তিনটি কবিতা
সাজ্জাদ সাঈফ
দিলখোলা
কাঁচিতে চুল ছাঁটানোর শব্দ আড়ি পেতে শুনি, ভালো লাগে, আজ সেলুনের ধারে কাছে আড্ডা বসাই—কাকে যেন বলে বসি ঘুমভাঙা স্বপ্নের কথা, দপ্তরির লোহার আঘাতে ঝননের কথা, পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো ছোটখালার কথা; আরও বলি আস্তাবলে সেইসব ঘোড়ার ফিরে আসার কথা, সমস্ত যুদ্ধের শেষে যারা ফিরে আসে, আর, ছিন্নমস্তক যোদ্ধার শেষতম চিৎকার ধাক্কা খেতে থাকে কর্ণকুহরে, তাদের, সুদীর্ঘকাল!
আজ বড় দিলখোলা আমি—আকাশ ছুড়েছে মেঘের বাবল; আর, গেরস্থালীর অবসরে, বৃষ্টির গল্প ওঠামাত্র, ছাতা হাতে উঠানের ধারে এসে দাঁড়াও তুমি, যেন কেউ এখনি ফিরবে বাড়ি!
আটপৌরে
যেভাবে শরীর গুটিয়ে বাঁচো
মনে হয় জনপদে নয়, তুমি আছো সাপের গর্তে কোনও!
পরগাছা দিয়ে ভরে গেছে আঙিনা
শামুক হেঁটে আসে বুকে ভর দিয়ে-
বাঁচার জন্য তোমার সমস্ত আয়োজন
নগরনয়েজে ময়লা হয়ে আছে;
সন্ধ্যায় চায়ের টেবিলে জুড়ায়
অস্তিত্বের সঙ্কোচ!
যেভাবে পা ফেলছো এখন
মনে হয় গল্পের বুড়ি এসে
কাঁটা পুতে রেখে গেছে রাস্তায়!
ঘাড় গুঁজে বাজারে ঢোকো কেনো?
পৃথিবীকে মুখ দেখাতে গ্লানি?
ফুলপ্রীতি, ভুলে গেছো হয়তো;
কি নিয়ে ফিরছো ঘরে? তেল-চালে ওজনের গাফিলতি?
মেয়ের জন্য বাইন্ডিং করা খাতা?
আমরা ভিজুম
দুই ধারে রোদ নিয়া, বিদিক নদীও হাসে
ঢোল-বেহালার হাসি, বিহানের কোল ঘেঁষে
ছয় ঋতু মহাকাশে যায়, পাখি ওড়ে, পাখা-ঘুম-ঘুম
কোরক খুলেছে রোদ, শেষ দৃশ্যে, আমরা ভিজুম!
সখী, কে সে ডাকে বিলের পানিতে, ডাকে ধানী চর?
এই প্রেম ছনের কুটির খড়, গায়ে থাক পাতার অক্ষর।
দুই কাঁধে মেঘ নিয়া, জাগো তুমি তিরিশ শ্রাবণ
হাড়মাসে ভুখ লাগে যার, তারে কয় পিরিত পাবন;
দুই চোখে নিদ পড়ে নাই, রাত নামে নিঝুম বাগান
তারে কয় পরাগে পরশ যার, ফুল ফুটে কলির নিদান।
এই প্রেম, তিরের ফলায় গাঁথা, কলিজার টুকরা কেমন
ছুঁই ছুঁই জ্যান্ত দেখায়, মহাসড়কের ধারে, প্লাবন যেমন!