অন্য মন/ মহুয়া ভট্টাচার্য
বাবার রেলের চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই বিস্তর নতুন নতুন জায়গা দেখার সুযোগ হয়েছে মধুরিমার। সেসব জায়গার ছবি এখনো তার চোখে ভাসে, সে মনে মনে আঁকে। তবে প্রকৃতি তার আঁকার বিষয় নয়, তার সাবজেক্ট মেল ফেস, মেল বডি। পুরুষের শরীর পুরুষের মুখ আঁকা তার মূল প্যাশন। তার এই প্যাশনেট ওয়ার্কের ধন্য ধন্য করছে এখন দেশ বিদেশের শিল্প সমঝদারেরা।
মধুরিমা জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছে স্বামীর সাথে দেশের বাইরে। সেখানেও যাযাবর জীবনই ছোটবেলার মত। শামীমের সাথে প্রেমের জোড়টা কখনোই গেড়ে বসতে পারেনি কুড়ি বছরে। কখনো এ শহর কখনো ওই শহরে সংসার, সংসার ঠিক নয় বিছানা, বালিশ, হাঁড়িকুঁড়ির স্থানান্তর মাত্র। তবে আঁকাআকির ধারাবাহিকতা বন্ধ ছিলো না কোনকালেই। দীর্ঘ বিশ বছর পর শামীমের সংসারে সুগৃহিণীর অভাব মেটাতে শামীমকে মধুরিমার বিকল্প খুঁজতে হয়েছিলো, মধুরিমাও বাঁধ সাধেনি তাতে। ফিরে এলো দেশে। নিজের ফ্ল্যাটে একা সাদাকালোর ক্যানভাসে একের পর এক পুরুষের মুখ, পুরুষের শরীর। পাঁচ বছর নিরবিচ্ছিন্ন প্রদশর্নী, আর্ট ক্যাম্প শেষে মধুরিমা এখন একটু থিতু। তবে রূপ-লাবণ্যের ভাটা পড়েনি একটুও। মধুরিমার ভারী শরীরে আজকাল কি এক জাদুতে যা- ই জড়িয়ে নিক, দারুণ আবেদনময়ী লাগছে – তাসনীমের একথায় মধুরিমা ইদানীং আবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। সিঁথির কাছের চুলে রূপালী আভা ছড়ানো, তবে গায়ের রংটা মধুরিমার বরাবরই স্বর্ণচাঁপার দ্যুতি ছড়াচ্ছে সেই কিশোরী বয়স থেকে।
তাসনীম মধুরিমার নতুন সাবজেক্ট। সাবজেক্ট কথাটা মনে হলেই মধুরিমার আজকাল মনে অনেক প্রশ্ন উঁকি দেয়। তাসনীমকে কি এখন আর তার সাদাকালো ক্যানভাসের বিষয়বস্তুতে আটকে রাখতে পারছে!? ক্যানভাসের গন্ডী পেরিয়ে এখন সে মধুরিমার কিচেনে সুইট চিলি মাশরুম রাঁধছে। এই ফ্ল্যাটে তসনিম আসার আগে মধুরিমার কিচেনে কফি ছাড়া বেশি কিছু বানানো হোতো না। ভেগান একটি ক্যাটারিং সার্ভিসে ভেজিটেরিয়ান মধুরিমা রোজকার খাবার অর্ডার দেয়। তসনীমের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে হুটহাট সে নিজেই নানারকম পরীক্ষামূলক ভেগান রেসিপি বানিয়ে যাচ্ছে মধুরিমার কিচেনে। খেতে মন্দ হচ্ছে না। কখনো সুইট চিলি মাশরুম তো কখনো ভেগান পনির পালং তৈরির কসরত চলছে । সবমিলিয়ে মধুরিমার ফ্ল্যাটটাকে যেন সুখী গৃহকোণ বানানোর প্রয়াস চালিয়ে যায় তাসনীম। মধুরিমা এসব দেখে খানিক অবাক হয়। পুরুষ সাধারণত একটি জানলা খোঁজে, জানালার আলো হাওয়াটুকু অব্যাহত থাকলেই সে খুশি। জানলার মরচে ধরা খুলে যাওয়া কব্জা কিংবা রং খসে পুরনো হয়ে যাওয়া কপাট নিয়ে সে খুব একটা চিন্তিত থাকে না। তাসনিমের সেই সুক্ষ্ণ তালাশিগুলো মধুরিমার নজর কাড়ে ভীষণ।
তাসনীমের সাথে মধুরিমার আলাপ একটা এক্সিবিশনে তা প্রায় দুবছর আগে। মধুরিমার ছবির বিষয় বস্তুতে সে এতটাই অবাক হয়েছিলো যে, নিজেই যেচে আলাপ জমিয়ে নিয়েছিলো। তাসনীম একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানির চুড়ার দিকের কর্মকর্তা। বয়স পঞ্চাশের এদিক ওদিক হলেও মধুরিমার বয়স কিন্তু এখন ষাট বিয়োগ পাঁচ। তাসনীম নিজেই মাধুরিমার আর্ট মডেল হতে চেয়েছিলো। আগেও মধুরিমা পুরুষ মডেলদের নিয়ে কাজ করেছে, তারা সকলেই ছিলো পেশাদার। তাসনীমের প্রস্তাব পেয়ে মধুরিমা রাজি হয়ে গিয়েছিল প্রথমত তাসনীমের বডি স্ট্রাকচারের কারণে, দ্বিতীয়ত তাসনীম দারুণ কবিতা পাঠ করে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রফেশনাল স্ট্রেস সামলেও তার মেজাজ অসম্ভব রকমের ফুরফুরে রাখার কৌশল জানে তাসনীম।
এতে করে তাসনীমের সাথে মধুরিমার সম্পর্কটা খুব দ্রুত গড়িয়েছে। এতখানিই গড়িয়েছে যে তসনীম যখন রোজ রাতে গাড়ি চালিয়ে মধুরিমার ফ্ল্যাট থেকে নিজের ঘরে ফেরে – তখনও ব্যস্ত শহরের যানজটের স্থবিরতায় নিয়ন বাতির আলোয় তাসনীম তার নিজের শরীরে লেগে থাকা মধুরিমার স্বর্ণচাঁপা রংয়ের আভা দেখতে পায়। জীবনের এই পাতা ঝরার বেলায় এসেও মধুরিমার নতুন এক অভ্যাস গড়ে উঠেছে ……অপেক্ষার অভ্যাস.. ….। কিন্তু ক্যানভাসের সামনে দাঁড়ানো আলুথালু চুলের স্বর্ণময়ী মাধুরিমাকে তসনীমের বড় দুর্বোধ্য মনে হয়।
তসনীম পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই পুরুষ হলেও তার শাণিত চিবুক, মসৃণ কপাল আর উন্নত গ্রীবা নিয়ে যখন সে মধুরিমার শরীরের সুবর্ণ সিংহাসনে উঠে আসে মধুরিমা তার সেই শরীরে তন্নতন্ন করে খোঁজে একটি বিখ্যাত মাস্টারপিস ছবির আদল। তাসনীম যেন শত দ্বীপ, পাহাড়ের বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসা কোনো এক পুরাতন নগরীর পৌরাণিক যোদ্ধা। মুহূর্তে মধুরিমা ফিদিয়াস কিংবা মাইরন হয়ে ব্রোঞ্জের প্রলেপ লাগাতে থাকে সেই সিংহাসন আরোহী যোদ্ধার রোমশ বুকে, গলায়, গ্রীবায়, গালে, চিবুকে, চোখে, কপালে। তাসনীমের পেশির রেখা জীবন্ত হয়ে আরো আঁকড়ে কঠিন ভাবে আঁকড়ে ধরে মধুরিমাকে। তাসনীম তখন ক্রোইসস, তাসনীম তখন সেই খেলোয়াড় ভাষ্কর্য যাকে মধুরিমা পাথর খোদাই করে করে বানিয়েছিলো খ্রীস্টেরও জন্মের আগে! যা সে শামীমের কাছে পায়নি, যা সে শামীমকে দিতে পারে নি – সেই সবটুকুই দিতে পারে তাসনীমকে। পাতাঝরার দিন শেষে নতুন কুঁড়ি আসে, ফুল ফোটে – মধুরিমার বসন্ত উদ্বেলিত শরীরে, সে তা বুঝে নিয়ে আরও এগোয়, এগোতে থাকে একটি মাস্টারপিস সৃষ্টির জন্য।
রান্না ঘরের তেল মশলা, সয়াসস, চিলিফ্ল্যাক্সের ঝাঁঝকে পাশ কাটিয়ে তসনীমকে পেছন থেকে বাহুডোরে বেঁধে তার পিঠে, ঘাড়ে চুমু খায় মধুরিমা। কানে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করে –
– ” আজকের ম্যেনু কি হচ্ছে!? ”
– ” টোফু কারী! সাথে একটা স্পেশাল সালাদ। ট্রাই করে দেখো, মন্দ হবে না। ”
– ” আরে বাহ্! সালাদের ইনগ্রিডিয়েন্স তো সব দারুণ! রেসিপি পেলে কোথায়!? ”
তাসনীম হেসে জানায়, সালাদের রিসিপি তার কিশোরী কন্যার কাছ থেকে ধার করা।
ছবি আঁকার ক্যানভাসের সামনে দাঁড়িয়ে মধুরিমার গম্ভীর মুখ যেমন পেশিবহুল পুরুষের শরীরকে আরো পূর্ণতা দেয়, তীক্ষ্ণ তুলির আঁচড় টানে কিংবা যেমন করে চকখড়ি ঘষে ঘঘে বিম্বিসার ধুসর গোধুলি থেকে বিবস্ত্র পুরুষের সুঠাম পেশীর শরীর খুঁজে আনে, ঠিক একই একাগ্রতায় মধুরিমা তাসনীমের রান্না চেখে দেখে। প্রশংসা করে, মন্তব্য জানায়। তাসনীম তার চেয়ে বেশি বয়সের এই প্রেমিকাকে মুগ্ধ হয়ে দেখে, ক্যানভাসের সাথে একাগ্রতায় মগ্ন এই নারীটি তার প্রেমিকা, যার সুপ্ত আগ্নেয়গিরি একমাত্র তাসনীমই জাগিয়ে দিতে পারে। প্রৌঢ়ত্বের সীমায় উন্নীত এই নারীর শরীরে ঋতুচক্র আসে না আর তবুও শরীরের আদিমতা শেষেও এই পরন্ত যৌবনা নারীর শরীর তাকে বহুক্ষণ আটকে রাখতে পারে তার বুকে। সে উজাড় করে বলে – হে নারী! আমাকে আশ্রয় দাও। ক্লান্তি হরণ কর আমার। মধুরিমা, এত একা, এত নিঃসহায় লাগে নিজেকে আমার। এত অস্থিরতা! এত ভুল! এত খালি লাগে চারপাশ। কি নিয়ে বাঁচি! কি নিয়ে বাঁচবো একটা পুরো জীবন। কেউ কেন কথা রাখেনা!? আমি কেবল একজন মানুষ চেয়েছি যার আমি ছাড়া কেউ নেই। যার শুধু আমাকে নিয়েই ভাবনা। আমি তাকে বিরক্তির আঁচড় কেটে দূরে ঠেলে দিলেও আবার শীতের রাতে আদুরে মিনির মত তার বুকের ওমে মুখ গুজে রইবো। সে জানবে আমার সে ছাড়া কেউ নেই, আমি জানবো তার আমি ছাড়া কেউ নেই, থাকতেই পারে না। আমি তোমার মধ্যে সেই ছায়া খুঁজে পেতে চাই মধুরিমা, আমাকে একটু ছায়া দাও, আমার শ্রান্তি ঘুচাও।
তাসনীমের লোমশ বুকের আড়াল থেকে বেরিয়ে মধুরিমা হেসেই ফেলে! “তুমি বড় আবেগী, মেলোড্রামাটিক! ”
– তাই!? হবে হয়তো! আচ্ছা, পুরুষদের কি কাঁদতে নেই মধু!? তাদের কি কখনো আশ্রয় পেতে ইচ্ছে করে না? আমার তো ভীষণ করে। আমার দম আটকে আসে মধু এই কর্পোরেট দুনিয়ায়। সংসার, সমাজে আমি কেবল দায়িত্ব পালন করতেই এসেছি!? পুরুষকে কোন অভিশাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় মর্ত্যে এসে!?
– সন্ন্যাস নিয়ে নাও তবে! সুদর্শন সন্ন্যাসী দোরে দোরে গিয়ে বেশ মাধুকরী আহরণ করবে! কুলনারীরা রহস্যময় দৃষ্টিতে তোমায় দেখবে! হা! হা! হা!
– আমি কি এখনো মধুকর নোই!? তোমার কাছ থেকে প্রতিদিন মাধুকরী আহরণ করি।
– তাই নাকি!? আরেব্বা! তুমি কি জানো এদেশে আমার বয়েসী নারীদের বুড়ি বলে! আমার এই বয়সে নারীরা নাতি নাতনী নিয়ে জীবন কাটায়! তোমার বেমানান লাগে না এই আমাকে!?
– একটুও নয় মধু! বরং আমি ভাবছি, এই বয়সে এসে কি তুমি কোনো কমপ্লেক্সে ভুগছো!? সাধারণ আর অসাধারণত্বের দড়িটানা প্রতিযোগিতা কি হয় তোমার মধ্যে?
– অসাধারণ, খাপছাড়া হওয়ার বড় জ্বালা তাসনীম। অবশ্য এই খাপছাড়া জীবন পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আমার কিন্তু এখন এই জীবনের সমস্ত প্রাপ্তি অনর্থক মনে হয়, কেবল সাদা ক্যানভাসটুকু ছাড়া। সে কখনো করে না বঞ্চনা!
– আমি আছি মধু! আমি থাকবো তোমার কাছে! এই আমাকে কখনো প্রবঞ্চক হতে দেখবেনা তুমি, কথা দিলাম।
– হা! হা! হা! নভেল আর কবিতা পড়ে পড়ে তুমি ভীষণ মেলোড্রামা করতে শিখেছো! আমার আর সেই ধৈর্য একাগ্রতা নেই তাসনীম। হয়তো ছিলো না কোনকালে। আমার সমস্ত একাগ্রতা ঐ ক্যানভাসটুকুতেই। বাকী সমস্ত বিশ্বচরাচর আমার বিপন্ন!
– এসব কি বলছ মধুরিমা! তুমি কি পাওনি জীবনে!? যা কিছু পেতে চেয়েছিলে -তার সবটুকু চাওয়া কি তুমি জীবন থেকে নিংড়ে নাওনি? তবে কেন এই বিপন্নতার হাহাকার তোমার!?
– আমার অর্থহীন লাগে তাসনীম! আজাদী আসলে একটা নেশার মতোন। নেশা বড্ড বেশি হয়ে গেলে বিষ! এতো আজাদী আমার দরকার ছিলো না। সব পেলে নষ্ট জীবন। জীবনে চাহিদার সবটুকু পেতে নেই তাসনীম। সব প্রাপ্তির হাহাকার দগ্ধ করে আমাকে।
বিকেলের সময়টা তাসনীম তার সমস্ত কাজ থেকে ছুটি নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। চাকরী, সমাজ, সংসার, পরিবার সবকিছু থেকে । কারণ সেই সবসময়টুকু তার মধুরিমার সাথে কাটে। তাসনীমের ছবি আঁকাআকির পালা সেই কবে চুকেবুকে গেছে, তবুও রুটিন নড়চড় হয়নি এক চুল। অফিস থেকে বেরিয়ে কোন একটা দোকানে ঢুকে বাজার করে নিজের মন মত। সংসার জীবনের এত বছরে সে নিজে বাজারে গেছে খুব কম, তবে মধুরিমার কিচেনে সে রাঁধতে ভালোবাসে। বিকেলের কফি সে ই গিয়ে বানায়। তারপর দুজন মুখোমুখি বসে গোধূলির আলোমাখা বারান্দায়। মধুরিমার পাতলা হয়ে আসা রংকরা চুল কপালে মুখে এনে বাতাস খেলা করে। মধুরিমা চোখে ঘন কাজল পরে, তাসনীম সেই চোখ থেকে দৃষ্টি ফেরাতে পারেনা আজ কতকাল! মধুরিমা কফির মগটিও ধরে তুলির মত। যেন এক্ষুনি কফিমগ দিয়েই তুলির আঁচড় কেটে গোধূলির আকাশে একঝাঁক নীড়ে ফেরা পাখি একে দেবে! যেন দূরে আর একটা পাখি আঁকবে, যে দলছুট, নীড় হারা। যেন সে মধুরিমার দিকে আসছে সোনালি ডানায় রোদ মেখে….!
ধুপধাপ করে বাজার সদাই দরজার কাছটায় রেখেই হাঁক পারে তাসনীম – সন্ধ্যাবেলার চামেলি গো! কোথায় গেলে!?
ফ্ল্যাটের একখানা চাবি তাসনীমের কাছেও থাকে, মধুরিমাই দিয়েছিলো তাকে। তাসনীমের বরাবরের মত হাঁকডাকে অভ্যস্ত মধুরিমা শান্ত স্থির প্রশান্তির হাসি হেসে দাঁড়ালো তার সামনে।
বাম হাতে মধুরিমার কোমড় জড়িয়ে ডানহাত দিয়ে চুল সরিয়ে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল – ” সন্ধ্যাবেলার চামেলি গো! সকালবেলার মল্লিকা! আমায় চেনো কি!?
তেমনি শান্ত স্নিগ্ধ হাসিমুখে একটুও বিচলিত না হয়ে মধুরিমা বলল – ” বিলক্ষণ চিনি! আপনি সেই পথভোলা পথিক তো!? ”
– আপাতত পথভোলা নোই। দলছুট হয়ে নীড় খুঁজছিলাম! পেয়ে গেলাম চন্দনকাঠের ফোকড়।
– জানো তো, চন্দন কাঠের সুগন্ধ পেতে তাকে ক্ষয়ে যেতে হয়, পুড়ে যেতে হয়!
– আরে আরে! ওসব জ্বালাও পোড়ায়ের কথা পরে হবে। আপাতত কফি! সাথে এই নতুন কুকিজটা এনেছি! দারুণ জমে যাবে ম্যাডাম।
– আচ্ছা বেশ! কফি তবে তিনকাপ বানাও কেমন!?
তাসনীম অবাক হয়ে জানতে চাইলো –
– ” তিনকাপ!? তিনকাপ কেন!? কেউ আসার কথা বুঝি?
– আসার কথা নয় মিস্টার, এসে বসে আছে আমার ঘরে। এসো পরিচয় করিয়ে দিই!?
মাধুরিমার নতুন আর্ট মডেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ। ঠিক মধুরিমা যেমন শরীর আঁকে তেমনি। পরিচয় পর্ব শেষে কফি বানিয়ে মগ নিয়ে ঘরে ঢুকতেই মধুরিমার চোখের দিকে দৃষ্টি গেলো তাসনীমের। মধুরিমা একটা বিরাট ক্যানভাসে এই নতুন শরীরের ছবি আঁকছে। দৃষ্টি খুব চেনা, মধুরিমার যে দৃষ্টিপাতে তাসমিনের শরীরের পেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে। ঠোঁটের কোণে সেই প্রশান্ত হাসি যা এতদিন মধুরিমা কেবল তাসনীমের দিকে তাকিয়েই হেসেছে। তেমনি আলতো ছোঁয়ায় ঠিক করে দিচ্ছে আর্ট মডেলের দেহ ভঙ্গি। মধুরিমা আঁকছে…… নিবিষ্ট মনে আঁকছে….. তার তুলিতে অন্য শরীর। তার দৃষ্টিতে অন্য পুরুষ। তাসনীম নয়। তাসনীম এখানে কোথাও নেই। তাসনীম কোথাও হারিয়ে গেছে। সে মধুরিমার সাদা ক্যানভাসে মিলিয়ে গেছে।
নিঃস্ব, রিক্ত, বিপন্ন, পালকের মত শরীর নিয়ে তাসনীম রাস্তায় নেমে এলো। নিয়ন বাতির আলো তার শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে, তার বড্ড অস্বস্তি লাগছে। এই শহরের সবকটা নিয়নবাতির আলোয় মধুরিমার চুলের ঘ্রাণ।