি।’

মেহেরুন নেছা সখীনাকে নিয়ে সমস্ত খাবার পরিপাটি করে সাজিয়ে বড় ঘরের টেবিলে দিলেন। সঙ্গে দিলেন সাবান, পানি, তোয়ালে এবং হাত ধোয়ার চিলমচী। পাকসেনারা খেতে বসলো, একেবারে রাক্ষসের মতো খেলো, জয়নাল সাহেব খাবারের তদারকি করতে লাগলেন । পাঁচজন সেনা অথচ খাবার খেলো দশজন মানুষের।

‘ইয়ে খানা কৌন পাকায়া? আচ্ছা থা।’

‘মেরা বিবি পাকায়া’

‘ বিবিকো ইধার লে আও। হামলোক শুকরিয়া দেঙ্গা ।’

জয়নাল সাহেব ঘাবড়ে গেলেন, তিনি জানেন এরা হলো কালসাপ এদের বিশ্বাস করতে নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছু করার নেই। বুকে পাথর বেঁধে তিনি তার স্ত্রীকে ডাকলেন । পেয়ারা বেগম তার বউকে পাক সেনাদের সামনে একা আসতে দেবেন না, তিনিও এলেন। লম্বা ঘোমটা টেনে দাঁড়ালেন।

‘মুপে নিকাব কিছলিয়ে ?

মেহেরুন নেছা কাঁপা হাতে তার মাথায় কাপড় একটু সরালেন। অনেকক্ষণ রান্নাঘরে থেকে তার ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে, কপালে খুচরো চুল ঘামে লেপ্টে আছে। ক্যাপ্টেন  তার মুখ থেকে চোখ সরাতে পারলো না। তার চোখে লালসা ভর করেছে।

‘আপকে তারহা আপকা খানাভি আচ্ছাথা ‘

পাকবাহিনীর খাওয়া শেষ হলো,  হাত ধুয়ে ক্যাপ্টেন  অন্য সেনাদের চোখের ইশারা করলো। পাক বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে অন্দর ঘরে  প্রবেশ করলো, এই ঘটনা চোখের পলকে ঘটে গেলো। জয়নাল সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেন। প্রথমে গেলো পেয়ারা বেগমের ঘরে, সেখানে আলমারি, বিছানা উলটে পালটে কিছুই না পেয়ে গেলো জয়নাল সাহেবের ঘরে, সেখানেও কিছু পেলো না, কেউ ওখানে লুকিয়ে নেই। সবশেষে উত্তরের ঘরে গিয়ে জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কা দিলো। মতিয়ারা এবং মাহমুদার মুখ ভয়ে রক্ত শূন্য হয়ে গেলো, বাচ্চারা চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো। দরজা ধাক্কানো অব্যাহত রইলো অগত্যা মতিয়ারা দরজা খুলতে বাধ্য হলো। পাক বাহিনী ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লো দুইবোনের দিকে তাকিয়ে পাক সেনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এতো মেয়ে দেখেছে এই বাঙ্গলা মুলুকে কিন্তু এমন তো দেখেনি , এতো সুন্দর মেয়ে আছে এই মুলুকে! কুকুর যেমন খাবার দেখলে মুখ দিয়ে লালা ঝরে,তেমনি কুকুরের মতো  ওদের দিকে লোভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এদিক ওদিক দেখে  গোপালকে খুঁজে না পেয়ে ওই ঘর হতে বের হয়ে গেলো।

ঘরের এককোনে একটা সিঁড়ি দেখতে পেলো। নীচ থেকে ঘরের ছাদ ফুঁড়ে উঠে গেছে সিঁড়ি তার উপরে টিনের চাল। টিনের চাল এবং ঘরের পাটাতনের মাঝামাঝি জায়গা। এক হানাদার জিজ্ঞেস করলো,

‘ইয়ে কিয়া চিজ হে?’

‘ইয়ে মাচাংহে, ঘরকা ছামানা ইছমে রাখ্ তাহে,’ জবাব দিলেন জয়নাল সাহেব।

একজন সেনা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। কেমন অন্ধকার জায়গা। পকেট হতে টর্চ বের করে ইতিউতি আলো ফেললো। বড় বড় হাঁড়ি পাতিল, ধানের লাই, ডোলা ভর্তি চাল, কুড়া, মুড়ি –চিড়ার টিন, আচারের বয়াম, চালের গুড়া, বড় ট্রাঙ্কে কাঁসার তৈজসপত্র, পাটের আঁশ, একপাশে লাকড়ির স্তুপ ইত্যাদিতে ভর্তি মাচা। টিনের গরমে ঘেমে নেয়ে সে নেমে এলো। এখানেও কেউ নেই।

পুরো ঘর সার্চ করে গোপালকে পেল না। জয়নাল সাহেব সবার অজান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

“আপকে বিবি আওর লেরকিকো হামারে সাথ লে যাঁ রাহে হে , খানা পাকানেকে  লিয়ে আপকি  বিবিকো জারুরতহে ”

এই বলে জয়নাল সাহেবের বুকে ক্যাপ্টেন বন্ধুক ঠেকালো। ঠিক তখন মাচায় পাটের আঁশের ভেতর শুয়ে থেকে দুটি গুলির শব্দ শুনলো গোপাল, আবছা অন্ধকারে ওর চোখ দুটি জ্বলে উঠলো প্রতিশোধের আগুনে।